রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর আগমনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও আমাদের করণীয়ঃ
--------------------------------------------------------------
আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর রাসুল (ﷺ) কে প্রেরণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের তিনটি সূরার তিনটি আয়াতে বলেন,
هُوَ الَّذِىۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَهٗ بِالۡهُدٰى وَدِيۡنِ الۡحَقِّ لِيُظۡهِرَهٗ عَلَى الدِّيۡنِ كُلِّهٖۙ وَلَوۡ كَرِهَ الۡمُشۡرِكُوۡنَ.
আল্লাহই তার রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি একে সকল প্রকার দ্বীনের ওপর বিজয়ী করেন, মুশরিকরা একে যতই অপছন্দ করুক না কেন। (সূরা তাওবা ৯/৩৩; ফাতাহ ৪৮/২৮; সফ ৬১/০৯)
কুরআনের মূল আয়াতে الدِّيۡنِ “আদদ্বীন” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ দ্বীন শব্দটি আরবী ভাষায় এমন একটি জীবন ব্যবস্থা বা জীবন পদ্ধতি অর্থে ব্যবহৃত হয় যার প্রতিষ্ঠাতাকে সনদ ও অনুসরণযোগ্য বলে মেনে নিয়ে তার আনুগত্য করতে হয়। কাজেই এ আয়াতে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে পাঠাবার উদ্দেশ্য বর্ণনা করে বলা হয়েছে দ্বীন জাতীয় বা দ্বীনের শ্রেণীভুক্ত অন্য কথায় জীবন বিধান পদবাচ্য সমস্ত পদ্ধতি ও ব্যবস্থার ওপর জয়ী করবেন। অন্য কথায় রাসূল (ﷺ) এর কখনো এ উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়নি যে, তিনি যে জীবন ব্যবস্থা নিয়ে এসেছেন তা অন্যান্য জীবন ব্যবস্থার কাছে পরাজিত হয়ে ও সেগুলোর পদানত থেকে তাদের দেয়া সুযোগ সুবিধা ভোগ করার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ ও সংকোচিত করে রাখবে। বরং তিনি আকাশ ও পৃথিবীর একচ্ছত্র অধিপতির প্রতিনিধি হয়ে আসেন এবং নিজের মনিবের সত্য ও ন্যায়ের ব্যবস্থাকে বিজয়ী দেখতে চান।
অর্থাৎ, এখানে আল্লাহ তা’আলা যে কথাটি পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন তা হচ্ছে, শুধু এ দ্বীনের প্রচার করাই মুহাম্মাদ (ﷺ) কে পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল না, বরং উদ্দেশ্য ছিল একে দ্বীন হিসেবে গণ্য সমস্ত জীবনাদর্শের ওপর বিজয়ী করে দেয়া। অন্য কথায় জীবনের সমস্ত দিক ও বিভাগের ওপর কোন বাতিল জীবনাদর্শ বিজয়ী হয়ে থাকবে আর বিজয়ী সে জীবনাদর্শ তার আধিপত্যাধীনে এ দ্বীনকে বেঁচে থাকার যতটুকু অধিকার দেবে এ দ্বীন সে চৌহদ্দির মধ্যেই হাত পা শুটিয়ে বসে থাকবে, এ উদ্দেশ্যে নবী (ﷺ) এই দ্বীন নিয়ে আসেননি। বরং তিনি এ জন্য তা এনেছেন যে, এটাই হবে বিজয়ী জীবনাদর্শ। অন্য কোন জীবনাদর্শ বেঁচে থাকলেও এ জীবনাদর্শ যে সীমার মধ্যে তাকে বেঁচে থাকার অনুমতি দেবে সে সীমার মধ্যেই তা বেঁচে থাকবে। (তাফহীমুল কুরআন, সূরা তাওবা ৯/৩৩; ফাতাহ ৪৮/২৮; তাফসীর দ্রঃ)
সুতরাং এ কথা প্রমাণিত যে, সকল বাতিল বিধানের উপর আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর রাসুল (ﷺ) কে প্রেরণ করেছেন। অর্থাৎ 'ইকামাতে দ্বীন' তথা দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই ছিল রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর মিশন। সাহাবায়ে কিরামকেও আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর দ্বীন কায়েমের মাধ্যমে বিজয়ী জন্য রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন,
اخْتَارَهُمُ اللَّهُ لِصُحْبَةِ نَبِيِّهِ وَلِإِقَامَةِ دِينِهِ رَوَاهُ رزين.
"আল্লাহ তা'আলা সাহাবাগণ কে বাছাই করে নিয়েছেন তাঁর নবীর সাথী হওয়ার জন্য এবং তাঁর দ্বীনকে কায়েম করার জন্য।" (মিশকাত, হাদীস নং ১৯৩; হিলইয়াহ ১/৩০৫-৩০৬; ইবনে আব্দুল বার ২/৯৭)।
আমাদের করণীয়ঃ
আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআনের তিনটি সূরার তিনটি আয়াতে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) প্রেরণের উদ্দেশ্য বর্ণনা করার পর বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ تِجَارَةٍ تُنْجِيكُمْ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ. تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ. يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ.
হে ঈমানদারগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক আযাব থেকে রক্ষা করবে? (তা হল) তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জি/হাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আর তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত এবং চিরস্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটাই মহাসাফল্য। (সূরা সফ ৬১/১০-১২)
এখানে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে নাজাত পেয়ে চিরস্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করতে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (ﷺ) এর প্রতি ঈমান এনে ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জি/হাদ করতে বলা হয়েছে। আর জি/হাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
مَنْ قَاتَلَ لِتَكُونَ كَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ.
"যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান বিজয়ী করার জন্য লড়াই করে সে আল্লাহর পথে জি/হাদ করে।" (সহীহ বুখারী হাঃ ১২৩, ২৮১০, ৩১২৬, ৭৪৫৮; সহীহ মুসলিম হাঃ ১৯০৪, তিরমিযী হাঃ ১৬৪৬; নাসায়ী হাঃ ৩১৩৬; আবু দাউদ হাঃ ২৬১৭; ইবনে মাজাহ হাঃ ২৭৮৩; আহমাদ হাঃ ১৮৯৯৯; ১৯৫১০, ১৯৫৬০, ১৯৬১৩)
অতএব, মুসলিম উম্মাহ হিসেবে আমাদের করণীয় হল, জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে নাজাত পেতে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে সকল বাতিল বিধানের উপর আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করতে ইকামাতে দ্বীনের আন্দোলনে শামিল হওয়া ফরজ। আলহামদুলিল্লাহ! এই ফরজ দায়িত্ব পালনে 'জামায়াতে ইসলামী' দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। আসুন! মুসলিম উম্মাহ হিসেবে আমরা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর মিশনকে বাস্তবায়ন করতে অর্থাৎ সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে প্রচলিত কুফুরী বিধান অপসরণ করে রাষ্ট্রীয়ভাবে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করার শপথ নেই। আল্লাহ তা'য়ালা আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করুন! (আমিন)
-------------------------
0 Comments