Recent Tube

দ্বীনি প্রশ্নোত্তর।


     রমাদান/ফতোয়া/জিজ্ঞাসা-০১:
🔍সাহরির শুরু এবং শেষ সময় কখন?

 •এই প্রশ্নটির উত্তর সরাসরি মহান আল্লাহ দিয়েছেন কিনা?
 • যদি দিয়ে থাকেন তাহলে তিনি কি বলেছেন?
 •  মহান রবের নির্দেশনাটি অস্পষ্ট ছিলো কিনা? (এই তিনটি পয়েন্ট মাথায় রেখে)

  মহান রবের উত্তরটি দেখে আসা যাক–
   “وَ كُلُوْا وَ اشْرَبُوْا حَتّٰى یَتَبَیَّنَ لَكُمُ الْخَیْطُ الْاَبْیَضُ مِنَ الْخَیْطِ الْاَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ١۪ ثُمَّ اَتِمُّوا الصِّیَامَ اِلَى الَّیْلِ١ۚ-
   আর পানাহার করতে থাকো। যতক্ষণ না রাত্রির কালো রেখার বুক চিরে প্রভাতের সাদা রেখা সুস্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হয়। তখন এসব কাজ ত্যাগ করে রাত পর্যন্ত নিজের রোযা পূর্ণ করো।”
 ☞ সুরা বাক্বারাহ, আয়াতাংশ: ১৮৭।

এবার সতর্কতার জন্য সুবহে সাদিক (সাদা রেখা) পরিস্ফুটন হওয়ারও ৫/৭ মিনিট আগে পানাহার বন্ধ করা আদৌ কতটা যুক্তিযুক্ত?
      যদি তা-ই করা উচিত হতো তাহলে মহান রব আয়াতে ‘حَتّٰى یَتَبَیَّنَ لَكُمُ الْخَیْطُ الْاَبْیَضُ অর্থাৎ যতক্ষণ না রাত্রির কালো রেখার বুক চিরে প্রভাতের সাদা রেখা সুস্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হয়’ কথাটি এত জোর তাগিদ দিয়ে বলতেন না, এমনকি; حَتّٰى শব্দটি এখানে নিয়ে আসতেন না। 
      বরং তখন হয়ত বলতেন- “قبل أن يتضح خط الفجر الأبيض অর্থাৎ ভোরের শুভ্র রেখা পরিস্ফূটন হওয়ার আগেই!” তাহলে কি করে আপনি সতর্কতার দোহায় দিয়ে অতি আবেগের বশে আল্লাহর স্পষ্ট বাতলে দেওয়া একটি সীমানার মধ্যে নিজের মত করে আরেকটি মত প্রয়োগ করার চেষ্টা করলেন?
       এটা স্বয়ং আল্লাহদ্রোহীতা বৈ অন্য কিছু নয়। কিয়ামতের ময়দানে যদি রাজাধিরাজ প্রশ্ন করেন- আমি ক্লিয়ার বলেছি ভোরের সাদা রেখা সুস্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত পানাহার করতে আর তুমি কিনা সতর্কতার দোহায় দিয়ে আমার বলে দেওয়া নির্দেশনার বাইরে গিয়ে ৫/৭ মিনিট আগে করেছো এবং এটার পক্ষে ফতোয়া ছেড়েছো বা তোমার বাপ-দাদাদের সাফাই গাওয়া দেখে তুমিও গেয়ে দিছো..! 
  (তখন লা-জওয়াব ছাড়া কোন গত্যন্তর আছে বলে মনে হয়?)

প্রিয় পাঠক, প্রশ্ন হলো- আমাদের মধ্যে অনেক বড় বড় আলেমরাও তো এই সতর্কতার কথা বলেন। তারা কি কুরআনের আয়াত বুঝেন নি?

উত্তর হলো: বুঝেছেন। কিন্তু নেক সুরতে শয়তানের ধোঁকা বুঝতে পারেন নি। অতি সতর্কতা-অতি সাবধানতার এই নেক সুরতটিই হলো শয়তানের ফাঁদ। কেননা, শয়তান এভাবেই নেক সুরতে ফাঁদ তৈরি করে ধোকা দেবে বলে আল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জ করার কথা সুরা আল আরাফের ১৬ নং আয়াতে পাওয়া যায়।

বলাবাহুল্য, আপনি যদি ব্যাংক চেক বা ট্রেজারি চালান কপিতে অতি সতর্কতার দোহায় দিয়ে টাকার পরিমাণ দুই-দুই বার করে লিখেন তাহলে কি সেটা পাস হবে? কখনোই না। কারণ, বিধান নির্দিষ্ট করা আছে। ইবাদতের যে জায়গায় আল্লাহর ক্লিয়ার নির্দেশনা রয়েছে সেখানে আপনার অতি সতর্কতার অজুহাত কেবল শয়তানি চক্রান্তের খপ্পরে পা ফেলা ছাড়া আর কিছু নয়।(যেন মার চেয়েও মাসীর দরদ উতলে পড়ছে)😥

  এছাড়া, সাহরির জন্য কখনোই আজান শর্ত নয়। সেজন্য সাহরির টাইম শেষ হওয়ার আগে বা পরে আজান দিয়ে দিলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কেননা, রাসুল সা. এর সময়ে হযরত বিলাল রা. এর আজান শুনলে সাহরি বন্ধ না করার নির্দেশনা ছিল যতক্ষণ না উম্মে মাখতুমের আজান শুনবেনা ততক্ষণ। 
  “إنَّ بِلالا كَانَ يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُؤَذِّنَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ ، فَإِنَّهُ لا يُؤَذِّنُ حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ
“বিলাল রা. রাতে আজান দেয়। অত:এব তোমরা পানাহার করো উম্মে মাকতুম রা. আজান দেয়া পর্যন্ত। আর তিনি ফজর উদিত না হলে আজান দেন না।”
  ☞সহিহ বুখারি হাদিস নং: ১৯১৯।

ব্যাপার হলো উম্মে মাখতুম রা. অন্ধ ছিলেন।  তাঁকে যখনই বলা হতো ‘ভোর হয়েছে’ তখনই আজান দিতেন।
 ☞ সহিহ বুখারি হাদিস নং: ৬১৭।

এছাড়া হানাফি মাজহাবের প্রখ্যাত ফকিহ আবু বাকার আল জাসশাস রহ. বলেন- “মহান আল্লাহ রোজার রাতগুলোতে স্ত্রী সহবাস ও পানাহারকে বৈধ করেছেন রাতের শুরু থেকে ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত। এর পরে রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করার নির্দেশ প্রদান করেছেন।”
  ☞ আহকামুল কুরআন ১/২৬৫।

উনার এ কথা দ্বারাও বুঝা যায় যে- সতর্কতাবশত ৫/৭ মিনিট তো নয়-ই বরং আল্লাহর কথার বিন্দু পরিমাণও হেরফের করা আদৌ উচিত নয়। [এছাড়া বিবেক কি বলে ভেবে দেখবেন!]

অথচ, রদ্দুল মুখতার ২য় খন্ড, পৃ. ৩৭১ এবং ফতোয়ায়ে আলমগীরি: ১ম খন্ড, পৃ. ১৯৪ তে আজান নয় বরং সাহরির শেষ সময় দেখেই খানাপিনা বন্ধ করার জন্য বলা হয়েছে।
   আজান পর্যন্ত খেলে রোজা হবেনা মর্মে ফতোয়া সহ সতর্কতার দোহায় দিয়ে সুবহে সাদিকের ৫/৭ মিনিট আগে সাহরি বন্ধ করার ফতোয়াটি দেখুন-
 ☞ আহসানুল ফতোয়া, খণ্ড : ০৪, পৃষ্ঠা : ৪৩২; 
 ☞ আল-ফিকহুল হানাফি ফি সাওবিহিল জাদিদ, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৪৩৩।

সুতরাং, আজানের উপর সাহরি বন্ধ করা না করার উপর নির্ভর না করে সাহরির শেষ সময়ের উপরে নির্ভরশীল হোন। (একেক মসজিদে একেকসময় আজান দেওয়ার রসমও রয়েছে বটে)।
সর্বোপরি, অতি সাবধানতার নামে অতি আবেগ জড়ানো সিদ্ধান্ত/ফতোয়াবাজির উপর ডিপেন্ডেন্ট না হয়ে বরং রবের ক্লিয়ার বলে দেওয়া নির্দেশনা মানুন। (আল্লাহর উপরে সিদ্ধান্তদাতা অন্য কেউ আছে বিশ্বাস করলে সেটা ভিন্ন কথা😥)
  ☞ রদ্দুল মুখতার : ২য় খন্ড, পৃ.৩৭১।
  ☞ ফতোয়ায়ে আলমগীরি: ১ম খন্ড, পৃ. ১৯৪।

[প্রতি রামাদানে একটি করে জীবন ঘনিষ্ঠ ফতোয়া।]
✍️ সানা উল্লাহ মুহাম্মাদ কাউসার।
বি.এ অনার্স, এম.এ (আরবি)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
sukawsar@gmail.com

Post a Comment

0 Comments