Recent Tube

মূলঃ আল-ফিকহুল আকবর; ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহঃ




 গ্রন্থঃ আল-ফিকহুল আকবর;
 অধ্যায়ঃ ইমাম আবূ হানীফা ও আল-ফিকহুল আকবার;

 
১৬. ইবন তাইমিয়ার মন্তব্য ;

  ইমাম আবূ হানীফার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর আলোচনা শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়ার বক্তব্য দিয়ে শেষ করব। আমরা আগেই বলেছি, ইমাম আবূ হানীফাকে কলঙ্কিত করতে জালিয়াতগণ অনেক জালিয়াতি করেছে। এমনকি তাঁর নামে ‘কিতাবুল হিয়াল’ নামে একটি জাল পুস্তক রচনা করে প্রচার করেছে। এ পুস্তকে জঘন্য দীন বিরোধী কথা ইমামের নামে লেখা হয়েছে। ৪র্থ-৫ম হিজরী শতক পর্যন্ত কেউ উল্লেখ করেন নি যে, ইমাম আবূ হানীফা কিতাবুল হিয়াল নামে কোনো বই লিখেছেন। সম্ভবত ৪র্থ-৫ম শতকের কোনো জালিয়াত তা রচনা করে। এরপর তারা এ পুস্তকের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকের অনেক প্রসিদ্ধ আলিমের বক্তব্য জাল করেছে। এ পুস্তক প্রসঙ্গে ইবন তাইমিয়া বলেন:


إنَّ هَذِهِ الْحِيلَةَ الَّتِي هِيَ مُحَرَّمَةٌ فِي نَفْسِهَا لا يَجُوزُ أَنْ يُنْسَبَ إلَى إمَامٍ أَنَّهُ أَمَرَ بِهَا فَإِنَّ ذَلِكَ قَدْحٌ فِي إمَامَتِهِ وَذَلِكَ قَدْحٌ فِي الأُمَّةِ حَيْثُ ائْتَمُّوا بِمَنْ لا يَصْلُحُ لِلإِمَامَةِ


 ‘‘এ সকল হারাম হীলা উম্মাতের একজন ইমামের বক্তব্য হতে পারে না। তিনি কখনোই এরূপ হীলা-বাহানার নির্দেশ দিতে পারেন না। তাহলে তো তিনি ইমাম হওয়ার অযোগ্য বলে প্রমাণিত হবেন। আর সেক্ষেত্রে উম্মাতে মুহাম্মাদী অযোগ্য উম্মাত বলে প্রমাণিত হবে; কারণ তারা অযোগ্য একজনকে ইমাম হিসেবে গ্রহণ করেছে।’’[1]

   বস্ত্তত ইবন তাইমিয়ার অধ্যয়ন ছিল অত্যন্ত ব্যাপক। এ কারণে হানাফী ফিকহ তিনি যেভাবে বুঝেছেন, অন্য মাযহাবের অন্য কোনো আলিম সেভাবে বুঝেন নি। তিনি বিভিন্ন গ্রন্থে ইমাম আযমের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ খন্ডন করেন। উপরন্তু অনেক ফিকহী ও উসূলী বিষয়ে তিনি হাম্বালী মাযহাব পরিত্যাগ করে হানাফী মত গ্রহণ করেন। তাঁর বক্তব্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। যারা ইমাম আবূ হানীফাকে কলঙ্কিত করতে চেষ্টা করেছেন বা করছেন তাঁরা জেনে অথবা না জেনে উম্মাতে মুহাম্মাদীকে কলঙ্কিত করছেন।

  ৭/৮ জন সাহাবী থেকে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত প্রায় মুতাওয়াতির হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর পরের তিন প্রজন্মের প্রামাণ্যতা ও বরকতের সাক্ষ্য দিয়েছেন।[2] সে বরকতময় দ্বিতীয় হিজরী শতকে যাকে আলিমগণ, সাধারণ মানুষ ও রাষ্ট্র প্রশাসন মুসলিমদের অন্যতম একজন ইমাম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন পরবর্তী যুগে এসে তাঁকে অযোগ্য প্রমাণ করার অর্থ উম্মাতে মুহাম্মাদীকে অযোগ্য প্রমাণ করা। আর দ্বিতীয় শতকের উম্মাতকে অযোগ্য প্রমাণ করার অর্থ কী হতে পারে তা আমরা বুঝতে পারছি।

   বস্ত্তত সামান্য কিছু মতভেদ নিয়ে যে দুঃখজনক বাড়াবাড়ি পূর্ববর্তী কয়েক শতকে ঘটেছে দীনের স্বার্থে ও উম্মাতের স্বার্থেই আমাদেরকে তাঁর ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। মহান আল্লাহ ইমাম আবূ হানীফাকে এবং তাঁর বিরুদ্ধে উম্মাতের যে সকল প্রাজ্ঞ আলিম ও বুজুর্গ কথা বলেছেন তাঁদের সকলকেই ক্ষমা করুন, রহমত করুন এবং দীনের জন্য তাঁদের অবদান কবুল করে তাঁদেরকে সর্বোত্তম পুরস্কার প্রদান করুন। আমীন!
--------------------------------- 
[1] ইবন তাইমিয়া, আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা ৬/৮৫; ইকামাতুত দলীল, পৃ. ৯৬। [2] বিস্তারিত দেখুন ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, ‘বুহূসুন ফী উলূমিল হাদীস, পৃ. ২৯-৩২।

Post a Comment

0 Comments