শ্বশুর বাড়িতে যদি নানা ধরণের শিরক, বিদআত, অনৈসলামিক হারাম কার্যক্রম ও পাপাচার সংঘটিত হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে একজন পুত্রবধুর করণীয় :
-------------------------
প্রশ্ন :
শায়েখ, আমার শ্বশুড় বাড়ির ফ্যামিলির সবাই শিরক,বিদআত কাজে লিপ্ত। তারা পীর,মাজার এসব জায়গায় যায়, এমনকি মৃত পীরের ছবি ফ্রেমে করে ঘরে ঝুলিয়ে রাখে।তাবিজ,সুতা এসবে বিশ্বাস করে। মিলাদ,কিয়াম,চল্লিশা সহ নানা রকম বিদআতি কাজ করে। আমি তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করি কিন্তু তারা কিছুতেই বুঝতে চায়না। আমি এসব কাজে বাধা দিলে অনেক কথা শুনায়(আমার, আমার সন্তানদের ক্ষতি হবে এরকম বদ দূআ'র মতো কথা বলে)।নামাজ,পর্দার গুরুত্ব বুঝেনা। আমার সামনে তারা এসব করলে আমি সইতে পারিনা কান্না আসে। এসব পরিবেশের কারণে মাঝে মাঝে নিজের ঈমান দূর্বল হয়ে যায় কিচ্ছু ভালো লাগে না,আমলে স্বাদ পাইনা, অস্থির লাগে।কোথাও চলে যেতে ইচ্ছা করে। আমার স্বামী ঢাকাতে ছোট্ট একটা জব করে। আমি আমার স্বামীর সাথে থাকতে চাই। কিন্তু বাড়িতে আমার শাশুড়ি চান আমার সন্তানদের নিয়ে আমি তার কাছে থাকি, কাজে একটু হেল্প করি,কাছে না থাকলে উনার মনে কষ্ট যেহেতু উনার বয়স হয়ে যাচ্ছে। এখন আমি কি করতে পারি শায়েখ?
উত্তর : আপনার শ্বশুর বাড়িতে যদি নানা ধরনের শিরক, বিদআত, অনৈসলামিক হারাম কার্যক্রম ও পাপাচার সংঘটিত হয় তাহলে যথাসম্ভব দ্রুত সেখান থেকে সরে পড়া আবশ্যক যদি তাদেরকে সংশোধন করা সম্ভব না হয় বা তাদের কাছে থাকার কারণে নিজের ঈমান, আমল ও আখলাক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তবে আপনার মাধ্যমে যদি তাদের মধ্যে সংশোধনী ও পরিবর্তন আনা সম্ভব হয় তাহলে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে সেখানে থাকা উত্তম। কারণ হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, আপনার মাধ্যমে যদি একটি মানুষও সঠিক পথপ্রাপ্ত হয় তাহলে তা হবে আপনার জন্য একটি লাল উট পাওয়ার থেকে উত্তম।
যাহোক, আপনার স্বামী যেহেতু দূরে থাকেন সেহেতু সম্ভব হলে আপনি আপনার স্বামীর কাছে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে আপনার স্বামীর জন্য আবশ্যক হচ্ছে, আপনাকে এমন পাপ-পঙ্কিল পরিবেশ থেকে রক্ষা করা। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে তা না করলে গুনাহগার হবেন।
কিন্তু আপনার স্বামীর আর্থিক সংকট বা বিশেষ কোনো কারণে যদি আপনাকে তার সাথে রাখা সম্ভব না হয় তাহলে আপনার নিজের বাবার বাড়িতে অথবা আলাদা বাসা ভাড়া করে থাকার চেষ্টা করবেন।
উল্লেখ্য যে, আপনি সেখান থেকে চলে যাওয়ার কারণে আপনার স্বামীর বাবা-মা অসন্তুষ্ট হলেও এতে আপনি গুনাহগার হবেন না। কারণ সেখানে থাকা এবং তাদের সেবা করা আপনার জন্য ইসলাম আবশ্যক করেনি। উপরন্তু তাদের এমন পরিবেশে থাকার কারণে আপনার ঈমান আকিদা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
যাহোক, এগুলোর কোনটাই সম্ভব না হলে তখন ধৈর্যের সাথে সেখানেই থাকবেন কিন্তু নিজেকে সর্বোচ্চ শিরক-বিদআত ও অন্যান্য পাপাচার থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করবেন।
এক্ষেত্রে আপনি নিরুপায়। আর "আল্লাহ তায়ালা বান্দার উপরে সাধ্যাতীত কোন দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।" [সূরা বাকারা ২৮৬ নম্বর আয়াত]
لا يكلف الله نفسا الا وسعها..
আল্লাহ সব ধরনের অকল্যাণ থেকে আপনাকে হেফাজত করুন এবং তার দ্বীনের উপরে মৃত্যু অবধি অবিচল রাখুন এই দোয়া করি। আমিন।
-------------------------
উত্তর প্রদানে :
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
#abdullahilhadi
#সংক্ষিপ্ত_প্রশ্নোত্তর
0 Comments