Recent Tube

আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) এর সমালোচনা, শাইখ আলী হাসান উসামার কুফুরী ও আমাদের জবাবঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।



আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) এর সমালোচনা, শাইখ আলী হাসান উসামার কুফুরী ও আমাদের জবাবঃ
-----------------------------------------------------------
শাইখ আলী হাসান উসামা ভাই তার একটি আলোচনায় আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী (রাহঃ) সম্পর্কে বলেছেন, "তিনি নবীদেরকে Leader শব্দ দিয়ে ব্যক্ত করেছেন।" আর এতে নাকি ইসলামী পরিভাষা নষ্ট হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের উলামায়ে কেরাম বলেছিলেন, 'না'; নবী শব্দ ধর্মীয় শব্দ, রাসূল শব্দ ধর্মীয় শব্দ, Leader শব্দ জাগতিক শব্দ, লিডার যে হয় সে লুচ্চাও হতে পারে, লিডার যে হয় সে ভোট চোরও হতে পারে, লিডার যে হয় সে রিজার্ভ চোরও হতে পারে, লিডার যে হয় সে আটা চোর, গম চোর, টিন চোর সব চোর হতে পারে। কিন্তু নবী যে হবে, রাসূল যে হবে সে মা'সুম হবে, সে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা সুরক্ষিত থাকবে।.....

 তার বক্তব্যের সারসংক্ষেপঃ
০১. আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী (রাহঃ) ধর্মীয় শব্দ 'নবী' এর পরিবর্তে জাগতিক শব্দ Leader ব্যবহার করেছেন। এতে ইসলামী পরিভাষা নষ্ট করেছেন। 
০২. নবী ও রাসূলদের Leader তথা নেতা বলা যাবে না, লিডার মানা যাবে না, লিডার হিসেবে বিশ্বাস করা যাবে না। কারণ লিডার যে হয় সে লুচ্চাও হতে পারে, লিডার যে হয় সে ভোট চোরও হতে পারে, লিডার যে হয় সে রিজার্ভ চোরও হতে পারে, লিডার যে হয় সে আটা চোর, গম চোর, টিন চোর সব চোর হতে পারে। কিন্তু নবী যে হবে, রাসূল যে হবে সে মা'সুম হবে, সে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা সুরক্ষিত থাকবে।

আমাদের জবাবঃ
০১. এ বিষয়ে আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী (রাহঃ) এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে লিখিত 'আলোচিত অভিযোগের কাঙ্ক্ষিত জবাব' গ্রন্থের গ্রন্থকার মুহতারাম #Aslam_Hussain ভাই বলেন,
শাইখ আলী হাসান উসামা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী রহ.-এর উপর এমন একটা অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, যা আজ পর্যন্ত না মাওলানা ম‌ওদূদী রহ.-এর কোনো লেখনীতে পেয়েছি; আর না তাদের পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে এই অভিযোগ শুনেছি। তাই এই অভিযোগটি আমার কাছে কাল্পনিক মনে হচ্ছে। মাওলানা ম‌ওদূদী রহ. কোথাও "নবী" শব্দ প‌রিবর্তন করে এর স্থলে লিডার (‌নেতা) শব্দ ব্যবহার করেন নি। তবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে নবী (ﷺ) কে আমাদের লিডার বা নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন। 
অর্থাৎ আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) কোথাও "নবী" শব্দ প‌রিবর্তন করে এর স্থলে লিডার (‌নেতা) শব্দ ব্যবহার করে ইসলামী পরিভাষা নষ্ট করেছেন, এটা আলী হাসান উসামার কাল্পনিক ও জঘন্য মিথ্যা অপবাদ। কারণ তিনি তাঁর বিভিন্ন কিতাবে অসংখ্য অগণিত জায়গায় নবী, রাসূল শব্দ উল্লেখ করেছেন। 

০২. ইংরেজি Leader শব্দটির আরবী إمام, سيد যার বাংলা অর্থ নেতা। নবী রাসূলদের শানে আল্লাহ তা'য়ালা নিজেই إمام এবং ইমামের বহুবচন أَئِمَّة তথা Leader বা নেতা শব্দটি উল্লেখ করেছেন। যেমন- পবিত্র কুরআনে হযরত ইবরাহীম (আঃ) সম্পর্কে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا. 
‘আমি তোমাকে মানুব জাতির জন্য নেতা বানাব’। (সূরা বাকারা ২/১২৪)।

বস্তুত নেতা হওয়া বা নেতৃত্ব দেওয়া নবীদের অন্যতম গুণ বা বৈশিষ্ট্য। এ বিষয়ে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, 
فَنَادَتْهُ الْمَلَائِكَةُ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي الْمِحْرَابِ أَنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيَىٰ مُصَدِّقًا بِكَلِمَةٍ مِنَ اللَّهِ وَسَيِّدًا وَحَصُورًا وَنَبِيًّا مِنَ الصَّالِحِينَ.
অতঃপর ফেরেশতারা যাকারিয়্যাকে ডেকে বলল, সে যখন কক্ষে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়া সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছেন, যে হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে কালিমার সত্যায়নকারী, নেতা ও সম্ভোগমুক্ত এবং নেককারদের মধ্য থেকে একজন নবী’। (সূরা আলি ইমরান ৩/৩৯)

নবী রাসূলগণই তাঁদের উম্মতের মাঝে আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীনের প্রচার, প্রসার ও বাস্তবায়নের জন্যই নেতৃত্ব দিয়েছেন। আল্লাহ তা'য়ালা নবী রাসূলদের বিষয়ে বলেনঃ
وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا وَأَوْحَيْنَا إِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَإِقَامَ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءَ الزَّكَاةِ ۖ وَكَانُوا لَنَا عَابِدِينَ.
আর তাদেরকে আমি নেতা বানিয়েছিলাম, তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে সঠিক পথ দেখাত। আমি সৎকাজ করতে, সালাত কায়েম করতে এবং যাকাত প্রদান করতে তাদেরকে প্রতি ওহী প্রেরণ করেছিলাম। আর তারা আমারই ইবাদাত করত। (সূরা আম্বিয়াঃ ২১/৭৩)

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) নিজেই নিজের প্রসঙ্গে বলেছেন-
أَنَا سَيِّدُ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
'কিয়ামতের দিন আমি মানব মন্ডলীর নেতা হবো।' (সহীহ বুখারী হাঃ ৪৭১২; সহীহ মুসলিম হাঃ ১৯৪; জামে তিরমিযী হাঃ ২৪৩৪; মুসনাদে আহমদ হাঃ ৯৩৪০; ১২০৬০; সুনান দারেমী হাঃ ৫২)

তিনি আরো বলেন, 
أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
কিয়ামতের দিন আমি আদম সন্তানদের নেতা হবো। (সহীহ মুসলিম হাঃ ২২৭৮; জামে তিরমিযী হাঃ ৩১৪৮, ৩৬১৫; আবু দাউদ হাঃ ৪৬৭৩; ইবনে মাজাহ হাঃ ৪৩০৮; মুসনাদে আহমদ হাঃ ২৬৪২, ২৬৮৭, ১০৬০৪)

এভাবে বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে অনেকগুলো হাদীসে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে বিশ্ব মানবতার নেতা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, নবী রাসুলগণ মানব জাতির নেতা ছিলেন, তাঁরা তাগুতের জাহেলি বিধান অপসরণ করে আল্লাহ দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অথচ অভিযোগ তোলা হচ্ছে আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) নাকি নবী রাসুলদের Leader বলে ইসলামী পরিভাষা পরিবর্তন করে ফেলেছেন! কি জঘন্য মিথ্যাচার! নাউজুবিল্লাহ! 

শাইখ আলী হাসান উসামার কুফুরীঃ
আল্লাহ তা'য়ালা নিজেই নবী রাসুলদের মানব জাতির জন্য Leader তথা 'নেতা' বানিয়েছেন। আল্লাহর রাসুল (ﷺ) নিজেকে মানব জাতির নেতা বলেছেন। তারপর শাইখ আলী হাসান উসামা Leader শব্দের বিরোধিতা করে মূলত কুরআন হাদীস অস্বীকার করে কুফুরী করেছেন এবং এই কুফুরী সাব্যস্ত করতে আবার কুফুরী যুক্তি পেশ করে বলেছেন, লিডার যে হয় সে লুচ্চাও হতে পারে, লিডার যে হয় সে ভোট চোরও হতে পারে, লিডার যে হয় সে রিজার্ভ চোরও হতে পারে, লিডার যে হয় সে আটা চোর, গম চোর, টিন চোর সব চোর হতে পারে।
এই যুক্তির বিরুদ্ধেও তো যুক্তি পেশ করা যায়। যেমন কুরআন হাদীসের একাধিক জায়গায় নবী রাসুলদের মানুষ বলা হয়েছে। এমন কি আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর রাসুল (ﷺ) কে নির্দেশ দিয়ে বলেন,
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ. 
(হে নবী) বল, ‘আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। (সূরা কাহফ ১৮/১১০; হামীম সাজদাহ ৪১/০৬)

এখন যদি আলী হাসান উসামার যুক্তি পেশ করে বলা হয়, মানুষ যে হয় সে লুচ্চাও হতে পারে, মানুষ যে হয় সে ভোট চোরও হতে পারে, মানুষ যে হয় সে রিজার্ভ চোরও হতে পারে, মানুষ যে হয় সে আটা চোর, গম চোর, টিন চোর সব চোর হতে পারে! সুতরাং নবীগণ মানুষ হতে পারে না! কারন তাঁরা মা'সুম। তাহলে সেটা কুরআন হাদীস অস্বীকার করা ও কুফুরী আকিদা বলে কি গণ্য হবে না? 

অধিকন্তু তিনি নবী রাসুলদের শানে বেয়াদবি করেছেন। আমরা জানি, সম্মানিত ব্যক্তিদের জন্য যিনি/তিনির পরিবর্তে যে/সে বলা বেয়াদবি। আর সকল মানুষের মধ্যে নবী রাসুলগণ হলেন সবচেয়ে বড় সম্মানিত ব্যক্তি।  অথচ তিনি নবীদের শানে 'যিনি'র পরিবর্তে বলেছেন, 'যে' এবং 'তিনি'র পরিবর্তে বলেছেন 'সে'। নাউজুবিল্লাহ! দেখুন তিনি বলেছেন, "নবী যে হবে, রাসূল যে হবে সে মা'সুম হবে।" আর নবীদের শানে বেয়াদবি করাও কুফুরী। সুতরাং তিন কারণে আলী হাসান উসামার উপর তাওবা করা ওয়াজিব। 
১. আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী (রাহঃ) এর উপর মিথ্যা অপবাদ দেওয়া। 
২. নবী রাসুলদের শানে কুরআন হাদীসে বর্ণিত 'নেতা' শব্দ অস্বীকার করে কুফুরী করা।
৩. নবী রাসুলদের শানে বেয়াদবির মাধ্যমে কুফুরী করা।

বিঃদ্রঃ যারা আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী (রাহঃ) এর বিরুদ্ধে ফতোয়াবাজী করে তাদের প্রায় সকলেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কুরআন হাদীস অস্বীকার করে কুফুরী করে।

Post a Comment

0 Comments