Recent Tube

আহলে হাদীসের সহীহ-ভ্রান্ত ফতুয়া ও পর্যালোচনাঃ -২, মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

----------------------------------
আহলে হাদীসের শীর্ষস্থানীয় শায়খ ড. আসাদুল্লাহ আল গালীব বলেন,
"মুসলিম হৌক বা অমুসলিম হৌক প্রতিষ্ঠিত কোন সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ইসলামের নীতি নয়।" (জিহাদ ও ক্বিতাল পৃঃ ৪২ এবং পৃঃ ৯২)
অর্থাৎ আহলে হাদীসের আকিদা হলো মুসলিম হোক বা অমুসলিম হোক প্রতিষ্ঠিত কোন সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ইসলামী নীতি নয়, বরং কুফুরী নীতি। (নাউযুবিল্লাহ)
.
পর্যালোচনাঃ -২
কাফির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ইসলামের নীতি তথা বৈধ। প্রয়োজনে তা ফরজও হয়। সুতরাং এটাকে ইসলামের নীতি বহির্ভূত মনে করা কুফুরী। পক্ষান্তরে মুসলিম শাসক নির্ধারণ করা হয় আল্লাহর আইন ও রাসূলুল্লাহ (সা) এর আদর্শ বাস্তবায়ন করার জন্য এবং সকল মানুষের কল্যাণ সাধনের ব্যবস্থাপনা ও তার রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য। তাই মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সাধারাণ অবস্থায় বৈধ নয়। তবে কুরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থীতা স্পষ্ট হলে বিশেষ অবস্থায় তা বৈধ। যেমন- 
১. রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ "তোমাদের ওপর এমন সব লোকও শাসন কর্তৃত্ব চালাবেন যাদের অনেক কথাকে তোমরা মারুফ (বৈধ) ও অনেক কথাকে মুনকার (অবৈধ) পাবে। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি তাদের মুনকারের বিরুদ্ধে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে, সে দায়মুক্ত হয়ে গেছে। আর যে ব্যক্তি তা অপছন্দ করেছে, সেও বেঁচে গেছে। কিন্তু যে ব্যক্তি তাতে সন্তুষ্টি হয়েছে এবং তার অনুসরণ করেছে সে পাকড়াও হবে।" সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, 
ﺍَﻓَﻠَﺎ ﻧُﻘَﺎﺗِﻠُﻬُﻢْ ﻗَﺎﻝَ ” ﻟَﺎ ﻣَﺎ ﺻَﻠُّﻮْﺍ “
তাহলে এ ধরনের শাসকদের বিরুদ্ধে কি আমরা যুদ্ধ করবো না? রাসূলুল্লাহ (সা) জবাব দেনঃ না, যতদিন তারা সালাত আদায় করতে থাকবে (ততদিন তাদের সাথে যুদ্ধ করতে পারবে না)। (সহীহ মুসলিম ৪৬৯৪, ইফাবা হাঃ ৪৬৪৭, ইসে হাঃ ৪৬৪৯)
অর্থাৎ সালাত পরিত্যাগ করা এমন একটি আলামত হিসেবে বিবেচিত হবে, যা থেকে সুস্পষ্টভাবে জানা যাবে যে, তারা আল্লাহ‌ ও রাসূল (সা) এর আনুগত্য থেকে বের হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বৈধ হবে। 
.
২. রাসূলুল্লাহ বলেনঃ
ﺧِﻴَﺎﺭُ ﺃَﺋِﻤَّﺘِﻜُﻢُ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﺗُﺤِﺒُّﻮْﻧَﻬُﻢْ ﻭَﻳُﺤِﺒُّﻮْﻧَﻜُﻢْ ﻭَﻳُﺼَﻠُّﻮْﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻭَﺗُﺼَﻠُّﻮْﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﺷِﺮَﺍﺭُ ﺃَﺋِﻤَّﺘِﻜُﻢُ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﺗُﺒْﻐِﻀُﻮْﻧَﻬُﻢْ ﻭَﻳُﺒْﻐِﻀُﻮْﻧَﻜْﻢُ ﻭَﺗَﻠْﻌَﻨُﻮْﻧَﻬْﻢُ ﻭَﻳَﻠْﻌَﻨُﻮْﻧَﻜْﻢُ ﻗِﻴْﻞَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠّٰﻪِ
ﺃَﻓَﻠَﺎ ﻧُﻨَﺎﺑِﺬُﻫُﻢْ ﺑِﺎﻟﺴَّﻴْﻒِ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﺎ ﻣَﺎ ﺃَﻗَﺎﻣُﻮْﺍ ﻓِﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓ.
‌‌‌‍‍‍‍‍“তোমাদের নিকৃষ্টতম শাসক হচ্ছে তারা যারা তোমাদেরকে ঘৃণা করে এবং তোমরা তাদেরকে ঘৃণা করো, তোমরা তাদের প্রতি লানত বর্ষণ করতে থাকো এবং তারা তোমাদের প্রতি লানত বর্ষণ করতে থাকে। সাহাবীগণ আরজ করেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা)! এমনতাবস্তায় আমরা কি তাদের মোকাবিলা করার জন্য তরবারি নিয়ে দাঁড়াবো না? জবাব দেনঃ না, যতদিন তারা তোমাদের মধ্যে সালাত কায়েম রাখবে। না, যতদিন তারা তোমাদের মধ্যে সালাত কায়েম রাখবে।” (সহীহ মুসলিম ৪৬৯৮, ইফাবা হাঃ ৪৬৫১, ইসে হাঃ ৪৬৫৩)
.
এই হাদীসটি ওপরে বর্ণিত শর্তটিকে আরও সুস্পষ্ট করে তুলে ধরেছে। ওপরের হাদীসটি থেকে ধারণা হওয়া স্বাভাবিক ছিল যে, যতদিন তারা ব্যক্তিগত জীবনে সালাত আদায় করতে থাকবে ততদিন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-বিদ্রোহ করা যাবে না। কিন্তু এই হাদীসটি থেকে একথা জানা যায় যে, কেবলমাত্র তাদের নিজেদের নিয়মিতভাবে সালাত আদায় করাটাই যথেষ্ট হবে না বরং এই সঙ্গে তাদের আওতাধীনে যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে সেখানেও কমপক্ষে ‌‌‌‌‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍“ইকামাতে সালাত’ তথা নামায প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থাপনা থাকা জরুরী বিবেচিত হবে। তাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা তার আসল প্রকৃতির দিক দিয়ে যে একটি ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা এটি হবে তারই একটি আলামত। অন্যথায় যদি একটুকুও না হয়, তাহলে এর অর্থ হবে যে, তারা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কুফুরী করছে। এক্ষেত্রে তাদের শাসন ব্যবস্থাকে উলটে ফেলার জন্য প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালানো মুসলমানদের জন্য বৈধ হয়ে যাবে। 
.
৩. উবাদা বিন সামেত (রাঃ) বলেন, মহানবী (সা) আমাদের থেকে অন্যান্য আরো বিভিন্ন বিষয়ের সাথে এ ব্যাপারেও অঙ্গীকার নিয়েছেনঃ
ﻭَﺃَﻥْ ﻟَﺎ ﻧُﻨَﺎﺯِﻉَ ﺍﻟْﺄَﻣْﺮَ ﺃَﻫْﻠَﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﺗَﺮَﻭْﺍ ﻛُﻔْﺮًﺍ ﺑَﻮَﺍﺣًﺎ ﻋِﻨْﺪَﻛُﻢْ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻠّٰﻪِ ﻓِﻴْﻪِ ﺑُﺮْﻫَﺎﻥ.
‍‍‍‍‍‍‍‍‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‍‍‍‍‍‍‍‍‌‍‍‍‍‍‌‌‌‌‌‌“আমরা আমাদের শাসকদের সাথে (যুদ্ধ) বিদ্রোহ করবো না, তবে যখন আমরা তাদের কাজে প্রকাশ্য কুফরী দেখতে পাবো যার উপস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে পেশ করার জন্য আমাদের কাছে প্রমাণ থাকবে।‌‌‌‍‍‍” (সহীহ বুখারী হাঃ ৭০৫৬, ইফাবা হাঃ ৬৫৭৮, সহীহ মুসলিম ৪৬৬৫, ইফাবা হাঃ ৪৬১৯, ইসে হাঃ ৪৬২০)
.
অর্থাৎ কোন মুসলিম শাসক যদি সুস্পষ্ট ভাবে কুফুরী করে, (যেমন- হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল হিসাবে রাষ্ট্রে বাস্তবায়ন করে) তাহলে সে শাসক ক্ষমতায় থাকার অধিকার হারায়। 
সুতরাং আহলে হাদীসের ফতুয়া ইসলাম বিরোধী এবং কুফুরী। যার পরিণতি বড়ই ভয়ঙ্কর।
.
হযরত কা’ব বিন উজরা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এলেন। তিনি আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, 
‏«ﺍﺳْﻤَﻌُﻮﺍ، ﻫَﻞْ ﺳَﻤِﻌْﺘُﻢْ ﺃَﻧَّﻪُ ﺳَﻴَﻜُﻮﻥُ ﺑَﻌْﺪِﻱ ﺃُﻣَﺮَﺍﺀُ، ﻓَﻤَﻦْ ﺩَﺧَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻓَﺼَﺪَّﻗَﻬُﻢْ ﺑِﻜَﺬِﺑِﻬِﻢْ، ﻭَﺃَﻋَﺎﻧَﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﻇُﻠْﻤِﻬِﻢْ، ﻓَﻠَﻴْﺲَ ﻣِﻨِّﻲ، ﻭَﻟَﺴْﺖُ ﻣِﻨْﻪُ، ﻭَﻟَﻴْﺲَ ﺑِﻮَﺍﺭِﺩٍ ﻋَﻠَﻲَّ ﺍﻟْﺤَﻮْﺽَ، ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺪْﺧُﻞْ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ، ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﻌِﻨْﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﻇُﻠْﻤِﻬِﻢْ، ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﺼَﺪِّﻗْﻬُﻢْ ﺑِﻜَﺬِﺑِﻬِﻢْ، ﻓَﻬُﻮَ ﻣِﻨِّﻲ، ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻣِﻨْﻪُ، ﻭَﻫُﻮَ ﻭَﺍﺭِﺩٌ ﻋَﻠَﻲَّ ﺍﻟْﺤَﻮْﺽَ‏». 
“শোন! তোমরা কি শোনছ? নিশ্চয় আমার পরে তোমাদের উপর কিছু (অসৎ, জালিম) শাসক-প্রশাসক চেপে বসবে। যারা তাদের পক্ষ নিবে, তাদের মিথ্যাচারে সত্যের প্রলেপ দিবে এবং তাদের অন্যায়- অত্যাচারে সমর্থন যোগাবে, তারা আমার উম্মত নয় এবং আমার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। আর যারা তাদের পক্ষ নিবে না, তাদের অন্যায়-অত্যাচারে সমর্থন যোগাবে না এবং তাদের মিথ্যাচারে সত্যের প্রলেপ দিবে না, তারা আমার উম্মত, তাদের সাথে আমার সম্পর্ক রয়েছে এবং (আখিরাতে) হাউজে কাউছারে তাদের সাথে আমার দেখা হবে।” 
(সুনানে নাসায়ী হাদীস নং ৪২০, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ২২৫৯ ও সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ২৭৯)
-------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলান।        

Post a Comment

0 Comments