Recent Tube

নীল ছায়া আব্দুল্লাহ আরমান

মৃত্যুর আগে আমার জন্মদাত্রী আমাকে শেষবারের মতো দেখতে চেয়েছিলো; যাইনি। এটা আমার অপরাধ নাকি প্রতিশোধ তা জানি না; শুধু জানি অনেক কষ্টে যাকে মন থেকে মুছে দিয়েছি ২৫ বছর পর তাকে নতুন করে হৃদয়ে তোলার প্রশ্নই আসে না।

তখন আমি ছোট। স্মৃতিগুলো আবছা আবছা মনে পড়ে। সাংসারিক টানাপোড়েনে বেকার বাবা তখন হন্যে হয়ে কাজ খুঁজছিলেন। অবশেষে কাজের খোঁজ মিললো সূদুর চট্রগ্রাম সমুদ্রবন্দরে। অত দূরে বাবা যেতে চাননি। দাদা-দাদী, মা, ছোট ফুফু সবাই মিলে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে কোনমতে তাকে রাজী করালেন। দাদা অসুস্থ, দাদীরও বয়স হয়েছে। আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। সবমিলিয়ে সাংসারিক দায়বদ্ধতায় নিরূপায় হয়ে বাবাকে যেতেই হলো।

সেই সময় বাবার একটা নিয়মিত অভ্যাস ছিলো। বাইরে থেকে বাড়ি এসে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মা'কে হাঁক ছেড়ে ডাকতেন, “মনিরের মা…”। আমি তখন অতশত বুঝতাম না, এখন বুঝি; এটা ছিলো মায়ের প্রতি বাবার সুপ্ত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। পুরুষরা যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে বাড়িতে এসে প্রথম তাকেই ডাকে। এসব পুরুষ হৃদয়ের অবচেতন মনের লুকোচুরি খেলা। এর কোনো কারণ নেই, ব্যাখ্যাও নেই। পুরুষরা যাকে ভালোবাসে তাকে কারণ ছাড়াই উজাড় করে ভালোবাসে।

আমি দাদা-দাদীর কাছে ঘুমাতাম। বাবা যাওয়ার আগের রাতে মা-বাবার ঘর থেকে ফোঁপানো কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিলো। আওয়াজটা নিঃসন্দেহে বাবার। মা নরম গলায় বাবাকে কি কি যেন বলছিলো। শুধু এতটুকু শুনেছিলাম, “পুরুষ মাইনষের মনডা শক্ত করন লাগে। পোলাডার দিকে চাইয়া শক্ত হও মনিরের বাপ…”।
সকালে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময়ও বাবা বারবার পিছন ফিরে তাকিয়ে মা আর আমাকে দেখেছে। বাবার সেই ছলছল চাহনির ভাষা বোঝার ক্ষমতা আমার ছিলো না। তবে একজন পুরুষ মানুষ তার স্ত্রীকে কতটা ভালোবাসতে পারে আমার বাবাকে না দেখলে বুঝতাম না। এসব ছেলেমানুষী দেখে চাচীরা মজা করে বাবাকে ‘বউ পাগলা’ বলতেন।

তখন চিঠির যুগ। বাবা ঘনঘন চিঠি পাঠাতেন। প্রত্যেকবার ছোট্ট করে হলেও মা'র জন্য একই খামে আলাদা চিঠি দিতে ভুলতেন না। মানি অর্ডারের সাথে আলাদা চিরকুট লিখে দাদাকে বাবা বলে দিতেন মাকে কত টাকা হাতখরচ দিতে হবে। নানামুখী কারণে বাবা মা'কে খুব বেশিকিছু দিতে না পারলেও হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সাধ্যের মধ্যে সবটুকু উজার করে দিয়ে মাকে ভালোবেসেছেন। 

সবকিছু ঠিকঠাকই ছিলো। কয়েকমাস পরপর বাবা বাড়ি আসতেন। নিয়মিত টাকা পাঠাতেন। কিন্তু দাদার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে সাংসারিক অভাব-অনটন আরও বেড়ে যায়। মা আর দাদীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। ঝগড়ার কারণ খুব একটা না বুঝলেও এতটুকু বুঝতাম দাদার অনিরাময়যোগ্য অসুস্থতার পিছনে টাকা ব্যয় করা মায়ের পছন্দ নয়। মাঝেমধ্যে মা রাগ করে বলতেন, “ এত কষ্ট কইরা থাকুম না এই সংসারে। দু-চোখ যেদিক যায় চইল্যা যামু….”।

হারুন চাচা বাবার বন্ধু। বাড়ি পাশের গ্রামেই। থাকে ঢাকায়। পেশায় রাজমিস্ত্রী। আয়-রোজগারও নাকি ভালো।  বাবার সাথে মাঝেমধ্যেই আমাদের বাড়ি আসতেন। হঠাৎ বাড়ির আশেপাশে তার আনাগোনা বেড়ে যায়। মাকেও দেখি মাঝেমধ্যে তার সাথে গল্প করতে। গল্পের ফাঁকে ফাঁকে মাকে হাসতেও দেখতাম। হারুন চাচার সাথে মায়ের এই কথোপকথন  আমার মোটেও ভালো লাগতো না। মনে মনে ভীষণ রাগ হতো।

দাদার মৃত্যুর মাসখানেক পর একদিন  মা একটা নতুন গোলাপী রঙের শাড়ি আর আমার জন্য একটা আকাশী রঙের শার্ট আনলো। নতুন কাপড় পেয়ে আমি ভীষণ খুশি। শার্টটা আমার গায়ে পরিয়ে দিতে দিতে মা বললো, “সুন্দর হইছে না? তোর হারুন চাচার পছন্দ ভালাই….”। 
বললাম, “শাড়িডা ক্যাডা দিছে মা, হারুন চাচা?”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে শুধু বললেন, ‘হুমম’।

বাবার চিঠি এসেছে। মাসের বেতন পেলে ১০ তারিখে বাড়ি আসবেন। আমার আনন্দের সীমা নেই। এদিকে হারুন চাচার সাথে মায়ের যোগাযোগ, কথাবার্তা আরও বেড়েছে। দাদী ব্যাপারটা ভালোভাবে নেয়নি।  এ নিয়ে তার সাথে মায়ের ঝগড়াও হয়েছে।
মা কী যেন চিন্তা করে সারাদিন। চোখেমুখে সবসময় চিন্তার ছাপ। বাবা আসার আগের দিন কাপড়চোপড় সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে তুলে নিলো। আমি বললাম, “মা, আমিও নানাবাড়ি যামু। আমার কাপড়-চোপড়ও ব্যাগে তুইলা নাও”।
এ কথা শুনে মা ছলছল চোখে শুধু আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো, কিছুই বললো না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কি যেন বলতে চেয়েও চুপ করে রইলো।

পরদিন স্কুলে গেলাম। হেডস্যার বাংলা পড়াচ্ছিলেন। মা ক্লাস থেকে আমাকে ডেকে স্কুলের পিছনের গলিতে এনে বুকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদলো। কিছুই বললো না। ঘটনার আকস্মিকতায় আমিও কিছুই বলতে পারিনি। মায়ের কান্না দেখে অজানা কারণে আমার শিশুমনের উপচে পড়া আবেগ অশ্রু হয়ে গড়িয়ে পড়লো।
মা যাওয়ার সময় শুধু এতটুকু বলে গেলো, “থাক বাপ, গেলাম। ভালো কইরা পড়িস আর আমারে মাফ কইরা দিস” বলেই কাঁদতে কাঁদতে মা চলে গেলো। আমি হতবিহবল হয়ে মা'কে পিছন থেকে ডেকে বললাম, “মা, আমিও যামু। আমারে নিবা না?”। কথাটা শুনে একটু থেমে পিছনের দিকে তাকিয়ে আমাকে একটু দেখলেন। এরপর কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন। চোখের আড়াল হওয়ার আগ পর্যন্ত মায়ের দিকে চেয়ে রইলাম। গলির মাথায় ব্যাগ হাতে দাড়িয়ে থাকা হারুন চাচার সাথে মা দ্রুত পায়ে চলে গেলো। মায়ের পিছনে ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে থাকার চাহনিটা বহু চেষ্টা করেছি, ভুলতে পারিনি। 

কী ঘটতে যাচ্ছে দাদী হয়তো আগেই বুঝতে পেরেছিলেন ব্যাপারটা। তার কিইবা করার ছিলো! বাবাকেও বলেছিলন। বাবা  মায়ের সাথে হারুন চাচার  ব্যাপারে এসব মোটেও বিশ্বাস করেননি। অতি ভালোবাসা, অতি বিশ্বাস কখন অন্ধত্বে পরিণত হয়েছে তা বাবা না বুঝলেও দাদী ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন। এজন্যই মাঝেমধ্যে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাবা আর আমার জন্য ভীষণ আফসোস করতেন। 

পরেরদিন রাত্রিবেলা বাবা বাড়ি এলেন। বাড়িতে ঢুকেই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাঁক ছেড়ে বললেন, “কইগো মনিরের মা…”! উঠোনে হাতের জিনিসপত্র রেখে আরেকবার ডেকে বললেন, “মনিরের মা, ঘুমাইছো নি। জিনিসগুলো লইয়া যাও। বাবা মনির, কই বাবা….”।

আগে বাবা বাড়ি আসলে প্রথমে ব্যাগ খুঁজে দেখতাম আমার জন্য কী এনেছেন। কিন্তু এবার দাদীর ঘর থেকে দৌড়ে এসে সোজা বাবাকে জড়িয়ে থাকলাম। কেন জড়িয়ে ধরলাম জানি না, শুধু জানি বাবাকে জড়িয়ে ধরে বুকে জমানো বিশাল হাহাকার নিমিষেই কমতে শুরু করলো।

নিস্তব্ধ বাড়ি। বাবা কী বুঝলেন জানি না, শুধু তার প্রশস্ত বুকে নীরবে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে থাকলেন।
নীরবতা ভেঙে দাদী বললো,“ বাপ, ম্যালা দূর থেকে আইছোস। হাত-পা ধুইয়া খাইতে আয়”।

বাবা আমাকে বুকে জড়িয়ে রেখেই বললেন, “বাবা, তোর মা কই?”
— মা হারুন চাচার লগে চইল্যা গেছে, আমারে সাথে নেয় নাই…!

কথাটা শুনেই বাবা যেন কেঁপে উঠলেন। তাঁর বুকের পাঁজরের ভিতর থেকে যেন কম্পন আর গোঙানির মৃদু আওয়াজ ভেসে আসছে। আমাকে বুকে নিয়েই বাবা মাটিতে বসে পড়লেন। বাপ-ছেলে এভাবে কতক্ষণ ছিলাম জানি না।
দাদী চোখ মুছতে মুছতে এসে বললেন,“ কার লাইগ্যা কানতাছোস… ডাইনির লাইগ্যা? পোলাডা (আমি) কাইল থেইক্যা না খাইয়্যা আছে! অবুঝ পোলাডার মুখে চাইরডা ভাত দিয়া অর জানডা বাঁচা… আর পারি না বাপ, পরাণডা জ্বইল্যা যাইতাছে।  ওঠ বাপ ওঠ….।”

বাবাকে এরপর আর কোনদিন কাঁদতে দেখিনি, হাসতেও দেখিনি। তবে তার পাথরের মতো দূর্ভেদ্য গম্ভীরতা দেখেছি। রাতে ঘুমানোর সময় বাবার গম্ভীরতা আর দীর্ঘশ্বাস বহুগুণে বেড়ে যেত। বাবা হয়তো মায়ের সেই কথাটা মনে রেখেছে, “পুরুষ মাইনষের মনডা শক্ত করন লাগে। পোলাডার দিকে চাইয়া শক্ত হও মনিরের বাপ…”।

মা চলে যাওয়ার পর আমাকে আর বাবাকে ইঙ্গিত করে মানুষ নানান কথা বলতো। পাড়ার মহিলারা, স্কুলে, খেলার মাঠে ছোট-বড় অনেকেই সামান্য কারণেই আমাকে তাচ্ছিল্য করতো। মায়ের চরিত্র নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করতো। প্রথম প্রথম বাবার কাছে বিচার দিতাম। বাবা নিশ্চুপ থাকতেন, কষ্ট পেতেন, এজন্য বাবাকেও বলতাম না। এভাবে অপমানিত হতে হতে কখন যে আমার হৃদয়ে মা নামক মানুষটার প্রতি ভালোবাসা ঘৃণায় পরিণত হয়েছে টেরই পাইনি।
যে পুরুষের স্ত্রী অন্যের হাত ধরে চলে যায় সমাজের মানুষ তার পুরুষত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠায়, সম্মুখ- পশ্চাদে ইনিয়েবিনিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলে। বাবাকেও এসব সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু  কখনো তাকে প্রতিবাদ করতে দেখিনি। বাবার অসহায় মুখটা যতবার দেখতাম মায়ের প্রতি ঘৃণা আমার ততটাই প্রকট হতো।

হারুন চাচার কাছে মা সুখী হয়নি। শুনলাম নেশা করে এসে মা'কে পেটাতো। সাংসারিক দায়িত্ব পালন করতো না। মা বাধ্য হয়ে বাসাবাড়িতে কাজ করে অতিকষ্টে  সংসার চালাতো। ঐ ঘরে একটা মেয়ের জন্ম হলেও তার প্রতি হারুন চাচার নূন্যতম দায়িত্ববোধ ছিলো না। এদিকে আমার নানা মা'কে মেনে না নেয়ায় সেই বাড়িতেও তার ঠাঁই হয়নি।
দাদীর কাছে শুনেছিলাম চলে যাওয়ার কয়েক মাস পর ভুল স্বীকার করে মা নাকি আমার বড় চাচার মাধ্যমে বাবার কাছে ফিরে আসতে কাকুতি মিনতি করেছিলো। বাবা সরাসরি ‘না’ করেছে।
অবাক হই ১০ বছরেও মা আমার বাবার ভালোবাসা বুঝলো না কিন্তু কয়েক মাসেই হারুন চাচার আসল চেহারা ঠিকই চিনলো! কোথায় যেন পড়েছিলাম নারীর মন আসলে কী চায় আল্লাহ ছাড়া তা বোঝার সাধ্য কারো নেই! সুখের মরীচিকা আর মোহ এভাবেই মানুষকে জীবনের গহীন খাঁদে ফেলে সুখের সব রাস্তা বন্ধ করে দেয়।

মেজ খালার স্বামী মারা যাওয়ার পর নানা দাদীর কাছে বাবার সাথে খালার বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন। বাবা এটাও নাকচ করলেন। দাদী একদিন রাতে ঘরে এসে বাবাকে বললেন, “বাপ, মুই আর কয়দিন বাঁচুম। মইরা গেলে তোর মা হারা পোলাডারে ক্যাডায় দেখবো বাপ? তোর বউ দরকার না হলেও পোলাডার তো মায়ের দরকার। তুই আর না করিস না বাপ। খালা মায়ের লাহান। অর খালাও বিধবা হইয়া বুইড়া বাপের ঘাড়ে পইড়া আছে। খাদিজার (খালা)  হাতে পোলাডারে দিয়া মরবার চাই…”

বাবা শুধু বললেন, “কয়ডা দিন সময় দেও মা, ভাইবা দেখি…”।

খাদিজা খালাকে যেদিন  ‘নতুন মা’ করে আনতে বাবা নানাবাড়ি গেলেন  আমার আনন্দের সীমা নাই। বিদায়ের সময় নানা আর বাবা একে অপরকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদলেন। কেন কাঁদলেন জানি না, তবে উপস্থিত সবাইকে তারা কাঁদিয়ে ছেড়েছেন। এখন বুঝি (মায়ের কারণে) একজন ব্যর্থ স্বামী আরেকজন ব্যর্থ বাবা একে অপরের জমিয়ে রাখা কষ্টকে হয়তো দমিয়ে রাখতে পারেননি।
নানা আর বাবা দু'জনেই আমার হাত ধরে নতুন মায়ের হাতে তুলে দিয়ে কিছু একটা বলতে চাইলেন, কিন্তু দু'জনই বাঁধভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়লেন, কিছুই বলতে পারলেন না। নারী সামান্য আবেগেই কাঁদতে পারে, পুরুষ তা পারে না। বাবা এবং নানার কান্না দেখে এবার খালা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ভেজা গলায় বললেন, “ চিন্তা কইরেন না, আজ থেকে ও আমার সন্তান”।

খালা তার কথা রেখেছেন। আমাকে মায়ের শূন্যতা বুঝতে দেননি। খালা থেকে কখন যে তিনি আমার ‘মা’ হয়ে গেছেন বুঝতেই পারিনি। যে কারও সামনে তিনি আমাকে ‘ছেলে’ বলেই পরিচয় দিতেন।

দাদী মারা গিয়েছে বাবার বিয়ের বছর দুয়েক পরেই। আমাদের ঘরে আরও দুইটা বোন হয়েছে। খালার সাথে বিয়ের পর সংসারের আয়-উন্নতিও বেড়েছে। তাদের দুজনের সম্পর্ক এবং খুঁনসুটিও চোখে পড়ার মতো। মাঝেমধ্যে খালাকে দেখে মা’র কথা মনে পড়ে। সুখের আশায় বাবার হাত ছেড়ে সে অন্যের হাত ধরেছিলো অথচ একবারও বোঝেনি সুখের খনি পিছনে ফেলে সে মরীচিকার পিছনে ছুটেছে…!

হারুন চাচার ঘরে মায়ের যে মেয়ে হয়েছিলো, শুনলাম মায়ের মৃত্যুর আগে সে অন্যের হাত ধরে ঘরছাড়া হয়েছে। হারুন চাচাও নেশার কারণে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত। এত ধকল মা নিতে পারেনি। শয্যাশায়ী হয়ে আমাকে দেখতে চেয়েছিলো। যাইনি, যেতে পারিনি। ২৫টা বছর যে আমার হৃদয়ে মাতৃহীনতার আগুন জ্বালিয়েছে, আমার বাবার মতো মানুষকে যে কষ্ট দিয়েছে তাকে ক্ষমা করতে পারিনি।

শুনলাম সন্ধ্যার আগে মায়ের দাফন হয়ে গেছে। মাগরিব নামাজ পর মসজিদের কোণায় বসে বাবাকেও দেখলাম হাত তুলে কাঁদতে। কান্নার কারণ কী বুঝতে বাকি রইলো না। পুরুষ মানুষের ভালোবাসা নাকি ভয়ানক সুন্দর হয়, বাবাকে না দেখলে বিশ্বাস তা করতাম না। এত কিছুর পরেও বাবা তার সেই ভালোবাসার মানুষটাকে ভুলতে পারেননি…!

ছোটবেলায় মায়ের কথা মনে পড়লে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কাঁদতাম। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আজও আকাশ দেখছি। আফসোস হচ্ছে, অভিমান ভুলে যদি যেতাম… না জানি মা কী বলতো! আমার মুখে কি হাত বুলিয়ে আদর করতো! বহুদিন যে তার ছোঁয়া পাইনি….।
আল্লাহ  তোমাকে ক্ষমা করুন মা। পরকীয়ার যে বিষাক্ত নীল ছায়া তোমার আর আমার মাঝে দেয়াল তুলে দিয়েছিলো এমন ছায়া যেন আর কারও জীবনে না আসে। আমরা সন্তানরা চাই মা-বাবার রৌদ্রোজ্জ্বল আলোতে বাঁচতে….। 

(গল্প ও চরিত্র কাল্পনিক)
#Abdullah_Arman
13/05/2024

Post a Comment

0 Comments