Recent Tube

মুসলিম ঐক্যের ভিত্তি: হেদায়াত প্রাপ্ত কারাঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

মুসলিম ঐক্যের ভিত্তি: হেদায়াত প্রাপ্ত কারাঃ
     বর্তমান সারা বিশ্বে মুসলিম জাতি অনৈক্যের ফিতনায় পড়ে গেছে। তারা দলে দলে বিভক্ত হয়েগেছে। আর প্রত্যেক দল নিজেদের হক্কপন্থী ও ফিরকায়ে নাজিয়ে বলে মনে করে। অন্যদের পথভ্রষ্ট বলে বিশ্বাস করে। এ বিষয়ে শুধু বক্তৃতা বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি তারা বরং বড় বড় কিতাবও রচনা করেছে। আহলে হাদীসের শায়খ মুযাফফর বিন মুহসীন 'ভ্রান্তির বেড়াজালে ইকামতে দ্বীন' নামক কিতাবে শুধু মাত্র আহলে হাদীস ব্যতীত সকল মুসলিম উম্মাহকে জাহান্নামী ফিরকা বলে উল্লেখ করেছেন। দেওবন্দী আলেম মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়াত উদ্দীন 'ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ' নামক কিতাবে শুধু মাত্র দেওবন্দী ছাড়া সকল মুসলিম উম্মাহকে পথভ্রষ্ট বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। আর ব্রেলভীরা তো নিজেদের ছাড়া অন্য কোন উম্মাতে মুহাম্মদীকে মুসলিম বলে গণ্যই করে না। এমনকি তারা নাম ধরে ধরে কাফের ফতোয়া দেয়।
.
    আর এ সকল দলাদলির কারণ হলো পরিপূর্ণ ভাবে দীন না মানা। নিজের ইচ্ছামত দীনের কিছু (সহজ) অংশ গ্রহণ করা আর কিছু (কঠিন) অংশ পরিত্যাগ করে যারা দীনকে বিভক্ত করেছে এবং এ খন্ডিত দীন নিয়েই যারা আনন্দিত, তাদের মুশরিক আখ্যা দিয়ে আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ 
.
وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا ۖ كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ
.
"তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। যারা নিজদের দীনকে বিভক্ত করেছে এবং যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে। প্রত্যেক দলই নিজদের যা আছে তা (অর্থাৎ দীনের খন্ডিত অংশ) নিয়ে আনন্দিত।"
[সূরা রূমঃ৩০/৩১-৩২]
.
এ সকল দলাদলি ও অনৈক্য পরিত্যাগ করে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য গড়ে তোলতে হলে কুরআনের পদ্ধতিই গ্রহণ করতে হবে। আর তাহলো, যখন ইহুদী ও খ্রিস্টান আলেমগণ রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলল
.
كُونُوا هُودًا أَوْ نَصَارَىٰ تَهْتَدُوا
.
"তোমরা ইহুদী অথবা খ্রিস্টান হও হেদায়াত (সঠিক পথ) পেয়ে যাবে।"
[সূরা বাকারাঃ২/১৩৫]
.
রাসূলুল্লাহ (সা) তাদের বলতে পারতেন, 'না তোমরা বরং আমার কথা শোন হেদায়াত পেয়ে যাবে।' কিন্তু এ ভাবে কথা বলতে আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর রাসূল (সা) কে শিক্ষা দেননি। ইহুদী ও খ্রিস্টানদের এ কথার জবাবে আল্লাহ তা'য়ালা রাসূলুল্লাহ (সা) কে যে পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন মুসলিম উম্মাহর পদ্ধতি হবে সেটাই। আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর রাসূল (সা) কে বলেনঃ 
.
ۗقُلْ بَلْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
.
"(হে নবী) বলুন, ‘বরং (এসো) আমরা একনিষ্ঠ ভাবে ইবরাহীমের পথ অনুসরণ করি, আর তিনি তো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না’।" 
[সূরা বাকারাঃ২/১৩৫]
.
এখানে আল্লাহ তা'য়ালা মতপার্থক্য দূর করার যে পদ্ধতি দিলেন তা গভীর ভাবে চিন্তা করা দরকার। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) কে নিজের প্রাধান্য বহাল রাখার শিক্ষা না দিয়ে এমন কথা শিক্ষা দিলেন যেটা সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য। রাসূলুল্লাহ (সা) যদি বলতেন, আমার কথা শোন তাহলে তারা দাবী করতো তাদেরটা মানার জন্য। এজন্য ইবরাহীম (আ) এর কথা বলা হলো, যাতে কারো আপত্তি না থাকে। কারণ হযরত ইবরাহীম (আ) শুধু মুসলিম উম্মাহর-ই নয় বরং ইহুদী, খ্রিষ্টান ও মক্কার কুরাইশ এ তিনটি সম্প্রদায়েরও আদর্শনীয় মহা পুরুষ। তারাও তাঁকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা এবং নবী বলে বিশ্বাস করে; তাঁকে নিজেদের একান্ত আপন বলে মনে করে ও মান্য করে।
.
এতে প্রমাণিত হয়, মতভেদ ও অনৈক্য দূর করার জন্য আল্লাহর দেওয়া পদ্ধতি হলো, সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি ও বস্তুকে ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করা। সুতরাং মুসলিম উম্মাহর মতভেদ ও অনৈক্য দূর করার মূল ভিত্তি হতে হবে রাসূলুল্লাহ (সা) এবং কুরআন ও হাদীস। 
.
এখন মুসলিম উম্মাহর ঐক্য গড়ে তুলতে হলে আমাদের রাসূলুল্লাহ (সা)কে পরিপূর্ণ ভাবে অনুসরণ করতে হবে। তিনি যদি আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ দীন মেনে চলেন, তাহলে আমাদেরকেও মানতে হবে। আমরা মানতে বাধ্য। রাসূলুল্লাহ (সা) যদি ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, ধর্মীয় জীবন, সামাজিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, আন্তর্জাতিক জীবন এক কথায় জীবনের সকল দিক ও বিভাগে আল্লাহর দীন, আল্লাহর আইন মেনে থাকেন এবং প্রতিষ্ঠা করে থাকেন তাহলে আমাদেরকেও তাই করতে হবে। দীন ইসলামের কোন অংশ ছেড়ে আর কোন অংশ গ্রহণ করে নাজাত পাওয়ার আশা করা বড়ই বোকামি। নাজাত তো দূরের কথা যারা এমনটা করে বা করবে তাদের পরিণতি কত ভয়ংকর, সে বিষয়ে  আল্লাহ তা'য়ালা নিজেই বলেনঃ 
.
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ ۚ فَمَا جَزَاءُ مَنْ يَفْعَلُ ذَٰلِكَ مِنْكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰ أَشَدِّ الْعَذَابِ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
.
তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে (জাহান্নামের) কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন।
(সূরা বাকারাঃ২:৮৫)
.
সুতরাং বক্তৃতা, বিবৃতি ও কিতাব রচনা করে
নিজের হক্কপন্থী ও নাজাতপ্রাপ্ত বলে ঘোষণা করা যায়। কিন্তু প্রকৃত হক্কপন্থী ও নাজাতপ্রাপ্ত হতে হলে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্তু আল্লাহর আইন মানতে হবে এবং প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তাই আসুন! রাসূলুল্লাহ (সা) কে ঐক্যের মডেল ও ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, ধর্মীয় জীবন, সামাজিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, আন্তর্জাতিক জীবন এক কথায় জীবনের সকল দিক ও বিভাগে আল্লাহর দীন, আল্লাহর আইন মানার ও প্রতিষ্ঠা করার প্রাণান্তকর ভাবে চেষ্টা করি। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা) জীবনের কোন দিক ও বিভাগে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করতে বাঁকি রাখেন নি।
আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا
.
অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।
(সূরা আহযাবঃ২১)
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলান।         

Post a Comment

0 Comments