Recent Tube

অমুসলিম সেলিব্রিটির মৃত্যু ও মুসলিম সমাজের উন্মাদনা। ইফতেখার সিফাত।



  

অমুসলিম সেলিব্রিটির মৃত্যু ও মুসলিম সমাজের উন্মাদনা।   ইফতেখার সিফাত। 




কোন অমুসলিম কাফের সেলিব্রেটি মরতে দেরি হয়না। সাথে সাথেই আমাদের ভাইয়েরা শোক প্রকাশ করে লিখে ধুম ফেলে দেয় "ওপারে ভাল থাকুন"। আমাদের নামে মাত্র মুসলিম সমাজে এই সংস্কৃতি বহুবছর ধরেই চলে আসছে। আবার কেউ ভুলটা ধরে দিলে ভাইয়েরা তেড়েও আসছে। ভাইয়েরা বিষয়টা অত্যন্ত জটিল। এটা স্বাভাবিক কোন ব্যাপার নয়। যে ব্যক্তি নিশ্চিত কুফুরের উপর মারা গেছে তার জন্য পরকালে ভাল কামনা করা আল্লাহর উপর পোদ্দারি করার নামান্তর। আল্লাহ সুস্পষ্ট আয়াতের মাধ্যমে আপনার সেই অধিকার নাকোচ করেছেন। আর আপনি আল্লাহর সাথে বিদ্রোহ করে সেই অধিকার চর্চা করছেন। একটু শান্ত মাথায় আল্লাহর দাসত্ব মেনে নিয়ে ভেবে দেখুন। 

  মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলছেন,
"আত্মীয়স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী ও মু'মিনদের জন্য বৈধ নয়" [১]
 কাফেরের মৃত্যু কোন নতুন বিষয় নয়। রাসলের যুগ থেকে শুরু থেকে আজও পর্যন্ত মৃত্যুর এই ধারাবাহিকতা আছে। কেউ দেখাতে পারবে না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, কিংবা কোন সাহাবী অথবা কোন সালাফ মরার পর কোন কাফেরের জন্য দোয়া করেছেন। তারা জীবিত কাফেরের জন্য হেদায়েতের দোয়া করেছেন। কিন্তু কেউ কুফুরের উপর মৃত্যু বরণ করার পর তাদের জন্য রহমত কিংবা মাগফেরাতের দোয়া করেননি। 

  ইমাম নববী রহঃ বলেন, কাফেরের জানাযা পড়া, তার জন্য ক্ষমার দোয়া করা কুরআন,  সুন্নাহ এবং ইজমার মাধ্যমে প্রমাণিত সুস্পষ্ট হারাম।[২] 
ইবনে তাইমিয়া রহঃ ও এই ব্যাপারে ইজমার দাবি করেছেন। [৩]

  কিছু ভাই খুব কিউট যুক্তি দেন। উনারা বলেন, "আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন।" এই দাবি অবশ্যই ঠিক। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। পবিত্র কুরআনে এই মর্মে আয়াত রয়েছে। আবার পবিত্র কুরআনের অনেকগুলো আয়াতে এই কথাও বলা হয়েছে, মুশরিকদের জন্য ক্ষমা চাওয়ার অধিকার কারো নেই, যেই ব্যক্তি কুফুরের উপর মারা গেছে সে নিশ্চিত চিরস্থায়ী জাহান্নামে যাবে, আল্লাহর কুফর ও শিরক গোনাহ কখনোই মাফ করবেন না।[৪]

  কুরআনের কিছু আয়াতের উপর আপনার অগাধ বিশ্বাস কিন্তু বাকি আয়াতগুলোর ক্ষেত্রে সেই বিশ্বাস কোথায় গেল? যেই আল্লাহকে আপনি সর্বশক্তিমান মানছেন সেই আল্লাহর সুস্পষ্ট ঘোষণাকে কীভাবে অমান্য করছেন? নাকি আপনি আল্লাহর কিছু আয়াতকে বিশ্বাস করেন আর কিছু আয়াতকে বিশ্বাস করেন না? যদি এমনই হয়ে থাকে, তাহলে মনে রাখবেন এর ফলাফল খুবই ভয়াবহ। মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
 তোমরা কি পবিত্র কুরআনের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশ অবিশ্বাস কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তারা পার্থিব জীবনে দুর্গতি ছাড়া অন্য কিছু পাবে না। আর কিয়ামতের দিনে তারা কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। আর তোমরা যা কিছু করছ আল্লাহ সে সম্পর্কে উদাসীন নন।"[৫]

  এই ক্ষেত্রে আরেকটা প্রধান আপত্তি হল, আমরা কি জানি লোকটা মৃত্যুর পূর্বে তাওবা করেছে কিনা? না জেনে মন্তব্য করা কি উচিৎ হবে? 
  প্রথমত সবার কাছে যখন প্রমাণিত ও সুস্পষ্ট লোকটা কাফের ছিল, তখন তার ঈমানের জন্য সুস্পষ্ট প্রমাণ লাগবে। প্রমাণ ছাড়া তার কুফুরের হুকুম রহিত হবে না। সুতরাং তার কুফুরিকে দূরকারী ঈমানের প্রমাণ আগে দিতে হবে। এখানে বরংচ প্রমাণ ছাড়া তার ঈমানের সম্ভাবনা দেখানোই শরীয়ার দৃষ্টিতে মারাত্মক অপরাধ বলে গণ্য হবে। 
দ্বিতীয়ত পার্থিব জীবনে কারো উপর ঈমানের হুকুম প্রযোজ্য হওয়ার জন্য অন্তরের বিশ্বাস যথেষ্ট না। এজন্য আহলে সুন্নাত অথবা আল জামা'আতের কাছে ঈমানের অন্যতম রুকন হল মুখে স্বীকৃতি দেয়া। সুতরাং যখন কারো মৌখিক স্বীকৃতির কোন প্রমাণ নেই ইসলাম গ্রহণ করার, তখন আমরা তাকে কাফের বলেই গণ্য করব। এবং এই দৃষ্টিকোণ থেকেই তার সাথে মো'আমালা করব।

  আরেকটা বিষয় হল আনন্দ কিংবা শোক প্রকাশ করা। এই বিষয়ে আমার একটা লেখা আছে আগের। কমেন্টে লিংক দিয়ে দিব ইনশাআল্লাহ। সংক্ষিপ্তভাবে বললে, কোন কাফের ও অশ্লিলতার প্রচারক, হারাম ক্যারিয়ারিস্ট মারা গেলে আফসোসও করা যাবে আবার আনন্দিতও হওয়া যাবে। তবে দেখতে হবে এর পিছনে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী? একজন কাফের ঈমান ছাড়া দুনিয়া থেকে চলে গেছে, চিরকাল সে জাহান্নামে শাস্তি পাবে- এই কথা ভেবে আপনি আফসোস করতে পারেন। আর পৃথিবীবাসী তার অশ্লিলতার প্রভাব থেকে মুক্ত হয়েছে, তার উন্মাদনা থেকে তরুণ শ্রেণি রেহাই পেয়েছে- এই কথা ভেবে আপনি আনন্দিতও হতে পারেন। 

  কিন্তু আমরা শোক প্রকাশ করছি ঠিকই; শোকের পিছনে দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক নেই। আমরা যেই শোক প্রকাশ করছি তার পিছনে ঈমানের কোন কামনা নেই। আছে তার অভিনয় ও অশ্লিল এক্টিভিটি হারানোর বেদনা। আছে তার পাপময় ক্যারিয়ারকে মিস করার তাড়না। আছে তার উন্মাদনাকে উপভোগ করার তামান্না। আমরা এজন্য শোক প্রকাশ করি না যে, লোকটা ঈমান ছাড়া মারা গেছে এবং চিরস্থায়ী আযাব ভোগ করবে। বরং আমরা তার হারাম, উন্মাদ কিংবা অশ্লিল এক্টিভিটিকে মিস করে দুঃখ প্রকাশ করি।

  অধিকন্তু এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ঈমানি কামনার পাশাপাশি আমাদের আনন্দের মাত্রা হওয়া দরকার ছিল বেশি। কারণ সমাজে তাদের অশ্লিল ও উন্মাদ  জীবনের প্রভাব থাকে। এরকম প্রকাশ্য ও প্রভাবক বিদ'আতীর মৃত্যুর সময়ই আমাদের সালাফরা শোকর আদায় করতেন। সমাজ কারো অশ্লিলতা, উন্মাদনা কিংবা বিদ'আত থেকে মুক্তি পেয়েছে- এটা অবশ্যই আনন্দের বিষয়। মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,"নিশ্চয় যারা এটা পছন্দ করে যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।"[৬]

১) সূরা তাওবা, আয়াত ১১৩
২) আল মাজমু- ৫/১১৯
৩) মাজমুঊল ফাতাওয়া- ১২/৪৮৯
৪) সূরা নিসা-১১৬, সূরা নিসা-১৩৭, সূরা মুহাম্মাদ-৩৪, 
৫) সূরা বাকারা, আয়াত ৮৫
৬) সূরা নুর, আয়াত ১৯

Post a Comment

0 Comments