Recent Tube

ধূমপায়ী স্বামীর সাথে ঘরসংসার করার বিধান: ‏আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।‏




ধূমপায়ী স্বামীর সাথে ঘরসংসার করার বিধান

 প্রশ্ন:
 স্বামী ধূমপান করে। কিন্তু স্ত্রী তাকে বুঝানোর পরেও তা পরিত্যাগ করে না। এমন স্বামীর সাথে ঘরসংসার করা কি জায়েজ?

উত্তর:
➤ প্রথমত: ইসলামের দৃষ্টিতে ধূমপান হারাম। কারণ তা একটি নিকৃষ্ট বস্তু। আর তা শুধু ধূমপানকারী ব্যক্তির জন্যই ধ্বংসাত্মক নয় বরং তার স্ত্রী-পরিবার, সহকর্মী এবং পরিবেশের জন্যও হুমকি। ধূমপান সরাসরি ধূমপানকারীর নিজের ক্ষতি করে আর পরোক্ষভাবে তার নিকটস্থ লোকদের ক্ষতি করে।

❑  ধূমপানের  পরোক্ষ ক্ষতি: 

স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীগণ বলে, “একটা সিগারেটের গোড়া (ফিলটার) পুড়তে থাকার সময় যে ধোঁয়া বের হয় তা ধূমপায়ীর টেনে নেওয়া ধোঁয়াটুকুর চেয়ে ক্ষতিকর, কেননা এই ধোঁয়াটুকু কোনো রকম ছাঁকাছাঁকির ভেতর দিয়ে যায় না। আর এই ধোঁয়ায় থাকা বস্তুকণাগুলোও অনেক ছোট হয়। ফলে সেগুলো অনেক বেশি সময় ধরে বাতাসে ভেসে বেড়ায় এবং মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করে।’ এভাবেই পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা দিলেন ভারতের কোকিলাবেন ধিরুভাই আম্বানি হাসপাতাল এবং মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসপি রায়।

এই জাতীয় পরোক্ষ ধূমপান ফুসফুসের ক্যানসার, হৃদরোগ, শ্বাসনালীসংক্রান্ত হাঁপানি, স্থায়ী শ্বাসকষ্ট, নানা ধরনের অ্যালার্জি এবং ফুসফুসের অন্যান্য রোগের জন্যও দায়ী বলে জানিয়েছেন গ্লোবাল হসপিটালসের মেডিকেল অঙ্কোলজি বিভাগের চিকিৎসক নিলেশ লোকেশ্বর। ধূমপায়ীদের স্ত্রী বা স্বামী এবং কর্মক্ষেত্রে ধূমপানের ক্ষেত্রে সহকর্মীরা এ ধরনের অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকেন। এ ছাড়া নারী ও শিশুরা বরাবরই ধূমপান জনিত রোগের ঝুঁকিতে বেশি পড়ে।” 

প্রতিবেদনে আও বলা হয়,

‘বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ৬০ লাখ মানুষ মারা যায় কোনো না কোনোভাবে তামাকজনিত নানা অসুস্থতার কারণে। আর এর মধ্যে প্রায় ছয় লাখ মানুষ ধূমপায়ী না হয়েও মারা যায় পরোক্ষ ধূমপানজনিত কারণে।” [দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা]

➤ ২য়ত: ধূমপায়ী স্বামীকে এর ভয়াবহতা, ক্ষয়-ক্ষতি ও ইসলামে তা হারাম হওয়ার বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে, ধূমপানে নিষেধ করতে হবে এবং নানাভাবে তা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে। অত:পর সে যদি এই বদভ্যাস পরিত্যাগ করে এবং তার আচার-আচরণ ভালো হয় ও দীনমূখী হয় তাহলে তার সাথে সংসার অব্যাহত রাখায় আপত্তি নাই। কিন্তু সে যদি তা পরিত্যাগ না করে বরং আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত থাকে এবং তার সাথে ঘর সংসার করার কারণে স্ত্রী তার নিজের ও সন্তানদের স্বাস্থ্যগত, দীনদারিত্ব ও চারিত্রিক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করে এবং নানা চেষ্টার পরও তাকে এ পথ থেকে ফেরানো সম্ভব না হয় তাহলে খোলা তালাকের মাধ্যমে তার থেকে সংসার ভঙ্গ করা জায়েজ আছে।

বিশিষ্ট ফকিহ আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ.  এক প্রশ্নের উত্তরে ধূমপানের ক্ষতিকারিতা ও ইসলামে তা হারাম হওয়া প্রসঙ্গে দলিল-প্রমাণ উপস্থাপনের পর ধূমপায়ী স্বামীর সাথে ঘর সংসার করার ব্যাপারে বলেন,
نوصيك بعدم مطالبته بالطلاق إذا كان يصلي وسيرته طيبة وترك التدخين، أما إن استمر على المعصية فلا مانع من طلب الطلاق
"আপনাকে আমরা উপদেশ দিব তালাক না চাওয়ার যদি সে নামাজ পড়ে, তার আচার-আচরণ ভালো হয় এবং ধূমপান ত্যাগ করে। কিন্তু যদি আল্লাহর নাফরমানি অব্যাহত রাখে তাহলে তালাক চাইতে বাধা নেই।" (শাইখের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট)
আল্লাহু আলাম।

আরও পড়ুন:
- বিড়ি, সিগারেট, গুল, জর্দা, সিসা, হুক্কা ইত্যাদি গ্রহণের বিধান
https://www.facebook.com/Guidance2TheRightPath/posts/915627162190163
- কী কী কারণে স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর নিকট খোলা তালাক চওয়া বৈধ?
https://www.facebook.com/Guidance2TheRightPath/posts/595346487551567
------------------------------- 
উত্তর প্রদানে :
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব। 
#abdullahilhadi

Post a Comment

0 Comments