Recent Tube

আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) এর কুফুরী আকিদারর অভিযোগঃ কুরাআন হেদায়াতের জন্য যথেষ্ট নাজাতের জন্য নয়ঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।





আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) এর কুফুরী আকিদার ।

অভিযোগঃ কুরাআন হেদায়াতের জন্য যথেষ্ট নাজাতের জন্য নয়ঃ
-------------------------------------
মওদুদী সাহেব কুরআনের বিষয়ে কুফুরী আকিদা পোষণ করেন। তিনি বলেছেন কুরআন হেদায়াতের জন্য যথেষ্ট নাজাতের জন্য নয়। (নাউযূবিল্লাহ)! এটি একটি সুস্পষ্ট কুফুরী আকিদা, সুুতরাং তিনি কাফের ও পথভ্রষ্ট গোমড়া।

পর্যালোচনাঃ 
আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) এর কোন লেখনি ও বক্তব্যে কড়া অনুসন্ধান চালিয়েও যখন অপবাদকারীরা শিরকি ও কুফুরী কোন প্রমাণ পায় নি তখন তারা জেদের বশে তাঁর বক্তব্য ও লেখনি কাটছাট করে, নিজের ইচ্ছামত বক্তব্য কনভার্ট করে তাকে কাফের ও গোমড়া প্রমাণ করার জন্য তা সাধারণ মুসলিমদের নিটক পেশ করে ধোঁকা দেয়। এ প্রসঙ্গটিও সেটারই একটি। 
 আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) শুধু একজন দ্বীনের দাঈ-ই ছিলেন না বরং তিনি দ্বীন ইসলাম প্রচার, প্রসার ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কার্য সম্পাদনের পাশাপাশি ইসলামের একজন মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করে ছিলেন। তাই তিনি তার মাসিক তরজমানুল কুরআনে নাস্তিক, মুশরিক, আহলে কিতাব, আহলে কুরাআন, আহলে হাদীস সহ সকল শ্রেণী মানুষের ইসলাম সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়ে আসছিলেন।

   হাদীস অস্বীকারকারী আহলে কুরআনের কবলে পড়ে এক ব্যক্তি আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) কে প্রশ্ন করেনঃ
"কুরআন মাজীদ কি মুক্তি বা নাজাতের জন্য যথেষ্ট নয়? যদি যথেষ্ট হয়, নামায সংক্রান্ত নিয়মাবলীকে- যা (হাদীসে রয়েছে কিন্তু) কুরআন বহির্ভূত- কেন প্রাথমিক কর্তব্য বলে ঘোষণা করতে হবে?"

  জবাবে আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) বলেনঃ
"কুরআনে হাকীম নাজাতের জন্য যথেষ্ট নয় বরং হেদায়াতের জন্য যথেষ্ট। এর কাজ হচ্ছে নির্ভুল চিন্তা ও সঠিক কর্মের পথ নির্দেশ করা। এ পথ নির্দেশের ব্যাপারে কুরাআন নিঃসন্দেহে যথেষ্ট।"
 একটু সামনে এগিয়ে আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) আরো বলেনঃ
"কুরআন এ দৃষ্টিতে হেদায়াতের জন্য যথেষ্ট যে, তাতে মানুষের সহজ-সরল পথে চলবার উপযোগী নির্ভুল জ্ঞান বর্তমান রয়েছে- তাতে আল্লাহর মনোনীত দ্বীনের সমস্ত মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু সে জ্ঞান থেকে উপকৃত হবাব জন্য দু'টি জিনিসের প্রয়োজন। প্রথমত, শিক্ষার্থীর আন্তরিক নিষ্ঠা থাকতে হবে এবং কুরআন বুঝার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক বিষয়গুলো তার অবহিত হতে হবে। দ্বিতীয়ত, কিতাবুল্লাহর বিষয়বস্তু বুঝার, তার আয়াতরাজির নির্ভুল অর্থ ও মর্ম বাতলাবার, তার বিধি-ব্যবস্থা নিজে পালন করে দেখাবার এবং তার আইন-কানুন বাস্তব জীবনে কার্যকারী করে সবের বিস্তৃত নিয়মাবলী নির্ধারণ করে দেবার উপযোগী এবং পারদর্শী শিক্ষাগুরু থাকতে হবে। এর প্রথম জিনিসটির সম্পর্ক হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তির সত্তার সঙ্গে। আর দ্বিতীয় জিনিসটির ব্যবস্থা স্বয়ং আল্লাহ তা'য়ালাই সম্পাদন করেছেন। পারদর্শী শিক্ষাগুরুর প্রয়োজন পূরুণ করার জন্যই আল্লাহ কুরআনের সাথে রাসূলে করীম (সা) কে পাঠিয়েছেন। শিক্ষাগুরু হিসাবে তিনি যা কিছু বলেছেন বা শিখিয়েছেন (তথা হাদীস), তা আল্লাহর তরফ থেকে আসতো- কুরাআন যেমন আল্লাহর তরফ থেকে আসতো। যে ব্যক্তি (হাদীস) এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে এবং কুরাআন কে এই অর্থে যথেষ্ট মনে করে যে, তদনুসারে আমল করার জন্য নবী করীম (সা) এর আদর্শিক বাস্তব হেদায়াত (তথা সুন্নাহ) এর প্রয়োজন নেই, সে মূলত এ কথায় বলেছে যে, শুধু কুরাআন অবতরণই যথেষ্ট ছিল এবং তার সঙ্গে একজন রাসূল পাঠিয়ে (নাউযূবিল্লাহ) একটি অনার্থক কাজ করেছেন।"
[দেখুনঃ আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) এর কিতাব, (তাফহীমাত) নির্বাচিত রচনাবলী, অধ্যায়:'কুরআন ও সুন্নাতে রাসূল (সা)' পৃঃ ২১০-২১২]


   মুহতারাম পাঠক! এবার বলুন, আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ যে জবাব পেশ করেছেন তা কি কুফুরী? যারা 'কুরআন নাজাতের জন্য যথেষ্ট' এ যুক্তি দেখিয়ে হাদীস অস্বীকার করে, আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ তাদের যে জবাব দিয়েছেন তা কুফুর তো দূরে থাক, তা যে ভুল এমন কথা কি বলতে পারবেন? বাতিল পন্থী ছাড়া এমন কথা কি কেউ বলতে পারে? আমরা পরিষ্কার ভাবে বলতে চাই, যারা আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ এর এ কথার বিরুদ্ধাচরণ করে তারা নিঃসন্দেহে মুনকারুল হাদীস, হাদীস অস্বীকারকারী। 


   সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) থেেক এ বিষয়ে স্পষ্ট ভাবে বর্ণিত হয়েছে:
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟْﻮَﻫَّﺎﺏِ ﺑْﻦُ ﻧَﺠْﺪَﺓَ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦُ ﻛَﺜِﻴﺮِ ﺑْﻦِ ﺩِﻳﻨَﺎﺭٍ، ﻋَﻦْ ﺣَﺮِﻳﺰِ ﺑْﻦِ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥَ، ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻋَﻮْﻑٍ، ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤِﻘْﺪَﺍﻡِ ﺑْﻦِ ﻣَﻌْﺪِﻳﻜَﺮِﺏَ، ﻋَﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻧَّﻪُ ﻗَﺎﻝَ " ﺃَﻻَ ﺇِﻧِّﻲ ﺃُﻭﺗِﻴﺖُ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﻣِﺜْﻠَﻪُ ﻣَﻌَﻪُ ﺃَﻻَ ﻳُﻮﺷِﻚُ ﺭَﺟُﻞٌ ﺷَﺒْﻌَﺎﻥُ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﺭِﻳﻜَﺘِﻪِ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺑِﻬَﺬَﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻓَﻤَﺎ ﻭَﺟَﺪْﺗُﻢْ ﻓِﻴﻪِ ﻣِﻦْ ﺣَﻼَﻝٍ ﻓَﺄَﺣِﻠُّﻮﻩُ ﻭَﻣَﺎ ﻭَﺟَﺪْﺗُﻢْ ﻓِﻴﻪِ ﻣِﻦْ ﺣَﺮَﺍﻡٍ ﻓَﺤَﺮِّﻣُﻮﻩُ ﺃَﻻَ ﻻَ ﻳَﺤِﻞُّ ﻟَﻜُﻢْ ﻟَﺤْﻢُ ﺍﻟْﺤِﻤَﺎﺭِ ﺍﻷَﻫْﻠِﻲِّ ﻭَﻻَ ﻛُﻞُّ ﺫِﻱ ﻧَﺎﺏٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴَّﺒُﻊِ ﻭَﻻَ ﻟُﻘَﻄَﺔُ ﻣُﻌَﺎﻫِﺪٍ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥْ  ﻳَﺴْﺘَﻐْﻨِﻲَ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﺻَﺎﺣِﺒُﻬَﺎ ﻭَﻣَﻦْ ﻧَﺰَﻝَ ﺑِﻘَﻮْﻡٍ ﻓَﻌَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﻘْﺮُﻭﻩُ ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﻳَﻘْﺮُﻭﻩُ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﻥْ ﻳُﻌْﻘِﺒَﻬُﻢْ ﺑِﻤِﺜْﻞِ ﻗِﺮَﺍﻩُ " .


   আল-মিক্বদাম ইবনু মা’দীকারিব (রহঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ জেনে রাখো! আমাকে কিতাব এবং তার সঙ্গে অনুরূপ কিছু (হাদীস) দেয়া হয়েছে। জেনে রাখো! এমন এক সময় আসবে যখন কোন প্রাচুর্যবান লোক তার আসনে বসে বলবে, (কুরাআনই নাজাতের জন্য যথেষ্ট) তোমরা শুধু এ কুরআনকেই গ্রহন করো, তাতে যা হালাল পাবে তা হালাল এবং যা হারাম পাবে তা হারাম মেনে নিবে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জেনে রাখো! গৃহপালিত গাধা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং ছেদন দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র পশুও নয়। অনুরুপ সন্ধিবদ্ধ অমুসলিম গোত্রের হারানো বস্তু তোমাদের জন্য হালাল নয়, অবশ্য যদি সে এর মুখাপেক্ষী না হয়। আর যখন কোন লোক কোন সম্প্রদায়ের নিকট আগন্তুক হিসাবে পৌঁছে তখন তাদের উচিত তার মেহমানদারী করা। যদি তারা তা না করে, তাহলে তাদেরকে কষ্ট দিয়ে হলেও তার মেহমানদারীর পরিমান জিনিস আদায় করার অধিকার তার আছে।
[সুনানে নাসায়ী, হাদিস নং ৪৬০৪। শায়েখ শুয়াইব আরনাউত আবু দাউদ এর তাহকিকে এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন।]


بَاب تَعْظِيمِ حَدِيثِ رَسُولِ اللهِ ﷺ وَالتَّغْلِيظِ عَلَى مَنْ عَارَضَه حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ الْجَهْضَمِيُّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، فِي بَيْتِهِ أَنَا سَأَلْتُهُ، عَنْ سَالِمٍ أَبِي النَّضْرِ، ثُمَّ مَرَّ فِي الْحَدِيثِ قَالَ أَوْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي رَافِعٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ "‏ لاَ أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ مُتَّكِئًا عَلَى أَرِيكَتِهِ يَأْتِيهِ الأَمْرُ مِمَّا أَمَرْتُ بِهِ أَوْ نَهَيْتُ عَنْهُ فَيَقُولُ لاَ أَدْرِي مَا وَجَدْنَا فِي كِتَابِ اللَّهِ اتَّبَعْنَاهُ ‏"‏ ‏.‏ 


   আবূ রাফি (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি যেন তোমাদের কাউকে এরূপ না পাই যে, সে তার আসনে হেলান দিয়ে বসে থাকবে এবং (এই অবস্থায়) আমার প্রদত্ত কোন আদেশ অথবা আমার প্রদত্ত কোন নিষেধাজ্ঞা (তথা হাদীস) তার নিকট পৌঁছলে সে বলবে, আমি কিছু জানি না, আমরা আল্লাহ্‌র কিতাবে যা পাবো তার অনুসরণ করবো। (কারণ কুরাআন নাজাতের জন্য যথেষ্ট) 
[দেখুনঃ তিরমিযী হাঃ২৬৬৩, আবূ দাঊদ হাঃ৪৬০৫, ইবনে মাযা হাঃ১৩, আহমাদ হাঃ২৩২৪৯। তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজুল মিশকাত হাঃ১৬২।]

 
   আফসোসের বিষয়! এরূপ দেওবন্দীদের মধ্যে পাওয়া গেছে। তারা যদিও সরাসরিভাবে এমন কথা বলে নি তবুও তারা হাদীস অস্বীকারকারী আহলে কুরআনদের যুক্তি 'কুরআন নাজাতের জন্য যথেষ্ট' সাপোর্ট করে পরোক্ষ ভাবে হাদীস অস্বীকার করেছে এবং বাতিল পন্থী আহলে কুরাআনদের কাতারে যোগ দিয়েছে। যদি এমনটা না হয়, তাহলে আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) এর এ জবাব কাটছাট করে প্রচার করার কারণ কি?

Post a Comment

0 Comments