Recent Tube

অপ্রতিরোধ্য হতে চান? তা হলে -- জিয়াউল হক।




অপ্রতিরোধ্য হতে চান? তা হলে -- 
   ------------------------------- 

 কুখ্যাত ফেরআউনের শাসনকালে পাপাচারে আকন্ঠ নিমগ্ন মিশরীয় সমাজে জুলুম ও নির্যাতন, শোষণ ও বঞ্চনা যখন রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত ঠিক তখন আল্লাহ নবী মুসা আ:কে নির্দেশ দিলেন ফেরাউনের নিকট গিয়ে সত্য, সুবিচার ও সাম্যের দাওয়াত উপস্থাপনে। 

 বিগত দিনে ঐ সমাজ হতেই মুসা আ: নিজের প্রাণ বাঁচাতে ফেরারি হয়েছিলেন। তিনি ভয় পেলেন, আল্লাহর কাছে অজুহাত দাঁড় করালেন সে ঘটনা উল্লেখ করে। ভাষার ক্ষেত্রে নিজের দূর্বলতাকেও উল্লেখ করলেন, বললেন; আমার জিহŸায় জড়তা রয়েছে। আত্মবিশ্বাসে, সাহসে ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে বললেন; ‘এবং আমার মন হতবল হয়ে পড়ে এবং আমার জিহবা অচল হয়ে যায়। সুতরাং হারুনের কাছে বার্তা প্রেরণ করুন। আমার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ আছে। অতএব আমি আশংকা করি যে, তারা আমাকে হত্যা করবে। (সুরা শু’য়ারা : ১৩-১৪) 

  অর্থাৎ তিনি আল্লাহর কাছ থেকে এ দায়িত্ব হতে অব্যাহতি চেয়ে বিকল্প প্রস্তাবনায়  তাঁরই ভাই হারুন আ:’কে যেন পাঠানো হয়, সে কথা বললেন। আল্লাহ পাক সোজাসাপ্টা তাঁর সকল অজুহাত বাতিল করে বললেন; তোমরা উভয়েই যাও এ মিশনে। আর সে সাথে আশ্বস্থ করে জানালেন, তিনি তাদের মিশনে সাহায্য করবেন। ফেরাউন কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (ঐ: আয়াত ১৫)

  প্রতিটি সমাজের মতো মিশরের জনগণও ফেরাউন ও তার সাঙ্গপাঙ্গ, তথা, নীতিনির্ধারকদের দক্ষতা এবং পারঙ্গমতায় বিমোহিত ছিল। তাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিল যাদুবিদ্যা, এবং বুদ্ধি ও স্বাভাবিক চিন্তার বিপরিতে এমন সব কাজ করতে পারা, যা দেখে জনগণ তাদের শক্তি ও ক্ষমতায় বিমোহিত হয়ে আনূগত্য করে। এমন শক্তিধর শাসক ও সুশিল সমাজের সামনেই আল্লাহর নবী হযরত  মুসা আ: ও তার ভাই হারুন আ:’কে যেতে হলো নির্দেশিত হয়ে। 

 সত্য ও সুন্দরের আহŸান পেয়ে দাম্ভিক ফেরাউন অহংকারে জ্বলে উঠলো। মুসা ও হারুন আ: এর আহŸান ও শক্তি সামর্থকে তুচ্ছতার সাথে উড়িয়ে দিতে সে মিশরের সবচেয়ে শক্তিশালি সুশীল সমাজ বুদ্ধিজীবীদের (শৈল্পিক যাদুকর) ডেকে জড়ো করলো। শক্তির সে মহড়া দেখতে মিশরের তাবৎ জনগণকেও হাজির করলো।

  সে যুগের সবচেয়ে বড় ট্রেন্ডকে মোকাবেলা করতে আল্লাহপাকও যুগোপোযোগী অস্ত্রই দিলেন মুসা আ:’কে। তাঁর হাতের লাঠি নিক্ষেপ করামাত্রই জীবন্ত সাপ হয়ে গেল, বগলে জামার আস্তিনে হাত ঢুকিয়ে বের করা মাত্রই তা হতে উজ্জল আলো বিচ্ছুরিত হলো। উপস্থিত সুধী ও সুশীলসমাজ এবং মিশরীয় জনগণের জন্য তা ছিল এক দারুণ উপভোগ্য দৃশ্য!

  আধুনিক যুগে শাসকশ্রেণি সবচেয়ে বড় অস্ত্র কি? নানা চেতনা ও মতবাদকে নানা যুক্তির সাহায্যে টিকিয়ে রাখে। আর অযৌক্তিক সে সব যুক্তিকে টিকিয়ে রাখতে মিথ্যা-শঠতা-ছলনা ও প্রতারণার আশ্রয় নিতে হয়। সমাজের সুশীল শ্রেণি এইসব মিথ্যা ও শঠতাকে ‘চেতনা’র নামে ‘মতবাদ’-এর নামে টিকিয়ে রাখে বা রাখতে সরকারকে সহায়তা করে। 

  মিথ্যা ও ভিত্তিহীন হওয়া সত্তেও এসব যুক্তি ও মতবাদ কেন টিকে আছে? কেনইবা টিকে থাকে? ভেবেছেন কখনও। উত্তর খুঁজেছেন কখনও? উত্তরটা রয়েছে আপনার, আমার, আমাদের নিজেদের মধ্যেই। আমরা যুগের সবচেয়ে বড় অস্ত্র; জ্ঞান আর তথ্য, সাহিত্য আর যুক্তিতে পিছিয়ে। আমরা যদি সঠিক জ্ঞান, তথ্য, শিক্ষা আর সাহিত্যে দক্ষতা অর্জন করি, তা হলে তথাকথিত সুশীল সমাজের মিথ্যা, শঠতা ও চাতুর্যপূর্ণ বক্তব্যগুলোকে চোখের পলকেই ধুলিস্যাৎ করে দিতে পারতাম। ধ্বসে পড়তো তাদের মেকি রাজত্ব ও প্রভাব প্রতিপত্তির বলয়।

  আপনি কি জানেন সকল মতবাদের যথার্থতা যাচাই করার দক্ষতা তৈরি হয় কিসে? হ্যাঁ, তার একমাত্র কার্যকর পথ হলো; আল কুরআন বুঝে পড়া, আর তা পড়ে পড়ে বুঝা। আপনার পড়া সকল সাবজেক্টকেই আল কুরআনের আলোকে খতিয়ে দেখুন। চেষ্টা করে দেখুন কিছুদিন, অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছেন দিনে দিনে। আপনি নিজেই সেটা বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
---------------------------- 
লেখক ঃ  ইসলামি চিন্তাবিদ, ইতিহাস বিশ্লেষক, গবেষক, গ্রন্থ প্রণেতা, আলোচক,ও দাঈ।

Post a Comment

0 Comments