Recent Tube

মালাকুল মাউত কি একাই সকল প্রাণ হরণ করেন না কি তার অন্যান্য সহযোগী ফেরেশতা রয়েছে? আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল.



 মালাকুল মাউত কি একাই সকল প্রাণ হরণ করেন না কি তার অন্যান্য সহযোগী ফেরেশতা রয়েছে?
------------------------- 
  প্রশ্ন: 
  একই সময় হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। মালাকুল মউত কি একাই সকলের রূহ কবজ করেন না কি তার সহকারী ফেরেশতা আছে?

 উত্তর:
 রূহ কবজ করার প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা হলেন, মালাকুল মাউত। কিন্তু তার সহযোগী ফেরেশতা রয়েছেে অনেক। তারা মালাকুল মাউতের নির্দেশে এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। নিম্নে এ প্রসঙ্গে কুরআনের আয়াত, হাদীস এবং মুফাসরিরদের বক্তব্য তুলে ধরা হল:

 ❖ আল্লাহ তালা বলেন:
قُلْ يَتَوَفَّاكُم مَّلَكُ الْمَوْتِ الَّذِي وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُمْ تُرْجَعُونَ
“বলুন, তোমাদের প্রাণ হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।” (সূরা সাজদাহ: ৩২) 
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মাত্র একজন ফেরেশতার কথা বলেছেন।

❖ তিনি অন্য আয়াতে বলেন:
إِنَّ الَّذِينَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ ظَالِمِي أَنفُسِهِمْ قَالُوا فِيمَ كُنتُمْ
“যারা নিজের প্রতি অবিচার করে, ফেরেশতারা তাদের প্রাণ হরণ করে বলে, তোমরা কি অবস্থায় ছিলে?” (সূরা নিসা: ৯৭)
এই আয়াতে প্রাণ হরণকারী ফেরেশতার ক্ষেত্রে বহু বচন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অনুরূপ বহু বচন ব্যবহৃত হয়েছে, সূরা মুহাম্মাদ এর ২৭, সূরা আনআম এর ৬১ নং সহ আরও একাধিক আয়াতে।

❑ এ প্রসঙ্গে ইবরাহীম নাখঈ বহ. বলেন:
لملك الموت أعوان من الملائكة ، يتوفَّوْن عن أمره 
“মালাকুল মাউত এর সহযোগী ফেরেশতা রয়েছে যারা তার নির্দেশ ক্রমে জান কবজ করে থাকে। ”

❑ বিখ্যাত মুফাসসির ইবনে জারীর আত ত্ববারী রহ. বলেন-যার মর্মার্থ হল, আল্লাহ তাআলা মালাকুল মাউত ফেরেশতাকে আরও সহযোগী ফেরেশতা দিয়েছেন যারা তার হুকুমে প্রাণ হরণ করে। যেভাবে বাদশাহর হুকুমে তার সহযোগীরা কাজ করে। কিন্তু বাদশার দিকেই কাজের সম্বন্ধ করা হয়।”

❖ মালাকুল মাউত এর সহযোগী ফেরেশতা রয়েছে তার প্রমাণ নিম্নোক্ত হাদিসটি:

হযরত বারা বিন আযেব রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, 
إِنَّ الْعَبْدَ الْمُؤْمِنَ إِذَا كَانَ فِي انْقِطَاعٍ مِنَ الدُّنْيَا وَإِقْبَالٍ مِنَ الْآخِرَةِ نَزَلَ إِلَيْهِ من السَّمَاء مَلَائِكَة بِيضُ الْوُجُوهِ كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ الشَّمْسُ مَعَهُمْ كَفَنٌ مِنْ أَكْفَانِ الْجَنَّةِ وَحَنُوطٌ مِنْ حَنُوطِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَجْلِسُوا مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ ثُمَّ يَجِيءُ مَلَكُ الْمَوْتِ حَتَّى يَجْلِسَ عِنْدَ رَأْسِهِ فَيَقُولُ: أَيَّتُهَا النَّفْسُ الطَّيِّبَةُ اخْرُجِي إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنَ الله ورضوان ” قَالَ: «فَتَخْرُجُ تَسِيلُ كَمَا تَسِيلُ الْقَطْرَةُ مِنَ فِي السِّقَاءِ فَيَأْخُذُهَا [ص:513] فَإِذَا أَخَذَهَا لَمْ يَدَعُوهَا فِي يَدِهِ طَرْفَةَ عَيْنٍ حَتَّى يَأْخُذُوهَا فَيَجْعَلُوهَا فِي ذَلِكَ الْكَفَنِ وَفِي ذَلِكَ الْحَنُوطِ وَيَخْرُجُ مِنْهَا كَأَطْيَبِ نَفْحَةِ مِسْكٍ وُجِدَتْ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ» قَالَ: ” فَيَصْعَدُونَ بِهَا
“...মুমিন বান্দা যখন দুনিয়াকে বিদায় দিয়ে আখিরাতের হতে থাকে তখন উজ্জ্বল চেহারাবিশিষ্ট একদল ফেরেশতা আসমান থেকে তার কাছে আসেন। যাদের চেহারা সূর্যের মতো। তাদের সঙ্গে বেহেশতের কাফনসমূহের একটি কাফন থাকে। বেহেশতের সুগন্ধিগুলোর একটি তাদের সঙ্গে থাকে। তারা সে ব্যক্তি থেকে দৃষ্টির দূরত্ব পরিমাণ দূরে অবস্থান করেন। এরপর মালাকুল মাউত (মৃত্যুর দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা) আসেন। তিনি তার মাথার কাছে বসেন এবং বলেন, হে পবিত্র আত্মা! বের হয়ে এস আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির দিকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তখন তার রূহ বের হয়ে আসে যেমনি ভাবে মশক থেকে পানি বের হয়ে আসে। তখন মৃত্যুর ফেরেশতা তাকে গ্রহণ করেন এবং এক মুহূর্তের জন্যেও ঐ ফেরেশতাগণ তাকে মৃত্যুর ফেরেশতার হাতে থাকতে দেন না; বরং তারা নিজেরাই তাকে গ্রহণ করেন এবং তাকে ঐ কাফনের কাপড় ও ঐ সুগন্ধির মাঝে রাখেন। ফলে তার তেকে পৃথিবীর বুকে প্রাপ্ত সকল সুগন্ধির চেয়ে উত্তম মেশকের সুগন্ধ বের হতে থাকে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তাকে নিয়ে ফেরেশতাগণ উপরে উঠতে থাকেন...।”
ইবনুল কাইয়েম রহ. ইলামুল মুওয়াক্কিঈন কিতাবে ১/২১৪) এবং শাইখ আলবানী কিতাবুল জানাইযে (পৃষ্ঠা নং ১৫৯) উক্ত হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।
উক্ত হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল যে, মালাকুল মাউত তথা প্রাণ হরণের প্রধান দায়িত্বশীল ফেরেশতার সাথে আরও সহযোগী ফেরেশতা রয়েছে।
আল্লাহু আলাম।
~~~~~~~~~~~~
 উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার , সৌদি আরব।
#abdullahilhadi

Post a Comment

0 Comments