Recent Tube

হযরত ঈসা (আঃ) এর খিলাফাত ও ইকামতে দ্বীন: কুফুরী অভিযোগ ও দলিলভিত্তিক জবাবঃ ০১;। তানজিল ইসলাম।






 
হযরত ঈসা (আঃ) এর খিলাফাত ও ইকামতে দ্বীন: কুফুরী অভিযোগ ও দলিলভিত্তিক জবাবঃ ০১,
-----------------------------------

 হযরত ঈসা (আঃ) ছিলেন বনী ইসরাঈলের সর্বশেষ নবী ও কিতাবধারী রাসূল। তাঁর পর থেকে শেষনবী মুহাম্মাদ (সা)-এর আবির্ভাব পর্যন্ত আর কোন নবী আগমন করেননি। ঈসা (আঃ) নবুওয়াত লাভ করার পর স্বীয় কওমকে বলেন,
وَإِنَّ اللهَ رَبِّي وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ هَذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ 
"নিশ্চয় আল্লাহই আমার রব এবং তোমাদের রব। অতএব তোমরা তাঁর ইবাদত-দাসত্ব কর। এটাই সরল পথ। (সূর মারিয়ামঃ ১৯/৩৬; সূরা যুখরুফঃ ৪৩/৬৪) 

    প্রত্যেক নবীই যেহেতু ইকামতে দ্বীনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেহেতু অন্য কোন নেতা বা শাসকের আনুগত্য করা তাঁদের নবুওয়াতী মর্যাদার পরিপন্থী। তাই ঈসা (আ) তাঁর নেতৃত্ব মেনে নিয়ে আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়ে বলেন,
وَمُصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَِلأُحِلَّ لَكُم بَعْضَ الَّذِيْ حُرِّمَ عَلَيْكُمْ وَجِئْتُكُم بِآيَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ فَاتَّقُواْ اللهَ وَأَطِيعُونِ-
‘আমার আনীত এ কিতাব (ইনজীল) পূর্ববর্তী কিতাব তাওরাতকে সত্যায়ন করে এবং এজন্য যে, আমি তোমাদের জন্য হালাল করে দেব কোন কোন বস্তু, যা তোমাদের (পাপের) জন্য হারাম ছিল। আর আমি তোমাদের নিকটে তোমাদের রবের আয়াত (বিধান) নিয়ে এসেছি। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। (আলে ইমরান ৩/৫০) তাঁর আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়ে আরো বলেন,
قَدْ جِئْتُكُمْ بِالْحِكْمَةِ وَلِأُبَيِّنَ لَكُمْ بَعْضَ الَّذِي تَخْتَلِفُونَ فِيهِ ۖ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ.
‘আমি অবশ্যই তোমাদের কাছে হিকমত নিয়ে এসেছি এবং এসেছি তোমরা যে কতক বিষয়ে মতবিরোধে লিপ্ত তা স্পষ্টভাবে ফায়সালা করে দিতে। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর’। (সূরা যুখরুফঃ ৪৩/৬৩) 

    ঈসা (আঃ) তওহীদ ও রিসালাতের উপরে ঈমান এনে তাঁর নেতৃত্ব মেনে তাঁর আনুগত্য করার দাওয়াত দেওয়ার সাথে সাথে তিনি বনী ইসরাঈলকে তাঁর আনীত মুজিযা সমূহেরও বর্ণনা করেন। (সূরা আলে ইমরানঃ ৩/৪৯) ঈসা (আঃ)-এর মুজিযা সমূহ দেখে এবং তাঁর মুখনিঃসৃত তাওহীদের বাণী শুনে কিছু লোক তাঁর নেতৃত্ব মেনে নিলেও দুনিয়াদার সমাজ নেতারা তাঁর প্রতি বিরূপ হয়ে ওঠে। কারণ তাওহীদের সাম্য বাণী সমাজের কায়েমী স্বার্থবাদী নেতাদের স্বার্থেই প্রথম আঘাত এনে থাকে। ফলে তারা ঈসা (আঃ)-এর বিরুদ্ধে নানাবিধ চক্রান্ত শুরু করে। এতে ঈসা (আঃ) ক্ষান্ত না হয়ে বরং আরও দ্বিগুণ বেগে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে যেতে থাকেন। ফলে ঈসা (আঃ)-এর সমর্থক সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। ঈসা (আ) এর দাওয়াতের ফলে বনী ইসরাঈল মুমিন ও কাফিরে দু'দলে বিভক্ত হলো। ঈসা (আ) বললেন,
مَنْ أَنْصَارِي إِلَى اللَّهِ ۖ قَالَ الْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنْصَارُ اللَّهِ آمَنَّا بِاللَّهِ وَاشْهَدْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ.
কে আল্লাহর জন্য আমার সাহায্যকারী হবে? হাওয়ারীগণ বলল, আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আর তুমি সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম। (সূরা আলে ইমরানঃ ৩/৫২) 

    হযরত ঈসা (আ) তাঁর অনুগত মুসলিম উম্মাহকে নিয়ে কুফুরী সমাজ ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করেন। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
 وَقَفَّيْنَا عَلَىٰ آثَارِهِمْ بِعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ ۖ وَآتَيْنَاهُ الْإِنْجِيلَ فِيهِ هُدًى وَنُورٌ وَمُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةً لِلْمُتَّقِينَ. وَلْيَحْكُمْ أَهْلُ الْإِنْجِيلِ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فِيهِ ۚ وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ. 
আর আমি তাদের পেছনে মারিয়ামের পুত্র ঈসাকে পাঠিয়েছিলাম তার সম্মুখে বিদ্যমান তাওরাতের সত্যায়নকারীরূপে এবং তাকে দিয়েছিলাম ইনজীল, এতে রয়েছে হিদায়াত ও আলো এবং (তা ছিল) তার সম্মুখে অবশিষ্ট তাওরাতের সত্যায়নকারী, হিদায়াত ও মুত্তাকীদের জন্য উপদেশস্বরূপ। আর ইনজীলের অনুসারীগণ তাতে আল্লাহ যা (বিধানসরূপ) নাযিল করেছেন তার মাধ্যমে যেন শাসন-ফয়সালা করে আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার মাধ্যমে যারা শাসন-ফয়সালা করে না, তারাই ফাসিক। (সূরা মায়িদাঃ ৫/৪৬-৪৭) 
এ আয়াতদ্বয় থেকে প্রমাণ হয়, অন্যান্য আসমানী কিতাবের ন্যায় ইনজীল নাযিলেরও উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহ প্রদত্ত বিধান দ্বারা শাসন-ফায়সালা করা। আর সেই উদ্দেশ্যকে সফল করতে হযরত ঈসা (আ) কুফুরী সমাজ থেকে বের হয়ে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে তাঁর অনুগত উম্মাতকে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান দ্বারা পরিচালনা করেন, তাদের মাঝে নেতৃত্ব দেন। আর তারাও তাগুতী নেতৃত্ব বর্জন করে রাসূলের নেতৃত্ব মেনে নিয়ে তাঁর অনুসরণ করেন। নিম্নে বর্ণিত দোআ থেকে তার প্রামণ পাওয়া যায়। হযরত ঈসা (আ) এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী মুমিনগণ দোআ করে ছিলেন-
رَبَّنَا آمَنَّا بِمَا أَنْزَلْتَ وَاتَّبَعْنَا الرَّسُولَ فَاكْتُبْنَا
 مَعَ الشَّاهِدِينَ.
হে আমাদের রব, আপনি যা নাযিল করেছেন তার প্রতি আমরা ঈমান এনেছি এবং আমরা রাসূলের অনুসরণ করেছি। অতএব, আমাদেরকে সাক্ষ্যদাতাদের তালিকাভুক্ত করুন’। (সূরা আলে ইমরানঃ ৩/৫৩) 

    হযরত ঈসা (আ) এর পরিচালিত নবগঠিত সমাজব্যবস্থা দেখে কাফির গোত্রের নেতারা তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করল। সেজন্য তারা দেশের বাদশাহকে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে দেবার চেষ্টা করল। তারা অনবরত বাদশাহর কান ভারি করতে থাকে এই মর্মে যে, লোকটি দেশদ্রোহী। সে আপনার অনুগত প্রজা নয় বরং সেই চায় দেশের বাদশাহ হতে। তাছাড়াও সে তাওরাত পরিবর্তন করে সবাইকে বিধর্মী করতে সচেষ্ট। এসব অভিযোগ শুনে অবশেষে বাদশাহ তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। তৎকালীন রোম সম্রাট-এর নির্দেশে ঈসা (আঃ)-কে গ্রেফতারের জন্য সরকারী বাহিনী ও ইহুদী চক্রান্তকারীরা তাঁর বাড়ী ঘেরাও করে। তারা ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করার জন্য জনৈক নরাধমকে পাঠায়। কিন্তু ইতিপূর্বে আল্লাহ ঈসা (আঃ)-কে উঠিয়ে নেওয়ায় সে বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে যায়। কিন্তু এরি মধ্যে আল্লাহর হুকুমে তার চেহারা ঈসা (আঃ)-এর সদৃশ হয়ে যায়। ফলে ইহুদীরা তাকেই ঈসা ভেবে শূলে বিদ্ধ করে হত্যা করে। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
وَمَكَرُوا وَمَكَرَ اللَّهُ ۖ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ.
আর তারা কুটকৌশল করেছে এবং আল্লাহ কৌশল করেছেন। আর আল্লাহ উত্তম কৌশলকারী। (সূরা আলে ইমরানঃ৩/৫৪) ইহুদী-নাসারারা কেবল সন্দেহের বশবর্তী হয়েই নানা কথা বলে এবং ঈসাকে হত্যা করার মিথ্যা দাবী করে। আল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে তাদের কোনই জ্ঞান নেই। তারা কেবলই সন্দেহের মধ্যে পড়ে আছে। এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করতে পারেনি। (নিসাঃ৪/১৫৭) বরং তার মত অন্য কাউকে তারা হত্যা করেছিল। আর আল্লাহ পাক তাঁকে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন।

   বিঃদ্রঃ ইকামতে দ্বীন বিরোধী আহলে হাদীস আন্দোলনের আমীর ড.গালীব বলেন, "হুকুমত (আল্লাহর বিধান) কায়েম করাই যদি নবী আগমণের উদ্দেশ্য হত, তাহলে তো বলতেই  হয় যে, লক্ষাধিক নবীর মধ্যে কেবল মাত্র হযরত দাউদ (আ), সুৃলাইমান (আঃ) ও মুহাম্মাদ (সাঃ) ব্যতীত আর সকলেই তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছিলেন (নাউযুবিল্লাহ)।... মোর্দাকে যিন্দা করার অলৌকিক ক্ষমতা দান করা সত্ত্বেও আল্লাহ পাক কেন হযরত ঈসা (আঃ) কে তৎকালীন সম্রাট তোতিয়ানূসের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর নির্দেশ না দিয়ে তাকে আসমানে উঠিয়ে নিলেন? (তিনটি মতবাদ, পৃঃ ২৬; ২য় সংস্করণ, ফেব্রুয়ারি ২০১০) পরবর্তী পর্বে ড. গালীবের এ প্রশ্নের জবাবসহ ঈসা (আঃ) কর্তৃক সারা দুনিয়ায় আল্লাহর বিধান কায়েমের বর্ণনা দলিলসহ পেশ করা হবে, ইনশাআল্লাহ!।
----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা আলোচক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments