Recent Tube

সুদ কি? কুরআন ও হাদীসের আলোকে সুদ সম্পর্কে বর্ণনা এবং সুদের ভয়ানক পরিণতি। শামীম আজাদ।





 
সুদ কি?
কুরআনহাদীসেরলোকে সুদ সম্পর্কে বর্ণনা এবং সুদের ভয়াক পরিণতি ;
--------------------------------- 

সুদ কি?

  আরবী (الربوا) রিবা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো বৃদ্ধি,অতিরিক্ত, প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি।ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, পণ্য বা অর্থের বিনিময়ে প্রদেয় অতিরিক্ত পণ্য বা অর্থই হলো (الربوا) রিবা/ সুদ। 

 সুদের প্রকারভেদ: 

 ইসলামী শরীয়া অনুসারে রিবা/সুদ দুই প্রকার। যথা:

 ♦ ১. ربا النسيئة রিবা আল-নাসিয়া: এর মানে সময়ের বিনিময়। 'নাসিয়া' শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো বিলম্ব বা প্রতীক্ষা। 

 উদাহরণ: ক ১ বছরের জন্য খ কে ১০০-/ টাকা দিল এই শর্তে যে, তাকে ১০০-/ টাকার সাথে অতিরিক্ত আরও ১০ টাকা দেয়া হবে। এই অতিরিক্ত ১০-/ টাকা হলো রিবা আল- নাসিয়া। 
   এভাবে  টাকা ঋণের মাধ্যমে  জাহেলীযুগের লোকেরা সুদ লেনদেন করত। আল্লাহ তাআলা এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً ۖ وَاتَّقُوا اللَّـهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো।” 
সূরা আল ইমরানঃ ১৩০

♦ ২. ربا الفضل রিবা আল-ফদল: এটা পণ্যসামাগ্রী বিনিময়ের ক্ষেত্রে কমবেশী করার সাথে সম্পৃক্ত। একই জাতীয় পণ্যের কম পরিমাণের সাথে বেশি পরিমান পণ্য হাতে হাতে বিনিময় করা হলে পণ্যটির অতিরিক্ত পরিমানকে বলা হয় রিবা আল ফদল। 
উবাদাহ বিন সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«الذَّهَبُ بِالذَّهَبِ، وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ، وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ، وَالشَّعِيرُ بِالشَّعِيرِ، وَالتَّمْرُ بِالتَّمْرِ، وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ، مِثْلًا بِمِثْلٍ، سَوَاءً بِسَوَاءٍ، يَدًا بِيَدٍ، فَإِذَا اخْتَلَفَتْ هَذِهِ الْأَصْنَافُ فَبِيعُوا كَيْفَ شِئْتُمْ إِذَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ» رَوَاهُ مُسْلِمٌ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- সোনার বদলে সোনা, রূপার বদলে রূপা, গমের বদলে গম, যবের বদলে যব, খেজুরের বদলে খেজুর ও লবণের বদলে লবণ লেনদেন (কম-বেশি না করে) একই রকমে সমপরিমাণে ও হাত বাঁ হাত অর্থাৎ নগদে বিক্রয় চলবে। যখন ঐ বস্তুগুলোর মধ্যে প্রকারভেদ থাকবে তখন নগদে তোমরা ইচ্ছানুযায়ী বিক্রয় কর। (সহীহ মুসলিম, ১৫৮৭)

 পবিত্র কুরআন এবং হাদীসে সুদ:

  রিবার অবৈধতা আল-কোরআনের সাতটি আয়াত  এবং ৪০ টিরও বেশি হাদিস এবং ইজমা দ্বারা প্রমাণিত।

 সুদের ভয়ানক পরিণতি;

وَأَحَلَّ اللَّـهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا 
"আল্লা’হ ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।" (সূরা বাকারা: ২৭৫)

   বর্তমানে সুদ আমাদের দেশ ও জাতিকে অক্টোপাসের মত বেঁধে ফেলেছে। সুদ ছাড়া আমাদের অর্থনীতির চাকা যেন বন্ধ। যার কারণে পত্রিকা ও বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে মানুষকে এ বিষয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট অংকের লাভের বিনিময়ে অর্থ ডিপোজিট করতে আহবান করা হচ্ছে। বিভ্রান্ত ও সৎ পথ থেকে বিচ্যুত কিছু আলেমের ফতোয়াও প্রচার করা হচ্ছে এই মর্মে যে, সুদী ব্যাংকের সাথে লেনদেন করা জায়েয এবং নির্দিষ্ট অংকে ইন্টারেস্ট বা সুদ গ্রহণ করাও জায়েয।
কিন্তু এ বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ানক। প্রকাশ্যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরোধিতা ও তাঁদের প্রকাশ্য নাফরমানী। 
আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন:

فَلْيَحْذَرْ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

“ যারা তাঁর নির্দেশের বিরোধিতা করে তারা যেন সতর্ক হয়ে যায় যে, তারা ফেতনায় পতিত হবে অথবা তারা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তির সম্মুখিন হবে। (সূরা নূর- ৩৬)

  ইসলাম ধর্মে একথা সর্বজন বিদিত যে, কুরআন সুন্নাহ্‌র দলীল অনুযায়ী সুদী ব্যাংকে অর্থ রেখে সেখান থেকে নির্দিষ্টহারে ফায়েদা বা ইন্টারেষ্ট গ্রহণ করা নিঃসন্দেহে সুদ। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সুদকে হারাম করেছেন। সুদ কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত। সুদ অর্থ-সম্পদের বরকতকে মিটিয়ে দেয়, আল্লাহর ক্রোধ বাড়িয়ে দেয়। সুদের কারণে আমল কবূল হয় না।
রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে সহীহ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে তিনি বলেন, 
“নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ্‌ পবিত্র তিনি পবিত্রতা ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করেন না। 
আল্লাহ্‌ তা‘আলা রাসূলদের (আঃ) প্রতি যা নির্দেশ পাঠিয়েছেন, মুমিনদের প্রতিও তাই পাঠিয়েছেন। তিনি এরশাদ করেন:  

( ياَ أيُّهاَ الرُّسُلُ كُلُوْا مِنْ الطَّيِّباَتِ واعْمَلُوْا صاَلِحاً ) 
“হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস’ থেকে আহার্য গ্রহণ কর এবং সৎ কর্ম কর।“ 
সুরা মুমিনুনঃ ৫১

  তিনি মুমিনদেরকে লক্ষ্য করে নির্দেশ দেন:  

(ياَ أيُّهاَ الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّباَتِ ماَ رَزَقْناَكُمْ) 
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু সামগ্রী থেকে আহার্য গ্রহণ কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসেবে দান করেছি।
সূরা বাকারাঃ ১৭২

অতঃপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, যে দীর্ঘ সফর করে এলায়িত কেশ ও ধুলায়মান পোশাক নিয়ে অত্যন্ত ব্যাকুলভাবে আকাশের দিকে দুহাত তুলে ডাকতে থাকে, হে আমার প্রতিপালক! হে রব!! অথচ সে ব্যক্তির পানাহার সামগ্রী হারাম উপার্জনের, পোশাক-পরিচ্ছেদ হারাম পয়সায় সংগৃহীত, এমতাবস্থায় কি করে তার দুআ কবূল হতে পারে? 
(সহীহ্‌ মুসলিম)

    অতএব হারাম খেলে দুআ কবূল হবে না, ইবাদত কবূল হবেনা। কামাই-রোজগারে বরকত হবে না। হারাম অর্থে পরিবার-সন্তানদের লালন পালন করলে তারাও সৎভাবে গড়ে উঠবে না। উপরোন্ত ক্বিয়ামতের কঠিন মাঠে জবাবদিহি তো করতে হবেই।

    প্রত্যেক মুসলমানের জানা উচিত যে, ক্বিয়ামতের মাঠে আল্লাহ তা’আলা তাকে তার সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। কিভাবে সম্পদ উপার্জন করেছে? আর কোথায় তা খরচ করেছে? 

   নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত, 
حَدَّثَنَا حُمَيْدُ بْنُ مَسْعَدَةَ، حَدَّثَنَا حُصَيْنُ بْنُ نُمَيْرٍ أَبُو مِحْصَنٍ، حَدَّثَنَا حُسَيْنُ بْنُ قَيْسٍ الرَّحَبِيُّ، حَدَّثَنَا عَطَاءُ بْنُ أَبِي رَبَاحٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ لاَ تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ ابْنِ مَسْعُودٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ الْحُسَيْنِ بْنِ قَيْسٍ ‏.‏ وَحُسَيْنُ بْنُ قَيْسٍ يُضَعَّفُ فِي الْحَدِيثِ مِنْ قِبَلِ حِفْظِهِ ‏.‏ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي بَرْزَةَ وَأَبِي سَعِيدٍ ‏.‏

  ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

    নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগপর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ্ তা'আলার নিকট হতে সরতে পারবে না। 
১. তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে? 
২. তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কি কাজে তা বিনাশ করেছে ; 
৩. তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হতে তা উপার্জন করেছে 
৪. এবং তা কি কি খাতে খরচ করেছে 
৫. এবং সে যত টুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মুতাবিক কি কি আমল করেছে।

    সহীহ, সহীহাহ্ (৯৪৬), তা’লীকুর রাগীব (১/৭৬), রাওযুন নাযীর  (৬৪৮)।
জামে' আত-তিরমিজিঃ ২৪১৬

  জেনে রাখুন! সুদ একটি অন্যতম কাবীরা গুনাহ। কুরআন ও হাদীছে কঠিনভাবে সুদকে হারাম করা হয়েছে। সুদের যাবতীয় প্রকার-প্রকৃতি ও যে নামেই ব্যবহার করা হোক তা নিষিদ্ধ। 
আল্লাহ্‌ বলেন, 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ 
وَاتَّقُواْ النَّارَ الَّتِي أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ 
وَأَطِيعُواْ اللّهَ وَالرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ 
হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পার। এবং তোমরা সেই আগুন থেকে বেঁচে থাক, যা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রাসূলের, যাতে তোমাদেরকে দয়া করা হয়। 
সূরা আল ইমরানঃ ১৩০-১৩২

  আল্লাহ আরো বলেন, 

وَمَا آتَيْتُم مِّن رِّبًا لِّيَرْبُوَ فِي أَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا يَرْبُو عِندَ اللَّهِ وَمَا آتَيْتُم مِّن زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ 
মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এই আশায় তোমরা সুদে যা কিছু দাও, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে, অতএব, তারাই দ্বিগুণ লাভ করে।
সূরা রূমঃ ৩৯

 আল্লাহ বলেন, 
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لاَ يَقُومُونَ إِلاَّ كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُواْ إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَن جَاءهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىَ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ 
يَمْحَقُ اللّهُ الْرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ
যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লা’হ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।   
আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে।
সূরা বাক্বারাঃ ২৭৫-২৭৬

وَأَخْذِهِمُ الرِّبَا وَقَدْ نُهُواْ عَنْهُ وَأَكْلِهِمْ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ مِنْهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا 
আর এ কারণে যে, তারা সুদ গ্রহণ করত, অথচ এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবং এ কারণে যে, তারা অপরের সম্পদ ভোগ করতো অন্যায় ভাবে। বস্তুত; আমি কাফেরদের জন্য তৈরী করে রেখেছি বেদনাদায়ক আযাব
সূরা নিসাঃ ১৬১

  আল্লাহ আরো বলেন, 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَذَرُواْ مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
فَإِن لَّمْ تَفْعَلُواْ فَأْذَنُواْ بِحَرْبٍ مِّنَ اللّهِ وَرَسُولِهِ وَإِن تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُؤُوسُ أَمْوَالِكُمْ لاَ تَظْلِمُونَ وَلاَ تُظْلَمُون
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক।  

    অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না
সূরা বাক্বারা- ২৭৮-২৭৯

   আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার চাইতে বড় অপরাধ আর কি হতে পারে? (আল্লাহ আমাদের রক্ষা কর।)

حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ حَدَّثَنِي سُلَيْمَانُ بْنُ بِلاَلٍ، عَنْ ثَوْرِ بْنِ زَيْدٍ الْمَدَنِيِّ، عَنْ أَبِي الْغَيْثِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ ‏"‏‏.‏ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَا هُنَّ قَالَ ‏"‏ الشِّرْكُ بِاللَّهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ، وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ ‏"‏‏.‏
 আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
 তিনি বলেন, সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, 
(১) আল্লাহ্‌র সাঙ্গে শরীক করা 
(২) যাদু 
(৩) আল্লাহ তা‘আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরীয়ত সম্মত কারন ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা 
(৪) সুদ খাওয়া 
(৫) ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা 
(৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং 
(৭) সরল স্বভাবা সতী-সাধ্বী মু’মিনাদের অপবাদ দেয়া।
সহিহ বুখারীঃ ২৭৬৬(মুত্তাফাকুন আলাইহি)

   আল্লাহ তাআ'লা বলেছেন:

 وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ 

  “ পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” 
সূরা মায়েদাঃ ২

  সহীহ মুসলিমে জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, 

لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ 
রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিশাপ করেছেন সুদখোরকে, সুদ দাতাকে, সুদের লিখককে এবং তার দুই সাক্ষিকে। তিনি বলেন, পাপের ক্ষেত্রে সকলেই এক সমান।
মুসলিমঃ ৩৯৮৫

  নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ إِدْرِيسَ، عَنْ أَبِي مَعْشَرٍ، عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ الرِّبَا سَبْعُونَ حُوبًا أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ ‏"‏ ‏.‏

  আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

   তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সুদের গুনাহর সত্তরতি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্তর হলো আপন মাকে বিবাহ (যেনা) করা। 
সুনানে ইবনে মাজাহঃ ২২৭৪

  রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন, 

دِرْهَمٌ رِبًا يَأْكُلُهُ الرَّجُلُ وَهُوَ يَعْلَمُ أَشَدُّ مِنْ سِتَّةٍ وَثَلَاثِينَ زَنْيَةً 
জেনে-শুনে এক দিরহাম পরিমাণ সুদ খাওয়া আল্লাহর নিকট ৩৬ জন নারীর সাথে ব্যভিচারের চাইতে অধিক গুনাহের কাজ। 
(আহমাদ, সিলসিলা ছহীহা হা/ ১০৩৩)

 وَحَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ الْقَعْنَبِيُّ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ، - يَعْنِي ابْنَ بِلاَلٍ - عَنْ يَحْيَى، - وَهُوَ ابْنُ سَعِيدٍ - عَنْ بُشَيْرِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ بَعْضِ، أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ أَهْلِ دَارِهِمْ مِنْهُمْ سَهْلُ بْنُ أَبِي حَثْمَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنْ بَيْعِ الثَّمَرِ بِالتَّمْرِ وَقَالَ ‏ "‏ ذَلِكَ الرِّبَا تِلْكَ الْمُزَابَنَةُ ‏"‏ ‏.‏ إِلاَّ أَنَّهُ رَخَّصَ فِي بَيْعِ الْعَرِيَّةِ النَّخْلَةِ وَالنَّخْلَتَيْنِ يَأْخُذُهَا أَهْلُ الْبَيْتِ بِخَرْصِهَا تَمْرًا يَأْكُلُونَهَا رُطَبًا ‏.‏

  সাহ্‌ল ইবনু আবূ হাস্‌মাহ্‌ (রা.) থেকে বর্ণিতঃ:

   রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুক্‌না খেজুরের বদলে তাজা খেজুর বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন: এটাই সুদ, এটাই ‘মুযাবানাহ্‌’। অবশ্য তিনি ‘আরায়াকৃত দু’ একটা খেজুর গাছের খেজুর বিক্রয়ের অনুমতি দিয়েছেন। বাড়ীর মালিক এর পরিমাণ অনুমান করে শুকনা খেজুরের বিনিময়ে রেখে দিবে এবং তাজা ফল খাবে। (ই.ফা. ৩৭৪৩, ই.সে. ৩৭৪৩)
সহিহ মুসলিমঃ ৩৭৭৯

  জাহান্নামের মধ্যে সুদখোরের শাস্তি সম্পর্কে একটি দীর্ঘ হাদীছে বলা হয়েছে। 

وَعَنْ سَمُرَةَ بنِ جُنْدُبٍ رضي الله عنه قَالَ: كَانَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم مِمَّا يُكْثِرُ أَنْ يَقُوْلَ لأَصْحَابِهِ : «هَلْ رَأَى أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنْ رُؤْيَا ؟» فَيَقُصُّ عَلَيْهِ مَنْ شَاءَ اللهُ أَنْ يَقُصَّ، وَإِنَّهُ قَالَ لَنَا ذَاتَ غَدَاةٍ : «إِنَّهُ أَتَانِيَ اللَّيْلَةَ آتِيَانِ، وَإِنَّهُمَا قَالاَ لِي : انْطَلِقْ، وَإِنِّي انْطَلَقتُ مَعَهُمَا، وَإِنَّا أَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُضْطَجِعٍ، وَإِذَا آخَرُ قائِمٌ عَلَيْهِ بِصَخْرَةٍ، وَإِذَا هُوَ يَهْوِي بِالصَّخْرَةِ لِرَأْسِهِ، فَيَثْلَغُ رَأسَهُ، فَيَتَدَهْدَهُ الحَجَرُ هَاهُنَا، فَيَتْبَعُ الحَجَرَ فَيَأْخُذُهُ فَلاَ يَرْجِعُ إِلَيْهِ حَتَّى يَصِحَّ رَأسُهُ كَمَا كَانَ، ثُمَّ يَعُودُ عَلَيْهِ، فَيَفْعَلُ بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ المَرَّةَ الأوْلَى!» قَالَ: «قُلْتُ لَهُمَا : سُبْحانَ اللهِ ! مَا هَذَانِ ؟ قَالاَ لِي : انْطَلِقِ انْطَلِقْ، فَانْطَلَقْنَا، فَأَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُسْتَلْقٍ لِقَفَاهُ، وَإِذَا آخَرُ قَائِمٌ عَلَيْهِ بِكَلُّوبٍ مِنْ حَديدٍ، وَإِذَا هُوَ يَأتِي أَحَدَ شِقَّيْ وَجْهِهِ فَيُشَرْشِرُ شِدْقَهُ إِلَى قَفَاهُ، وَمِنْخَرَهُ إِلَى قَفَاهُ، وَعَيْنَهُ إِلَى قَفَاهُ، ثُمَّ يَتَحَوَّلُ إِلَى الجَانِبِ الآخَرِ، فَيَفْعَلُ بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ بِالجَانِبِ الأَوَّلِ، فَمَا يَفْرَغُ مِنْ ذَلِكَ الجَانِبِ حَتَّى يَصِحَّ ذَلِكَ الجانبُ كَمَا كَانَ، ثُمَّ يَعُودُ عَلَيْهِ فَيَفْعَلُ مِثْلَ مَا فَعَلَ فِي المرَّةِ الأُوْلَى» قَالَ: «قُلْتُ : سُبْحَانَ اللهِ! مَا هَذَانِ ؟ قَالاَ لِي : انْطَلِقِ انْطَلِقْ، فَانْطَلَقْنَا، فَأَتَيْنَا عَلَى مِثْلِ التَّنُّورِ» فَأَحْسِبُ أنَّهُ قَالَ: «فَإِذَا فِيهِ لَغَطٌ، وَأَصْوَاتٌ، فَاطَّلَعْنَا فِيهِ فَإِذَا فِيهِ رِجَالٌ وَنِساءٌ عُرَاةٌ، وَإِذَا هُمْ يَأتِيهِمْ لَهَبٌ مِنْ أَسْفَلَ مِنْهُمْ، فَإِذَا أَتَاهُمْ ذَلِكَ اللَّهَبُ ضَوْضَوْا . قُلْتُ : مَا هَؤُلاَءِ ؟ قَالاَ لِي : انْطَلِقِ انْطَلِقْ، فَانْطَلَقْنَا، فَأَتَيْنَا عَلَى نَهْرٍ» حَسِبْتُ أَنَّهُ كَانَ يَقُوْلُ : «أَحْمَرُ مِثْلُ الدَّمِ، وَإِذَا فِي النَّهْرِ رَجُلٌ سَابِحٌ يَسْبَحُ، وَإِذَا عَلَى شَطِّ النَّهْرِ رَجُلٌ قَدْ جَمَعَ عِنْدَهُ حِجَارَةً كَثِيرَةً، وَإِذَا ذَلِكَ السَّابِحُ يَسْبَحُ، مَا يَسْبَحُ، ثُمَّ يَأتِي ذَلِكَ الَّذِي قَدْ جَمَعَ عِنْدَهُ الحِجَارَةَ، فَيَفْغَرُ لَهُ فَاهُ، فَيُلْقِمُهُ حَجَراً، فَينْطَلِقُ فَيَسْبَحُ، ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَيْهِ، كُلَّمَا رَجَعَ إِلَيْهِ، فَغَرَ لَهُ فَاهُ، فَأَلْقَمَهُ حَجَراً، قُلْتُ لَهُمَا : مَا هَذَانِ ؟ قَالاَ لِي: انْطَلِقِ انْطَلِقْ، فَانْطَلَقْنَا، فَأَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ كَرِيهِ المَرْآةِ، أَوْ كَأَكْرَهِ مَا أَنْتَ رَاءٍ رَجُلاً مَرْأىً، فَإِذَا هُوَ عِنْدَهُ نَارٌ يَحُشُّهَا وَيَسْعَى حَوْلَهَا . قُلْتُ لَهُمَا : مَا هَذَا ؟ قَالاَ لي : انْطَلِقِ انْطَلِقْ، فَانْطَلَقْنَا، فَأتَيْنَا عَلَى رَوْضَةٍ مُعْتَمَّةٍ فِيهَا مِنْ كُلِّ نَوْرِ الرَّبيعِ، وَإِذَا بَيْنَ ظَهْرَي الرَّوْضَةِ رَجُلٌ طَويلٌ لاَ أَكَادُ أَرَى رَأسَهُ طُولاً فِي السَّماءِ، وَإِذَا حَوْلَ الرَّجُلِ مِنْ أَكْثَرِ وِلدَانٍ رَأيْتُهُمْ قَطُّ، قُلْتُ : مَا هَذَا ؟ وَمَا هَؤُلاَءِ ؟ قَالاَ لِي : انْطَلقِ انْطَلقْ، فَانْطَلَقْنَا، فَأَتَيْنَا إِلَى دَوْحَةٍ عَظيمةٍ لَمْ أَرَ دَوْحَةً قَطُّ أَعْظَمَ مِنْهَا، وَلاَ أَحْسَنَ ! قَالاَ لِي : اِرْقَ فِيهَا، فَارْتَقَيْنَا فِيهَا إِلَى مَدِينَةٍ مَبْنِيَّةٍ بِلَبنٍ ذَهَبٍ وَلَبنٍ فِضَّةٍ، فَأَتَيْنَا بَابَ المَدِينَةِ فَاسْتَفْتَحْنَا، فَفُتِحَ لَنَا فَدَخَلْنَاهَا، فَتَلَقَّانَا رِجَالٌ شَطْرٌ مِنْ خَلْقِهِمْ كَأَحْسَنِ مَا أَنتَ رَاءٍ ! وَشَطْرٌ مِنْهُمْ كَأقْبَحِ مَا أَنتَ رَاءٍ ! قَالاَ لَهُمْ : اِذْهَبُوا فَقَعُوا فِي ذَلِكَ النَّهْرِ، وَإِذَا هُوَ نَهْرٌ مُعْتَرِضٌ يَجْرِي كَأَنَّ مَاءَهُ المَحْضُ فِي البَيَاضِ، فَذَهَبُوا فَوَقَعُوا فِيهِ . ثُمَّ رَجَعُوا إِلَيْنَا قَدْ ذَهَبَ ذَلِكَ السُّوءُ عَنْهُمْ، فَصَارُوا فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ» قَالَ: «قَالاَ لِي : هَذِهِ جَنَّةُ عَدْنٍ، وَهَذَاكَ مَنْزِلُكَ، فَسَمَا بَصَرِي صُعُداً، فَإِذَا قَصْرٌ مِثْلُ الرَّبَابَةِ البَيضَاءِ، قَالاَ لِي : هَذَاكَ مَنْزِلُكَ ؟ قُلْتُ لَهُمَا: بَارَكَ اللهُ فِيكُمَا، فَذَرَانِي فَأَدخُلَهُ . قَالاَ لِي : أَمَّا الآنَ فَلاَ، وَأَنتَ دَاخِلُهُ، قُلْتُ لَهُمَا : فَإِنِّي رَأَيتُ مُنْذُ اللَّيْلَةِ عَجَباً ؟ فَمَا هَذَا الَّذِي رَأَيْتُ ؟ قَالاَ لِي : أَمَا إِنَّا سَنُخْبِرُكَ : أَمَّا الرَّجُلُ الأوَّلُ الَّذِي أَتَيْتَ عَلَيْهِ يُثْلَغُ رَأسُهُ بِالحَجَرِ، فَإِنَّهُ الرَّجُلُ يَأخُذُ القُرآنَ فَيَرفُضُهُ، وَيَنَامُ عَنِ الصَّلاةِ المَكتُوبَةِ . وَأَمَّا الرَّجُلُ الَّذِي أَتَيْتَ عَلَيْهِ يُشَرْشَرُ شِدْقُهُ إِلَى قَفَاهُ، ومِنْخَرُهُ إِلَى قَفَاهُ، وَعَيْنُهُ إِلَى قَفَاهُ، فَإِنَّهُ الرَّجُلُ يَغْدُو مِنْ بَيْتِهِ فَيَكْذِبُ الكِذْبَةَ تَبْلُغُ الآفَاقَ . وَأَمَّا الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ العُرَاةُ الَّذِينَ هُمْ فِي مِثْلِ بِنَاءِ التَّنُّورِ، فَإِنَّهُمُ الزُّنَاةُ وَالزَّوَانِي، وَأَمَّا الرَّجُلُ الَّذِي أَتَيتَ عَلَيهِ يَسْبَحُ فِي النَّهْرِ، وَيُلقَمُ الحِجَارَةَ، فَإِنَّهُ آكِلُ الرِّبَا، وأمَّا الرَّجُلُ الكَريهُ الْمَرْآةِ الَّذِي عِنْدَ النَّارِ يَحُشُّهَا وَيَسْعَى حَوْلَهَا، فَإِنَّهُ مَالِكٌ خازِنُ جَهَنَّمَ، وَأَمَّا الرَّجُلُ الطَّوِيلُ الَّذِي فِي الرَّوْضَةِ، فَإِنَّهُ إِبرَاهِيم عليه السلام، وَأمَّا الولدَانِ الَّذِينَ حَوْلَهُ، فَكُلُّ مَوْلُودٍ مَاتَ عَلَى الفِطْرَةِ» وَفِي رِوَايَةِ البَرْقَانِيِّ : «وُلِدَ عَلَى الفِطْرَةِ» فَقَالَ بعض المُسلمينَ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَأَولاَدُ المُشرِكِينَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «وَأَولاَدُ المُشرِكِينَ، وَأَمَّا القَوْمُ الَّذِينَ كَانُوا شَطْرٌ مِنْهُمْ حَسَنٌ، وَشَطْرٌ مِنْهُمْ قَبِيحٌ، فَإِنَّهُمْ قَومٌ خَلَطُوا عَمَلاً صَالِحاً وَآخَرَ سَيِّئاً، تَجَاوَزَ اللهُ عَنهُمْ» . رواه البخاري

   সামুরাহ ইবনে জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

    তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়ই তাঁর সাহাবীদেরকে বলতেন, ‘‘তোমাদের কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছে কি?’’ রাবী বলেন, যার ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছা সে তাঁর কাছে স্বপ্ন বর্ণনা করত। তিনি একদিন সকালে বললেন, ‘‘গতরাত্রে আমার কাছে দুজন আগন্তুক এলো। তারা আমাকে উঠাল, আর বলল, ‘চলুন।’ আমি তাদের সাথে চলতে লাগলাম। অতঃপর আমরা কাত হয়ে শোয়া এক ব্যক্তির নিকট পৌঁছলাম। দেখলাম, অপর এক ব্যক্তি তার নিকট পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে তার মাথায় পাথর নিক্ষেপ করছে। ফলে তার মাথা ফাটিয়ে ফেলছে। আর পাথর গড়িয়ে সরে পড়ছে। তারপর আবার সে পাথরটির অনুসরণ ক‘রে তা পুনরায় নিয়ে আসছে। ফিরে আসতে না আসতেই লোকটির মাথা আগের মত পুনরায় ভাল হয়ে যাচ্ছে। ফিরে এসে আবার একই আচরণ করছে; যা প্রথমবার করেছিল। (তিনি বলেন,) আমি সাথীদ্বয়কে বললাম, ‘সুবহানাল্লাহ! এটা কি?’ তারা আমাকে বলল, ‘চলুন, চলুন।’
সুতরাং আমরা চলতে লাগলাম, তারপর চিৎ হয়ে শোয়া এক ব্যক্তির কাছে পৌঁছলাম। এখানেও দেখলাম, তার নিকট এক ব্যক্তি লোহার আঁকড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর সে তার চেহারার একদিকে এসে এর দ্বারা তার কশ থেকে মাথার পিছনের দিক পর্যন্ত এবং একইভাবে নাকের ছিদ্র থেকে মাথার পিছনের দিক পর্যন্ত এবং অনুরূপভাবে চোখ থেকে মাথার পিছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলছে। তারপর ঐ লোকটি শোয়া ব্যক্তির অপরদিকে যাচ্ছে এবং প্রথম দিকের সাথে যেরূপ আচরণ করেছে অনুরূপ আচরণই অপর দিকের সাথেও করছে। ঐ দিক হতে অবসর হতে না হতেই প্রথম দিকটি আগের মত ভাল হয়ে যাচ্ছে। তারপর আবার প্রথম বারের মত আচরণ করছে। (তিনি বলেন,) আমি বললাম, ‘সুবহানাল্লাহ! এরা কারা?’ তারা আমাকে বলল, ‘চলুন, চলুন।’
  সুতরাং আমরা চলতে লাগলাম এবং (তন্দুর) চুলার মত একটি গর্তের কাছে পৌঁছলাম। (বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয়, যেন তিনি বললেন,) আর সেখানে শোরগোল ও নানা শব্দ ছিল। আমরা তাতে উঁকি মেরে দেখলাম, তাতে বেশ কিছু উলঙ্গ নারী-পুরুষ রয়েছে। আর নীচ থেকে নির্গত আগুনের লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করছে। যখনই লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করছে, তখনই তারা উচ্চরবে চিৎকার ক‘রে উঠছে। আমি বললাম, ‘এরা কারা?’ তারা আমাকে বলল, ‘চলুন, চলুন।’
সুতরাং আমরা চলতে লাগলাম এবং একটি নদীর কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। (বর্ণনাকারী বলেন, আমার যতদূর মনে পড়ে, তিনি বললেন,) নদীটি ছিল রক্তের মত লাল। আর দেখলাম, সেই নদীতে এক ব্যক্তি সাঁতার কাটছে। আর নদীর তীরে অপর এক ব্যক্তি রয়েছে এবং সে তার কাছে অনেকগুলো পাথর একত্রিত করে রেখেছে। আর ঐ সাঁতার-রত ব্যক্তি বেশ কিছুক্ষণ সাঁতার কাটার পর সেই ব্যক্তির কাছে ফিরে আসছে, যে তার নিকট পাথর একত্রিত করে রেখেছে। সেখানে এসে সে তার সামনে মুখ খুলে দিচ্ছে এবং ঐ ব্যক্তি তার মুখে একটি পাথর ঢুকিয়ে দিচ্ছে। তারপর সে চলে গিয়ে আবার সাঁতার কাটছে এবং আবার তার কাছে ফিরে আসছে। আর যখনই ফিরে আসছে তখনই ঐ ব্যক্তি তার মুখে পাথর ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এরা কারা?’ তারা বলল, ‘চলুন, চলুন।’

    সুতরাং আমরা চলতে লাগলাম এবং এমন একজন কুৎসিত ব্যক্তির কাছে এসে পৌঁছলাম, যা তোমার দৃষ্টিতে সর্বাধিক কুৎসিত বলে মনে হয়। আর দেখলাম, তার নিকট রয়েছে আগুন, যা সে জ্বালাচ্ছে ও তার চারিদিকে ছুটে বেড়াচ্ছে। আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ঐ লোকটি কে?’ তারা বলল, ‘চলুন, চলুন।’
সুতরাং আমরা চলতে লাগলাম এবং একটা সবুজ-শ্যামল বাগানে এসে উপস্থিত হলাম। সেখানে বসন্তের সব রকমের ফুল রয়েছে আর বাগানের মাঝে এত বেশী দীর্ঘকায় একজন পুরুষ রয়েছে, আকাশে যার মাথা যেন আমি দেখতেই পাচ্ছিলাম না। আবার দেখলাম, তার চারদিকে এত বেশী পরিমাণ বালক-বালিকা রয়েছে, যত বেশী পরিমাণ আর কখনোও আমি দেখিনি। আমি তাদেরকে বললাম, ‘উনি কে? এরা কারা?’ তারা আমাকে বলল, ‘চলুন, চলুন।’
সুতরাং আমরা চলতে লাগলাম এবং একটা বিশাল (বাগান বা) গাছের নিকট গিয়ে উপস্থিত হলাম। এমন বড় এবং সুন্দর (বাগান বা) গাছ আমি আর কখনো দেখিনি। তারা আমাকে বলল, ‘এর উপরে চড়ুন।’ আমরা উপরে ছড়লাম। শেষ পর্যন্ত সোনা-রূপার ইটের তৈরি একটি শহরে গিয়ে আমরা উপস্থিত হলাম। আমরা শহরের দরজায় পৌঁছলাম এবং দরজা খুলতে বললাম। আমাদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হল। আমরা তাতে প্রবেশ করলাম। তখন সেখানে কতক লোক আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করল, যাদের অর্ধেক শরীর এত সুন্দর ছিল, যত সুন্দর তুমি দেখেছ, তার থেকেও অধিক। আর অর্ধেক শরীর এত কুৎসিত ছিল যত কুৎসিত তুমি দেখেছ, তার থেকেও অধিক। সাথীদ্বয় ওদেরকে বলল, ‘যাও ঐ নদীতে গিয়ে নেমে পড়।’ আর সেটা ছিল সুপ্রশস্ত প্রবহমান নদী। তার পানি যেন ধপধপে সাদা। ওরা তাতে গিয়ে নেমে পড়ল। অতঃপর ওরা আমাদের কাছে ফিরে এলো। দেখা গেল, তাদের ঐ কুশ্রী রূপ দূর হয়ে গেছে এবং তারা খুবই সুন্দর আকৃতির হয়ে গেছে। (তিনি বলেন,) তারা আমাকে বলল, ‘এটা জান্নাতে আদ্ন এবং ওটা আপনার বাসস্থান।’ (তিনি বলেন,) উপরের দিকে আমার দৃষ্টি গেলে, দেখলাম ধপধপে সাদা মেঘের মত একটি প্রাসাদ রয়েছে। তারা আমাকে বলল, ‘ঐটা আপনার বাসগৃহ।’ (তিনি বললেন,) আমি তাদেরকে বললাম, ‘আল্লাহ তোমাদের মাঝে বরকত দিন, আমাকে ছেড়ে দাও; আমি এতে প্রবেশ করি।’ তারা বলল, ‘আপনি অবশ্যই এতে প্রবেশ করবেন। তবে এখন নয়।’

    আমি বললাম, ‘আমি রাতে অনেক বিস্ময়কর ব্যাপার দেখতে পেলাম, এগুলোর তাৎপর্য কী?’ তারা আমাকে বলল, ‘আচ্ছা আমরা আপনাকে বলে দিচ্ছি। ঐ যে প্রথম ব্যক্তিকে যার কাছে আপনি পৌঁছলেন, যার মাথা পাথর দিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হচ্ছিল, সে হল ঐ ব্যক্তি যে কুরআন গ্রহণ ক‘রে---তা বর্জন করে। আর ফরয নামায ছেড়ে ঘুমিয়ে থাকে।
আর ঐ ব্যক্তি যার কাছে গিয়ে দেখলেন যে, তার কশ থেকে মাথার পিছনের দিক পর্যন্ত এবং একইভাবে নাকের ছিদ্র থেকে মাথার পিছনের দিক পর্যন্ত এবং অনুরূপভাবে চোখ থেকে মাথার পিছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলা হচ্ছিল। সে হল ঐ ব্যক্তি যে সকালে আপন ঘর থেকে বের হয়ে এমন মিথ্যা বলে, যা চতুর্দিক ছড়িয়ে পড়ে।

   আর যে সকল উলঙ্গ নারী-পুরুষ যারা (তন্দুর) চুলা সদৃশ গর্তের অভ্যন্তরে রয়েছে, তারা হল ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণীর দল।
আর ঐ ব্যক্তি যার কাছে পৌঁছে দেখলেন যে, সে নদীতে সাঁতার কাটছে ও তার মুখে পাথর ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে সে হল সুদখোর।
আর ঐ কুৎসিত ব্যক্তি যে আগুনের কাছে ছিল এবং আগুন জ্বালাচ্ছিল আর তার চারপাশে ছুটে বেড়াচ্ছিল। সে হল মালেক (ফেরেশতা); জাহান্নামের দারোগা।

    আর ঐ দীর্ঘকায় ব্যক্তি যিনি বাগানে ছিলেন। তিনি হলেন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম। আর তাঁর চারপাশে যে বালক-বালিকারা ছিল, ওরা হল তারা, যারা (ইসলামী) প্রকৃতি নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।’’
বারক্বানীর বর্ণনায় আছে, ‘‘ওরা তারা, যারা (ইসলামী) প্রকৃতি নিয়ে জন্মগ্রহণ ক‘রে (মৃত্যুবরণ করেছে) ।’’ তখন কিছু সংখ্যক মুসলিম জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! মুশরিকদের শিশু-সন্তানরাও কি (সেখানে আছে)?’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘‘মুশরিকদের শিশু-সন্তানরাও (সেখানে আছে) ।

    আর ঐ সব লোক যাদের অর্ধেকাংশ অতি সুন্দর ও অর্ধেকাংশ অতি কুৎসিত ছিল, তারা হল ঐ সম্প্রদায় যারা সৎ-অসৎ উভয় প্রকারের কাজ মিশ্রিত-ভাবে করেছে। আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ক‘রে দিয়েছেন।’’ (বুখারী)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আজ রাতে আমি দেখলাম, দু’টি লোক এসে আমাকে পবিত্র ভূমির দিকে বের করে নিয়ে গেল।’’ অতঃপর ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন, ‘‘সুতরাং আমরা চলতে লাগলাম এবং (তন্দুর) চুলার মত একটি গর্তের কাছে পৌঁছলাম; যার উপর দিকটা সংকীর্ণ ছিল এবং নিচের দিকটা প্রশস্ত। তার নিচে আগুন জ্বলছিল। তার মধ্যে উলঙ্গ বহু নারী-পুরুষ ছিল। আগুন যখন উপর দিকে উঠছিল, তখন তারাও (আগুনের সাথে) উপরে উঠছিল। এমনকি প্রায় তারা (চুলা) থেকে বের হওয়ার উপক্রম হচ্ছিল। আর যখন আগুন স্তিমিত হয়ে নেমে যাচ্ছিল, তখন (তার সাথে) তারাও নিচে ফিরে যাচ্ছিল।’’

   এই বর্ণনায় আছে, ‘‘একটি রক্তের নদীর কাছে এলাম।’’ বর্ণনাকারী এতে সন্দেহ করেননি। ‘‘সেই নদীর মাঝখানে একটি লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর নদীর তীরে একটি লোক রয়েছে, যার সামনে পাথর রয়েছে। অতঃপর নদীর মাঝের লোকটি যখন উঠে আসতে চাচ্ছে, তখন তীরের লোকটি তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে সেই দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে যেখানে সে ছিল। এইভাবে যখনই সে নদী থেকে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে, তখনই ঐ লোকটি তার মুখে পাথর ছুঁড়ে মারছে। ফলে সে যেখানে ছিল সেখানে ফিরে যাচ্ছে।’’

    এই বর্ণনায় আরও আছে, ‘‘তারা উভয়ে আমাকে নিয়ে ঐ (বাগান বা) গাছে উঠে গেল। অতঃপর সেখানে এমন একটি গৃহে আমাকে প্রবেশ করাল, যার চেয়ে অধিক সুন্দর গৃহ আমি কখনো দেখিনি। সেখানে বহু বৃদ্ধ ও যুবক লোক ছিল।’’

     এই বর্ণনায় আরও আছে, ‘‘আর যাকে আপনি তার নিজ কশ চিরতে দেখলেন, সে হল বড় মিথ্যুক; যে মিথ্যা কথা বলত, অতঃপর তা তার নিকট থেকে বর্ণনা করা হত। ফলে তা দিকচক্রবালে পৌঁছে যেত। অতএব এই আচরণ তার সাথে কিয়ামত পর্যন্ত করা হবে।’’

     এই বর্ণনায় আরও আছে, ‘‘যার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে দেখলেন, সে ছিল এমন ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ কুরআন শিখিয়েছিলেন। কিন্তু সে (তা ভুলে) রাতে ঘুমিয়ে থাকত এবং দিনে তার উপর আমল করত না। অতএব এই আচরণ তার সাথে কিয়ামত পর্যন্ত করা হবে। আর প্রথম যে গৃহটি আপনি দেখলেন, তা হল সাধারণ মু‘মিনদের। পক্ষান্তরে এই গৃহটি হল শহীদদের। আমি জিবরীল, আর ইনি মীকাঈল। অতএব আপনি মাথা তুলুন। সুতরাং আমি মাথা তুললাম। তখন দেখলাম, আমার উপর দিকে মেঘের মত কিছু রয়েছে। তাঁরা বললেন, ‘ওটি হল আপনার গৃহ।’ আমি বললাম, ‘আপনারা আমাকে ছেড়ে দিন, আমি আমার গৃহে প্রবেশ করি।’ তাঁরা বললেন, ‘(দুনিয়াতে) আপনার আয়ু অবশিষ্ট আছে; যা আপনি পূর্ণ করেননি। যখন আপনি তা পূর্ণ করবেন, তখন আপনি আপনার গৃহে চলে আসবেন।’’

  বুখারী ১৩৮৬, ৮৪৫, ১১৪৩, ২০৮৫, ২৭৯১, ৩২৩৬, ৩৩৫৪, ৪৬৭৪, ৬০৯৬, ৭০৪৭, মুসলিম ২২৭৫, তিরমিযী ২২৯৪, আহমাদ ১৯৫৯০, ১৯৫৯৫, ১৯৬৫২, রিয়াদুস সলেহিন ১৫৫৪

     এ হচ্ছে কুরআন সুন্নাহ হতে কতিপয় দলীল, যা দ্বারা বুঝা যায় সুদ কত ভয়ানক অপরাধের কাজ। ব্যক্তি ও জাতির জন্য কত মারাত্মক ও ভয়ানক বিষয়। সুদের সাথে লিপ্ত ব্যক্তি বড় ধরণের কাবীরা গুনাহে লিপ্ত এবং এর মাধ্যমে সে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে।

     হে মুসলিম ভাই! আপনি যদি পরকালকে বিশ্বাস করেন, তবে আপনার সম্পদে আল্লাহকে ভয় করুন। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনার জন্য যা বৈধ করেছেন তা যথেষ্ট মনে করুন। কেননা হারাম বস্তু পরিত্যাগ করে আল্লাহর বৈধকৃত ববস্থা গ্রহণ করাই যথেষ্ট।

    প্রকৃত পক্ষে যে মুসলমান নিজের কল্যাণ চায়, জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চায় এবং আল্লাহর রেযামন্দী ও করুণা লাভে নিজেকে ধন্য করতে চায় সে অবশ্যই সুদী ব্যাংক থেকে বিরত থাকবে। সুদী ব্যাংকে সুদ নেয়ার ভিত্তিতে অর্থ জমা রাখবে না।

  বর্তমানে প্রচলিত সুদের কয়েকটি উদাহরণঃ

     *বেতন বিক্রি করাঃ একজন লোক মাস শেষে তিন হাজার টাকা বেতন পাবে। সে অগ্রীম এই বেতন বিক্রয় করে দেয় পঁচিশ শত বা টাকা সুদ হবে।

   *বাকী বিক্রয় করে মূল্যের উপর সুদ গ্রহণঃ কোন বস্তু নির্দিষ্ট মূল্যে বাকী বিক্রয় করে সময় মত উহা পরিশোধ করতে না পারলে সেখানে অতিরিক্ত টাকা সংজোগ করা হলে তা সুদের অন্তর্গত হবে।

       যেমন বর্তমানে মধ্য প্রচ্যে বিশেষকরে সৌদী আরবে কাজ করতে আসা অনেক মানুষ একশত রিয়াল দাম নির্ধারণ করে এক মাসের মেয়াদে মোবাইল কার্ড বিক্রয় করে। মাস শেষ হলে একশত রিয়াল দিতে না পারলে পরবর্তী মাসের জন্য সেখানে আরো পাঁচ বা দশ রিয়াল বৃদ্ধি করা হয়। এই বৃদ্ধি চক্রহারে বৃদ্ধি সুদের অন্তর্গত। আবার অনেকে পাঁচানব্বই রিয়ালের/টাকার কার্ড একশত রিয়াল/টাকা দাম নির্ধারণ করে বিক্রয় করে এক মাসের মেয়াদে। মাস শেষ হলে গ্রহীতার নিকট থেকে পূর্ণ একশত রিয়াল না নিয়ে কার্ডের দাম ৯৫ রিঃ/টাকা অবশিষ্ট রেখে শুধুমাত্র লাভের পাঁচ রিয়াল/টাকা নিয়ে নেয়। এই পাঁচ রিয়াল/টাকা গ্রহণ করা সুদ। কেননা এখানে রিয়াল/টাকা দিয়ে অতিরিক্ত রিয়াল/টাকা নেয়ার মাধ্যমে সুদ গ্রহণ করাই মূল উদ্দেশ্যে মধ্যখানে কার্ড একটি বাহানা মাত্র।

  * দু-মন নীচু মানের ধান, গম ইত্যাদির বিনিময়ে একমন উন্নত মানের বস্তু নেয়াও সুদ।
  * টাকা-পয়সা কর্য দিয়ে যে কোনভাবে কর্যগ্রহীতার নিকট থেকে উপকার গ্রহণ করা সুদের অন্তর্গত। যেমন তার নিকট থেকে হাদিয়া-উপহার গ্রহণ করা, তার নিকট পানাহার করা ইত্যাদি। তবে যদি আগে থেকেই তাদের মাঝে এসব বিষয় প্রচলিত থাকে তবে কোন অসুবিধা নেই। তা সুদের অন্তর্গত হবে না। 
রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, 
 তোমাদের কেহ যদি কোন মানুষকে কর্য প্রদান করে, আর কর্যগ্রহীতা তাকে কিছু হাদিয়া-উপহার দেয় অথবা তার বাহনে উঠায়, তবে তার বাহনে উঠবে না, তার হাদিয়া গ্রহণ করবে না। অবশ্য আগে থেকে যদি তাদের মাঝে এসব আদান-প্রদানের অভ্যাস থেকে থাকে তবে কোন অসুবিধা নেই। (ইবনু মাজাহ্‌) 

   অতএব টাকা দিয়ে তার বিনিময়ে অতিরিক্ত টাকা নেয়া যে সুদ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

   বর্তমানের অধিকাংশ ব্যাংক নির্দিষ্ট হারে মানুষকে ইন্টারেষ্ট (সুদ) দিয়ে থাকে। এজন্য সে সকল ব্যাংকে টাকা জমা রাখা উচিত নয়। কেননা এতে তাদেরকে হারাম কাজে সহযোগিতা করা হয়। 
আর আল্লাহ বলেন, 

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلا تَعَاوَنُوا عَلَى الإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ 
তোমরা পরস্পরকে সৎ ও আল্লাহ ভীতির কাজে সহযোগিতা কর এবং গুনাহ ও শত্রুতার কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না। (সূরা মায়েদা- ২)

  বৈধ লাভ গ্রহণঃ লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে ব্যবসায় টাকা লাগানো বৈধ ব্যবাসার অন্তর্গত। অর্থাৎ- লাভ হলে লাভের অংশ পাবে লোকসান হলে লোকসান মেনে নিতে হবে এই চুক্তির শর্তে ব্যবসা করলেই তা হালাল হিসেবে গণ্য হবে অন্যথায় নয়। এই ভিত্তিতে কোন ব্যাংক যদি লাভ-লোকসানের শর্ত রেখে আপনাকে মুনাফা নেয়, তবে তা জায়েয হবে।

   সবশেষে মুসলিম ভাইদের প্রতি আবেদন,
সুদ পরিষ্কার বিদ্রোহ ও সমাজে মহামারী।  দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী সম্পদ অবৈধ উপায়ে সঞ্চয় না করে অন্তরে আল্লাহর ভয় রেখে সৎভাবে উপার্জনের চেষ্টা করা উচিত। 
কেননা নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেন, 

    কোন প্রাণী নির্ধারিত জীবিকা গ্রহণ করা ব্যতীত কখনই মৃত্যু বরণ করবে না। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। জীবিকা অনুসন্ধানে সুন্দর পন্থা অবলম্বন কর। জীবিকা উপার্জনের বিলম্ব তোমাদেরকে যেন পাপাচারে লিপ্ত হয়ে উহা অনুসন্ধানে উদ্বুদ্ধ না করে। কেননা আল্লাহর আনুগত্য ব্যতীত তাঁর ভান্ডার থেকে কিছুই পাওয়া যাবে না। (আবু নুআইম হিলইয়াতুল আউলিয়া গ্রনে’ হাদীছটি বর্ণনা করেন পৃঃ ২৭। শায়খ আলবানী হাদীছটি ছহীহ বলেন, দ্রঃ ছহীহুল জামে হা/ ২৮৫। মিশকাত হা/ ৫৩০০। ফিক্বহুস্‌ সিরাহ্‌ হা/ ৯৬।)

   হে আল্লাহ আমাদেরকে সৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করার তাওফীক দান কর। সৎ উপায় সমূহ আমাদের জন্য সহজ করে দাও। উপার্জিত সম্পদে বরকত দাও। আর যাবতীয় হারাম পন্থায় উপার্জন করা থেকে বাঁচিয়ে রাখ। আমাদের ইবাদত ও দুআ কবুল কর। আমীন॥
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল প্রবন্ধ লেখক  ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments