Recent Tube

আহলে বাইতের মর্যাদা: মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।





 
 আহলে বাইতের মর্যাদা:
--------------------------
১. আহলে বাইত বিদ্বেষী নাসিবী গোষ্ঠী খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত আলী (রাঃ) এর বিপক্ষে মুয়াবিয়া (রা) এর এবং ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর বিপক্ষে ইয়াযীদ বিন মুয়াবিয়ার দালালী করে তাদের বানোয়াট ফজিলত বর্ণনা করে। এরা আবার মুয়াবিয়া (রা) এর মুকাবিলায় খলিফাতুল মুসলিমীন আলী (রা) কে এবং ইয়াযীদের মোকাবিলায় হোসাইন (রা) কে দোষী ও অপরাধী মনে করে, (নাউযুবিল্লাহ!)। কিন্তু নাসিবী মার্কা মুনাফিকদের জানা উচিত স্বয়ং আল্লাহ তা'য়ালার নিকট আহলে বাইত (দোষ থেকে) পবিত্র। উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ 
خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَدَاةً وَعَلَيْهِ مِرْطٌ مُرَحَّلٌ مِنْ شَعْرٍ أَسْوَدَ فَجَاءَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ فَأَدْخَلَهُ ثُمَّ جَاءَ الْحُسَيْنُ فَدَخَلَ مَعَهُ ثُمَّ جَاءَتْ فَاطِمَةُ فَأَدْخَلَهَا ثُمَّ جَاءَ عَلِيٌّ فَأَدْخَلَهُ ثُمَّ قَالَ ( إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمْ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا )
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে বের হলেন। তাঁর গায়ে ছিলো কাল চুন দ্বারা খটিত একটি পশমী চাঁদর। হাসান ইবনু আলী (রাঃ) এলেন, তিনি তাঁকে চাঁদরের ভেতর ঢুকিয়ে নিলেন। হুসায়ন ইবনু আলী (রাঃ) এলেন, তাঁকে চাঁদরের ভেতর ঢুকিয়ে নিলেন। ফাতিমা (রাঃ) এলেন, তাকেও ভেতরে ঢুকিয়ে ফেললেন। অতঃপর আলী (রাঃ) এলেন, তাঁকেও ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন। পরে বললেনঃ 'হে আহলে বাইত! আল্লাহ তাআলা তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে বিদুরিত করে তোমাদের পবিত্রময় করতে চান।' (সূরা আহযাব: ৩৩/৩৩; সহীহ মুসলিম হাঃ ২৪২৪; জামে তিরমিযী হাঃ ৩২০৫, ৩৭৮৭) 

২. ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ 
أَحِبُّوا اللَّهَ لِمَا يَغْذُوكُمْ مِنْ نِعَمِهِ وَأَحِبُّونِي بِحُبِّ اللَّهِ وَأَحِبُّوا أَهْلَ بَيْتِي بِحُبِّي.
তোমরা আল্লাহ তা'আলাকে মহব্বত কর। কেননা তিনি তোমাদেরকে তার নিয়ামাতরাজি খাবার খাওয়াচ্ছেন। আর আল্লাহ্ তা'আলার মহব্বতে তোমরা আমাকেও মহব্বত এবং আমার মহব্বতে আমার আহলে বাইতকেও মহব্বত কর। (জামে তিরমিযী হাঃ ৩৭৮৯; মুস্তাদরাক হাকীম ৩/১৬২; ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান এবং ইমাম হাকীম ও যাহাবী সহীহ বলেছেন) 
আমরা শুধুমাত্র আল্লাহর মুহাব্বত ও সন্তুষ্টির জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও তাঁর আহলে বাইতের মুহাব্বত রাখি।

৩. প্রথম খলিফা হযরত আবূ বাকর (রাঃ) বলেন, 
وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَقَرَابَةُ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَحَبُّ إِلَيَّ أَنْ أَصِلَ مِنْ قَرَابَتِي
আল্লাহর কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমার আত্মীয়দের সঙ্গে উত্তম আচরণ করার চেয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আত্মীয়দের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা আমি অধিক পছন্দ করি। (সহীহ বুখারী হাঃ ৩৭১২) তিনি আরো বলেন,
 ارْقُبُوْا مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم فِيْ أَهْلِ بَيْتِهِ.
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সন্তুষ্টি তাঁর পরিবারবর্গ আহলে বায়তের প্রতি সদাচরণের মাধ্যমে অর্জন কর। (সহীহ বুখারী হাঃ ৩৭৫১) 

৪. হযরত যায়েদ ইবনু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী “খুম” নামক স্থানে দাড়িয়ে আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও সানা বর্ণনা শেষে ওয়ায-নসীহত করলেন। তারপর বললেন, 
أَلَا أَيُّهَا النَّاسُ فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ يُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَ رَسُولُ رَبِّي فَأُجِيبَ وَأَنَا تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ أَوَّلُهُمَا كِتَابُ اللَّهِ فِيهِ الْهُدَى وَالنُّورُ فَخُذُوا بِكِتَابِ اللَّهِ وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ فَحَثَّ عَلَى كِتَابِ اللَّهِ وَرَغَّبَ فِيهِ ثُمَّ قَالَ وَأَهْلُ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمْ اللَّهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمْ اللَّهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمْ اللَّهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي.
সাবধান, হে লোক সকল! আমি একজন মানুষ, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ফিরিশতা আসবে, আর আমিও তাঁর ডাকে সাড়া দেব। আমি তোমাদের কাছে ভারী দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি! এর প্রথমটি হলো আল্লাহর কিতাব। এতে হিদায়াত এবং নূর রয়েছে। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কিতাবকে অবলম্বন কর, একে শক্ত করে ধরে রাখো। এরপর কুরআনের প্রতি আগ্রহ ও অনুপ্রেরণা দিলেন। তারপর বলেনঃ আর হলো আমার আহলে বাইত। আর আমি আহলে বাইতর ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্বরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতর ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্বরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতর ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। (সহীহ মুসলিম হাঃ ২৪০৮, মুসনাদে আহমদ হাঃ ১৮৭৮০, সুনান দারেমী হাঃ ৩৩১৬)

৫. জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি তার বিদায় হজ্জে আরাফার দিন বলতে শুনেছিঃ 
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي قَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا إِنْ أَخَذْتُمْ بِهِ لَنْ تَضِلُّوا كِتَابَ اللَّهِ وَعِتْرَتِي أَهْلَ بَيْتِي.
হে লোক সকল! নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আমি এমন জিনিস রেখে গেলাম, তোমরা তা ধারণ বা অনুসরণ করলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে নাঃ আল্লাহ তা'আলার কিতাব আল-কুরআন এবং আমার আহলে বাইত। (জামে তিরমিযী হাঃ ৩৭৮৬; মিশকাত হাঃ ৬১৪৩; হাদীস সহীহ। আরো দেখুন - আহমদ হাঃ ১০৮২৭, ১১১৬৭) 

৬. কা‘ব ইবনু ‘উজরা (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বললেন,
سَأَلْنَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ الصَّلاَةُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ فَإِنَّ اللهَ قَدْ عَلَّمَنَا كَيْفَ نُسَلِّمُ عَلَيْكُمْ قَالَ قُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
আমরা রসূলুল্লাহ ﷺ-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনাদের উপর অর্থাৎ আহলে বাইতের উপর কিভাবে দরূদ পাঠ করতে হবে? কেননা, আল্লাহ তো (কেবল) আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাম করব। তিনি বললেন, তোমরা এভাবে বল, ‘‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ﷺ-এর উপর এবং মুহাম্মাদ ﷺ-এর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপ আপনি ইবরাহীম (‘আ.) এবং তাঁর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ এবং মুহাম্মাদ ﷺ-এর বংশধরদের উপর তেমনি বরকত দান করুন যেমনি আপনি বরকত দান করেছেন ইবরাহীম (‘আ.) এবং ইবরাহীম (‘আ.)-এর বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অতি মর্যাদার অধিকারী। (সহীহ বুখারী হাঃ ৩৩৭০, সহীহ মুসলিম হাঃ ৪০৬, মুসানাদে আহমদ হাঃ ১৬১৫৬)
আমরা প্রত্যেক সালাতে ও সালাতের বাহিরে মুহাব্বতের সাথে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও তাঁর আহলে বাইতের প্রতি দরূদ পাঠ করি। হে আল্লাহ আমরা রাসূলুল্লাহ ও তাঁর আহলে বাইতের প্রতি মুহাব্বত রাখি। সুতরাং তাদের সাথে আমাদের হাশর করায়ো। (আমিন)
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা আলোচক ও দাঈ। 

Post a Comment

0 Comments