Recent Tube

ভালো কাজে অংশ নেয়া না নেয়া – মনস্তাত্বিক উপসর্গ ও পরিণতি। ওহিদুল ইসলাম।




 ভালো কাজে অংশ নেয়া না নেয়া – মনস্তাত্বিক উপসর্গ পরিণতি;


    কোনো কাজে অংশগ্রহণ করা মানে এই না যে সকল অংশগ্রহণকারী কাজটির একই কেদ্রবিন্দুতে ভূমিকা রাখবে। অংশ গ্রহণ মানে যার যার মেধা-মনন, সুযোগ, শক্তি ও সামর্থ্য অনুয়ায়ী একটি কাজের অনেকগুলো ক্ষেত্রের মধ্য থেকে নিজের জন্য যথোপযুক্ত ক্ষেত্রটিতে কোন না কোন ভাবে ভূমিকা রাখা। ঘর তৈরীতে আস্ত ইটের এবং ভাঙা টুকরো টুকরো খোয়ার দরকার হয় সমান্তরালে। দুটোই নিজ নিজ জায়গা মতো অংশ গ্রহণ করে ঘর তৈরীতে অবদান রাখে। তাদের অংশ গ্রহণের ক্ষেত্র ভিন্ন ভিন্ন হলেও ঘর তৈরীর কাজে উভয়ের অংশ গ্রহণই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং কোনোটির ভূমিকাকেই ছোটো করে দেখার সুযোগ নেই।

     সামাজিক কোনো ভালো কাজে কেউ যদি শারীরিক ভাবে কিছু করতে অক্ষম হয়, সে কিন্ত সবার সাথে ঐ কাজে মিলিত হয়ে কিছু না করেও অনেক ভূমিকা রাখতে পারে। সবার সাথে তার যুক্ত হওয়াটাই এবং সবার পাশে তার উপস্থিতিটাই তার অংশ গ্রহণ। তাছাড়া সে বিভিন্ন ভাবে সবাইকে অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে - কাজের ফাঁকে গল্প, কৌতুক বা কথাবার্তা বলে অন্যদেরকে আনন্দ দিতে পারে, ক্লান্তি ভুলিয়ে দিতে পারে, সক্রিয় রাখতে পারে। এটাও বড়ো ধরণের অংশ গ্রহণ। আস্ত ইট আর টুকরো খোয়ার অংশ গ্রহণ এক হয়না, এক হলে ঘর হয়না। 

    ভালো কাজে অংশ গ্রহণ করতে পারাটা একটা সুযোগ এবং সৌভাগ্য। যারা এ সুযোগ গ্রহণ করেনা তারা সৌভাগ্য থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত রাখে আর তারা আল্লাহর অপার রহমত থেকেও স্বেচ্ছায় বঞ্চিত হয়। তারা ভালো কাজের পরিবর্তে খারাপ অথবা বেহুদা কাজ ও চিন্তা অথবা আলসেমিতে মেতে থাকে। যদি কোনো খারাপ বা বেহুদা চিন্তা ও কর্মের মতো নেতিবাচক কিছুতে নিমগ্ন নাও থাকে তারপরও ভালো কাজের অবর্তমানে আলসেমিতে নিমগ্ন থাকাটাই তাদের চূড়ান্ত পরিণতি যেটা আরো ভয়াবহ। কথায় বলে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা।

   যারা ভালো কাজের পরিবর্তে খারাপ বা বেহুদা চিন্তা-কর্ম কিংবা আলসেমিতে ডুবে থাকে তাদের জীবনে না থাকে আসল আনন্দ, সুখ, শান্তি, তৃপ্তি আর না আসে কোনো সাফল্য বা অর্জন। তারা একের পর এক পৌনঃপুনিক ভোগবাদিতার চাকচিক্যে মোহিত ও তাড়িত হয়ে ব্যর্থতার পথ স্বেচ্ছায় বেছে নেয়। এরপর সব ভালো কাজে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ভালো কাজের সাথে যারা সম্পৃক্ত থাকে তারা সেই ভালো কাজের কারণে এবং ভালো কাজের মধ্যে জীবনে অনাবিল সুখ, শান্তি, আনন্দ, স্রষ্টা ও মানুষের ভালোবাসা, সাফল্য ও সমৃদ্ধি সবই খুঁজে পায় এবং তা উপভোগ করে ধন্য হয়। পক্ষান্তরে ভালো কাজ থেকে যারা নিজেদেরকে গুটিয়ে নেয় তারা সুখ, শান্তি ও আনন্দ উপভোগের লক্ষ্যে হোক কিংবা আত্মভোলা হয়ে হোক শয়তারের ফাঁদে পা দিয়ে ক্রমেই অতিশয় ব্যস্ত হয়ে পড়ে খারাপ কাজে ও চিন্তায়, বেহুদা কাজে ও চিন্তায় অথবা আলসেমিতে। 

    ভালো কাজের পথ এড়িয়ে মানুষ যতোবেশী খারাপ বা বেহুদা চিন্তা-কর্ম অথবা ভোগবিলাস ও আলসেমি উপভোগে সময়, অর্থ, শ্রম ও চিন্তা বিনিয়োগ করে ততোই চক্রাকারে তারা এপথে অধিকতর ব্যস্ত হয়ে পড়ে; ততোবেশী এ পথে তারা উপর্যুপরি আকৃষ্ট ও প্রলুব্ধ হয়ে সবকিছু হারায়। এর চূড়ান্ত পরিণতিতে নিঃস্বতা ও দেউলিয়াত্বের অসহায়ত্ব তাদেরকে ঐ একই পথে আরো বেশী তাড়িত এবং মাতাল করে তোলে। অবশেষে তারা প্রবৃত্তি ও শয়তানের অন্ধ দাসে পরিণত হয়। এইভাবে  তাদেরকে চরম ব্যর্থ বানানোর পর তাদেরকে দেখে শয়তান খিলখিলিয়ে পরম সাফল্যের অট্ট হাসি হাসে।
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ কলামিস্ট গ্রন্থপ্রনেতা, এটর্নি এট ল' টেক্সাস ইউএসএ এল এল এম, হার্ভার্ড ল স্কুল। 

Post a Comment

0 Comments