Recent Tube

বিতি কিচ্ছা-৮২; নুর মুহাম্মদ চৌধূরী (মুবিন)।



                        বিতি কিচ্ছা;
                                র্ব-২;

সুজন কোথা আজ:
----------------------

সহযাত্রীর সাথে সূ-সম্পর্ক থাকলেই থাকে সূখানুভুতি। সহযাত্রীরা পারষ্পরিক কল্যাণকামী না হয়ে যদি হয় আপন স্বার্থপ্রীতিতে অন্ধ, তবে এমন বন্ধুত্বে কোন তৃপ্তি বা সূখ নেই। বাস্তবিক অর্থে সুজন বুঝে সখ্য গড়ে তোলার কথা থাকলেও ক'জন আছে চিনতে পারে প্রকৃত মানের সুজন? কথায় আছে "শিখছো কোথা?ঠেকছি যেথা"। আসলে কি শিখেছে? উত্তর হল , মানুষ চিনতে ভূল করেছিল, তাই সে এবার মানুষ চিনতে শিখেছে। এইভাবে চিনতে চিনতে , আর তার মাসুল দিতে দিতে চক্ষু যায় যে বুজে,-তবু মানুষ চিনা হয়নাকো শেষ , এই মনুষ্য সমাজে।

   পারষ্পরিক কল্যাণকামী মানুষ তার প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক রেখে চলতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তৃপ্তির সাথে সে প্রতিবেশীর জন্য ত্যাগ স্বীকার করে। প্রতিবেশীকে আহার বিলায়, উপহার -উপঢৌকন পাঠায় প্রতিবেশীর তরে-যার কোন বিনিময় সে প্রত্যাশা করে না। অপরদিকে আত্নকেন্দ্রীক মানুষরা লাভের অংক কষতে গিয়ে আয়ু ক্ষয় করতে কুণ্ঠিত হয় না। ডিমওয়ালা আর বাদাম বিক্রেতার সাথে দরদাম করে জিতে যাবার মধ্যে যত বাহাদুরী আছে তার সবটুকুই প্রয়োগ করে দারুণ তৃপ্তি বোধ করে এরা। দ্রব্যের ন্যায্য মূল্য প্রদানে যেন আঁকাশ ভেঙ্গে পড়ে এদের মাথায়। এদেরকে হাট-বাজারে দেখলে সাধারণত: দোকানীরা অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তে দেখা যায় । এটা তাদের প্রাপ্য সম্মানই বটে। কখনওই এরা পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রদানে আগ্রহী হয় না। তাই "সস্তার তিন অবস্থা" এই প্রবাদটি এদের উপর শতত: বর্তায়। এরা ন্যায্য মূল্য অথবা ডিসকাউন্টের নামে ব্যপক প্রতারণার শীকার হয়েও তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে । আবার কখনও কখনও প্রতারণার রহস্য বা গোমড় ফাঁক প্রকাশ হয়ে পড়লে আপন মাথার চুল ছিড়তে থাকে।

    মূলত: এদের নিজেদের কারণেই এদের প্রতিবেশীরা ভিন্ন চোখে দেখে থাকে এদেরকে। আর দোকানীরা বাধ্য হয়েই এদের উপযোগী সদাই মজুত করে দু'নম্বরী দোকানদার হিসাবে সাব্যস্ত হয়। এরা আড্ডায় বসলে কত খেল আর কত গেল হিসেব নিয়ে থাকে চিন্তিত । বস্তুত চিন্তার গোলকধাঁধাঁয় ঘোরপাক খেতে খেতে এরা জীবন পার করে দেয় আস্ত:। অত:পর হিসাবের খাতায় শুন্য দেখে শততই হয় ব্যথিত ।

    এরা চিন্তা করে দেখেনা, এই দোকানীরা তাদের সন্তানের ও পরিবেশের পাহারাদার। সমাজের নৈতিক অধ:পতন রোধের সহায়ক জীবন্ত সি.সি ক্যামেরা । বিনা পারিশ্রমিকে শুধুমাত্র সামাজিক দায়িত্ববোধের কারণেই তারা এ কাজটি করে থাকেন। এরা দেখতে পায় না, তাদের প্রতিবেশী দোকানদার হঠাৎ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়নি। বরং সে এদের প্রায় প্রতিটি ঘরেই কমবেশ বিনিয়োগ করেছে, এবং যার ফলে সচ্ছলতা বলতে গেলে আকাশ-কুসুম কল্পনার পর্যায়ে উপনীত হয়ে আছে তার। এমতাবস্থায় প্রতিটি প্রতিবেশীকেই স্বীয় পরিমণ্ডলে তথা একান্ত ব্যক্তিগত বন্ধুমহলে যথেষ্ট উদারতার পরিচয় রাখার মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর ও বাসযোগ্য সমাজ বিনির্মানে সহায়ক ভূমিকা রাখা উচিৎ।

   প্রতিবেশীর অধীকার বিষয়ে পবিত্র কালামউল্লাহ শরীফের সুরা আন-নিসা'র ৩৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন ," তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো , তার সাথে কাউকে শরীক করো না, পিতামাতার সাথে ভাল ব্যবহার কর, নিকটাত্বীয় ইয়াতীম ও মিসকিনদের প্রতিও, এবং নিকট প্রতিবেশীর প্রতি, দূর প্রতিবেশীর প্রতি, পাশাপাশি চলার সাথী, ও পথিকদের প্রতি, এবং তোমাদের অধীনস্ত ক্রীতদাস ও দাসীদের প্রতি দয়া এবং অনুগ্রহ প্রদর্শণ কর। আল্লাহ এমন ব্যক্তিকে কখনও পছন্দ করেন না যে নিজ ধারণায় অহংকারী এবং নিজেকে বড় মনে করে আত্নগৌরবে বিভ্রান্ত"। 

    রাসুল (দ:) বলেন: "জিবরীল (আ) এসে আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে অবিরত উপদেশ দিতে থাকলেন, এমন কি আমার মনে হল, হয়ত তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানিয়ে দেবেন। " (বুখারী ও মুসলিম) । 

    আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , রাসুলুল্লাহ (দ:) বলেছেন: " বন্ধুদের মধ্যে আল্লাহর কাছে উত্তম বন্ধু ঐ ব্যক্তি যে তার সঙ্গীর কল্যাণকামী । প্রতিবেশীদের মধ্যে আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিবেশী ঐ ব্যক্তি যে তার প্রতিবেশীর কল্যাণকামী । " অর্থাৎ প্রতিবেশীর দৃষ্টিতে উত্তম প্রতিবেশীই উত্তম। ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, এবং বলেছেন এটি হাসান হাদীস্। 

    আবু শুরাইহ আল-খুজাই (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে নবী করীম (দ:) বলেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করে । যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার মেহমানের আদর আপ্যায়ন করে । যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে , সে যেন ভাল কথা বলে অন্যতায় চুপ থাকে (বুখিরী)।
---------------------------------- 
লেখকঃঃ ইসলামিক আর্টিকেল, প্রবন্দ্ধ লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments