Recent Tube

রাসুলুল্লাহ সাঃ এর জীবনী ; গ্রন্থঃ আর-রাহীকুল মাখতূম। লেখক : সফিউর রহমান মোবারকপূরী রহ:।

       

               রাসুলুল্লাহ সাঃ এর জীবনী ;                      গ্রন্থঃ আর-রাহীকুল মাখতূম।
     ------------------------------------------------ 

বাঃভিউঃ পর্ব-১০,
=============

অধ্যায়ঃ জাহেলিয়াত সমাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ (صُوْرٌ مِّن الْمُجْتَمِعِ الْعَرَبِيِّ الْجَاهِلِيِّ)

 
অর্থনৈতিক অবস্থাঃ (الحَالَةُ الْاِقْتِصَادِيَّةُ): 

জাহেলিয়াত যুগের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো এবং অর্থনৈতিক অবস্থা ও ব্যবস্থাকে কোনক্রমেই সামাজিক অবস্থার চাইতে উন্নত বলা যেতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে তেজারত ব্যবসা-বাণিজ্যই ছিল আরব অধিবাসীগণের জীবন ও জীবিকার প্রধান অবলম্বন। কিন্তু দেশ থেকে দেশান্তরে গমনাগমন, মালপত্র পরিবহন, বাণিজ্যে উদ্দেশে ভ্রমণ পর্যটনের জন্য নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা ইত্যাদি ব্যাপারগুলো এতই সমস্যা সংকুল ছিল যে, নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করা ছিল এক দুষ্কর ব্যাপার। তৎকালে মরুপথে গমনাগমন এবং মালপত্র পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম ছিল উট। উটের পিঠে চড়ে যাতায়াত এবং মালপত্র পরিবহনের ব্যবস্থাটি ছিল অত্যান্ত সময়-সাপেক্ষ ব্যাপার। তাছাড়া, পথও ছিল অত্যন্ত বিপদসংকুল। সব দিক দিয়ে সুসজ্জিত বড় বড় কাফেলা ছাড়া পথ চলার কথা চিন্তাই করা যেত না। কিন্তু তা সত্ত্বেও যে কোন সময় দস্যুদল কর্তৃক আক্রান্ত এবং যথা-সর্বস্ব লুণ্ঠিত হওয়ার ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকতে হতো কাফেলার সকলকে। অবশ্য, হারাম মাসগুলোতে তাঁরা কিছুটা নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তা ছিল সময়ের একটি সীমিত পরিসরে সীমাবদ্ধ। কাজেই, বাণিজ্য-নির্ভর হলেও নানাবিধ কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য তাঁরা তেমন সুবিধা করতে পারতেন না। তবে হারাম মাসগুলোতে ‘উকায, যুল মাজায, মাজান্নাহ এবং আরও কিছু প্রসিদ্ধ মেলায় বেচা-কেনা করে তাঁরা কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারতেন।’

আরব ভূখন্ডে শিল্পের প্রচলন তেমন এতটা ছিল না। শিল্প কারখানার ব্যাপারে পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় আরব দেশ আজও পিছনে পড়ে রয়েছে তুলনামূলকভাবে, সেকালে আরও অনেক বেশী পিছনে পড়ে ছিল। শিল্পের মধ্যে বস্ত্র, চর্ম শিল্প, ধাতব শিল্প, ইত্যাদি শিল্পের প্রচলন চোখে পড়ত। অবশ্য, এ শিল্পগুলো ইয়ামান, হীরা এবং শামরাজ্যের সন্নিকটস্থ অঞ্চলগুলোতেই প্রসার লাভ করেছিল অপেক্ষাকৃত বেশী। কিন্তু সুতোকাটার কাজে সকল অঞ্চলের মহিলাদেরই ব্যাপৃত থাকতে দেখা যেত। আরব ভূখন্ডে অভ্যন্তর ভাগের লোকেরা প্রায় সকলেই পশু পালন কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। মরু প্রান্তরের আনাচে-কানাচে যে সকল স্থানে কৃষির উপযোগী ভূমি পাওয়া যেত সে সকল স্থানে কৃষির ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে সমস্যাটি সব চাইতে জটিল ছিল তা হচ্ছে, মানুষের দারিদ্র দূরীকরণ এর মাধ্যম জীবনমান উন্নয়ন, মহামারী ও বোগব্যাধি দূরীকরণ কিংবা অন্য কোন কল্যাণমূলক কাজে অর্থ-সম্পদের খুব সামান্য অংশই ব্যয়িত হতো। সম্পদের সিংহ ভাগই ব্যয়িত হতো যুদ্ধবিগ্রহের কাজে। কাজেই, জনজীবনে সুখ, শান্তি বা স্বাচ্ছন্দ্য বলতে তেমন কিছুই ছিল না। সমাজে এমন এক শ্রেণীর লোক ছিল যাদের দুবেলা দু মুঠো অন্ন এবং দেহাবরণের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় বস্ত্রখন্ডের সংস্থানও সম্ভব হতো না।
-------------------------

বাঃভিউঃ পর্ব-১১
=============

অধ্যায়ঃ জাহেলিয়াত সমাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ (صُوْرٌ مِّن الْمُجْتَمِعِ الْعَرَبِيِّ الْجَاهِلِيِّ)

 
নীতি-নৈতিকতা (الأَخْلَاقُ): 

মরুচারী আরববাসীগণের নীতি-নৈতিকতা ও চরিত্রের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দুইটি ধারার বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। এক দিকে লক্ষ্য করা যায় জুয়া, মদ্যপান, ব্যভিচার, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, হত্যা, প্রতিহিংসা পরায়ণতা ইত্যাদি জঘন্য মানবেতর ক্রিয়াকলাপ, অন্যদিকে লক্ষ্য করা যায় দয়া-দাক্ষিণ্য, উদারতা, অতিথিপরায়ণতা প্রতিজ্ঞাপরায়ণতা এবং আরও অনেক উন্নত মানসিক গুণাবলীর সমাবেশ। তাঁদের মানবেতর ক্রিয়াকলাপ এবং আচরণ সম্পর্কে ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। এ পর্যায়ে তাঁদের চরিত্রের বিভিন্ন মানবিক দিক এবং সমস্ত গুণাবলী সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ

১. দয়া-দাক্ষিণ্য ও উদারতাঃ অন্ধকার যুগের আরববাসীগণের দয়া-দাক্ষিণ্য সম্পর্কিত জনশ্রুতি ছিল সর্ব যুগের মানুষের গর্ব করার মতো একটি বিষয়। নীতি- নৈতিকতার ক্ষেত্রে ভ্রষ্টতার নিম্নতম পর্যায়ে পৌঁছলেও দয়া-দাক্ষিণ্য কিংবা বদান্যতার ব্যাপারে বিশ্ব মানব গোষ্ঠীর মধ্যে তাঁরা ছিলেন সকলের শীর্ষস্থানে। শুধু তাই নয় এ নিয়ে তাঁদের রীতিমত প্রতিযোগিতা চলতো এবং এ ব্যাপারে তাঁরা এ বলে গর্ব করতেন যে, ‘আরবের অর্ধভাগ তার জন্য উপহার হয়ে গিয়েছে।’ এ গুণকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ নিজের প্রশংসা নিজেই করেছে আবার কেউ করেছে অন্যের প্রশংসা।

তাঁদের বদান্যতা বাস্তবিক পক্ষে এতই উঁচু মানের ছিল যে তা মানুষকে বিস্ময়ে অভিভূত করে ফেলে। কোন কোন ক্ষেত্রে এমনটিও দেখা গিয়েছে যে, কঠিন শীত কিংবা ক্ষুধার সময়ও কারো বাড়িতে যদি মেহমান আসতেন এবং তাঁর জীবন ও জীবিকার জন্য অপরিহার্যরূপে প্রয়োজনীয় একটি উট ছাড়া আর কোন সম্বলই নেই, তবুও এমন এক সংকটময় মুহূর্তেও তাঁর উদারতা এবং অতিথিপরায়ণতা তাঁকে এতটা প্রভাবিত করে ফেলত যে, অগ্র-পশ্চাৎ চিন্তা না করে তৎক্ষনাৎ সেই উটটি জবেহ করে মেহমানের মেহামান দারিত্বে তিনি লিপ্ত হয়ে পড়তেন। অধিকন্তু, তাঁদের দয়া-দাক্ষিণ্য এবং উদারতার অন্যন্য চেতনায় তারা বড় বড় শোনিত পাতের মূলসূত্র কিংবা তদ্সংক্রান্ত আর্থিক দায়-দায়িত্ব অবলীলাক্রমে আপন স্কন্ধে তুলে নিয়ে এমনভাবে মানুষকে ধ্বংস ও রক্তপাতের বিভীষিকা থেকে রক্ষা করত যে অন্যান্য নেতা কিংবা দলপতিগণের তুলনায় তা অনেক বেশী গর্বের ব্যাপারে হয়ে দাঁড়াত।

এ প্রসঙ্গে একটি মজার ব্যাপার ছিল, দয়া-দাক্ষিণ্যের অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে তাঁরা যেমন গর্ববোধ করতেন তেমনি মদ্যপান করেও গর্ববোধ করতেন। মদ্যপান একটি গর্বের বিষয় সেই অর্থে মদ্যপান করে তাঁরা গর্ববোধ করতেন না, বরং এ জন্য গর্ববোধ করতেন যে, উদারতার উদবোধক হিসেবে তাদের উপর বিশেষভাবে প্রাধান্য বিস্তার করত যার ফলশ্রুতিতে কোন ত্যাগ স্বীকারকেই তাঁরা বড় মনে করতেন না। এর প্রকৃত কারণ হচ্ছে, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পিছপা হয় না। এজন্য এরা আঙ্গুর ফলের বৃক্ষকে ‘কারম’ এবং আঙ্গুর রসে তৈরি মদ্যকে ‘বিনতুল কারম’ (কারমের কন্যা) বলতেন। জাহেলিয়াত যুগের কবিগণের কাব্যে এ জাতীয় প্রশংসা এবং গৌরবসূচক রচনা একটি উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে রয়েছে। আনতার বিন সাদ্দাদ আবসী তাঁর নিজ মুয়াল্লাকায় বলেছেনঃ
ولقد شَرِبْتُ من المُدَامَة بَعْـدَ مـا
**
رَكَد الهَواجـِـرُ بالمـَشـُوْفِ المُعْلـِم
بزُجَاجَةٍ صـَـفْــــراء ذات أسـِرَّة

**
قُرنَـتْ بأزهـــــرَ بالشِّمال مُفـَدَّمِ
فــــإذا شـَرِبتُ فإننى مُسْتَهْلـِك
**
مالى وعِرْضِى وافِـرٌ لـــم يُكْلـَمِ

وإذا صَحَوْتُ فما أُقَصِّرُ عن نَـدَى
**
وكـا عَلمـت شمائلـى وَتَكَرُّمـِى

 অর্থঃ ‘নিদাঘের উত্তাপ স্তিমিত হওয়ার পর বাম দিকে রক্ষিত হলুদ বর্ণের এক নকশাদার কাঁচ পাত্র হতে যা ফুটন্ত এবং মোহরকৃত মদপূর্ণ ছিল, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন মদ্য আমি পান করলাম এবং যখন আমি তা পান করি তখন নিজের মাল লুটিয়ে দিই, কিন্তু আমার মান-ইজ্জতপূর্ণ মাত্রায় থাকে। এর উপর কোন চোট কিংবা আঘাত আসে না। তারপর যখন আমি সজ্ঞানে থাকি, কিংবা যখন আমার জ্ঞান ফিরে আসে তখনো আমি দান করতে কুণ্ঠিত হই না, এবং আমার দয়া-দাক্ষিণ্য যা কিছু সে সব সম্পর্কে তোমরা অবহিত রয়েছ।’’

তাঁরা জুয়া খেলতেন এবং মনে করতেন যে, ‘এটাও হচ্ছে তাঁদের দয়া-দাক্ষিণ্যের একটি পথ। কারণ, এর মাধ্যমে তাঁরা যে পরিমাণ উপকৃত হতেন তার অংশ বিশেষ, কিংবা উপকৃত ব্যক্তিদের অংশ থেকে যা অবশিষ্ট থেকে যেত তা অসহায় এবং মিসকীনদের মধ্যে পান করে দিতেন। এ জন্যই কুরআন কারীমে মদ এবং জুয়ার উপকারকে অস্বীকার করা হয়নি। বরং এ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে,

‏(‏وَإِثْمُهُمَآ أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا‏)‏ ‏[‏البقرة‏:‏219‏]‏

‘‘কিন্তু এ দু’টোর পাপ এ দু’টোর উপকার অপেক্ষা অধিক’।’ (আল-বাক্বারাহ ২ : ২১৯)

২. প্রতিজ্ঞাপরায়ণতাঃ অন্ধকার যুগের আরববাসীগণের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল প্রতিজ্ঞা পরায়ণতা। ওয়াদা পালন বা অঙ্গীকার রক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, কিংবা অন্য কোনভাবে তাঁরা যাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত থাকতেন তাঁদের জন্য সন্তানগণের রক্ত প্রবাহিত করা, কিংবা নিজ বাস্তভিটা বিলুপ্ত করার মতো অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারকেও তাঁরা সামান্য কিছু মনে করতেন। এর যথার্থতা উপলব্ধির জন্য হানি বিন মাস’উদ শাইবানী, সামাওয়াল বিন আদিয়া এবং হাজেব বিন যুরারাহ তামীমী এর ঘটনাবলীই যথেষ্ট।

৩. ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদাবোধঃ জাহেলিয়াত যুগের আরববাসীগণের অন্যতম ব্যক্তি বৈশিষ্ট্য ছিল পার্থিব সব কিছুর উপর নিজের মান ইজ্জতকে প্রাধান্য দেয়া এবং কোন প্রকার অন্যায় অত্যাচার সহ্য না করা। এর ফলে এরূপ দাঁড়িয়েছিল যে, তাঁদের উৎকট অহংবোধ এবং মর্যাদাবোধ সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিল। বিশেষ কোন কারণে তাঁদের এ অহং ও মর্যাদাবোধ এর উপর সামান্যতম আঘাত কিংবা অপমান এলেও তাঁরা উত্তেজিত হয়ে পড়তেন এবং তরাবারি, বর্শা, ফলা ইত্যাদি নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়তেন। এ সংঘর্ষে লিপ্ত হতে গিয়ে তাঁদের প্রাণহানির ব্যাপারে কোনই উৎকণ্ঠা থাকত না। প্রাণের তুলনায় মান-মর্যাদাকেই তাঁরা অধিকতর মূল্যবান মনে করতেন।

৪. সংকল্প বাস্তবায়নঃ প্রাক ইসলামি আরববাসীগণের আরও একটি বৈশিষ্ট্য ছিল এ রকম যে, কোন কাজ-কর্মকে মান-সম্মান ও পুরুষের প্রতীক মনে করে যখন তাঁরা সেই কর্ম সম্পাদনের লক্ষ্যে সংকল্পবদ্ধ হতেন তখন তাঁরা প্রাণ বাজী রেখে সেই কর্ম সম্পাদনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তেন। পার্থিব কোন শক্তিই তাঁদেরকে এ সংকল্প থেকে বিরত রাখতে পারত না।

৫. ভদ্রতা, ধৈর্য্য ও গাম্ভীর্যঃ ভদ্রতা-শিষ্টতা ও ধৈর্য্য-গাম্ভীর্য আরববাসীগণের নিকট খুবই প্রিয় ও প্রশংসনীয় ছিল। এ সকল মানসিক গুণাবলীকে কোন সময়েই তাঁরা খাটো করে দেখতেন না, কিন্তু তাঁদের উগ্র স্বভাব, উৎকট অহংবোধ ও প্রতিহিংসা পরায়ণতার কারণে খুব কম ক্ষেত্রেই এর যথার্থতা রক্ষা করতে তাঁরা সক্ষম হতেন।

৬. সরলতা ও অনাড়ম্বরতাঃ ইসলাম পূর্ব আরববাসীগণের সংস্কৃতি ধারা থেকে অবগত হওয়া যায় যে, তাঁদের জীবন যাত্রা ছিল অত্যন্ত সহজ সরল এবং অনাড়ম্বর। তাঁদের চিন্তা ও চেতনার মধ্যে ঘোর-প্যাঁচ কিংবা জটিলতার লেশমাত্র থাকত না। উদার, উন্মুক্ত অগ্নিখরা মরু প্রকৃতির মতই তাঁদের মন ছিল উন্মুক্ত, কিন্তু মেজাজ ছিল তীক্ষ্ণ। এ কারণে প্রকৃতিগতভাবেই তাঁরা ছিলেন সৎ এবং সততা প্রিয়। ধোঁকাবাজী এবং বিশ্বাস ভঙ্গের মতো কোন ব্যাপার ছিল তাঁদের সম্পূর্ণ অজ্ঞাত। গচ্ছিত ধন বা আমানত রক্ষার ব্যাপারটিকে তাঁদের পবিত্রতম দায়িত্ব হিসেবেই তাঁরা গণ্য করতেন।

আমরা সর্বান্তঃকরণে বিশ্বাস করি যে, এ পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে আরব ভূমির অবস্থান, আরব ভূমির ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগত বিশেষ বিশেষ সুযোগ-সুবিধা, আরববাসীগণের উদার-উন্মুক্ত মানবিক চেতনা, অতিথি পরায়ণতা, সহজ, সরল ও অনাড়ম্বর জীবনযাত্রা এবং আমানত গচ্ছিত রাখার অনপনেয় উপযুক্ততার প্রেক্ষাপটে আরব ভূমিকে ইসলাম প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু, আরব জাতিকে আল্লাহর পবিত্রতম আমানত ইসলামকে হেফাজত করার উপযুক্ত মানবগোষ্ঠি, আরবী ভাষাকে আল্লাহর বাণী ধারণ ও বহনের উপযুক্ত ভাষা এবং আরব সম্প্রদায়ের মধ্যে সকল দৃষ্টিকোণ থেকে সর্বোত্তম ব্যক্তিটিকে নবুওয়াত ও রিসালাতের উপযুক্ত বিবেচনা সাপেক্ষে ইসলামের আয়োজন ও বাস্তবায়ন ধারা সূচিত হয়েছিল।

আর সম্ভবত আরবদের এসব চারিত্রিক বৈশিষ্টে বিশেষ করে প্রতিশ্রুত পূর্ণ করা ছাড়াও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী বৈশিষ্ট্য তা হলো আত্মমর্যাদাবোধ ও সংকল্পে অটল থাকা। আর এ সব মহৎ গুণাবলী ও স্বচ্ছ পরিষ্কার দৃঢ় সংকল্প ব্যতীত অন্যায় অত্যাচার, ফিতনা ফাসাদ দূরীভূত করা এবং একটি ইনসাফপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। উল্লেখিত এসব চারিত্রিক গুণ ছাড়াও তাদের অনেক উত্তম রয়েছে গুণ যারা অনুসন্ধান করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়।
------------------------- 

বাঃভিউঃ পর্ব-১২,
===========
অধ্যায়ঃ 
পয়গম্বরী বংশাবলী, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সৌভাগ্যময় আবির্ভাব ও তাঁর পবিত্রতম জীবনের চল্লিশটা বৎসর (النَّسَبُ وَالْمُوَلَّدُ وَالنَّشْأَةُ)
------------------------- 
 
পয়গম্বরী বংশাবলী (نَسَبُ النَّبِيِّ ﷺ ):
------------------------- 
 পরম্পরাগত সূত্রে নাবী কারীম (সাঃ)-এর বংশাবলীকে তিন পর্যায়ে ভাগ করে নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। এর প্রথম পর্যায় হচ্ছে আদনান পর্যন্ত যার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে চরিতবেত্তা এবং বংশাবলী বিশেষজ্ঞা বিভিন্ন মত পোষণ করে থাকেন। এর দ্বিতীয় পর্যায় হচ্ছে আদনান হতে উপরে ইবরাহীম (আঃ) পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্যায়ের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে চরিতবেত্তা এবং বংশাবলী বিশেষজ্ঞগণের মধ্যে দ্বিমত বা মতান্তর রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারটিকে কেউ কেউ মুলতুবী রেখেছেন, কেউ কেউ বা আবার কথাবার্তাও বলেছেন। তৃতীয় পর্যায়ের সময়কাল হচ্ছে ইবরাহীম (আঃ) থেকে আদম (আঃ) পর্যন্ত। বিশেষজ্ঞগণের অভিমত হচ্ছে, তৃতীয় পর্যায়ের আলোচনা এবং সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কিছুটা ভুলভ্রান্তি রয়েছে। উপরে উল্লেখিত পর্যায় তিনটি সম্পর্কে কিছুটা বিস্তৃত আকারে নিম্নে আলোচনা করা হল।

প্রথম পর্যায়ঃ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব (শায়বাহ) বিন হাশিম (‘আমর) বিন আবদে মানাফ (মুগীরাহ) বিন কুসাই (যায়দ) বিন কিলাব বিন মুররাহ বিন কা‘ব লুওয়াই বিন গালিব বিন ফিহর (তাঁর উপাধি ছিল কুরাইশ এবং এ সূত্রেই কুরাইশ বংশের উদ্ভব) বিন মালিক বিন নাযর (ক্বায়স) বিন কিনানাহ বিন খুযায়মাহ বিন মুদরিকাহ (আমির) বিন ইলিয়াস বিন মুযার বিন নিযার বিন মা’আদ্দ বিন আদনান।[1]

দ্বিতীয় পর্যায়ঃ আদনান থেকে উপরের দিক অর্থাৎ আদনান বিন উদাদ বিন হামায়সা’ বিন সালামান বিন ‘আওস বিন বুয বিন ক্বামওয়াল বিন উবাই বিন ‘আউওয়াম বিন নাশিদ বিন হিযা বিন বালদাস বিন ইয়াদলাফ বিন ত্বাবিখ বিন যাহিম বিন নাহিশ বিন মাখী বিন ‘আইয বিন আ’বক্বার বিন উবাইদ বিন আদ-দু’আ বিন হামদান বিন সুনবর বিন ইয়াসরিবী বিন ইয়াহযুন বিন ইয়ালহান বিন আর’আওয়া বিন ‘আইয বিন দীশান বিন ‘আইসার বিন আফনাদ বিন আইহাম বিন মুক্বসির বিন নাহিস বিন যারিহ বিন সুমাই বিন মুযী বিন ‘আওযাহ বিন ‘ইরাম বিন ক্বাইদার বিন ইসামাঈল বিন ইবরাহীম (আঃ)।[2]

তৃতীয় পর্যায়ঃ ইবরাহীম (আঃ) হতে উপরে ইবরাহীম বিন তারিহ (আযর) নাহুর বিন সারু’ অথবা সারুগ বিন রাউ’ বিন ফালাখ বিন ‘আবির বিন শালাখ বিন আরফাখশাদ বিন শাম বিন নূহ (আঃ) বিন লামিক বিন মাতাওশালখ বিন আখনুন (কথিত আছে এ নাম ছিল ইদরিস (আঃ)-এর নাম) বিন ইয়াদ বিন মাহলায়ীল বিন ক্বায়নান বিন আনূশ বিন শীস বিন আদম (আঃ)।[3]

[1] ইবনে হিশাম ১ম খন্ড ১ ও ২ তালকীহ ফুহুমি আহলিল আসার ৫ ও ৬ পৃষ্ঠা, রাহমাতুল্লিল আলামীন ২য় খন্ড ১১-১৪ ও ৫২ পৃষ্ঠা। [2] খুব সূক্ষ্ণ অনুসন্ধানের পর আল্লামা মানসুরপুরী বংশাবলীর অংশ কালবী এবং ইবনে সা’দের বর্ণনা দ্বারা একত্রিত করেছেন, দ্রষ্টব্য রহমাতুল্লিল আলামীন ২য় খন্ড ১৪-১৭ পৃঃ। এ অংশের ঐতিহাসিক সূত্রে মত বিরোধ। [3] ইবনে হিশাম ১ম খন্ড ২-৪ পৃঃ তালকীহুল ফহুম ৬ পৃঃ খোলাসাতুস সিয়র ৬ পৃঃ রহমাতুল্লিল আলামীন ২য় খন্ড ১৮ পৃঃ কোন কোন না নিয়ে ঐ সুত্রগুলোতে মতভেদ আছে এবং কোন কোন সূত্রে কোন কোন নাম ছুটে গেছে।
-------------------------
২৬ জুলাই -২৩ ইং,

Post a Comment

0 Comments