Recent Tube

সেকুলার সালাফি মাদখালী শায়েখ আবু বকর যাকারিয়া কর্তৃক ইসলামী রাজনীতির বিরুদ্ধে আক্রমণ ও আমাদের জবাবঃ পর্ব ০১ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।


সেকুলার সালাফি মাদখালী শায়েখ আবু বকর যাকারিয়া কর্তৃক ইসলামী রাজনীতির বিরুদ্ধে আক্রমণ ও আমাদের জবাবঃ 
পর্ব - ০১,
-----------------------------------------------------------------

সেকুলার শায়েখ আবু বকর যাকারিয়া কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সালাফি আলেমরা রাজনৈতিক বিষয়গুলো এড়িয়ে চলেন কেন?

জবাবে তিনি যা বলেন তার সারসংক্ষেপ হলো,

-- রাজনীতি মানে ধাপ্পাবাজি। 
--ধাপ্পাবাজি পছন্দ করি না আমরা।... 

আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ. ঈমান ও আমলে সালেহ করলে আল্লাহ তা'য়ালা দুনিয়ার বুকে খিলাফত দিবেন।.. জনগণের দায়িত্ব শাসকের আনুগত্য করা আর শাসকের দায়িত্ব আমানতের হক আদায় করা। এখানেই আল্লাহ রাজনীতি শেষ দিয়েছেন।... ক্ষমতায় যাওয়ার পরে কিভাবে রাষ্ট্র চালাবে, এটা হলো  ইসলামী রাজনীতি। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে, তা ইসলাম শিক্ষা দেয়নি।

আমাদের জবাবঃ 
রাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়াদিই রাজনীতি। যে নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের শাসক নিয়োগ দেওয়া হয় এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করা হয় তাকেই আধুনিক পরিভাষায় রাজনীতি বলে। যদি এমন কোন ধর্ম পাওয়া যায় যে ধর্মটি মানব জীবনের ছোট থেকে বড় সমস্ত দিক নিয়ে আলোচনা করে এবং যে ধর্মটি সব দিক থেকে পরিপূর্ণ তাহলে সে ধর্মটির মধ্যেই পড়ে রাজনীতি। পৃথিবীতে শুধু একটি ধর্মই এমন পাওয়া যায় এবং সেটা হচ্ছে ইসলাম ধর্ম। ইসলামের বিধান প্রতিষ্ঠা ও বিজয়ী করতে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) নিজে রাজনীতি করেছেন। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শবান রাজনীতিবীদ ছিলেন। কিন্তু আফসোস! সেকুলার শায়েখ রাজনীতিকে খুবই খারাপ ভাবে উপস্থাপন করেছেন। আবার তিনি বলেছেন, ঈমান ও আমলে সালেহ করলে আল্লাহ তা'য়ালা দুনিয়ার বুকে খিলাফত বা রাষ্ট্রক্ষমতা দিবেন। প্রশ্ন হল, এতো খারাপ বিষয়ের জন্য আল্লাহ তা'য়ালা আবার ঈমান ও আমলে সালেহের শর্ত দিলেন কেন? 

দ্বিতীয়ত তিনি বলেছেন,
"ক্ষমতায় যাওয়ার পরে কিভাবে রাষ্ট্র চালাবে, এটা হলো  ইসলামী রাজনীতি। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে, তা ইসলাম শিক্ষা দেয়নি।" (নাউজুবিল্লাহ) তাহলে ইসলাম কি একটি অপূর্ণাঙ্গ ও ত্রুটিপূর্ণ ধর্ম?

 এখানে মাদখালী ধর্মাবলম্বী সেকুলার শায়েখ আবু বকর যাকারিয়া আল্লাহর বিধান কায়েম করার জন্য ক্ষমতায় যাওয়া বা কোনো সৎ ও যোগ্য লোককে ক্ষমতায় বসানোর পদ্ধতি বা রাজনীতিকে অবৈধ বলতে চাচ্ছেন। অথচ আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করতে নবীগণও রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য চেষ্টা করেছেন এবং রাষ্ট্রশক্তি কাজে লাগিয়ে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দেখুন -

 ক) আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
ﻗَﺎﻝَ ﺍﺟْﻌَﻠْﻨِﻲْ ﻋَﻠَﻰ ﺧَﺰَﺁﺋِﻦِ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﺇِﻧِّﻲْ ﺣَﻔِﻴْﻆٌ ﻋَﻠِﻴْﻢٌ. وَكَذَٰلِكَ مَكَّنَّا لِيُوسُفَ فِي الْأَرْضِ يَتَبَوَّأُ مِنْهَا حَيْثُ يَشَاءُ ۚ نُصِيبُ بِرَحْمَتِنَا مَنْ نَشَاءُ ۖ وَلَا نُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ.
ইউসুফ বলল, আপনি আমাকে দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়োজিত করুন। আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও বিজ্ঞ।  আর এভাবে আমি ইউসুফকে (এক পর্যায়ে) সে দেশে (রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়) প্রতিষ্ঠিত করেছি, সে তার যেখানে ইচ্ছা অবস্থান করতে পারত। আমি যাকে ইচ্ছা স্বীয় রহমত দান করি, আর আমি সৎকর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করি না। (ইউসুফ ১২/৫৫-৫৬)
তাফসীরবিদ মুজাহিদ বলেনঃ এসব প্রভাব-প্রতিপত্তি ও রাষ্ট্রক্ষমতা দ্বারা ইউসুফ (আঃ) এর একমাত্র লক্ষ্য ছিল আল্লাহর বিধি-বিধান জারি করা এবং তার দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করা। (তাফসীরে তাবারী; তাফসীরে কুরতুবী)
আল্লামা ইবনে কাসীর বলেন, এর মধ্যে নেতৃত্ব চেয়ে নেওয়ার দলীল রয়েছে ঐ ব্যক্তির জন্য, যিনি কোন বিষয়ে নিজেকে আমানতদার ও যোগ্য বলে নিশ্চিতভাবে মনে করেন’। (আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ ১/১৯৬) ইমাম কুরতুবী বলেন, যখন কেউ নিশ্চিতভাবে মনে করবেন যে, এ ব্যাপারে তিনি ব্যতীত যোগ্য আর কেউ নেই, তখন তাকে ঐ পদ বা দায়িত্ব চেয়ে নেওয়া ওয়াজিব হবে। (তাফসীরে কুরতুবী, ইউসুফ  ৫৫) 

 (খ) আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِي وَهَبْ لِي مُلْكًا لَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ مِنْ بَعْدِي ۖ إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ.
সুলাইমান বলল, ‘হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে এমন এক রাজত্ব (রাষ্ট্রক্ষমতা) দান করুন যা আমার পর আর কারও জন্যই প্রযোজ্য হবে না। নিশ্চয়ই আপনি বড়ই দানশীল। (সূরা সোয়াদ: ৩৮/৩৫)
এ দুআ'র পিছনে আল্লাহর বিধানাবলী বাস্তবায়ন করা এবং তাওহীদের ঝান্ডাকে সমুন্নত করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল। বাস্তবেও তাই হয়েছিল, রাজত্ব লাভের পর সুলায়মান (আঃ) আল্লাহর আইন কার্যকর করে তওহীদ ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি কখনোই অহংকারের বশীভূত হননি। কেউ যদি আল্লাহর বিধানকে সমুন্নত করা ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে ক্ষমতা লাভ করার প্রত্যাশী না হয়, তবে তার জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের দোআ ও চেষ্টা করা বৈধ। (মাহমূদ আলূসী রূহুল মা‘আনী তাফসীর সূরা সোয়াদ, আয়াতঃ ৩৫; ২৩/২০১ পৃ:)

 (গ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
وَقُلْ رَبِّ أَدْخِلْنِي مُدْخَلَ صِدْقٍ وَأَخْرِجْنِي مُخْرَجَ صِدْقٍ وَاجْعَلْ لِي مِنْ لَدُنْكَ سُلْطَانًا نَصِيرًا.
আর বল, ‘হে আমার রব, আমাকে প্রবেশ করাও উত্তমভাবে এবং বের কর উত্তমভাবে। আর তোমার পক্ষ থেকে আমাকে সাহায্যকারী (রাষ্ট্র) শক্তি দান কর’। (সূরা বানী ইসলাঈল: ১৭/৮০)
এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর (রাহঃ) বলেন, 'আল্লাহ তা'য়ালা নির্দেশ দিচ্ছেন যে, বিজয় লাভ ও সাহায্যের জন্য আমার নিকট প্রার্থনা কর। এই প্রার্থনার কারণে আল্লাহ তা'য়ালা পারস্য ও রোমে রাষ্ট্রীয় বিজয় এবং সম্মান প্রদানের ওয়াদা করেন। কাতাদার বরাতে তিনি আরো বলেন,
إن نبي الله صلى الله عليه وسلم علم أن لا طاقة له بهذا الأمر إلا بسلطان فسأل سلطانا نصيرا لكتاب الله ولحدود الله ولفرائض الله ولإقامة دين الله.
এটাতো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জানতেই পেরছিলেন যে, রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভ করা ছাড়া দ্বীনের প্রসার ও শক্তিলাভ সম্ভবপর নয়। এ জন্যই তিনি আল্লাহর নিকট সাহায্য ও রাষ্ট্র ক্ষমতা কামনা করেছিলেন, যাতে তিনি আল্লাহর কিতাব, আল্লাহর আইন, আল্লাহর ফরজসমূহ এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।' (তাফসীরে ইবনে কাসীর; সূরা বানী ইসলাঈল: ১৭/৮০)

 ♦ যে ব্যক্তি চোখ খুলে কুরআন মজীদ পড়বে সে স্পষ্ট দেখতে পাবে যে, এ কিতাব তার অনুসারীদেরকে কুফরী ও কাফেরদের আজ্ঞাধীন ধরে নিয়ে বিজিতের অবস্থানে থেকে ধর্মীয় জীবন-যাপন করার কর্মসূচী দিচ্ছে না, বরং প্রকাশ্যে নিজের শাসন ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে, চিন্তাগত, নৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং আইনগত ও রাজনৈতিক ভাবে বিজয়ী করার লক্ষ্যে জীবনপাত করার জন্য অনুসারীদের কাছে দাবী করছে এবং তাদেরকে মানব জীবনের সংস্কার ও সংশোধনের এমন একটি কর্মসূচী দিচ্ছে যার একটা বৃহদাংশ কেবল তখনই বাস্তব রূপ লাভ করতে পারে যদি সরকারের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ঈমানদারদের হাতে থাকে।

 এ কিতাব নাযিল করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বর্ণনা করে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﻟِﺘَﺤْﻜُﻢَ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﺭَﺍﻙَ ﺍﻟﻠَّﻪُ. 
“হে নবী, আমি ন্যায় ও সত্যসহ তোমার কাছে এই কিতাব নাযিল করেছি যাতে আল্লাহ তোমাকে যে আলো দেখিয়েছেন তার সাহায্যে তুমি মানুষের মধ্যে বিচার-শাসন ফায়সালা করো।” (সূরা নিসা ৪/১০৫)

 এই কিতাবে যাকাত আদায় ও বন্টনের যে নির্দেশাবলী দেয়া হয়েছে সেজন্য তা সুস্পষ্টভাবে এমন একটি সরকারের ধারণা পেশ করেছে যে, একটি নির্দিষ্ট নিয়মানুসারে যাকাত আদায় করে হকদারদের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্ব নেবে (আত তাওবা ৬০ ও ১০৩ আয়াত)। এই কিতাবে সুদ বন্ধ করার যে আদেশ দেয়া হয়েছে এবং সুদখোরী চালু রাখার কাজে তৎপর লোকদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে (আল বাকারা ২৭৫-২৭৯ আয়াত) তা কেবল তখনই বাস্তব রূপ লাভ করতে পারে যখন দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণরূপে ঈমানদারদের হাতে থাকবে। এই কিতাবে হত্যাকারীর থেকে কিসাস গ্রহণের নির্দেশ (আল বাকারা ১৭৮ আয়াত), চুরির জন্য হাত কাটার নির্দেশ (আল মায়েদা ৩৮ আয়াত) এবং ব্যভিচার ও ব্যভিচারের অপবাদ আরোপের জন্য হদ জারী করার নির্দেশ একথা ধরে নিয়ে দেয়া হয়নি যে, এসব আদেশ মান্যকারীদেরকে কাফেরদের পুলিশ ও বিচারালয়ের অধীন থাকতে হবে। এই কিতাবে কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নির্দেশ (আল বাকারা-১৯০-২১৬ আয়াত) একথা মনে করে দেয়া হয়নি যে, এ দ্বীনের অনুসারীরা কাফের সরকারের বাহিনীতে সৈন্য ভর্তি করে এ নির্দেশ পালন করবে। এ কিতাবে আহলে কিতাবদের নিকট থেকে জিযিয়া আদায়ের নির্দেশ (আত তাওবা ২৯ আয়াত) একথা ধরে নিয়ে দেয়া হয়নি যে, মুসলমানরা কাফেরদের অধীন থেকে তাদের থেকে জিযিয়া আদায় করে এবং তাদের রক্ষার দায়িত্ব নেবে। এ ব্যাপারটি শুধু মদীনায় অবতীর্ণ সূরাসমূহ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়। দৃষ্টিশক্তির অধিকারীরা মক্কায় অবতীর্ণ সূরাসমূহের মধ্যে স্পষ্টতই দেখতে পারেন, প্রথম থেকেই যে পরিকল্পনা ছিল তা ছিলো দ্বীনের বিজয় ও কর্তৃত্ব স্থাপন, কুফরী সরকারের অধীনে দ্বীন ও দ্বীনের অনুসারীদের জিম্মি হয়ে থাকা নয়। (তাফহীমুল কুরআন, সূরা শুরাহ ৪২/১৩; টীকা ২০)

 তাই ইমাম বা খিলাফা নিযুক্ত করা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে সমস্ত মুজতাহিদ ইমাম একমত, যিনি আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে মানুষের মাঝে আল্লাহর বিধান কায়েম করবেন। আর এ কাজ রাজনীতিরই অংশ। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً.
আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, ‘নিশ্চয় আমি জমিনে একজন খলিফা সৃষ্টি করছি'। (সূরা বাকারাঃ ২/৩০)

 ♥ ইমাম কুরতুবী (রাহঃ) এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন,
هذه الاية اصل في نصب امام وخليفة يسمع له ويطاع لتجتمع به الكلمة وتنفذ به احكام الخليفة ولاخلاف في وجوب ذلك بين الامة و لا بين الاءمة.
"এই আয়াতটি মুসলিমদের একজন ইমাম বা খলিফা নিযুক্ত করার ব্যাপারে মূলভিত্তি। খলিফার কথা শুনতে হবে এবং তার নির্দেশ মানতে হবে। তার নেতৃত্বে মুসলিম জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকবে। তিনি আল্লাহর খলিফা হিসাবে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান কার্যকর করবেন। এজন্যই মুসলিম জাতির জন্য খলিফা নিযুক্ত করা সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াজিব। এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।" (তাফসীরে কুরতুবী ১/২৬০)

 ♥ আল্লামা ইবনে কাসীর (রাহঃ) বলেন,
وقد استدل القرطبي وغيره بهذه الآية على وجوب نصب الخليفة ليفصل بين الناس فيما اختلفوا فيه ويقطع تنازعهم وينتصر لمظلومهم من ظالمهم ويقيم الحدود ويزجر عن تعاطي الفواحش إلى غير ذلك من الامور المهمة التي لا تمكن إقامتها إلا بالإمام وما لا يتم الواجب إلا به فهو واجب .
"ইমাম কুরতুবী (রাহঃ) সহ প্রভৃতি মনীষীগণ এ আয়াত হতে দলিল গ্রহণ করেছেন যে, রাষ্ট্রের খলিফা নিযুক্ত করা ওয়াজিব। তিনি মতবিরোধের মীমাংসা করবেন, ঝগড়া বিবাদ মিটিয়ে দিবেন, অত্যাচারী হতে অত্যাচারিত ব্যক্তির প্রতিশোধ নিবেন, 'হুদুদ' আল্লাহর আইন কায়েম করবেন, অন্যায় ও পাপের কাজ হতে জনগণ বিরত রাখবেন ইত্যাদি বড় বড় কাজগুলো যার সমাধান ইমাম ছাড়া হতে পারে না। এসব কাজ ওয়াজিব এবং ইমাম ছাড়া পুরো হতে পারে না। আর যা ছাড়া কোন ওয়াজিব পুরো হয় না, ওটাও ওয়াজিব। সুতরাং খলিফা নিযুক্ত করা ওয়াজিব সাব্যস্ত হলো।" (তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা বাকারাঃ ২/৩০ তাফসীর)

 ♥ ইমাম শানকীতি (রাহঃ) বলেন,
من الواضح المعلوم من ضرورة الدين إن المسلمين يجب عليهم نصب امام تجتمع به الكلمة وتنفذ به احكام الله في ارضه.
"এ কথা সুস্পষ্ট যে, দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়গুলো মধ্যে একটি হলোঃ মুসলিমদের জন্য একজন (রাষ্ট্রের) ইমাম নিযুক্ত করা ফরয। যার নেতৃত্বে মুসলিমগণ ঐক্যবদ্ধ হবে, তিনি আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান কায়েম করবেন।" (তাফসীরে আদওয়াউল বায়ান ১/২৩)

 ♥ মুসলিমদের জন্য রাষ্ট্রে ইমাম নিযুক্ত করা ফরয, এর কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে ইমাম শানকীতি বলেন,
ولان الله تعالي قد يزع بالسلطان ما لا يزعه بالقران. كما قال الله: لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ ۖ وَأَنْزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ وَرُسُلَهُ بِالْغَيْبِ ۚ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ- فيه اشارة الي اعمال السيف عند الاباء بعد اقامة الحجة-
"কেননা ইমামের নেতৃত্বে (শরীয়তের) এমন কিছু কাজ করা সম্ভব যা কুরআন দ্বারা সম্ভব হয় না। যেমন আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেনঃ "নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ পাঠিয়েছি এবং তাদের সাথে কিতাব ও (ন্যায়ের) মানদন্ড নাযিল করেছি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। আমি আরো নাযিল করেছি লোহা, তাতে প্রচন্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহু কল্যাণ রয়েছে। আর যাতে আল্লাহ জেনে নিতে পারেন, কে না দেখেও তাঁকে ও তাঁর রাসূলদেরকে সাহায্য করে। অবশ্যই আল্লাহ মহাশক্তিধর, মহাপরাক্রমশালী।" (সূরা হাদীদ ২৫) এই আয়াতে ইঙ্গিত আছে যে, যদি (আল্লাহর বিধানের পক্ষে) দলিল প্রমাণ কায়েম করার পরেও কাজ না হয় তাহলে তরবারি কাজে লাগাতে হবে।" (তাফসীরে আদওয়াউল বায়ান ১/২৩)

শায়খ ইবনে উসাইমীন (রাহঃ) বলেন,
"আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করা একদিক থেকে তা তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহর সাথে সম্পৃক্ত, অপরদিকে তা তাওহীদুল উলুহিয়্যাহর সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহকে একমাত্র আইনদাতা হিসাবে না মানলে তাওহীদুর রুবুবিয়্যাতে শিরক করা হয়। অপরদিকে আল্লাহ্‌র আইনকে না মেনে অন্য কারো আইনে বিচার-ফয়সালা করলে তাতে তাওহীদুল উলুহিয়াতে শিরক করা হয়। অনুরূপভাবে, আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য কোন আইনের বিচার-ফয়সালা মনে-প্রাণে মেনে নেয়াও তাওহীদুল উলুহিয়াতে শিরক করা হয়। সুতরাং এ থেকে একথা স্পষ্ট হয় যে, আইনদাতা হিসেবে আল্লাহকে মেনে নেয়া এবং আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করা তাওহীদের অংশ।" (মাজমু ফাতাওয়া ও রাসাইলে ইবন উসাইমীন ২/১৪০-১৪৪ ও ৬/১৫৮-১৬২)

 সুতরাং আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করার জন্য রাজনীতি করা তথা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কোনো সৎ লোককে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসানো সাধারণ কোনো আমলে সালেহ নয় বরং ঈমানের প্রধান রুকন তাওহীদের অংশ। যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে মুজতাহিদ ইমামগণ ফরজ এবং তাওহীদের অংশ বলছেন, সেই রাজনীতিকে মাদখালী ধর্মাবলম্বী সেকুলার শায়েখ আবু বকর যাকারিয়া হারাম বলছেন। এর কারণ হলো, তারা আল্লাহর আইন সহ্য করতে পারেন না বরং সেকুলার শাসকের কুফুরী শাসনেই সন্তুষ্ট থাকে। এভাবেই তারা আহলে কিতাবদের মত আল্লাহর পরিবর্তে তাদের সেকুলার শাসকদের রবের আসনে বসিয়ে শিরক ও কুফুরীতে লিপ্ত রয়েছে।
------------------------- 
লেখক ঃ প্রবন্ধ লেখক কলামিস্ট ইতিহাস গবেষক শিক্ষক ও অনলাইন একটিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments