Recent Tube

সুলাইমান (আঃ) নবীর সেক্রিফাইসঃ- আরিফুল ইসলাম।




  

        সুলামান (আঃ) নবীর      সেক্রিফাইসঃ-

    নবী সুলাইমানের (আলাইহিস সালাম) দ্রুতগামী ঘোড়া ছিলো। তাঁর ঘোড়াগুলোতে ডানা ছিলো। অসম্ভব সুন্দর ঘোড়া। একবার দেখলে শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে। দেখতে দেখতে কিভাবে সময় চলে যেতো, বুঝাই যেতো না।

    একদিন পড়ন্ত বিকেলবেলা সুলাইমান (আলাইহিস সালাম) তাঁর দৃষ্টিনন্দন ঘোড়াগুলো দেখতে লাগলেন। তিনি মুগ্ধ হয়ে ঘোড়াগুলো দেখতে দেখতে ভুলেই যান যে, আসরের নামাজের ওয়াক্ত চলে গেছে!

    যখন বুঝতে পারলেন যে, ঘোড়ার প্রতি মুগ্ধতা তাঁর নামাজে বিঘ্ন ঘটিয়েছে, তখন তিনি আফসোস করলেন। আফসোস করেই ক্ষান্ত হলেন না। তিনি ঘোড়াগুলোকে আবার নিয়ে আসার নির্দেশ দিলেন। নবী সুলাইমানের (আলাইহিস সালাম) প্রিয় ঘোড়াগুলোকে আবারো তাঁর সামনে নিয়ে আসা হলো।

   কিছুক্ষণ আগে যে ঘোড়াগুলো দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন, এবার সেই ঘোড়াগুলোকে জবাই করার নির্দেশ দিলেন!

    তিনি এই কাজ কেনো করলেন? ঘোড়াগুলোর প্রতি তাঁর মুগ্ধতা কি কমে গিয়েছিলো? উত্তর হলো- না। ঘোড়াগুলোর প্রতি মুগ্ধতা তাঁকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করেছিলো। এজন্য তিনি সেগুলো আল্লাহর রাস্তায় কুরবানি করলেন। [সূরা সা’দ ৩৮: ৩১-৩৩]

     একজন মুমিনের দৈনন্দিন জীবনযাপনে সবচেয়ে বড়ো প্রায়োরিটি হলো আল্লাহর ইবাদাত করা। আল্লাহর ইবাদাত করতে গিয়ে যেসব বাধা তার সামনে আসে, সেগুলোকে পাশ কেটে আল্লাহর ইবাদাতে মনোনিবেশ করতে হয়।

   আবু তালহা আনসারী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) নামের একজন সাহাবীর একটি বাগান ছিলো। তাঁর বাগানটি এতো বিখ্যাত ছিলো যে, সবাই এটা চিনতো। আমাদের সময়ে চিন্তা করুন একজন ব্যক্তির একটি রিসোর্ট বা পিকনিক স্পট আছে। সবাই তো জানবে যে, ঐ রিসোর্ট বা পিকনিক স্পটটি অমুক ব্যক্তির।

    একদিন আবু তালহা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর বাগানে নামাজ পড়ছিলেন। একটি ছোটো পাখি বাগানে ঢুকলো। পাখিটি কোথায় যাবে, পথ খুঁজে পাচ্ছিলো না; এদিক-সেদিক ঘুরতে লাগলো। আবু তালহা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) নামাজে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে পাখির এদিক-সেদিক ছুটে চলা দেখতে লাগলেন। তাঁর খুব ভালো লাগলো। ছোট্ট পাখির দুষ্টুমি দেখতে দেখতে হঠাৎ তাঁর ভাবোদয় হলো- তিনি তো নামাজ পড়ছেন।

    আবার নামাজে মনোযোগ দিলেন। এবার আর মনে করতে পারছেন না যে, তিনি কতো রাকআত নামাজ পড়েছেন।

   নামাজ শেষে তিনি বুঝতে পারলেন যে, এই সম্পদ তাঁকে পরীক্ষায় ফেলেছে। সম্পদের মোহে পড়ে তাঁর নামাজে মনোযোগ নষ্ট হয়েছে। তিনি সোজা চলে গেলেন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে। রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গিয়ে সব কথা খুলে বললেন।

   অতঃপর আবু তালহা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন,
“ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি এই সম্পদ আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করছি। আপনি যেখানে পছন্দ তা ব্যয় করুন।” [মুয়াত্তা, ইমাম মালিক: ২১৪]

   নবী সুলাইমান ও সাহাবী আবু তালহার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ঘটনা দুটোর মধ্যে একটি মিল পাওয়া যায়। আর সেটা হলো- আল্লাহর ইবাদাতে যা বিঘ্ন ঘটাচ্ছে, সেটাকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা। সুলাইমান (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর রাস্তায় কুরবানি করলেন তাঁর প্রিয় ঘোড়া, আবু তালহা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) দান করলেন তাঁর বাগান।

   রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“তুমি যদি আল্লাহর জন্য কোনো কিছু ছেড়ে দাও, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই এরচেয়ে উত্তম কিছু দিয়ে তা পূরণ করবেন।” [মুসনাদে আহমাদ: ২২৫৬৫]

    মুমিনের প্রাপ্তিস্থান দুই জায়গায় হতে পারে। হয় সে দুনিয়াতে পাবে, নতুবা সে আখিরাতে পাবে; অথবা দুই জায়গায়ই পাবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মুমিন যদি দুনিয়াতে কিছু ত্যাগ করে, তাহলে আল্লাহ তাকে দুনিয়াতে এর বিনিময়ে কিছু না দিলেও আখিরাতে সেটার বিনিময় দান করবেন।

   আমরা প্রায়ই মোবাইল ফোন, ফেসবুক, গেইমিং, খেলাধুলাতে আসক্ত থাকি। এগুলোতে ডুবে থেকে ভুলেই যাই যে নামাজের সময় চলে যাচ্ছে। ফেসবুক ব্যবহার করতে গিয়ে কোনদিকে যুহরের নামাজের সময় চলে যাচ্ছে, কোনদিকে এশার নামাজের সময় চলে যাচ্ছে সেটা টেরই পাই না।

   একটি শক্ত সিদ্ধান্ত পারে আমাদের জীবনের মোড় বদলে দিতে। ফেসবুক ব্যবহার করা হয়তো আমরা একেবারেই বন্ধ করে দিতে পারবো না, ফেসবুক পরিচিত-অপরিচিত বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে, কলেজ-ভার্সিটির রুটিন, নোটিশের জন্য ফেসবুকে ঢুকতে হবে। আমাদের সীমাবদ্ধতা জেনে-বুঝে আমরা একটি শক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারি।

    মনে করুন, শখের বশে ফেসবুক ব্যবহার করতে গিয়ে আজ দুপুরে আমি যুহরের নামাজ মিস করলাম। আমি অসম্ভব রকমের অনুতপ্তবোধ করছি। আমি জানি যে, আজ সারাদিন বা আগামীকালও ফেসবুকে আমার না ঢুকলেও হবে, প্রয়োজনীয় কোনো ম্যাসেজ বা নোটিশের জন্য ফেসবুকে ঢুকতে হবে না।

    যে আসক্তির কারণে আমার আজকের নামাজ মিস হলো, সেই জায়গা থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে- আজ আমি আর ফেসবুক ব্যবহার করবো না। এটা নিজে নিজেকে দেয়া শাস্তি। আমি এভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে, যেদিন ফেসবুক ব্যবহারের কারণে আমার নামাজ মিস হবে, সেদিন আর ফেসবুকই ব্যবহার করবো না। ফেসবুক-ম্যাসেঞ্জার আন-ইন্সটল করে রাখবো অথবা আইডি ডিএক্টিভ করে রাখবো।

    নিজেকে দেয়া এমন শাস্তিগুলো বেশ কাজে লাগে। যদি নিজের কাছে সৎ থেকে এমন শাস্তি দেয়া যায়, সেটার সুদূরপ্রসারী ফলও পাওয়া যায়। কেননা এতে করে শাস্তি দেবার সময় নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা থাকায় শাস্তিটা যথাযথ হয়।

 লেখাঃ আরিফুল ইসলাম 
(আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)

Post a Comment

0 Comments