Recent Tube

সালাত, সাওম আদায় করার পরও জাহান্নামি যারাঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

সালাত, সাওম আদায় করার পরও জাহান্নামি যারাঃ
-----------------------------------------------------------------
 হযরত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন :
  «رُبَّ صَائِمٍ لَيْسَ لَهُ مِنْ صِيَامِهِ إِلَّا الْجُوعُ وَرُبَّ قَائِمٍ لَيْسَ لَهُ مِنْ قِيَامِهِ إِلَّا السَّهَرُ».
এমন কতক রোযাদার আছে যাদের রোযার বিনিময়ে ক্ষুধা ছাড়া আর কিছুই জোটে না। আবার এমন কতক সালাত আদায়কারী আছে যাদের রাত জাগরণ ছাড়া আর কিছুই জোটে না। (ইবনে মাজাহ হাঃ ১৬৯০; মুসনাদে আহমাদ হাঃ ৮৬৩৯, ৯৩৯২; সুনান দারেমী হাঃ ২৭২০ হাদীসের মানঃ সহীহ)

 যারা সালাত, সাওম, হজ্জ, যাকাতের ন্যায় ইবাদত করে, এমন কি ফরজের পাশাপাশি রাত জেগে তাহাজ্জুদের নামাযও আদায় কিন্তু সার্বিকভাবে আল্লাহর আইন ও বিধান পালন ও প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে না বরং জাহেলি বিধানে সন্তুষ্ট থাকে কিংবা যারা জাহেলি বিধান অপসরণ করে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাদের বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, ইসলাম থেকে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে পৃথক করে, ধর্ম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করে অথবা ইকামাতে দ্বীনের এ কাজকে 'হাবিজাবি', 'ক্ষমতা দখল' ইত্যাদি বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের মাধ্যমে কুফুরী করে এবং আল্লাহর বিধান অপছন্দ করে তাদের কোনো আমলই আল্লাহ তা'য়ালা কবুল করবেন না। মহান আল্লাহ বলেন,
وَالَّذِينَ كَفَرُوا فَتَعْسًا لَهُمْ وَأَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ. ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ.
আর যারা কুফুরী করে তাদের জন্য রয়েছে ধ্বংস এবং তিনি তাদের আমলসমূহ ব্যর্থ করে দিয়েছেন। তা এজন্য যে, আল্লাহ (বিধান স্বরূপ) যা নাযিল করেছেন তারা তা অপছন্দ করে। অতএব তিনি তাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করে দিবেন। (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭/৮-৯)

 আল্লাহ তা'য়ালা আরো বলেনঃ
أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ ۚ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ.
তারা কি জাহিলিয়্যাতের আইন চায়? আর নিশ্চিত বিশ্বাসী কওমের জন্য আল্লাহর চেয়ে উত্তম আইন-বিধান দাতা আর কে হতে পারে?(সূরা মায়িদাঃ ৫/৫০)
এখানে জাহেলিয়্যাতের আইন বলতে আল্লাহ কর্তৃক প্রণীত আইন ছাড়া ইসলাম বিরোধী যাবতীয় আইনকেই বুঝানো হয়েছে। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক প্রণীত আইনের বাইরে যত প্রকার মানব রচিত আইন রয়েছে, তার সবই জাহেলী আইন। যেমন রোমান আইন, ভারত উপমহাদেশে ইংরেজদের রেখে যাওয়া আইন, প্রচলিত আইন ইত্যাদি।

 ♦ আর সালাত, সাওম আদায় করার পরেও যারা জাহেলি বিধানের প্রতি মানুষকে আহ্বান জানায় কিংবা যারা জাহেলি বিধানের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে তাদেরকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জাহান্নামি বলেছেন। হযরত হারিস আল-আশয়ারী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
وَمَنْ دَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ فَهُوَ مِنْ جُثَاءِ جَهَنَّمَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَإِنْ صَامَ وَإِنْ صَلَّى قَالَ وَإِنْ صَامَ وَإِنْ صَلَّى وَزَعَمَ أَنَّهُ مُسْلِمٌ.
"যে ব্যক্তি জাহেলি বিধানের প্রতি আহ্বান জানাবে (আর যে জাহেলী বিধানের আনুগত্য করবে), সে জাহান্নামি হবে। জিজ্ঞাস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! সে যদি সাওম পালন করে, সালাত আদায় করে তবুও জাহান্নামি হবে? তিনি বললেন, সে যদি সাওম পালন করে, সালাত আদায় করে এবং নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করে তবুও সে জাহান্নামি।" (মুসনাদে আহমদ হাঃ ১৬৭১৮, ১৭৩৪৪; জামে তিরমিযী হাঃ ২৮৬৩; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক হাঃ ৫১৪১; সহীহ ইবনে খুযায়মা হাঃ ১৮৯৫; সহীহ ইবনে হিব্বান হাঃ ৬২৩৩; জামিউল আহাদীস হাঃ ৪৪; মিশকাত হাঃ ৩৬৯৪; সহীহুল জামে হাঃ ১৭২৮)

 সালাত, সাওম আদায় করার পরেও এরা জাহান্নামি হওয়ার একাধিক কারণ আছে। প্রধান কয়েকটি কারণ হলো:

 ♥ এরা নিজের খুশিমত ইসলামের কিছু অংশ মানে কিছু অংশ অমান্য (অস্বীকার) করে। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ ۚ فَمَا جَزَاءُ مَنْ يَفْعَلُ ذَٰلِكَ مِنْكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰ أَشَدِّ الْعَذَابِ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে (জাহান্নামের) কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন। (সূরা বাকারাঃ ২/৮৫)

 ♥ আল্লাহর বিধান অপছন্দ/অমান্যকারী ব্যক্তিরা ফাসিক। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ 
وَأَنِ احْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ أَنْ يَفْتِنُوكَ عَنْ بَعْضِ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلَيْكَ ۖ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمْ أَنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ أَنْ يُصِيبَهُمْ بِبَعْضِ ذُنُوبِهِمْ ۗ وَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ لَفَاسِقُونَ
আর তাদের মধ্যে তার মাধ্যমে শাসন ফয়সালা কর, যা আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর তাদের থেকে সতর্ক থাক যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তার কিছু থেকে তারা তোমাকে বিচ্যুত করবে। অতঃপর যদি তারা (আল্লাহর বিধান থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে জেনে রাখ যে, আল্লাহ তো কেবল তাদেরকে তাদের কিছু পাপের কারণেই (জাহান্নামের) আযাব দিতে চান। আর মানুষের অনেকেই ফাসিক। (সূরা মায়িদাঃ ৫/৪৯)

 ♥ যারা নামায রোযা করার পরেও আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করাকে সহ্য করতে পারে না তারা নাফরমান ও সীমালঙ্ঘনকারী। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِينٌ
আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করে এবং তাঁর (আইন না মেনে) সীমারেখা লঙ্ঘন করে আল্লাহ তাকে (জাহান্নামের) আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্যই রয়েছে অপমানজনক আযাব।(সূরা নিসাঃ ৪/১৪)

 ♥ আল্লাহর বিধান পালন ও প্রতিষ্ঠা করা থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তারা মুনাফিক। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَىٰ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنْكَ صُدُودًا.
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা আস যা আল্লাহ (বিধানসরূপ) নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে’, তখন মুনাফিকদেরকে দেখবে তোমার কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে ফিরে যাচ্ছে। (সূরা নিসাঃ ৪/৬১)
তাদের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ 
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا
নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। আর তুমি কখনও তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না। (সূরা নিসাঃ ৪/১৪৫)

 ♥ আল্লাহকে একমাত্র আইনদাতা হিসাবে না মানলে তাওহীদুর রুবুবিয়্যাতে শিরক করা হয়। অপরদিকে আল্লাহ্‌র আইনকে না মেনে অন্য কারো আইনে বিচার-ফয়সালা করলে তাতে তাওহীদুল উলুহিয়াতে শিরক করা হয়। অনুরূপভাবে, আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য কোন আইনের বিচার-ফয়সালা মনে-প্রাণে মেনে নেয়াও তাওহীদুল উলুহিয়াতে শিরক করা হয়। সুতরাং যারা আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার কাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও জাহেলি শাসনে সন্তুষ্ট থাকে তারা শিরকে আকবরে লিপ্ত। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ 
مَا لَهُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا
তিনি (আল্লাহ) ছাড়া তাদের কোন অভিভাবক, আইনদাতা নেই। তাঁর আইনে তিনি কাউকে শরীক করেন না।(সূরা কাহফঃ ১৮/২৬)

শিরকের ভয়ঙ্কর পরিণতি বিষয়ে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ
নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা (জাহান্নামের) আগুন। আর জালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।(সূরা মায়িদাঃ ৫/৭২)

  সকল বাতিল ও জাহেলি বিধানের উপর আল্লাহর বিধান বিজয়ী করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর রাসুল (ﷺ) কে প্রেরণ করেছেন (সূরা তওবাঃ ০৯/৩৩; ফাতাহঃ ৪৮/২৮; সফঃ ৬১/০৯)। আল্লাহ তা'আলা সাহাবাগণকে বাছাই করে নিয়েছেন তাঁর নবীর সাথী হয়ে তাঁর দ্বীনকে কায়েম করার জন্য। (মিশকাত, হাদীস নং ১৯৩; হিলইয়াহ ১/৩০৫-৩০৬; ইবনে আব্দুল বার ২/৯৭)। জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে ইকামাতে দ্বীনের কাজে যুক্ত হওয়া ফরজ। সুতরাং জাহেলি বিধান অপসরণ করে আল্লাহর বিধান পালন ও প্রতিষ্ঠার কাজ তথা 'ইকামাতে দ্বীন' এর ফরজ দায়িত্ব থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং প্রচলিত জাহেলি বিধানে সন্তুষ্ট থাকে তারা নামায রোযা আদায় করার পরেও এরা মুনাফিক ও জাহান্নামি। এদের কোনো ইবাদত আল্লাহ তা'য়ালা কবুল করেন না।

Post a Comment

0 Comments