Recent Tube

নারীকন্ঠ- কিছু কথা - জিয়াউল হক।



        
               নারীকন্ঠ- কিছু কথা -

--------------------------------- 

   আমরা কথা বলি। উঁচু গলায়, নীচু গলায়, কখনও কখনও বা ফিসফিসিয়ে। আমাদের গলার আওয়াজ সব সময়ই যে সকলের কাছে শ্রুতিমধুর মনে হবে,তা নয়। এটাকে শ্রুতিমধুর হিসেবে উপস্থাপন করতে হয়। প্রচন্ড রাগের সময় বিবাদমান দু’টি পক্ষ ঝগড়া বা তর্ক বিতর্কের মধ্যে যে সব কথা বলেন, তা যেমন শ্রুতিমধুর নয়, তেমনই খুব শালীন ও ভদ্রভাষায় কথা বললেও যে তা শ্রুতিমধুর হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই, বরং তেমনটা না হবারই সম্ভাবনা বেশি। কারণ ঐ যে কথার স্বর ও আওয়াজ উঁচু হওয়া। কর্কশও হতে পারে। প্রকাশভঙ্গী রুক্ষ হতে পারে। কথার মধ্যে ক্ষোভ ও উষ্মাা থাকতে পারে। এসবের কোন কোনটা মিলে কথাকে অনাকর্ষণীয় করে তোলে।

    ঝগড়া, বিতর্ক, বাদানূবাদের বেলাতেই কেবল নয় স্বাভাবিক বিচারেও মানুষের মধ্যে গলার স্বরে বিস্তর তারতাম্য দেখা যায়। আমরা শিশুদের হৈ চৈ শুনতে শুনতে অনেক সময় অস্থির হয়ে পড়ি। আবার কখনও কখনও বাড়ির মহিলাদের উঁচু গলা বড়ো বেমানান বলে মনে হয়। অনেকে তো নারীর উঁচু গলার উঁচু আওয়াজ নিয়ে প্রায়শই ক্ষোভ ঝাড়েন। 

     মা চাচিরা, মুরব্বিরা বাড়ির কিশোরী তরুণীদের পরামর্শ দেন, উঁচু গলায় কথা না বলতে। ধর্মের অনুশাসন, নীতি নৈতিকতার দোহাই দিয়ে নিচু স্বরে কথা বলতে বলেন। নীচু স্বরে কেবল নারী কেন কথা বলবে? নীচু স্বরে বা কোমল স্বরে শান্ত মেজাজে কথা তো নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই বলা প্রয়োজন। 

     তা সত্তেও সকলে বার বার কেন নারীকেই গলার স্বর নীচু রাখতে বলেন? আসলেই কি নারীর গলার স্বর চড়া? তাদের কন্ঠস্বরে কি পুরুষের তুলনায় কোন ভিন্নতা রয়েছে? নারীর গলার স্বর কোমল হয়, শ্রুতিমধুর হয়, আকর্ষণীয়া হয়ে থাকে প্রকৃতিগতভাবেই। মায়ের জাত, মমতার ধারক, প্রকৃতিই তাদের কন্ঠে সে মাধুর্যতা ঢেলে দিয়েছেন।

    পুরুষ যতো জোরেই চেঁচাক না কেন? সে নারীর মতো জোর তার গলায় কখনই তুলতে পারবে না। আবার একজন নারী যতোই তার গলায় জোর তুলুন না কেন, তিনি একজন শিশুর মতো চিৎকার করতে পারবেন না। মজার বাপার হলো, এই শিশুটিই আবার যখন পূর্ণ বয়স্ক হবে, নারী বা পুরুষ হিসেবে তার গলার স্বরের মধ্যে পার্থক্য এসে ধরা দেবে। এই পার্থক্য নারী পুরুষের গলার স্বর বিবেচনায় নয়, সেটা গলায় কার কতোটা জোর, সে বিবেচনায়। 

   এই যে পার্থক্য তার সুনির্দিষ্ঠ কারণ রয়েছে। এটা জন্মগত, প্রকৃতিগত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই একজন নারীকে তার গলায় এতোটা শক্তি দিয়ে দিয়েছেন। গলার আওয়াজ চড়াবার শক্তি, সেই আওয়াজকে ক্রমাগত ব্যবহার করে যাবার শক্তি একজন নারী জন্মগতভাবেই বেশি পেয়ে থাকেন। 

    গলার আওয়াজের তিব্রতা, তার রুপ, প্রকৃতি এসব নির্ভর করে মানুষের ভোকাল কর্ড বা স্বরনালীর উপর। এতে সৃষ্ট কম্পনের মাধ্যমে আওয়াজ তৈরি হয়। একজন পুরুষ প্রতি সেকেন্ডে তার স্বরনালীতে গড়ে ১২০টি কম্পন তুলে থাকেন। তবে এটা হলো গড়পড়তা এবং সাধারণভঙ্গিতে কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রে। ফিসফিসিয়ে নীচু স্বরে বা লো পিচে কথা বলা কিংবা অত্যন্ত উচ্চস্বরে হাই পিচে কথা বলার বেলায় এই সংখ্যার ক্ষেত্রে ব্যাপক তারতম্য ঘটতে দেখা যায়। যেমন একজন পুরুষের স্বরনালী কম্পন বা ভাইব্রেশন ৪০ - ৩৫০/সেকেন্ডে।

    এর বিপরিতে একজন নারী স্বরনালীতে সাধারণভঙ্গিতে কথা বলার সময়  ২০০/সেকেন্ডে কম্পন তৈরি হয়। তিনি যখন নীচু স্বরে কথা বলেন তখনও তার স্বরণালীর কম্পন থাকে ১৫০ /সেকেন্ডে (পুরুষের চেয়ে ৩৫০% বেশি!)। আর তা যখন চড়ে, তখন গিয়ে পৌছায়  ১৫০০ /সেকেন্ড কম্পন, তথা, একজন পুরুষের চেয়ে প্রায় ৪০০% এরও বেশি! আর একজন শিশুর বেলায় তার স্বরনালীর সর্বনি¤œ কম্পন হলো ৩০০ /সেকেন্ড, অর্থাৎ একজন পুরুষের সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি প্রায়। 

    এই যে তারতম্য, এ কারণেই শিশুর কিচির মিচির যতোই আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য হোক না কেন, তাদের চিৎকার কিন্তু কান ঝালাপালা করে দিতে পারে। আর অপরদিকে একজন নারীর স্বরনালী নিয়ে এক নারী ছাড়া আর সকলেই থাকেন বিপদে। বিষয়টা বেশিরভাগ নারী না বুঝেন, আর না তা তাদেরকে বুঝানো যায়। একজন নারী যখন কথা বলেন, কথা বলতে বলতে তিনি রেগে যান, তখন তার গলার স্বর চড়তে থাকে। পুরুষ তাকে ‘আস্তে’ কথা বলতে বললে তিনি আরও ক্ষেপে যান। গলার স্বর চড়িয়ে জিজ্ঞেস করেন; আমার গলার স্বর কি চড়া? আঁ, চড়া?

    তিনি বুঝতেই পারেন না যে, তার গলার স্বর আসলেই ‘চড়া’। এই চড়া গলাটা তার দোষ নয়, বরং সম্পদ, তার শক্তি। এই সম্পদ, এই শক্তির জোরে বাচ্চা তো বাচ্চা, বাচ্চার বাপও তটস্থ থাকেন, তা না হলে এই সংসার কি টিকতো? নারী তোমার শক্তি জানো। তোমাকে যখন স্বর নিচু করতে বলা হয়, তখন তোমার শক্তির এই বিশেষ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়েই তা বলা হয়ে থাকে। আর পুরুষ তুমিও জেনে নাও, নারীর গলার স্বর উঁচু শোনালেই যে তা তার পক্ষ হতে তোমার প্রতি ‘বেয়াদবি’ তাও নয়। এটাকেও তার সেই বিশেষ প্রকৃতিগত ও সৃষ্টিগত প্রেক্ষাপটেই বিবেচনা করতে হবে।
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক গবেষক ও দাঈ। 

Post a Comment

0 Comments