ইমাম আহমাদ (রাহঃ) এর দৃষ্টিতে জালিম ও তার সহযোগীঃ
-----------------------------------------------------------
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আহর উপর অটল থাকা এবং মুতাযিলী ফিতনার বিরোধিতা করার অপরাধে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রাহ) বছরের পর বছর কারাগারে বন্দী ছিলেন।
পর পর তিন খলিফার শাসনামল তাকে কারাগারেই কাটাতে হয়। তাঁর সম্পর্কে তাঁর ছাত্র ইমাম আবু দাউদ (রাহঃ) বলেন, ‘ইমাম আহমাদ আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাদীস জানেন। সুতরাং আল্লাহর রাসুল ﷺ সম্পর্কেও সবচেয়ে বেশি জানেন তিনি। তাই আমি আবু দাউদ আর কী করব? আমিও ইমাম আহমাদের মতো পোশাক পড়ি, চলি-ফিরি,খাই।’
একদা এক কারারক্ষী ইমাম আহমাদকে কারাগার থেকে বের করে তার পাহারা দেওয়ার স্থানে নিয়ে এসে বলেন,
– ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল, এখানে বসুন
– ওহে কারারক্ষী, আমাকে এখানে কেন নিয়ে এলে?
– আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ এর একটি হাদীস সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।
– রাসুলুল্লাহ ﷺ এর কোন হাদীস সম্পর্কে তুমি জানতে চাচ্ছ?
– জালিম ও তার সহযোগীদের ব্যাপারে যে হাদীসটি রয়েছে সেটি। হাদীসটি কি সহিহ?
– জালিম ও তার সহযোগীদের সম্বন্ধে হাদীস তো অগণিত।
তার মধ্যে একটি সহীহ হাদীস হলোঃ
حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنِ ابْنِ خُثَيْمٍ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَابِطٍ عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِكَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ أَعَاذَكَ اللَّهُ مِنْ إِمَارَةِ السُّفَهَاءِ قَالَ وَمَا إِمَارَةُ السُّفَهَاءِ قَالَ أُمَرَاءُ يَكُونُونَ بَعْدِي لَا يَقْتَدُونَ بِهَدْيِي وَلَا يَسْتَنُّونَ بِسُنَّتِي فَمَنْ صَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ فَأُولَئِكَ لَيْسُوا مِنِّي وَلَسْتُ مِنْهُمْ وَلَا يَرِدُوا عَلَيَّ حَوْضِي.
হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। নাবী কারীম ﷺ কা’ব বিন উজরা (রাঃ) কে বললেন: হে কা’ব আল্লাহ তায়ালা তোমাকে পথভ্রষ্ট লোকদের শাসন থেকে হেফাজাত করুন। তিনি আরজ করলেন, পথভ্রষ্টদের শাসন কি? রাসূলে কারীম স. বললেন: আমার পরে এমন কিছু শাসক আসবে, যারা আমার পথনির্দেশনা বা হিদায়াতকে গ্রহণ করবে না। আমার সুন্নাতের অনুকরণ করবে না। অতএব, যারা তাদের বাতিল শাসনকে সত্যায়ণ করবে, জুলুম-অত্যাচার ও স্বৈরশাসন চালাতে তাদেরকে সাহায্য করবে; তাদের সাথে আমার,আমার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। তারা আমার হাওজের কাছে আসতে পারবে না। [১]
কারারক্ষী কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর বলল,
– আমি কি জালিমের সহযোগী?
– না,তুমি জালিমের সহযোগী নও। জালিমের সহযোগী তো তারা,যারা তাদের চুল আঁচড়ে দেয়,তাদের সামনে খাবার পরিবেশন করে, তাদের জীবন চলার কাজে সহযোগিতা করে। ওহে কারারক্ষী, তুমি জালিমের সহযোগী নও, বরং তুমি নিজেই জালিমদের একজন.....। [২]
_______________________________
[১] আহমাদ, আল মুসনাদ, হাঃ ১৪০৩২, ১৪৮৬০; নাসায়ী, সুনান হাঃ ৪২০; তিরমিযী, জামে হাঃ ২২৫৯ ও ইবনে হিব্বান, সহীহ হাঃ ২৭৯
[২] ইবনুল কায়্যিম, মানাকিবুল ইমাম আহমাদ ১/৪৩১,
0 Comments