Recent Tube

বাইয়াত হল জামায়াতী বন্ধনের সূত্র; মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।




বাইয়াত হল জামায়াতী বন্ধনের সূত্র;

  দ্বীন কায়েমের এই ঐতিহাসিক জিম্মাদারী পালন করতে গিয়ে শেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. একটি সত্যপন্থী জামায়াত গঠন করেন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সাহাবীদেরকে তিনি এমনভাবে তৈরি করেছিলেন যাদের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছিল। সাহাবীরা দ্বীন কায়েমের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে নবী সা. এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন। এই বাইয়াতের কথা কুরআন ও হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। দ্বীন কায়েমের জামায়াতের অধীনে বাইয়াতই হচ্ছে সহিহ বাইয়াত। 

إِنَّ الَّذِيْنَ يُبَايِعُوْنَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُوْنَ اللهَ ؕ  يَدُ اللهِ فَوْقَ أَيْدِيْهِمْ ۚ   فَمَنْ نَّكَثَ فَإِنَّمَا يَنْكُثُ عَلٰى نَفْسِهٖۚ  وَمَنْ أَوْفٰى بِمَا عَهَدَ عَلَيْهُ اللهَ فَسَيُؤْتِيْهِ أَجْرًا عَظِيْمًا ـ 

 ‘হে নবী! যারা তোমার হাতে বাইয়াত করছিল প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর কাছেই বাইয়াত করছিল। তাদের হাতের ওপর ছিল আল্লাহর হাত। যে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করবে তার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার অশুভ পরিণাম তার নিজের ওপরেই বর্তাবে। আর যে আল্লাহর সাথে কৃত এ প্রতিশ্রুতি পালন করবে, আল্লাহ অচিরেই তাকে বড় পুরস্কার দান করবেন।’ (সূরা আল ফাতহ : ১০) 

لَّقَدْ رَضِيَ اللهُ عَنِ الْمُؤْمِنِيْنَ إِذْ يُبَايِعُوْنَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِيْ قُلُوْبِهِمْ فَأَنْزَلَ السَّكِيْنَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيْبًا ـ

 ‘আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা গাছের নিচে তোমরা কাছে বাইয়াত করছিল। তিনি তাদের মনের অবস্থা জানতেন। তাই তিনি তাদের ওপর প্রশান্তি নাযিল করেছেন, পুরস্কার স্বরূপ তাদেরকে আশু বিজয় দান করেছেন।’ (সূরা আল ফাতহ : ১৮)

 قُلْ إِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ ـ

 ‘বলো, আমার নামায, আমার ইবাদাতের সমস্ত অনুষ্ঠান, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রব্বুল আলামিনের জন্য।’ (সূরা আল আনআম : ১৬২) 

  হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সা.কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আনুগত্য থেকে তার হাত খুলে ফেলল, কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে এমনভাবে যে তার বলার কিছু থাকবে না, আর যে ব্যক্তি বাইয়াতের বন্ধন ছাড়াই মারা গেল সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। (সহিহ মুসলিম)

  বাইয়াতের যে অর্থ সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রুকনিয়াত দ্বারা সে অর্থই বুঝায়। অর্থাৎ জেনে বুঝে জান ও মালের কুরবানি। আমীর ও সদস্যদের (রুকনদের) মধ্যে বাইয়াতের ব্যাপারে যাতে আনুগত্যের সীমা সামান্যও লঙ্ঘন না হয় সে উদ্দেশ্যে একটি গঠনতন্ত্র দ্বারা গোটা সংগঠন পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। আমীরকে মজলিশে শুরার কাছে জবাবদিহি করতে হয়। আবার ভিন্নমত ব্যক্ত করা এমনকি বাইয়াত প্রত্যাহারের সুযোগ আছে যদি এর চেয়ে উন্নতমানের দ্বীনি জামায়াতের সন্ধান পাওয়া যায়। ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, সংগঠন, ইকামতে দ্বীন, বাইয়াত এগুলো মূলত একটি আরেকটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

   ইসলামী আন্দোলনের সঠিক কর্মপন্থা 
দাওয়াত ইলাল্লাহ ও শুহাদা আলান্নাছ;

 মানুষ হবে একমাত্র আল্লাহর দাস। সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পৃথিবীর বুক থেকে অশান্তি, বিপর্যয়, পাপ ও অন্যায়ের মূলৎপাটন করা দ্বীন ইসলামের মূল লক্ষ্য। এক আল্লাহর গোলামীর মধ্যেই রয়েছে মানব সমাজের যাবতীয় সমস্যার সমাধান। মহান আল্লাহর রসূল (সা.) এর সময়ে গোটা দেশ ও জাতি ছিল অজ্ঞতা, নৈতিক অধঃপতন, দারিদ্র, দীনতা, ব্যভিচার ও পারস্পারিক কলহ বিবাদে চরমভাবে নিমজ্জিত। অর্থনৈতিক জুলুম ছিল মারাত্নক। রোম ও পারস্যের সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র বিপর্যস্ত করে রেখেছিল আরব বিশ্বকে। হাজারো সমস্যা থাকা সত্ত্বেও মহান আল্লাহর রসূল (সা.) শুরুতে অন্য সমস্যার প্রতি মনোনিবেশ না করে শুধু আল্লাহ তা’য়ালার দাসত্ব মেনে নেয়ার প্রতি আহ্বান করেন। পরবর্তীতে অন্যান্য সমস্যার সমাধানও আল্লাহর রসূল (সা.) পর্যায়ক্রমে করেছিলেন। 

وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَآ إِلَى اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَّقَالَ إِنَّنِيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ـ  وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ۚ اِدْفَعْ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِيْ بَيْنَكَ وَبَيْنَهٗ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهٗ وَلِيٌّ حَمِيْمٌ ـ  وَمَا يُلَقّٰهَاۤ إِلَّا الَّذِيْنَ صَبَرُوْاۚ وَمَا يُلَقّٰهَا إِلَّا ذُوْ حَظٍّ عَظِيْمٍ ـ  وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطٰنِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِؕ إِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ  ـ

  ‘সেই ব্যক্তির কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হবে, যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, সৎ কাজ করলো এবং ঘোষণা করলো আমি মুসলমান। হে নবী! সৎ কাজ ও অসৎ কাজ সমান নয়। তুমি অসৎ কাজকে সেই নেকী দ্বারা নিবৃত্ত করো যা সবচেয়ে ভালো। তাহলে দেখবে যার সাথে তোমার শত্রুতা ছিল সে অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে গেছে। ধৈর্যশীল ছাড়া এ গুণ আর কারো ভাগ্যে জোটে না এবং অতি ভাগ্যবান ছাড়া এ মর্যাদা আর কেউ লাভ করতে পারে না।’ (সূরা হামিম আস সাজদা : ৩৩-৩৬)

وَكَذٰلِكَ جَعَلْنٰكُمْ أُمَّةً وَّسَطًا لِّتَكُونُوا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا ۗ 

  ‘আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে একটি ‘মধ্যপন্থী’ উম্মাতে পরিণত করেছি, যাতে তোমরা দুনিয়াবাসীদের ওপর সাক্ষী হতে পারো এবং রসূল হতে পারেন তোমাদের ওপর সাক্ষী।’ (সূরা আল বাকারা : ১৪৩)

#নেতা_ছিলেন_আদর্শের_মডেল
وَإِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ ـ

 ‘নিঃসন্দেহে তুমি (মুহাম্মদ সা.) নৈতিকতার অতি উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন।’ (সূরা ক্বলম : ৪)

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُوْ اللهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا ـ 

 ‘আসলে তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মধ্যে ছিল একটি উত্তম আদর্শ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ ও শেষ দিনের আকাক্সক্ষী এবং বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ করে।’ (সূরা আল আহযাব : ২১) 

 قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ ؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ  ـ

 ‘‘হে নবী! লোকদের বলে দাও, ‘যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো। আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়’। তাদেরকে বলো, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করো।’’ (সূরা আলে ইমরান : ৩১)

আল্লাহর রসূল (সা.) তার নিজের আগমন সম্পর্কে বলেন, ‘আমাকে সচ্চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের নিমিত্তেই প্রেরণ করা হয়েছে।’ (জামেউল আহাদিস)

  আল্লাহর রসূল (সা.) এর মাধ্যমে উন্নত নৈতিকতার বিকাশ সাহাবাদের জিন্দেগীতে ঘটেছে। যার বর্ণনা স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালা দিয়েছেন সূরা মুমিনের প্রথম দশ আয়াত এবং সূরা ফুরকানের শেষ রুকুতে। আল্লাহর রসূলের হাতে গড়া সাহাবীদের ব্যাপারে ইসলামের কট্টোর দুশমনদের বক্তব্য ছিল, ‘তারা রাতের দরবেশ আর দিনে অশ্বারোহী বীরযোদ্ধা, কর্মচঞ্চল সৈনিক। তারা কাউকে ধোকা দেয় না, তাদেরকেও কেউ ধোকা দিতে পারে না।’

 বইঃ ইসলামী আন্দোলন: মৌলিক ধারণা, সঠিক কর্মপন্থা ও ভ্রান্তির অপনোদন
পৃষ্ঠাঃ ২১-২৪;

Post a Comment

0 Comments