Recent Tube

আত্মহত্যার প্রবনতা ও তার প্রতিকার । (Suicidal tendencies and their remedies) - মুহিউল ইসলাম মাহিম চৌধুরী।





 আত্মহত্যার প্রবনতা ও তার প্রতিকার । 
(Suicidal tendencies and their remedies)

==============♦================

আপনি খুব হতাশাগ্রস্থ?  
আপনাকে কেউ সময় দিচ্ছেনা?  
জীবনে আপনি খুব একা? 
আপনি দারীদ্রতার নিষ্পেষণে জর্জরিত ।
 দুধের বাচ্ছাটার মুখে খাবার তুলে দিতে পারছেননা?  আপনাকে খুব অথর্ব বাবা কিংবা মা বলে মনে হয়। সন্তানের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে আপনি ধৈর্য্যহারা হয়ে গেছেন ? ।
 
আপনি তরুন । ভালবাসতে গিয়ে আপনি আজ ছন্নছাড়া । কথা দিয়ে কথা রাখেনি আপনার প্রেয়সী !  যার কন্ঠ না শুনলে আপনার একদিনও চলতোনা । সে কিনা আপনারই চোখের সামনে দিয়ে চলে গেছে অন্যের ঘরে!

  আপনি একজন ভাল ছাত্র ছিলেন।। অর্থাভাবে অগ্রসর হতে পারেননি?  অথচ আপনার পেছনের বেঞ্চে বসা ছাত্রটি আজ জীবনে প্রতিষ্টিত । আপনি সুস্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন আপনার জীবনের সব পথ রুদ্ধ । আপনি ধৈর্যহারা হয়ে গেছেন ।
আপনি একজন প্রবাসী, সমস্যার পাহাড় মাথায় নিয়ে আপনি একদম এগুতে পারছেননা। আপনার দরীদ্রপীড়িত পরিবারের ভারী বোঝা আপনার মাথার উপরে । কিন্তুু আপনি পরিবারের জন্য কিছুই করতে পারছেননা। 

  আপনি শত্রুতার মুখে পড়েছেন । কোনভাবেই নিজেকে সেভ করতে পারছেননা?  আপনার চোখে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পাননা? । ভাবছেন,আপনার সামনে সমাধান একটাই ।  আর সেটা হলো এ জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটানো।  আপনি আর এ জীবন রাখতে চাননা ।
আপনি আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে এই জীবনের যবনিকাপাত  করবেন!  প্লিজ থামুন আর নিজেকে প্রশ্ন করুন, এ জীবনের মালিক কি আপনি? । এ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের প্রকৃত মালিক কি আপনি? এ পরীক্ষাটি করার জন্য একবার একজন প্যারালাইজড রুগীর কাছে যান ।  তাকে বলুন তার অবশ হয়ে যাওয়া পা কিংবা হাতটি নাড়ানোর জন্য? পারবে কি সে? পারবেনা!  কেন পারবেনা?  জাগতিক দিক থেকে এ হাতটি তো তারই। এ হাত দিয়ে একদিন সে কত কিছুই না করেছে।  এ পা দিয়ে একদিন মাইলের পর মাইল হেঁঠেছে।  আজ তার নিজেরই পা কেন তার কথা মানছেনা? ।
মানছেনা এই জন্য তার হাত পা তার নিজের সাথে লেগে থাকার পরও এটা অাজ অার তার নয়।
তাহলে এটি কার?

  আপনার এই দেহ এই প্রাণের মালিক আপনি নন । যদি আপনিই হন তাহলে আপনি স্বেচ্ছায় কী একদিন বেশী বাঁচতে পারবেন?। মৃত্যুপথ যাত্রী একজন মানুষের বেঁচে থাকার আকুতি কি আপনি দেখেননি?। নিশ্চয় দেখেছেন । আপনি বুকে হাত দিয়ে বলুনতো মৃত্যুর দোয়ারে দাঁড়িয়ে থাকা ঐ ব্যাক্তি কি নিজ ইচ্ছায় একটা দিন কি বেশী বাঁচতে পারবেন?। আপনার জবাব যদি না হয় তাহলে এ জীবনকে শেষ করে দেবার জন্য তাড়াহুড়ো করছেন কেন?। আর এই জবাবের মধ্য দিয়ে আপনি মেনে নিচ্ছেন আপনার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং জীবনের মালিক আপনি নন, তাহলে জীবনহানির জন্য তাড়াহুড়ো করার আপনি কে?

  আত্মহত্যার প্রবনতা একটি মানষিক ব্যাধি । মানুষ যখন চূড়ান্তভাবে নিজেকে অসহায় মনে করে তখনই মানুষ আত্মহত্যা করে ।
গবেষণায় দেখা যায় নিম্নবর্ণিত লোকেরাই বেশীরভাগ আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে থাকে ।
যেমন বিভিন্নকারণে মানসিক ডিজঅর্ডার, মানসিক চাপ ম্যানেজমেন্টের অদক্ষতা, ব্যর্থতা মেনে নেওয়ার মানসিক সীমাবদ্ধতা, অতিরিক্ত চাহিদার মানসিক চাপ,পারিবারিক কলহ,সামাজিক বৈষম্য, ক্ষুধা ও বেকারত্ব,শারিরিকও ও মানসিক উৎপীড়ন, যৌন নিপীড়ন,অতিমাত্রায় নেশাগ্রস্থতা। 

  একজন আত্মহত্যাকারী ব্যাক্তির প্রতি কোন ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি রাখবো সেই সিদ্ধান্ত  নেয়াটা কষ্টকর।
আত্মহত্যা কোন সম্মানজনক মৃত্যু নয়।
জীবনে যত চড়াই উৎরাই আসুক না কেন সে যদি নিজেকে আল্লাহর হাওয়ালা করতে পারে তাহলে মানুষ আত্মহত্যার প্রবনতা থেকে বাঁচতে পারবে । আত্মহত্যা কবীরা গুনাহ।

  আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু এবং যে কেউ সীমালঙ্ঘন করে আত্মহত্যা করবে তাকে অগ্নিতে দগ্ধ করব এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ (সূরা আন নিসা আয়াত-২৯,৩০)। আত্মহত্যাকারীর জন্য পরকালে কঠোর আজাবের ঘোষণা এ আয়াত থেকে সুস্পষ্ট বোঝা যায়। 

  আল্লাহ আরও বলেন, তোমরা নিজের হাতে নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না (সূরা বাকারা-১৯৫)

  আত্মহত্যার ভয়াবহ পরিনতি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (স) এর সুস্পষ্ট হাদীস রয়েছে। নবী (স) বলেন, 
‘তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিলো, সে আহত হয়ে ছটফট করতে লাগল। এ অবস্থায় সে ছুরি নিয়ে নিজেই নিজের হাত কাটল ও ব্যাপক রক্তপাত ঘটল। এতে করে তার মৃত্যু হলো।’ আল্লাহ এ ব্যক্তি সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমার এ বান্দা নিজের ব্যাপারে খুব তাড়াহুড়া করে ফেলছে। এ কারণে আমি তার প্রতি জান্নাত হারাম করে দিয়েছি।’ ( বোখারি : ৩২৭৬)। 
 একজন আত্মহত্যাকারী যে উপকরণ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে জাহান্নামে ঐ উপকরণ দিয়েই সে নিজেকে হত্যা করতে থাকবে । 
অাত্মহত্যাকরীর জানাজা পর্যন্ত হুজুর (স) পড়তেননা । তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ কোন মুসলিম তার জানাজা পড়িয়ে দিবে এটাই ইসলামের বিধান ।

   সূতরাং, সার্বিক অবস্থায় একজন মানুষ যতই মানষিক যাতনায় পড়ুক না কেন সে যদি এ বিশ্বাস রাখে যে,আমার জীবনের মালিক,অামার তাকদীর নির্ধারণের মালিক আমার ভাল এবং মন্দের মালিক একমাত্র আল্লাহ  এবং সেই সাথে সে যদি তার পরকালীন পরিনতি সম্পর্কে অবগত থাকে তবেই সে আত্মহত্যার প্রবনতা থেকে বাঁচতে পারবে ।
------------------------------- 
লেখক ঃ  ইসলামি আর্টিকেল, প্রবন্ধ লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments