Recent Tube

ইন দ্য হ্যান্ড অব তালেবান" নুসরাত তাজরী।



 
          "ইন দ্য হ্যান্ড অব 
               তালেবান" 

 "ইন দ্য হ্যান্ড অব তালেবান" পড়ার পর মোহিত হয়ে ব্রিটিশ লেখক ইভন রিডলিকে মেসেজ দিয়েছিলাম, "রিডলি! আমি বাংলাদেশে বসে আপনার বইটি পড়ে ফেললাম, চমৎকার লিখেছেন!" 
ঘন্টা দুয়েক পর রিডলি ফিরতি মেসেজ দিয়েছেন, "নুসরাত! পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।  জেনে ভালো লাগলো।"

   আমি রিডলিকে দেখে শুনে ও পড়ে সত্যি মোহিত। 

   আমাদের দেশের কিছু লেখক একটু প্ল্যাটফর্ম পেলেই পাঠকদের নাগাল থেকে নিজেকে দূর বহুদূরে সরিয়ে নেন। একটা দারুণ ভাবসাব এসে যায় তাদের মাঝে। পাঠকদের টুকরো মেসেজ তখন চোখে পড়ে না, পড়লেও সযত্নে এড়িয়ে যান। কিন্তু ইভন রিডলি সুদূর ব্রিটেনে বসে বাংলাদেশ থেকে নক করা  স্নাতক পড়ুয়া একটি অপরিচিত মেয়ের ছোট্ট মেসেজটিও গুরুত্বের সাথে নেন। 
সবচেয়ে চমৎকার বিষয় হলো, তিনি নাম ধরে সম্বোধন করেন।

    যাকে নিয়ে এতক্ষণ পড়লেন, এবার চলুন তার বইটি ও তার কিছু পরিচয় জেনে নেই। 

  "ইন দ্য হ্যান্ড অব তালেবান" বইটি
পড়তে পড়তে চোখে ভাসবে নাইন
ইলেভেনের সেই প্রখর উত্তপ্ত মুহূর্তের
দৃশ্য। এই বইয়ে পুরো সময়টার উত্তেজনাকর চিত্র
তুলে ধরেছেন ইভন রিডলি।

     একজন ব্রিটিশ সাংবাদিক তিনি। সানডে সান, অবজারভার সহ
বিখ্যাত সব সংবাদপত্রে কাজের সুবাদে পাকিস্তান
হয়ে তালেবানদের ঘাঁটি আফগানিস্তানে অনুপ্রবেশ
করেন তিনি। লক্ষ্য একটিই - টুইন টাওয়ারে
হামলাকারী তালেবানদের সম্পর্কে আফগান নেটিভদের
মন্তব্য সংগ্রহ করে তা বিশ্ববাসীকে জানানো।

     কিন্তু ভাগ্যের কী পথরেখা! তালেবানদের হাতেই
ধরা পড়ে যান ইভন রিডলি। নাইন ইলেভেনের ঘটনার
দু সপ্তাহ পরেই রিডলিকে খোদ তালেবানদের
ডেরায় বন্দী হতে হলো।

    পশ্চিমা বিশ্বের কাছে অন্যতম যুদ্ধাস্ত্র হলো যৌন নিপীড়ন। রিডলি ভয়ে ভয়ে প্রহর গুনতে থাকেন -
এই বুঝি তাকে গণধর্ষনের স্বীকার হতে হয়!
কিন্তু নাহ! তালেবানরা তাকে অতিথি হিসেবে
সম্বোধন করে অনুসন্ধান কাজ চালায়। 

    প্রচন্ড রকমের নারীবাদী রিডলি তালেবানদের প্রতি যখন তখন
ব্রিটিশ গালি ছুড়তে থাকেন, আর বিনিময়ে তালেবান যোদ্ধাদের কাছ থেকে উপহার পান মুচকি হাসি।
এ ও কী সম্ভব! বন্দিনী রিডলি ভাবেন।
রাতে তালেবান কমান্ডার রিডলিকে রুমের ভেতর
থেকে লক করে ঘুমাতে বলেন যাতে কোন
পুরুষ তাকে বিরক্ত করতে না পারে। তথ্য
অনুসন্ধানে জেরা করার সময়ও তালেবানরা তার দিকে
না তাকিয়েই তাকে প্রশ্ন করে যান। সূক্ষ্ম
বুদ্ধিমতী দুর্ধর্ষ সাংবাদিক রিডলির চোখ এসব
এড়িয়ে যায় না।

    সোনালী চুলের অধিকারী রিডলির গোসলের
সময় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন খোদ তালেবান
কমান্ডার, নাহ্ কোনদিন বিরক্ত করেননি।
এ ও কী সম্ভব! রিডলি ভাবেন।
একজন বন্দিনী, হাজার হাজার মাইল দূরে কোন এক
চরমপন্থি জঙ্গি গোষ্ঠীর কারাগারে দিন অতিবাহিত
করেন, যে জঙ্গি গোষ্ঠী তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে 
আপনি অচিরেই দেশে ফিরবেন, চিন্তা করবেন না।

জঙ্গি কমান্ডার প্রতিদিন খোঁজ নেন তার কিছু
প্রয়োজন আছে কিনা, কোন অভিযোগ আছে
কিনা।
পশ্চিমা বিশ্ব তখন রিডলির প্রাণ নাশের আশঙ্কায় কলরব
তুলছে রাস্তা ঘাটে।
অবশেষে রিডলির সম্মুখে আসেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
তাকে দেখে তার শ্বাসরোধ হওয়ার
উপক্রম! উক্ত ব্যক্তি তাকে অভয় দিয়ে জিজ্ঞেস
করেন - "What's your religion?"
রিডলি জবাব দেন, তিনি খ্রিস্টান।
আবার প্রশ্ন আসে "What sort of Christian?"
এরপর তিনি তাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত
দেন।

  রিডলি ইসলাম গ্রহণের আহ্বানে চমকে ওঠেন, শুধু বলেন "এরকম এক কঠিন
পরিস্থিতিতে আমি ইসলাম নিয়ে ভাবছিনা। তবে যদি
মুক্তি পাই তাহলে আমি ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা
করবো। "
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটি মুচকি হেসে প্রস্থান করেন।

   অবশেষে রিডলি মুক্ত হন, দশ দিনের বন্দিজীবন
থেকে মুক্তি পান তিনি। মুক্তির প্রথম পদক্ষেপে আফগান- পাক সীমান্তে
রাজ্যের সাংবাদিক তাকে ছেঁকে ধরে - "রিডলি!
আপনি সুস্হ আছেন?"
তিনি পাকিস্তানের ব্রিটিশ দূতাবাসে পৌঁছেন যখন তখনও
বাতাসে প্রশ্ন ভাসে - "তালেবানরা কী আপনার উপর
যৌন নির্যাতন করেছে?"
প্রশ্ন শুনে রিডলি হাসেন, না সূচক উত্তর দেন।
প্রশ্নকারকেরা অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকায়।
লন্ডনে ফেরেন রিডলি।
তিনি তার কথা রাখার প্রক্রিয়া শুরু করেন -
ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। টানা দেড় বছর
কুরআন হাদীস সহ সব বিষয়ে জানতে সচেষ্ট হন,
বুঝার জন্য একজন শিক্ষক নিয়োগ করেন । অবশেষে
২০০৩ সালে রিডলি ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। বলেন "এটি এক চমৎকার জীবন ব্যবস্থা!"

    এরপর আমরা একজন বিখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিককে হিজাব পরিহিত অবস্থায় দেখতে পাই। তিনি বলেন -
"ওয়াল স্ট্রিটের একজন সফল ব্যবসায়ী যেমন
স্যুটের বাইরে শুধু গেঞ্জি পরে অফিসে
যেতে পারেন না ঠিক তেমনই ঢিলেঢালা পোশাকও মুসলিম
নারীদের আলাদা পরিচয় বহন করে।" 

    অনেক অনেক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে
আছে বইটির পাতায় পাতায়।
সংগ্রহ করুন এবং পড়ুন। নিজের ঝুলিতে সংগ্রহে রাখার
মতো একটি বই "ইন দ্য হ্যান্ড অব তালেবান। "
রিডলির জন্য ভালবাসা। 
--------------------------------- 
লেখকঃ  নুসরাত তাজরী,
গবেষক, লেখক ও অনুবাদক।

Post a Comment

0 Comments