Recent Tube

শাইখ আহমাদুল্লাহর ফতোয়া এবং আমাদের পর্যালোচনা:

কথা পরিষ্কার ✅

শাইখ আহমাদুল্লাহর ফতোয়া এবং আমাদের পর্যালোচনা:
------------------------------------------------------
গত জুমু'আর বক্তব্যে শাইখ আহমাদুল্লাহ বলেছেন, যদি কেউ শরীয়াহর (তথা ইসলামী আইনের) স্বপ্ন না দেখে বা শরীয়াহ দ্বারা শাসিত হতে না চায়, তাহলে তাকে মুসলিম বলার সুযোগ নেই, সে কাফির।

পবিত্র কুরআন নাযিলের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী মানুষের মাঝে শাসনকার্য পরিচালনা করা। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
إِنَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَا أَرَاكَ اللَّهُ ۚ وَلَا تَكُنْ لِلْخَائِنِينَ خَصِيمًا.
(হে নবী) নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি যথাযথভাবে কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানব জাতির মধ্যে শাসনকার্য ও বিচার-ফয়সালা কর সে অনুযায়ী যা আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছেন। আর তুমি খিয়ানতকারীদের পক্ষে বিতর্ককারী হয়ো না। (সূরা নিসা ৪/১০৫)

আল্লাহ তা'য়ালা আরো বলেন, 
وَأَنِ احْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ أَنْ يَفْتِنُوكَ عَنْ بَعْضِ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلَيْكَ ۖ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمْ أَنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ أَنْ يُصِيبَهُمْ بِبَعْضِ ذُنُوبِهِمْ ۗ وَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ لَفَاسِقُونَ. أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ ۚ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ.
আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সেই বিধান অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করো এবং তাদের প্রবৃত্তির (অর্থাৎ মানব রচিত মতবাদের) অনুসরণ করো না। আর তাদের থেকে সতর্ক থাক যাতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার কিছু থেকে তারা তোমাকে বিচ্যুত করতে না পারে। অতঃপর যদি তারা (আল্লাহর বিধান থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে জেনে রাখ যে, আল্লাহ তো কেবল তাদেরকে তাদের কতিপয় পাপের কারণেই (জাহান্নামের) আযাব দিতে চান। আর মানুষের অনেকেই ফাসিক। তবে কি তারা জাহিলিয়্যাতের বিধান কামনা করে, আর নিশ্চিত বিশ্বাসী (মুমিন) জাতির জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম? (সূরা মায়িদা ৫/৪৯-৫০)

অত্র আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর (রাহঃ) বলেন, 
ينكر تعالى على من خرج عن حكم الله المحكم المشتمل على كل خير الناهي عن كل شر وعدل إلى ما سواه من الآراء والأهواء والإصطلاحات التي وضعها الرجال بلا مستند من شريعة الله كما كان أهل الجاهلية يحكمون به من الضلالاتوالجهالات بما يضعونها بآرائهم وأهوائهم وكما يحكم به التتار من السياسات الملكية المأخوذة عن ملكهم جنكر خان الذي وضع لهم الياسق وهو عبارة عن كتاب مجموع من أحكام قد اقتبسها عن شرائع شتى من اليهودية والنصرانية والملة الإسلامية وغيرها وفيها كثير من الأحكام أخذها من مجرد نظرة وهواه فصارت في بنيه شرعا متبعا يقدمونها على الحكم بكتاب الله وسنة رسول الله صلى الله عليه وسلم فمن فعل ذلك فهو كافر يجب قتاله حتى يرجع إلى حكم الله ورسوله فلا يحكم سواه في قليل ولا كثير.
আল্লাহ তা'য়ালা উক্ত আয়াতে সেই ব্যক্তিকে দোষারোপ করেছেন, যে ব্যক্তি সার্বিক কল্যাণময় আল্লাহ তা'য়ালার বিধান ছেড়ে মানব রচিত বিধিবিধানের পিছনে পড়েছে। যেভাবে জাহেলী যুগের লোকেরা ভ্রষ্টতা ও মূর্খতার মাধ্যমে এবং তাতাররা চেঙ্গিস খান রচিত 'ইয়াসিক' নামক সংবিধানের মাধ্যমে বিচারকার্য ও রাষ্ট্র পরিচালনা করত; যা ছিল ইয়াহুদী, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের সংবিধান সমূহ থেকে বিশেষ ভাবে চয়িত। তাতে চেঙ্গিস খানের ব্যক্তিগত মতামতও ছিল। ধীরে ধীরে তার সন্তানেরা এ সংবিধানকে জীবন বিধান হিসাবে মেনে নিয়েছে। যার গুরুত্ব তাদের নিকট কুরআন সুন্নাহর চাইতেও বেশি। যে এমন করল (অর্থাৎ আল্লাহর বিধানের উপর অন্য কোনো বিধানকে প্রাধান্য দিলো) সে কাফির হয়ে গেল। তার বিরুদ্ধে জিহাদ করা সবার উপর ওয়াজিব যতক্ষণ না সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (ﷺ) এর বিধানের দিকে ফিরে আসে অতঃপর কোন অবস্থাতেই আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য কোন বিধান দ্বারা কম বা বেশী, গুরুত্বপূর্ণ বা সাধারণ ব্যাপারেও ফায়সালা গ্রহণ না করে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা মায়িদা আয়াত ৪৯-৫০ তাফসীর)

যারা নিজেদের ঈমানদার বলে দাবী করে কিন্তু শরীয়াহ ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা ত্যাগ করে তাগুতী শাসনব্যবস্থা কামনা করে ঈমানের সমালোচনা করে আল্লাহ তা'য়ালা তাদের মুনাফিক বলেছেন,
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا. وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَىٰ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنْكَ صُدُودًا.
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা দাবী করে যে, নিশ্চয় তারা ঈমান এনেছে তার উপর, যা (বিধানস্বরূপ) নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে তোমার পূর্বে। তারা তাগূতের (কুফুরী) শাসনব্যবস্থা ও বিচার-ফয়সালা কামনা করে অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা অস্বীকার করতে। আর শয়তান চায় তাদেরকে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত করতে। আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা আসো যা (বিধান স্বরূপ) আল্লাহ নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের (আদর্শের) দিকে’, তখন মুনাফিকদেরকে দেখবে তোমার কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে ফিরে যাচ্ছে। (সূরা নিসা ৪/৬০-৬১)

সুতরাং যারা ঈমানের দাবী করে কিন্তু শরীয়াহর শাসনব্যবস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদের ঈমানের কোনো মূল্য নেই, তারা কাফির। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহঃ) বলেন, 
لا ريب أن من لم يعتقد وجوب الحكم بما أنزل الله على رسوله فهو كافر. 
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ্‌ তাঁর রাসুল (ﷺ) এর উপর (বিধান স্বরূপ) যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করাকে যে ব্যক্তি আবশ্যক মনে করে না, সে কাফির। (মিনহাজুস সুন্নাহ, পৃঃ ৪৯)

ইমাম ইবনে আব্দিল বার (রহ.) বলেন,
فإن من ردّ ، وامتنع عن قبول حكم الله – تعالى – فهر كافر بالإجماع، وإن كان مقرأ بهذا الحكم ، يقول إسحاق بن راهويه : وقد أجمع العلماء أن على من دفع شيئا انزله الله  وهو مع ذلك مقر بما أنزل الله أنه كافر
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান মেনে নেয়া থেকে বিরত থাকে ও তা প্রত্যাখ্যান করে সে সর্বসম্মতিক্রমে কাফের হয়ে যায়। যদিও সে এ বিধানকে (আল্লাহর আইন বলে) স্বীকার করে। ইসহাক বিন রাহবিয়া বলেন: সকল আলেম এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর অবর্তীর্ণ কোন একটি বিধানকেও প্রত্যাখ্যান করে সে নিশ্চিত ভাবে কাফের হয়ে যায়। যদিও সে সেটাকে আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান বলে স্বীকার করে।‘ (তামহীদ ৪/২২৬)

Post a Comment

0 Comments