Recent Tube

অজস্র আলোকোজ্জ্বল সৃষ্টিশীল পাণ্ডিত্য ও কর্মের অম্লান স্মৃতির মাঝে চিরভাস্বর তিনি। -৪। ওয়াহিদুল ইসলাম।





অজস্র আলোকোজ্জ্বল 
সৃষ্টিশীল পাণ্ডিত্য ও কর্মের অম্লান স্মৃতির মাঝে চিরভাস্বর তিনি। 

                        ---পর্ব-৪

যুগশ্রেষ্ঠ এই স্বপ্নদ্রষ্টা পণ্ডিত ও উম্মাহর সুযোগ্য অভিভাবক শাহ আব্দুল হান্নানের সাথে আমার কিছু সুখকর ব্যক্তিগত স্মৃতি...)
--------------

      শাহ আব্দুল হান্নান চাচার চিন্তা ও কর্মে আমার সব সময় মনে হয়েছে যে মুসলিম উম্মাহ তার অস্তিত্বেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি মনেপ্রাণে মুসলিম উম্মাহর প্রতি ভালোবাসা লালন করতেন। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, উন্নতি, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ছিলো তার সারা জীবনের স্বপ্ন ও সাধনা। এক্ষেত্রে তাকে প্রভাবিত করেছে দার্শনিক কবি আল্লামা ইকবালের সাহিত্য। তিনি আল্লামা ইকবালের প্রতি অতিমাত্রায় শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং তার কবিতা ও সাহিত্যের একজন একনিষ্ঠ ও স্বপ্নবাজ পাঠক ছিলেন। মুসলিম উম্মাহকে কেন্দ্র করে আল্লামা ইকবালের চিন্তা-দর্শন নিয়ে চাচার সাথে অনেক কথা হয়েছে। উম্মাহর সকল প্রতিষ্ঠানকেও তিনি অনেক ভালোবাসতেন এবং মূল্যায়ন করতেন। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে তার প্রাপ্তির আশা ছিলো অনেক। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্যচ্যুতি বা ব্যর্থতার কারণে তিনি কখনোই মনভাঙ্গা হননি। তিনি সব সময় চেয়েছেন যে OIC এবং রাবেতা সহ মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে যেসকল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেগুলো পূনঃর্জীবিত হোক, তাদের আবির্ভাবের উদ্দেশ্যকে আকড়ে ধরে তারা শক্তিশালী ভূমিকা রাখুক, জাতিরাষ্ট্রের বাস্তব প্রেক্ষিতে মুসলিম দেশসমূহকে উম্মাহর চেতনায় ঐক্যবদ্ধ করুক, উম্মাহকে নেতৃত্ব দিক এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উম্মাহর প্রতিনিধিত্ব করুক। তিনি মুসলিম উম্মাহর যে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করাকে উম্মাহর জন্য সেবার সুবর্ণ সুযোগ বিবেচনা করতেন। সেকারণে আমি যখন হার্ভার্ড ল স্কুল থেকে LLM করার পর নিউ ইয়র্কে ল ফার্মের কাজ ছেড়ে এবং আমেরিকার যাবতীয় সুযোগ সুবিধে পিছে ঠেলে ফেলে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের চাকুরী নিয়ে IDB’র হেডকোয়ার্টার জেদ্দায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তখন অনেকেই মনঃক্ষুণ্ণ হলেও চাচা অনেক খুশী হয়েছিলেন। তিনি উম্মাহর সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একমাত্র IDB কে পরিপূর্ণ সফল মনে করতেন। যেখানে মুসলিম জাতিরাষ্ট্রগুলো দ্বিধাবিভক্ত, দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত এবং উন্নতির সব দিক বিচারে অনেক পিছিয়ে এবং এরই ফলশ্রুতিতে উম্মাহর রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গুলোও অকেজো ও ব্যর্থ, সেখানে তিনি মনে করতেন IDB’র সাফল্য আকাশচুম্বী। পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় দীক্ষিত বিশ্ববাসী এমন কি মুসলিম অর্থনীতিবিদরাও বিশ্বাস করতো না যে ইসলামে কোনো বাস্তবসম্মত এবং পূর্ণাঙ্গ অর্থব্যবস্থার রূপরেখা আছে। IDB’র জন্মের পর সে ধারণা-বিশ্বাস অলীক প্রমাণিত হয়েছে এবং ইসলামী অর্থনীতি এখন বিশ্বের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে একটি স্বীকৃত বাস্তবতা। IDB’র কারণেই মুসলমানরা সুদহীন ব্যাংকিং এবং অর্থায়নের সুবিধা পেয়েছে যা বর্তমান বিশ্বের অমুসলিমদের কাছেও টেকসই এবং অধিকতর বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা হিসেবে লোকপ্রিয়তা পাচ্ছে। চাচা বিশ্বাস করতেন যে IDB মুসলিম বিশ্বের উন্নয়নের কাজে সঠিক ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখলে সেক্ষেত্রেও সাফল্যের সুযোগ অবারিত। অনুন্নয়ন ও দারিদ্র্যের জিঞ্জিরে আবদ্ধ মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ আজ সুদভিত্তিক অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংকসমূহ (যেমন ADB, AfDB) এর উপর নির্ভরশীল। IDB ই পারে মুসলিম বিশ্বকে ঐসব সুদভিত্তিক অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীলতা এবং সুদের মতো নিপীড়ক ও কঠোর পাপ থেকে মুক্তি দিতে। এসব বুঝিয়ে চাচা আমাকে IDB’র একজন উদীয়মান আইন কর্মকর্তা হিসেবে সঠিক ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। 

      চাচা মনে করতেন মুসলিম উম্মাহকে দারিদ্র্য, অনুন্নয়ন, শিক্ষা-দীক্ষা,  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পশ্চাতপদতা এবং পরনির্ভশীলতার নাগপাশ থেকে মুক্তি দিতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই দুনিয়াবাসীর মধ্যে উম্মাহর  intellectual supremacy (বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেষ্ঠত্ব) এবং leadership quality (নেতৃত্বের উৎকর্ষতা) প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের গৌরবোজ্জ্বল সোনালী ইতিহাস ভুলে শিক্ষাদীক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মুসলিম দেশসমূহের পিছিয়ে থাকা এবং মুসলমানদের মধ্যে  বৌদ্ধিক বন্ধ্যাত্ব চাচাকে খুব পীড়া দিতো। এসব সমস্যার সমাধানে তিনি নিজেকে খুঁজে পেতেন যুগশ্রেষ্ঠ মহান মুসলিম চিন্তাবিদ ও সংস্কারকদের মধ্যে। তিনি কখনো ঢুকে পড়তেন মুহাম্মাদ আবদুহুর মাঝে, কখনো জামালুদ্দীন আফগানীর মাঝে, কখনো রাশীদ রিদার মাঝে এবং কখনোবা মাওলানা মওদুদীর মাঝে। এসব মনীষীরা প্রত্যেকেই ছিলেন চাচার ইতিবাচক চিন্তা ও স্বপ্নের জগতের দিকপাল নক্ষত্র। তিনি ঐসব মনীষীদের উদ্ধৃতি দিয়ে তাদের চিন্তা-দর্শন ও কর্মের ব্যাখ্যা করে আমাকে অনুপ্রাণিত করতেন। অতীতের যুগশ্রেষ্ঠ মনীষীদের সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি তাদের অনুসারী বর্তমান জগতের মুসলিম পন্ডিতদের লেখালেখিও চাচার চোখ এড়াতো না। ইউসুফ কারাদাবী, ইসমাঈল রাযী আল-ফারুকী, তাহা জাবির আল-আলওয়ানী ও আব্দুল হামীদ আবুসুলাইমান সহ বর্তমানের যুগশ্রেষ্ঠ আরো অনেক মুসলিম পন্ডিতের লেখা তিনি নিয়মিত পড়তেন। মুসলমানদের বৌদ্ধিক পূনর্জাগরনের সকল প্রয়াসকে তিনি আন্তরিকভাবে সাধুবাদ জানাতেন এবং এসব প্রয়াসের সাথে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতেন। এমনই একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা International Institute of Islamic Thought (IIIT), এর প্রতিষ্ঠাতা পন্ডিতগন এবং এই প্রতিষ্ঠানের প্রকাশনা সমূহ তাকে নতুন করে মুসলমানদের মধ্যে intellectual supremacy পূণঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর করে তোলে। বাংলাদেশে Bangladesh Institute of Islamic Thought (BIIT) নামে এই প্রতিষ্ঠানটির একটি শাখা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার অনেক অবদান রয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। 

       মুসলমানদের চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক বন্ধ্যাত্ব নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষিতে তিনি একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি আব্দুল হামীদ আবুসুলাইমানের লেখা Crisis in the Muslim Mind (মুসলমানদের বুদ্ধিবৃত্তিক সংকট) বইটি পড়েছি কিনা। আমি বললাম, চাচা এই লেখক তো আমার রেক্টর (মানে আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি সেখানে তিনি সর্বোচ্চ কর্মকর্তা)। উনার এই বই তরুণ প্রজন্মের মধ্যে চিন্তার জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টিকারী। বইটির ইংরেজী অনুবাদের পাশাপাশি আমি অরিজিন্যাল আরবী (أزمة العقل المسلم) বইটিও পড়েছি। চাচা সুযোগ নিয়ে বললেন, তুমি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মানে তারই ছাত্র। তোমাকে তার মতো হতে হবে। তোমাকে বহু লেখাপড়া করতে হবে এবং ভালো লিখতে হবে। মুসলিম উম্মাহর এইসব ইস্যুগুলোকে সামনে এনে সমাধান বের করতে হবে তোমাকে। 

      চাচার সারা জীবনের সকল পেশার ক্ষেত্রে পেশাগত দক্ষতার পাশাপাশি ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তার পান্ডিত্য এবং সুশাসন ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠায় কুরআন হাদীসের বাণীসমূহের গভীর উপলব্ধি সকলের কাছে সুবিদিত। এর পাশাপাশি একপর্যায়ে তিনি উছুল বা ইসলামী আইনের মূলনীতি শাস্ত্র অধ্যয়নের প্রতি অতিমাত্রায় ঝুঁকে পড়লেন। তিনি মনে করতেন উছুলের জ্ঞান না থাকলে কুরআন হাদীস ভালোভাবে বুঝা এবং আমাদের বাস্তব জীবনে তার সঠিক প্রয়োগ সম্ভব না। তিনি নাওয়া-খাওয়া ভুলে উছুল অধ্যয়ন শুরু করলেন। আলোচনার সূত্র ধরে তিনি অনেক সময় উছুলের বিভিন্ন বিধিবিধান ব্যাখ্যা করতেন এবং আমি কান পেতে শুনতাম। অবাক হতাম যে উনি ইংরেজী শিক্ষিত হয়ে এবং গতানুগতিক আলেম বা উছুলবিদ না হয়েও উছুলের এসব জটিল পরিভাষা কিভাবে বুঝেন। বিশেষতঃ উছুলের উপর বাংলা বা ইংরেজীতে তখন হাতে গনা কয়েকটি বই ছাড়া বাকী সবই আরবীতে, তাও আবার নির্ভরযোগ্য ও প্রামাণিক সাহিত্যগুলো দূর্বোধ্য ক্লাসিক্যাল আরবীতে। উছুল এমনিতেই একটি কঠিন অধ্যয়নের বিষয়। উছুলের ব্যাপারে উনার আগ্রহ এবং গভীর উপলব্ধি দেখে রাসুল (সাঃ) এর সেই প্রসিদ্ধ হাদীসটি মনে পড়লো – “আল্লাহ যখন কারও কল্যাণ চান তখন তাকে দ্বীনের ফকীহ (গভীর জ্ঞানসম্পন্ন) বানিয়ে দেন (مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ)।“  

    আমাকে উনি উছুলের পন্ডিত হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করার প্রয়াসে একদিন জিজ্ঞেস করলেন আমি উছুল কেমন বুঝি। বললাম, চাচা আমি উছুলের একজন ভক্ত ছাত্র মাত্র। আমি উছুল পড়তে খুব উপভোগ করি। উছুলের উপর যথেষ্ট পন্ডিত আছেন। আমি তাদের সুযোগ্য ছাত্র হয়ে থাকতে পারলেই নিজেকে ধন্য মনে করবো। উছুলের প্রতি অতিশয় আগ্রহের কারণেই আমি কয়েক ধাপে উছুল পড়েছি। বাংলাদেশে থাকাকালে মাদ্রাসা পাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবে উছুল পড়েছি। International Islamic University Manaysia (IIUM) তে LLB এবং Master of Comparative Law (MCL) পড়ার সময় আবার দুইবার উছুল পড়েছি। এসময়ে উছুলের উপর প্রচুর আধুনিক ও ক্লাসিক্যাল বই আরবীতে পড়েছি। এরপর হার্ভার্ড ল স্কুলে LLM পড়ার সময় Islamic Legal System নামে একটা কোর্স নিয়ে সে কোর্সের আওতায় উছুল পড়েছি। এযাবৎ উছুল যতোটুকু পড়েছি এবং বুঝেছি তার ভিত্তিতেই আইনের ছাত্র হিসেবে আমার বিশ্বাস পোক্ত হয়েছে যে ইসলামী আইনের উৎস কুরআন সুন্নাহ চৌদ্দশত বছরের পুরনো হলেও উছুল সেই চৌদ্দশত বছরের পুরনো আইন ও তার মূলনীতির ভিত্তিতে অনাগত কালব্যাপী সর্বকালের সর্বস্থানের সকল মানুষের জন্য সর্বোত্তম আইন উপহার দিতে সক্ষম। ইসলাম যে সর্বকালের সব মানুষের সকল সমস্যার সর্বোত্তম সমাধান দিতে পারে, ইসলামের বিধান যে চিরন্তন ও শাশ্বত, আইনের ক্ষেত্রে উসুল হলো তার বাস্তব নমুনা ও সর্বব্যাধি নিরোধক মহৌষধ । চাচা উছুল বিষয়ে প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ হাশিম কামালীর খুব ভক্ত ছিলেন। বস্তুতঃ ইংরেজীতে তার লেখা “Principles of Islamic Jurisprudence” বইটি যারা আরবী ভাষাভাষী নয় তাদের জন্য উছুলের উপর একটি সেরা উপহার। চাচা এই বইটি অনেকটা মুখস্ত করে ফেলার মতো করে পড়েছেন। আমি বললাম তিনি আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। তবে তার বইটি পুরোপুরি পড়িনি। আংশিক পড়েছি; যে বিষয়ে যতোটুকু পড়ার প্রয়োজন হয়েছে ততোটুকুই পড়েছি। প্রফেসর হাশিম কামালী নিজেও তার বইটি অত্যন্ত জনপ্রিয়, সর্বাধুনিক ও ব্যাপক হওয়া সত্ত্বেও আমাদের অধ্যয়নকে তার বইয়ের মধ্যে সীমিত রাখতে পছন্দ করতেন না। তিনি ক্লাসে অন্যান্য প্রসিদ্ধ বইয়ের রেফারেন্স উল্লেখ করে সেগুলো পড়তে নির্দেশ দিতেন যা অধিকাংশই ছিলো আরবীতে। আমি হাশিম কামালীর সরাসরি ছাত্র ছিলাম এটা জেনে চাচা যার পর নাই খুশী হয়েছিলেন। 

    ২০০১ সালে আমি তখন IDB তে চাকুরীরত। ভিডিও কনফারেন্সিং এর সুবিধা না থাকলেও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর মতো অনেক প্রযুক্তিগত সুবিধা তখন বিদ্যমান। ইমরান ভাইয়ের স্বপ্ন বিশ্বের সেরা অনলাইন ইসলামী বইয়ের সম্ভার গড়ে তোলার পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে Witness-Pioneer এর উদ্যোগে বিভিন্ন অনলাইন কোর্স চালু করা এবং একপর্যায়ে সেটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দেয়া। প্রাথমিকভাবে দু’টি কোর্স চালুর সিদ্ধান্ত হলো – একটি উছুলের উপর আরেকটি প্যারেন্টিং এর উপর। অনলাইনে পাঠদান, প্রশ্নোত্তর, গবেষণা এবং পরীক্ষার জন্য যাবতীয় উপায় উপকরণ ও সুবিধা ঠিকঠাক করলেন ইমরান ভাই। তিনি কোর্স দু’টির রেজিস্ট্রার ও এডমিনের দায়িত্ব নিলেন। প্যারেন্টিং কোর্সের instructor ছিলেন লন্ডনস্থ ডঃ মুহাম্মাদ আব্‌দুল বারী আর উসুল কোর্সের instructor শাহ আব্দুল হান্নান চাচা। তিনি একটি শর্ত দিলেন যে আমি উনার assistant instructor হিসেবে উনাকে সার্বিক সহযোগিতা দেবো। চাচা তখন অনেক বড়ো বড়ো দায়িত্বের বোঝা কাঁধে নিয়ে অনেক ব্যস্ত। এতোসব দায়িত্বের পাশাপাশি উছুল কোর্সের instructor হওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন সেটাই ঢের। উনি বললেন উনি শুধু বিষয়ভিত্তিক লেকচার গুলো দিতে পারবেন আর বাকী সবকিছু সামলানোর দায়িত্ব দিলেন আমাকে। আমি অনলাইন কোর্স তাও আবার আমার একটি প্রিয় সাবজেক্টে নেয়ার ব্যাপারে অনেক পুলকিত অনুভব করলাম। সানন্দে সব দায়িত্ব নিলাম। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে ২০ এর অধিক শিক্ষার্থী যুক্ত হলো কোর্সে। সবাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত এবং বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। বিভিন্ন ইস্যু ও প্রশ্নের জবাব দিতাম একটা চ্যাটলাইনে। সেগুলো রেকর্ড হয়ে থাকতো যা পরে চাচা দেখে আমাকে বাহবা দিতেন এবং আমার সাথে ঐগুলো নিয়ে বিষদ আলোচনা করতেন। যে কোনো একাডেমিক কোর্সের মতো আমি ছোটো ছোটো সাময়িক পরীক্ষা নিতাম, এসাইনমেন্ট দিতাম এবং ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে সবকিছুর চুলচেরা রিভিউয়ের পর প্রত্যেকের গ্রেড নির্ধারন করে চাচার কাছে জমা দিয়েছিলাম যা চাচা অনুমোদন করেন। পরে ইমরান ভাই অনুমোদিত গ্রেড সহ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিজস্ব পেপার সমূহ তাদের কাছে পাঠান। 

     উল্লেখ্য এবং পরিতাপের বিষয় যে, কোনো এক প্রেক্ষাপটে Witness-Pioneer এর দুর্বার যাত্রা অনিবার্য কারণ বশতঃ ব্যাহত হয় এবং এরপর আর কোনো কোর্স করা সম্ভব হয়নি। 
(চলবে)।
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ কলামিস্ট গ্রন্থপ্রনেতা, এটর্নি এট ল' টেক্সাস ইউএসএ এল এল এম, হার্ভার্ড ল স্কুল। 

Post a Comment

0 Comments