Recent Tube

দেওবন্দী ওলামায়ে আকাবিরীনের দৃষ্টিতে হযরত মুয়াবিয়া (রা): মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।







 


  দেওবন্দী ওলামায়ে আকাবিরীনের দৃষ্টিতে হযরত মুয়াবিয়া (রা):
---------------------------- 
বিখ্যাত দেওবন্দী আলেম, ত্বকী উসমানীর পিতা মুফতি মুহাম্মদ শফী (রাহঃ) এর দৃষ্টিতে হযরত মুয়াবিয়া (রা):
-------------------------------------------
  মুফতি মুহাম্মদ শফী (রাহঃ) বলেনঃ 
"হযরত ওসমান (রা) এর শাহাদত থেকে মুসলমানদের মধ্যে পারস্পারিক ফিতনা শুরু হয়। এতে মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র এবং সরলমনা মুসলমান (সাহাবী) দের আবেগ সম্বলিত অনেক ঘটনা পরিলক্ষিত হয়। নবীগণের পরে শ্রেষ্ঠত্ব সর্বস্বীকৃত সেই মুসলমান (সাহাবা)গণ নিজেরাই পারস্পারিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়ে। 
ইসলামী খিলাফতের পারস্পরা যখন আমীরে মুয়াবিয়া (রা) পর্যন্তু এসে পৌঁছে, তখন রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার মধ্যে 'খিলাফতে রাশেদা'র সেই রূপ অনুপস্থিত থাকে, যে রূপ নিয়ে 'খোলাফায়ে রাশেদীন' রাষ্ট্র পরিচালনা করে ছিলেন।"
(শহীদে কারবালা, পৃঃ১৪) 

  মদীনার গভর্নর মারওয়ান খুতবা দিলেন এবং বললেন, আমীরুল মুমিনীন মুয়াবিয়া (রা) হযরত আবূ বকর (রা) ও হযরত ওমর (রা) এর পদ্ধতি অনুযায়ী এই ইচ্ছা পোষণ করেছেন যে, তাঁর পরিবর্তে খলিফা হিসাবে তাঁর পুত্র ইয়াযীদের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করাবেন।
এ সময় আব্দুর রহমান ইবনে আবূ বকর (রা) দাড়িয়ে বললেন, হে মারওয়ান! আপনার এ বক্তব্য সঠিক নয়। হযরত মুয়াবিয়া যেটি চাচ্ছেন, এটি আবূ বকর (রা) ও ওমর (রা) এর পদ্ধতি নয়। বরং এটি পারস্য ও রোম সম্রাটের পদ্ধতি। হযরত আবূ বকর (রা) ও ওমর (রা) তাঁরা তাঁদের পুত্রদের জন্য বাইয়াত নেননি এবং তাঁদের খিলাফতের দায়িত্বও প্রদান করে যাননি। এমন কি তাঁরা তাঁদের গোত্রদের কাউকেই স্থলাভিষিক্ত করে যাননি।
মুফতি শফী আরো বলেনঃ
ইসলামী খিলাফত হচ্ছে খিলাফতে নুবুয়াত। এই খিলাফতে উত্তরাধিকারীদের কোনই অধিকার নেই যে, পিতার পর তাঁর পুত্র খলিফা হবে। বরং এখানে যেটা অতি প্রয়োজন, তা হচ্ছে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভাবে যোগ্যতার ভিত্তিতে খলিফা মনোয়ন করা। 
(শহীদে কারবালা, পৃঃ ১৫-১৬)

    সারসংক্ষেপ: খোলাফায়ে রাশেদীন যে রকম নির্ভুল ও নিরপেক্ষ ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন, হযরত মুয়াবিয়া (রা) হুবাহু সেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেননি। খিলাফতে উত্তরাধিকারীদের কোনই অধিকার নেই যে, পিতার পর তাঁর পুত্র খলিফা হবে। বরং এখানে যেটা অতি প্রয়োজন, তা হচ্ছে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভাবে যোগ্যতার ভিত্তিতে খলিফা মনোয়ন করা। কিন্তু হযরত মুয়াবিয়া (রা) স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভাবে যোগ্যতার ভিত্তিতে খলিফা মনোয়ন না করে বরং পারস্য ও রোম সম্রাটের পদ্ধতিতে তাঁর পুত্র কে খলিফা নিযুক্ত করেছেন। অথচ এ অধিকার মুয়াবিয়া (রা) এর ছিল না।

  দেওবন্দীদের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও পীর রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী (রাহঃ) এর দৃষ্টিতে মুয়াবিয়া (রা):
 --------------------------------------------
  রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী শিয়া লোকদের এক প্রশ্নের জবাবে লিখেনঃ
"হযরত আলী (রা) সাথে সংঘটিত মুয়াবিয়া (রা) এর দ্বন্দ্ব কে আহলে সুন্নাতগণ কবে (কখন) ভালো এবং জায়েয বলেছেন? আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত তাঁকে এ কাজের জন্য দায়ী করে। তবে এ কাজের জন্য মুয়াবিয়া (রা) ঈমান হারা হয়ে যাননি, যেমন তোমরা এবং তোমাদের পূর্বের ইমামগণ এরূপ ধারণা পোষণ করে থাকে। কারণ আল্লাহ নিজেই বলেছেনঃ
ﻭَﺇِﻥ ﻃَﺎٓﺋِﻔَﺘَﺎﻥِ ﻣِﻦَ ﭐﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﭐﻗْﺘَﺘَﻠُﻮﺍ۟ ﻓَﺄَﺻْﻠِﺤُﻮﺍ۟ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻤَﺎۖ .
আর যদি মুমিনদের দু’দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও।
 (সূরা হুজুরাতঃ০৯)
দু'দলের পারস্পারিক মারামারি করা সত্বেও আল্লাহ তাদের কে মুমিন নামেই আখ্যায়িত করেছেন। এছাড়া শত শত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে, ফিসক ও কবীরা গুনাহর দ্বারা কোন মুসলিম কাফের হয় না।"
(শিয়া হেদায়াত, পৃঃ ২৩)

  সারসংক্ষেপ: মুয়াবিয়া (রা) এর খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত আলী (রা) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা জায়েজ হয়নি বরং তিনি এ যুদ্ধের কারণে দায়ী ও অপরাধী। তবে এই অপরাধ বা গুণাহর কারণে তাকে কাফের বলা যাবে না।

  দেওবন্দীগণ যাদের প্রথম সারির আকাবিরীন বলে দাবী করেন, তাঁদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় আলেম, শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিস (রাহঃ)। তাঁর দৃষ্টিতে মুয়াবিয়া (রা):
--------------------------------------------
  মুহাদ্দিস শাহ আব্দুল আজিজ দেহলবী (রাহঃ) বলেনঃ
"আলেম ও ফকীহগণের মতে হযরত আলী (রা) এর সাথে মুয়াবিয়া (রা) এর যে সংঘর্ষ ও দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তা শুধু ইজতিহাদী ভুলের কারণে। মুহাদ্দিসগণ পরে রেওয়াত অনুসন্ধান করে বলেন, এ অশুভ তৎপরতা একেবারে স্বার্থ শূন্য ছিল না এবং এ দুর্নাম থেকেও মুক্ত ছিল না যে, হযরত ওসমান (রা) এর ব্যাপারে ওমাইয়া ও কুরাইশদের মধ্যে যে গোত্রীয় সাম্প্রদায়িকতা ছিল আমীরে মুয়াবিয়া (রা) এর মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হয়। আর এরই পরিণতি তে কবীরা গুনাহর অপরাধী এবং বিদ্রোহী গন্য করা যায়। তবে তিনি অভিশপ্ত হওয়ার যোগ্য নয়।"
(ফতোয়ায়ে আজিজীয়া, মুতারজম, পৃঃ ২২৫)

  সারসংক্ষেপ: আমীরে মুয়াবিয়া (রা) খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত আলী (রা) এর বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ করেছেন, সেটা নিছক ইজতিহাদী ভুল নয় বরং এর মধ্যে তাঁর স্বার্থও ছিল। সিফফীনের যুদ্ধ এবং ওমাইয়া ও কুরাইশদের মধ্যে গোত্রীয় সাম্প্রদায়িকতা আমীরে মুয়াবিয়া (রা) এর মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হয়। আর এরই পরিণতি তে কবীরা গুনাহর অপরাধী এবং বিদ্রোহী হিসাবে গন্য করা যায়। তবে তিনি অভিশপ্ত হওয়ার যোগ্য নয়।

  আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ হযরত মুয়াবিয়া (রা) সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাবে বলেনঃ
"সালফে সালেহীনদের যদিও সাহাবীর সংজ্ঞা নিয়ে মত পার্থক্য ছিল, কিন্তু যে কোন সংজ্ঞা অনুযায়ীই হযরত মুয়াবিয়া (রা) সাহাবীর মর্যাদা লাভ করেছিলেন। তাঁর কোন কোন ব্যক্তিগত কাজ হয়তো ভেবে দেখার বিষয়, কিন্তু সামগ্রিক ভাবে (ইসলামের প্রতি) তাঁর খেদমত ও অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর মাগফিরাত ও পুরুষ্কার লাভ নিশ্চিত ব্যাপার।"
[সাহাবায়ে কিরামের মর্যাদা, পৃঃ২১-২২]

Post a Comment

0 Comments