Recent Tube

বিতি কিচ্ছা-৭৭, নুর মুহাম্মদ চৌধূরী (মুবিন)।

 


  

                  বিতি কিচ্ছা;
                         পর্ব-৭৭;
------------------------------------

বদান্যতা বনাম অধিকার দানে কার্পণ্য :

 খাই খাই করে দিন যায় বটে, খাই কতটুকু দেখি কি?  তবুও মোদের লোভের জিহ্বা সংবরণ সারা জীবনেও হয় কভু কি? বিশেষ করে বাংলাদেশে  সর্বভূকের তালিকায় যাদের নাম লিখা আছে- ভিন্ন দৃষিটিকোণ থেকে বিচার করলে ,তারা কিন্তু বাস্তবিকই এক প্রকার গরীব প্রকৃতির বোকাশোকা লোক। এরা যেমন বদান্যতায় থাকে কুন্ঠিত , তেমনি অন্যের অধিকার দানেও করে কার্পণ্য। যেহেতু আশা তাদের বিশাল , তাই ওরা আশার তুলনায় পায় কম, তাই হাত ঘুটিয়ে রাখে বিলায় কম। যা পায় , আগলে রাখে আপন বলয়ে। গুনে গুনে দিন গুজরান হয়, হিসাবে যা হবার তা ই হয় । দু'য়ে দু'য়ে মিলে হয় চার , চিরাচরিত  রীতি। ব্যতিক্রম কঙূ কপালে তার নাহি জুটে। কারণ সে তো অতিশয় হিসেবী তথা কৃপণ বটে। 

      দরাজ হস্তে সে দান করতে পারে না, হাত তার কম্পমান থাকে এ কাজে। তার বক্ষ প্রসারিত হতে চায় ন। 

      একটা সুঁচের ছিদ্রে সুতা ঢুকিয়ে দেবার প্রতিদান হিসারে জনৈক ব্যক্তিকে একশত উট উপহার দিতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (রা:)। এগুলো কোন কল্পলোকের গল্পগাঁথা নয়, বাস্তবে ঘটে যাওয়া এটা এক অবিশ্ব্যাস্য বদান্যতার উদাহরণ। এছাড়াও লাখ লাখ দানবীররা তাদের কষ্টার্জিত সম্পদে দানের হাতের ব্যবহারে খোলাদিল থাকতে আমরা দেখতে পাই। পক্ষান্তরে হিসেবীরা শুধুই হিসাব কষে যায়, আর আপন হাতে ছিড়তে থাকে আপন মাথার চুল। অসারতায় ভরা জিন্দেগীতে দেখতে পায় সে শুধু ভুল আর শুধু ভুল।

     কিন্তু এ তো গেল নির্ভেজাল দানের বিষয় আসয়। যেখানে গ্রহীতা কোন প্রকার প্রাপ্যের অধিকারের বাহিরে থাকার পরও এ জাতীয় লেনদেন খোলামনে ও খুসিমনে সম্পন্ন করে থাকে। অন্যদিকে থাকে প্রতিবেশীর প্রাপ্য অধিকারের বাস্তবায়নে দাতার উদাসীনতা কিংবা কার্পণ্যের গল্প-উপাখ্যান । 

     আমাদের এ সমাজে শ্রমিকের ঘাম ঝরানো শ্রমের উপযুক্ত পারিশ্রমিক প্রদানে কারখানা মালিকের গড়িমসি যেমন অহরহ হয় , তেমনি শ্রমিকরাও ন্যায্য শ্রম প্রদানে থাকে শতত উদাসীন। কারখানায় শ্রমিক-মালিক এই দুই নিকট প্রতিবেশীর মধ্যে ন্যায্য হকের আদান প্রদানে এই দুই পক্ষের কর্ম তৎপরতা কখনওই উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতে দেয় না। ফলে উভয়পক্ষই হয় বঞ্চিত । বরকত তথা প্রবৃদ্ধি এখানে থাকে সদা অনুপস্থিত । মালিক বসে অংক কষে, মাথায় থাকে হাত। দিবা-নিশী মিথ্যা স্বপ্নে ঘুমের হয় ব্যাঘাত।

     মানুষ সামাজিক জীব। সব সময়ই কারো না কারো সংস্পর্শে আসতে হয় তাকে। কেনাকাটায়, ভাব আদান-প্রদানে, লেনা-দেনায়, কিংবা দাওয়াত-জিয়াফতে অথবা নামাজ-কালাম তথা ইবাদাত-বন্দেগীতে যাদের সাক্ষাৎ লাভ হয় এরা সকলেই পরষ্পর প্রতিবেশী। এবং এদের প্রত্যেকের উপরই তাৎক্ষনিকভাবে পারষ্পরিক হকে আবদ্ধ হয়ে যায়  এই হক বা অধিকার আদায়ের কমবেশী প্রয়োগ বা ব্যবহার আমরা করি। যে প্রয়োগের ফলে সামাজিক সৌন্দর্য বিকশিত হয়। হতে পারে তার অপপ্রয়োগের ফলে সামাজিক বিশৃংখ্যলা সৃষ্টি , কিংবা সৃষ্টি হতে পারে সামাজিক দুরত্ব।

      এই সমুহ ক্রীয়া-কলাপই যা পারষ্পরিক হকের সুতোয় গাঁথা, তার হেরফের কিন্তু সৃষ্টি করে সামাজিক বিপর্যয় তথা অশান্তি। সমাজের প্রত্যেকেই যদি আপন স্বার্থ সংরক্ষনের ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে চলতে থাকে তবে বিবাদ বা সংঘর্স এড়িয়ে যাবার কোন উপায়ই থাকে না। এতএব অপর প্রতিবেশীর সুবিধার্থে আপন অধিকারে ছাড় প্রদানও প্রকৃত অর্থে এক প্রকার বদান্যতা। এই বদান্যতা তথা উদারতার বহুল প্রয়োগের মাধ্যমে সামাজিক জীব সৃষ্টির সেরা হিসাবে পরিগনিত হবে , নচেৎ নয়।
--------------------------------- 
লেখকঃ ফার্মাসিস্ট, ইসলামিক আর্টিকেল, এবং প্রবন্ধ /রম্য, লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments