Recent Tube

উস্তাদ সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী রহিমাহুল্লাহ বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগকারী মাওলানা হাসান জামিল সাহেবের জবাবে : ( ১ ) রিফাত হোসেন।




আল উস্তাদ সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী রহমাতুল্লাহ এর বিরুদ্ধে হিংসুটে মোল্লাদের বিষেদাগার সেই ১৯৪০ সাল থেকেই শুরু হয়েছে আজও কংগ্রেসপন্থী দরবারী জাহেলদের মিথ্যাচার বন্ধ হয়নি।
.
উস্তাদ সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী রহিমাহুল্লাহ বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগকারী মাওলানা হাসান জামিল সাহেবের জবাবে :
 ( ১ ) 
******-**************************
[ বিষয়: ইসমতে আম্বিয়া  ]

ইসমাত (العصمة) শব্দটি ‘আসামা’ (عَصَمَ) ক্রিয়ামূল থেকে গৃহীত, যার অর্থ নিষেধ করা, সংরক্ষণ করা বা হেফাযত করা (prevent, guard, protect)। ইসলামী পরিভাষায় ‘ইসমাত’ বলতে বুঝানো হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো ব্যক্তিকে পাপ বা ভুল-ভ্রান্তি থেকে সংরক্ষণ করা। সাধারণত একে অভ্রান্ততা, নিষ্কলঙ্কত্ব, পাপাক্ষমতা বা নিষ্পাপত্ব (infallibility, impeccability; sinlessness) বলা হয়। ইসমাতুল আম্বিয়া অর্থ নবীগণের অভ্রান্ততা বা নিষ্পাপত্ব।
 
১|  ইমাম  আবু হানীফা আযম (রাহ) বললেন: 

اَلأَنْبِيَاءُ عَلَيْهِمُ السَّلاَمُ كُلُّهُمْ مُنَزَّهُوْنَ عَنِ الصَّغَائِرِ وَالْكَبَائِرِ وَالْكُفْرِ وَالْقَبَائِحِ، وَقَدْ كَانَتْ مِنْهُمْ زَلاَّتٌ وَخَطِيْئَاتٌ.

‘‘নবীগণ সকলেই সগীরা গোনাহ, কবীরা গোনাহ, কুফর ও অশালীন কর্ম থেকে পবিত্র ও বিমুক্ত ছিলেন। তবে কখনো কখনো সামান্য পদস্খলন ও ভুলত্রুটি তাঁদের ঘটেছে।’’ ( আল ফিকহুল আকবার ) 

২| আল্লামা উমর ইবন মুহাম্মাদ আন-নাসাফী (৫৩৭হি.) এ বিষয়ে বলেন:

كُلُّهُمْ كَانُوْا مُخْبِرِيْنَ مُبَلِّغِيْنَ عَنِ اللهِ تَعَالَى صَادِقِيْنَ نَاصِحِيْنَ لِلْخَلْقِ

‘‘তাঁরা সকলেই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সংবাদ প্রদান করেছেন এবং প্রচার করেছেন, সত্যবাদী ছিলেন, সৃষ্টির উপদেশদাতা ও কল্যাণকামী ছিলেন।’’[1]

এ কথার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আল্লামা সা’দ উদ্দীন তাফতাযানী (৭৯১হি) বলেন:

‘‘এতে ইশারা করা হয়েছে যে, নবীগণ বিশেষভাবে শরীয়তের বিষয়ে, দীনের আহকাম প্রচারের বিষয়ে ও উম্মাতকে নির্দেশনা প্রদানের বিষয়ে মা’সূম বা নির্ভুল ও সংরক্ষিত। এক্ষেত্রে তাঁরা ইচ্ছাকৃত কোনো ভুল করেন না সে বিষয়ে সকলেই একমত। অধিকাংশের মতে এক্ষেত্রে তাঁরা অনিচ্ছাকৃত বা বেখেয়ালেও কোনো ভুল করতে পারেন না। অন্যান্য সকল পাপ থেকে তাঁদের মাসূম বা নিষ্পাপ হওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। বিস্তারিত আলোচনা নিম্নরূপ: মুসলিম উম্মাহর ইজমা এই যে, নবীগণ ওহী বা নুবুওয়াত লাভের পূর্বে ও পরে কুফরী থেকে সংরক্ষিত। অনুরূপভাবে অধিকাংশের মতে তাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে কবীরা গোনাহে লিপ্ত হওয়া থেকেও মা’সূম। হাশাবিয়া সম্প্রদায় এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছে। .... আর ইচ্ছাকৃত সগীরা গোনাহে লিপ্ত হওয়ার বিষয়ে অধিকাংশের মত এই যে, তা সম্ভব। তবে মুতাযিলী নেতা আল-জুবাঈ[2] ও তাঁর অনুসারীরা এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছে। আর নবীগণের জন্য অনিচ্ছাকৃত বা ভুলক্রমে সগীরা গোনাহে লিপ্ত হওয়া সকলের মতেই সম্ভব, তবে যে সকল সগীরা গোনাহ নীচতা প্রমাণ করে তা তাঁদের দ্বারা সম্ভব নয়, যেমন এক লোকমা খাদ্য চুরি করা, একটি দানা ওযনে কম দেওয়া, ইত্যাদি। এক্ষেত্রে (সগীরা গোনাহের ক্ষেত্রে) মুহাক্কিক আলিমগণ শর্ত করেছেন যে, নবীগণকে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তাঁরা তা বর্জন করেন। এ মতভেদ সবই ওহী বা নুবুওয়াত প্রাপ্তির পরের অবস্থার সাথে সম্পর্কিত। নুবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে নবীগণ থেকে কবীরা গোনাহ প্রকাশ পাওয়া অসম্ভব বলে কোনো দলীল নেই। মু’তাযিলাগণ মত প্রকাশ করেছেন যে, নুবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বেও নবীগণ কর্তৃক কবীরা গোনাহ সংঘটিত হতে পারে না; কারণ এর ফলে জনগণের মধ্যে তাঁর প্রতি অভক্তি সৃষ্টি হয়, যা তাঁর অনুসরণের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, ফলে নবী প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। সত্য কথা এই যে, যে কর্ম তাঁদের প্রতি অভক্তি সৃষ্টি করে তা তাঁরা করতে পারেন না, যেমন, মাতৃগণের সাথে অনাচার, অশ্লীলতা ও নীচতা জ্ঞাপক সগীরা গোনাহ। শীয়াগণ মনে করেন যে, নবীগণ থেকে নুবুওয়াতের পূর্বে ও পরে কখনোই কোনো সগীরা বা কবীরা গোনাহ প্রকাশিত বা সংঘটিত হতে পারে না। তবে তারা তাকিয়্যাহ বা আত্মরক্ষামূলকভাবে কুফর প্রকাশ সম্ভব বলেছে।’’[3]
মোল্লা আলী কারী বলেন, ইবনুল হুমাম বলেছেন: আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অধিকাংশ আলিমের কাছে গ্রহণযোগ্য মত এই যে, নবীগণ কবীরা গোনাহ থেকে সংরক্ষিত, ভুলক্রমে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে একক সগীরা গোনাহ করে ফেলা থেকে সংরক্ষিত নন। আহলুস সুন্নাতের কেউ কেউ নবীদের ক্ষেত্রে ভুল করাও অসম্ভব বলে উল্লেখ করেছেন। সঠিকতর বা সহীহ কথা এই যে, কর্মের মধ্যে ভুল হওয়া সম্ভব। সার কথা এই যে, আহলুস সুন্নাতের সকলেই একমত যে, নবীগণ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো নিষিদ্ধ কর্ম করতে পারেন না। তবে অসতর্কতা বা ভুলের কারণে যা ঘটে তা পদস্খলন বলে অভিহিত।[4]

[1] তাফতাযানী, শারহুল আকাইদ আন-নাসাফিয়্যাহ, পৃ. ১৩৯।

[2] আবূ আলী মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্হাব আল-জুবাঈ (৩০৩ হি)। তিনি মু’তাযিলা সম্প্রদায়ের একজন প্রসিদ্ধ আলিম ও নেতা ছিলেন। মু’তাযিলাদের একটি সম্প্রদায়ের বা উপদলের নাম ‘জুবাইয়্যাহ’ যারা তার অনুসারী ছিলেন। দেখুন, বাগদাদী, আল-ফারকু বাইনাল ফিরাক, পৃ. ১৮৩-১৮৪।

[3] তাফতাযানী, শারহুল আকাইদ আন নাসাফিয়্যাহ, পৃ. ১৩৯-১৪০।

[4] মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ. ১০৪-১০৫।

৩| ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী তাঁর লিখিত ইছমাতুল আম্বিয়া নামক কিতাবে বলেন :

والذي نقول : ان الانبياء عليهم الصلوة والسلام معصومون في زمان النبوة عن الكبائر والصغائر بالعمد اما على سبيل السهو فهو جائز -

এবং আমরা যা বলি তা হচ্ছে যে, আম্বিয়ায়ে কেরাম নবুওয়াত প্রাপ্তির সময় থেকে ইচ্ছাকৃত কবিরা এবং ছগিরা গুনাহ থেকে পবিত্র। কিন্তু ভুলবশতঃ কবিরা ও ছগিরা গুনাহ হতে পারে।

| দেখুন পৃষ্ঠা নং ২৮ ]

হযরত আদম (আঃ)-এর ইছমত সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (রহঃ) উল্লেখ করেন :

وانما قلنا انه كان عاصيا لقوله تعالى وعصى ادم ربه فغوى وانما قلنا ان العاصى صاحب الكبيرة لوجهين : (احدهما) ان النص يقتضى كونه متعاقبا وهو قوله تعالى (ومن يعص الله ورسوله ويتعـد حدوده بدخله ناراً خالدافيها) ولا معنى لصاحب الكبيرة الأمن فعل فعلا يعاقب عليه - (وثانيهما) أن العصيان اسم دم فلايطلق الأعلى صاحب الكبيرة -

এবং আমরা বলি যে, তিনি আছী (অবাধ্য) ছিলেন। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে, আদম (আঃ) তাঁর রবের অবাধ্য হন অতঃপর পথভ্রষ্ট হন।' আমরা আছীকে দু'কারণে কবিরা গুনাহগার বলি :

১. কোরআন শরীফের আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, আদম (আঃ) শাস্তিপ্রাপ্ত ছিলেন। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমা লংঘন করবে তাকে দোজখে প্রবেশ করাবেন এবং ওখানে সে সদা সর্বদা থাকবে। আর কবিরা গুনাহগার ঐ ব্যক্তিকেই বলা হয় যে এমন কাজ করে, যে কাজের উপর তাকে শাস্তি দেয়া যায়।

২. ইছয়ান (অবাধ্যতা) এমন একটি খারাপ কাজের নাম যা কবিরা গুনাহগার ছাড়া অন্য কারও উপর প্রয়োগ করা হয় না।

[দেখুন পৃষ্ঠা নং ৩৬ ]

৪| আল্লামা আলুসী (রহঃ) তাঁর বিখ্যাত তাফসীর রহুল মা'আনীতে লেখেন :

فان الصغائر الغير المشعرة بالخسة يجوز صدورها منهم عمدا بعد البعثة عند الجمهور على ماذكره العلامة التفتازاني لثاني في شرح العقائد ويجوز صدورها سهوا بالاتفاق .

জুমহুর (অধিকাংশ) ওলামাদের মতানুসারে নবুওয়াত প্রাপ্তির পরও নবীদের থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ছগিরা গুনাহ হতে পারে। কিন্তু যা ঘূর্ণিত স্বভাবের পরিচয় দেয় ঐ ধরনের ছগিরা গুনাহ হতে পারে না। আর অনিচ্ছাকৃতভাবে ছগিরা গুনাহ 'সকলের ঐক্যমতে হতে পারে। আল্লামা তাফতাজানী ও তাঁর শারহে আকাঈদে নাসাফীতে এভাবে উল্লেখ করেছেন। [ দেখুন পৃষ্ঠা নং ২৭৪, খণ্ড নং ১৬ ]

আল্লামা আলুসী কোরআন শরীফের-এর তাফসীর করতে গিয়ে বলেন :

ظاهر الاية يدل على ان ما وقع منه كان من الكبائر وهـو المـفـهـوم مـن

لامام - كلام

বাহ্যিকভাবে আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, আদম (আঃ) থেকে যা সংঘঠিত হয়েছিল তা কবিরা গুনাহ ছিল। ইমাম ফখরুদ্দিন রাযীর কথা থেকেও এমনটিই বুঝা যায় । 
(দেখুন  খণ্ড নং ১৬, পৃষ্ঠা নং ২৭৪)

৫| হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) -এর অভিমত:

মুফতি মোহাম্মদ শফী (রহঃ) তাঁর লিখিত 'মাজালিসে হাকীমুল উম্মত নামক কিতাবে থানবী সাহেবের অভিমত উল্লেখ করেন :

حق تعالی نے انبیاء عليهم السلام كوجو مقام بلند اپنے قرب کا عطافر مایاہے اوران کو تمام گناهوں سے معصوم بنایاهے - جس طرح به انکی رحمت و نعمت ہے اسی طرح کبھی کبھی انبیاء
عليهم السلام سے بعض معاملات میں زلت الغزش) هونے کے جو واقعات قرآن کریم میں مذکور ہیں وہ بھی عین حکمت ورحمت هیں - ان ميں ايك بزا فائده به یهی هے که لوگوں کو انبیاء کی خدائی کاوهم وشبه نه هونے لگے - زلات کے صدور اوران پرحق تعالی کی طرف سے تنبیہات یہ واضح کردیتی هیں که حضرات انبياء عليهم السلام بھی اللہ تعالی کے بندے ھی نہیں ۔

আল্লাহ তায়ালা নবীদেরকে তাঁর নৈকট্যের যে উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন এবং তাঁদেরকে সমস্ত গুনাহ থেকে পবিত্র রেখেছেন, যেমন এটা তাঁর রহমত ও নিয়ামত, তেমনিভাবে কোন কোন সময় নবীদের থেকে কোন কোন ব্যাপারে ভুল-ত্রুটি হওয়ার যে ঘটনাসমূহ কোরআন শরীফের মধ্যে উল্লেখিত হয়েছে এগুলোও প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ তায়ালার হেকমত ও রহমত। এর মধ্যে এক বড় ফায়দা এটাও যে, মানুষের মনে যেন নবীদের খোদা হওয়ার সন্দেহ না হয়। ভুল-ত্রুটি হওয়া এবং এর উপর আল্লাহ তায়ালার সতর্ক করা এটাই পরিষ্কার করে দেয় যে, নবীরাও আল্লাহ তায়ালার বান্দাহ । (দেখুন পৃষ্ঠা নং ৬৫)

৬| আল্লামা সাইয়েদ সুলাইমান নদভী (রহঃ) বলেন :

ان سے بتقاضائے بشریت بهول چوك هو سکتی هے ، مگر الله

تعالی اپنی وحی سے ان کی ان غلطیوں کی بھی اصلاح کرتا رھتا ھے ۔

মানুষ হিসেবে তাঁদের থেকেও ভুল-ত্রুটি হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর ওহীর দ্বারা এ সমস্ত ভুল-ত্রুটিরও সংশোধন করে থাকেন ।
[দেখুন-সিরাতুন্নবী, খণ্ড নং ৪, পৃষ্ঠা নং ৭০ ]

৭| শায়খ হুসাইন আহমদ মাদানী রহিমাহুল্লাহ:

معصوموں سے اگر چه قصدا
 گناه نهیں هوسکتا مگر غلط فہمی سے بسا اوقات ان سے بڑے سے بڑ گناه هو جا تاہے

“মাসুমের দ্বারা যদিও ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো পাপ কার্য হতে পারেনি, কিন্তু ভুল বুঝাবুঝিতে অনেক সময়েই তাঁদের দ্বারা বড় বড় পাপ কার্য হয়ে গেছে। কিন্তু বাহ্যত সেগুলো পাপ কাজ বলে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সেগুলো পাপ নয় ।

কাজেই সেগুলোকে প্রকৃত পাপ কাজ বলা যেতে পারে না। যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে যে, হযরত মূসা (আ) তদীয় ভ্রাতা হযরত হারুন (আ)-এর চুল ও দাড়ি ধরে টেনেছিলেন। একাজটি দ্বারা একজন নবী, যিনি তার বড় ভাইও ছিলেন তাঁকে অপমান করা হয়েছে। এ কাজটি অন্যের দ্বারা সংঘটিত হলে কুফরী বরং মারাত্মক ধরনের কুফরী বলে বিবেচিত হতো।

অনুরূপ হযরত মূসা (আ) তাওরাত লিখিত পাথর ফলক ছুড়ে মেরেছিলেন। যেমন পবিত্র কুরআনে আছে । "সে আলওয়াহ পাথর ফলক নিক্ষেপ করল।"-সূরা আল আরাফ : ১৫০

আল্লাহর কিতাবকে তাও আবার সেই কিতাব যা স্বয়ং তাঁর উপরেই নাযিল হয়েছিলো তা ছুড়ে মারা নিসন্দেহে বড় পাপ কাজ। যদি মাসুম নবীগণ ভুলক্রমে বড় বড় অপরাধমূলক কার্যে লিপ্ত হয়ে পড়তে পারেন তবে যারা নিষ্পাপ বা মাসুম নয় তারা যত বড় গুণিই হোক না কেন তারা কেন তা পারবেন না।” দেখুন (মাকতুবাতে শায়খুল ইসলাম ১ম খণ্ড, 
পৃষ্ঠা নং ৮৮ ও ২৫৯) 

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! হযরত থানবী (রহঃ) ও সাইয়েদ সুলাইমান নদভী রহিমাহুল্লাহ  ও শায়খ হুসাইন আহমদ মাদানী রহিমাহুল্লাহ এর কথাগুলো মাওলানা মওদূদী (রহঃ)-এর কথাগুলোর সাথে মিলিয়ে দেখুন শব্দ ও অর্থগত দিক দিয়ে প্রায় মিলে যাচ্ছে।

★ সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী রহিমাহুল্লাহ বলেন;

আল্লাহ তা'আলা ইচ্ছা করেই প্রত্যেক নবী থেকে কোন না কোন সময় এই হিফাজত উঠিয়ে দু'একটি গুনাহ হতে দিয়েছেন, যাতে লোকেরা তাঁদেরকে খোদা মনে না করে এবং বুঝে নেয় যে, তাঁরাও মানুষ।
( তাফহীমাত ২খন্ড, পৃঃ ৫৭, ষষ্ঠ সংস্করণ।) 

অন্যত্র বলেন, 

সুরা: ইউসুফ
আয়াত নং :-24
টিকা নং:22, 

وَ لَقَدْ هَمَّتْ بِهٖ١ۚ وَ هَمَّ بِهَا لَوْ لَاۤ اَنْ رَّاٰ بُرْهَانَ رَبِّهٖ١ؕ كَذٰلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوْٓءَ وَ الْفَحْشَآءَ١ؕ اِنَّهٗ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِیْنَ

মহিলাটি তাঁর দিকে এগিয়ে এলো এবং ইউসুফও তার দিকে এগিয়ে যেতো যদি না তাঁর রবের জ্বলন্ত প্রমাণ প্রত্যক্ষ করতো।২২ এমনটিই হলো, যাতে আমি তার থেকে অসৎবৃত্তি ও অশ্লীলতা দূর করে দিতে পারি। আসলে সে ছিল আমার নির্বাচিত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।

তাফসীর : 

টিকা:২২) মূল আয়াতে আছে “বুরহান।” বুরহান মানে দলীল বা প্রমাণ। রবের প্রমাণ মানে রবের দেখিয়ে দেয়া বা বুঝিয়ে দেয়া এমন প্রমাণ যার ভিত্তিতে হযরত ইউসুফের (আ) বিবেক ব্যক্তিসত্তার কাছ থেকে একথার স্বীকৃতি আদায় করেছে যে, এ নারীর ভোগের আহবানে সাড়া দেয়া তাঁর পক্ষে শোভনীয় নয়। এ প্রমাণটি কি ছিল? ইতিপূর্বে পিছনের বাক্যেই তা বলে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সেখানে বলা হয়েছেঃ “আমার রব তো আমাকে ভালই মর্যাদা দিয়েছেন আর আমি খারাপ কাজ করবো! এ ধরনের জালেমরা কখনো কল্যাণ লাভ করতে পারে না।” এ অকাট্য যুক্তিই হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামকে সদ্যোন্মিত যৌবনকালের এ সংকট সন্ধিক্ষণে পাপ কাজ থেকে বিরত রেখেছিল। তারপর বলা হলো, “ইউসুফও তার দিকে এগিয়ে যেতো যদি তা তাঁর রবের জ্বলন্ত প্রমাণ প্রত্যক্ষ করতো।” এ থেকে নবীগণের নিষ্পাপ হবার (ইস্মতে আম্বিয়া) তত্ত্বের অর্ন্তনিহিত সত্য পুরোপুরি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। নবীর নিষ্পাপ হবার মানে এ নয় যে, তাঁর গুনাহ, ভুল ও ত্রুটি করার ক্ষমতা ও সামর্থ ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে, ফলে তাঁর দ্বারা গুনাহর কাজ সংঘটিত হতেই পারে না। বরং এর মানে হচ্ছে, নবী যদিও গুনাহ করার শক্তি রাখেন কিন্তু সমস্ত মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন হওয়া এবং যাবতীয় মানবিক আবেগ, অনুভূতি, ইচ্ছা-প্রবণতা থাকা সত্ত্বেও তিনি এমন সদাচারী ও আল্লাহ ভীরু হয়ে থাকেন যে, জেনে বুঝে কখনো গুনাহ করার ইচ্ছা করেন না। তাঁর বিবেকের অভ্যন্তরে আল্লাহর এমন সব শক্তিশালী দলীল প্রমাণ তিনি রাখেন যেগুলোর মোকাবিলায় প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা কখনো সফলকাম হবার সুযোগ পায় না। আর যদি সজ্ঞানে তিনি কোন ত্রুটি করেই বসেন তাহলে মহান আল্লাহ তখনই সুস্পষ্ট অহীর মাধ্যমে তা সংশোধন করে দেন। কারণ তাঁর পদস্খলন শুধুমাত্র এক ব্যক্তির পদস্খলন নয় বরং সমগ্র উম্মতের পদস্খলনের রূপ নেয়। তিনি সঠিক পথ থেকে এক চুল পরিমাণ সরে গেলে সারা দুনিয়া গোমরাহীর পথে মাইলের পর মাইল চলে যায়।

ইনসাফের আদালতে মাওলানা আশরাফ আলী থানভী, সাইয়েদ সুলাইমান নদভী, শায়খ হুসাইন আহমদ মাদানী রহিমাহুমুল্লাহদের বক্তব্য আর সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদ রহিমাহুল্লাহ এর বক্তব্য মিলিয়ে বলুন 

ফতোয়া শুধু মওদুদীর বিরুদ্ধে কেন? 

( অতচ সোনারগাঁওয়ে অবকাশ কাঠাতে
যাওয়া মামুনুল হক সাহেবকে নিয়ে উনার মন্তব্য দেখুন নিচে)

 ( ফেরেশতাদের নিষ্পাপ হওয়া আর নবীদের নিষ্পাপ হওয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে এটি উসুলি বা শাস্ত্রীয় আলোচনা পরবর্তীতে করা হবে ইংশাআল্লাহ )
 লেখক :-
Rifat Hosen

Post a Comment

0 Comments