Recent Tube

রাষ্ট্রের দায়িত্ব আরমানকে পরিবারের কাছে পৌছে দেয়া। মতিউর রহমান আকন্দ।




রাষ্ট্রের দায়িত্ব আরমানকে পরিবারের কাছে পৌছে দেয়া;
-------------------------------

৯ আগষ্ট।
আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের একটি দিন। এ দিন আমার অনুজ ব্যারিষ্টার আরমানকে তার বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায় সাদা পোশাকধারী আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যগন। আরমানের স্ত্রী এ বিষয়ে একটি জিডি করেছিল।যখন আরমানকে দীর্ঘ দিনেও পাওয়া যাচ্ছিল না তখন তার স্ত্রী দেশের আইনের আশ্রয় নিয়েছিল। আরমান এ দেশের একজন নাগরিক। সে সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সদস্য। দেশের একজন নাগরিক দীর্ঘদিন যাবৎ নিখোঁজ আছে। তাকে খোঁজে বের করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আরমানের স্ত্রীর দায়ের করা মামলাটি তদন্তাধীন আছে। আমরা আশা করি আরমানকে দ্রুত তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে।

    আরমানের বাবা শহীদ মীর কাসেম আলীর সাথে আরমানের শেষ সাক্ষাৎ হয়নি। কলিজার টুকরা সন্তানকে এক নজর দেখার আকুতি নিয়ে তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।ফাঁসী কার্য করের আগে শহীদ মীর কাসেম আলীর সাথে আইনজীবী হিসেবে আমাদের শেষ সাক্ষাৎকারটি ছিল অত্যন্ত বেদনা বিধুর।প্রতিবার সাক্ষাতে আরমান আমাদের সাথে থাকতো।কিন্ত বিদায় বেলায় আমরা আরমানকে সংগে নিয়ে যেতে পারিনি। আমাদের হৃদয়টা ছিল বিষাদে ভরপুর। মীর কাসেম ভাই বুঝতে পেরেছিলেন আমাদের অন্তরের আর্তনাদ। পিতা হয়েও তিনি সেদিন চরম ধৈর্য ধারন করে বলেছিলেন:

   “আমি আরমানের বাবা,আর আমার স্ত্রী আয়েশা আরমানের মা হতে পারে কিন্তু মনে রেখো,আমরা আরমানের মালিক নই।আরমানের মালিক আল্লাহ। অতএব মালিক যা সিদ্ধান্ত নেন তাই হবে। এ ব্যাপারে তোমরা আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবে পাবে। আমার শাহাদাতের পর যদি আরমান ফিরে আসতে পারে তাহলে সেই আমার জানাযায় ইমামতি করবে।আর যদি তাকে পাওয়া না যায় তখন জামায়াত সিদ্ধান্ত দিবে কে আমার জানাযায় ইমামতি করবে!”

    শহীদ মীর কাসেম ভাই বলেছিলেন: 
“আজ আমার সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে শহীদ আব্দুল মালেক ভাইয়ের কথা। স্কুল জীবনে ঢাকায় এক শিক্ষাশিবিরে এসেছিলাম। রাত হয়ে যাওয়ায় আমাদের থাকার জায়গা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের ১১২ নং কক্ষে। সেই কক্ষে থাকতেন শহীদ আব্দুল মালেক।সেটা ১৯৬৭ সালের কথা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতেই আমার মনটা বড় হয়ে গেলো। মালেক ভাইয়ের রূমের দরজায় লেখাছিল ‘ তোমাদের মধ্যে একটি দল থাকতেই হবে যারা মানুষকে ভালোর দিকে আহবান জানাবে। সৎ কাজের আদেশ দিবে অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে। এরাই হবে সফল কাম।’(আল এমরান-১০৪) 

দরজায় আরেকটি কোটেশন লেখা ছিল ‘আমরা ততক্ষন পর্যন্ত নীরব হবোনা নিথর হবোনা নিস্তব্ধ হবোনা যতক্ষন না আলকুরআনকে একটি বিজয়ী আদর্শ হিসেবে দেখতে পাবো।’

    মীর কাসেম ভাই আবেগ আপ্লুত হয়ে বললেন কে জানতো এর দু বছর পর মালেক ভাই শহীদ হবেন; আর ৪৯ বছর পর আল্লাহ আমাকে শাহাদাতের মৃত্যু দিবেন! 
শহীদ মীর কাসেম ভাই আল্লাহর দরবারে হাজির হয়েছেন ২০১৬ সালে।আজ ৫ বছর হলো। আরমানও নিখোঁজ রয়েছে ৫ বছর হলো। আরমানের মা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সন্তানের জন্য। আরমানের সন্তানরা  অপেক্ষা করছে বাবার জন্য। আজ ৯ আগষ্ট আল্লাহর কাছে দোয়া করি হে আল্লাহ তুমি আরমান কে তার স্নেহময়ী দু:খিনী মা ও পিতৃ স্নেহ বঞ্চিত শিশু সন্তানদের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্হা করে দাও!
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments