Recent Tube

ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করাকে একশ্রেণির তাগুতপন্থিদের ক্ষমতা দখলের অপবাদ: মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করাকে তাগুতপন্থিদের ক্ষমতা দখলের অপবাদ:
আল্লাহ রব্বুল আ'লামীন তাঁর বিধানকে মানুষের মাঝে সার্বিকভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নির্দেশ দিয়ে বলেনঃ 
.
إِنَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَا أَرَاكَ اللَّهُ ۚ 
.
     নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি যথাযথভাবে কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের মধ্যে বিধান (আইন) প্রতিষ্ঠা কর সে অনুযায়ী যা আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছেন।
(সূরা নিসাঃ১০৫) 
.
'   জামায়াতে ইসলামী' আল্লাহ তা'য়ালার এ সকল নির্দেশ কে ফরজ মনে করে তাগুতের জাহেলী শাসন অপসরণ করে মানুষের মাঝে আল্লাহর বিধান পরিপূর্ণ ও সার্বিকভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রাণান্তকর ভাবে ইকামতে দীনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু এক শ্রেণীর তাগুতপন্থীরা যুগ যুগ ধরে ইকামতে দীনের বিরোধীতা করে যাচ্ছে। 
   বর্তমানে যে দলটি নিজেকে একমাত্র হকপন্থী বলে দাবী করে এবং সর্বশক্তি ব্যয় করে আল্লাহর বিধান রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে বাঁধা প্রদান করছে, ইকামতে দীনের তীব্র বিরোধীতা করে তাগুতের দালালী করছে সে দলের প্রধান আমীর  আসাদুল্লাহ আল-গালীব। এই গালীব সাহেব জামায়াতের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে বলেনঃ
.
   "বিংশ শতাব্দীতে এ দলের শীর্ষ স্থানীয় হলেন মওলানা মওদুদী। তাঁর পুরো লেখনীই পরিচালিত হয়েছে যে কোন উপায়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল কে কেন্দ্র করে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল 'জামায়াতে ইসলামী'ও একই উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে।"
(জিহাদ ও কিতাল, পৃঃ৫২)
.
     রাষ্ট্রীয়ভাবে আল্লাহর বিধান কার্যকর করাকে তিনি ক্ষমতা দখল বলে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করার কাজকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছেন। ক্ষমতা দখলই জামায়াতের উদ্দেশ্য বলে মিথ্যাচার করছেন। এ মিথ্যাচার তাগুতপন্থীরা শুরু থেকে করে আসছে। তাই এর জবাব আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ নিজেই দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ
"আমাদের দাওয়াত সম্পর্কে সাধারণত বলা হয় যে, আমরা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার দাওয়াত দিয়ে থাকি। হুকুমতে ইলাহিয়া শব্দে স্বতঃই এক প্রকার ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়- অনেকে আবার ইচ্ছা করেই একে কেন্দ্র করে ভুল ধারণা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করে। সাধারণ লোক মনে করে কিংবা তাদের বুঝাতে চেষ্টা করা হয় যে, ইসলামী রাষ্ট্র বলতে একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা মাত্র বুঝায়। আর বলা হয় যে, বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তে সেই বিশেষ রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। তারপর যারাই এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করবে, যেহেতু তারাই এর পরিচালনার ভার লাভ করবে, সেহেতু খুবই সহজে বুঝানো হয় যে, আমরা হুকমত (বা ক্ষমতা) দখল করতে চাই। অতঃপর দীনদারীর ওয়াজ শুরু হয়ে যায়। আমাদেরকে দুনিয়াদার বা পার্থিব স্বর্থবাদী আখ্যা দেওয়া হয়। অথচ মুসলমানদের তো দীন ইসলাম এবং পরকালের জন্যই কাজ করা দরকার, দুনিয়ার জন্য নয়।

     দ্বিতীয়ত: এইও বলা হয় যে, হুকমত তো দাবী করার বস্তু নয়, ইহা তো ধার্মীক জীবনযাপনের ফলে আল্লাহর তরফ থেকে উপহারসরূপ মানুষ লাভ করে থাকে। 
.
      বস্তুত আমাদের সম্পর্কে এসব কথা বার্তা অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত তত্ত্ব না বুঝেই বলা হয়। কোথাও বিশেষ চালাকীর সাথে ইহা প্রচার করা হয় শুধু এই উদ্দেশ্যে যে, আমাদের কে না হলেও আল্লাহর অনেক বান্দা হয়তো এই উপায়ে সত্যের এই মহান আন্দোলন থেকে বিরত রাখা সম্ভব হবে। অথচ আমাদের বই পুস্তক, কিতাবাদি উদার ও মুক্ত দৃষ্টিতে পাঠ করলে প্রত্যেকেই অতি সহজেই বুঝতে পারেন যে, নিছক একটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের উদ্দেশ্য নয়। প্রকৃত পক্ষে মানুষের সামগ্রিক জীবনে ইসলাম নির্ধারিত পরিপূর্ণ বিল্পব সৃষ্টি করাই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এই বিল্পবের জন্য আল্লাহ তা'য়ালা নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। আল্লাহর ভাষায়
.
كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللَّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنْذِرِينَ وَأَنْزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ ۚ 
.
      মানুষ ছিল এক উম্মত। অতঃপর আল্লাহ সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে নবীদেরকে প্রেরণ করলেন এবং সত্যসহ তাদের সাথে কিতাব নাযিল করলেন, যাতে মানুষের মধ্যে (সার্বিকভাবে) ফয়সালা করেন, বিধান (হুকমত) কায়েম করেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করত।
(সূরা বাকারাঃ২১৩)
       তাঁদের আহ্বান ও আন্দোলনের ফলে সব নবীরই নেতৃত্বে- এক মুসলিম (আল্লাহর নিকট আত্মসমার্পনকারী) জাতি গঠিত হয়েছে- যাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো নবীর এই উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করা।
. এরপর আল্লামা মওদুদী বলেনঃ 
আমাদের দাওয়াত কে সহজ ও সুস্পষ্ট ভাষায় পেশ করতে হলে তা নিম্নলিখিত তিন দফায় পেশ করা যায়:
.
(১) আমরা সাধারণত সকল মানুষকে বিশেষভাবে মুসলিমদেরকে (তাগুতের দাসত্ব বর্জন করে) আল্লাহর দাসত্ব গ্রহণ করার আহ্বান জানাই।
আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ.
.
    আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতিতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর এবং তাগূতকে বর্জন কর।
(সূরা নাহলঃ৩৬)
.
(২) ইসলাম গ্রহণ করার কিংবা তা মেনে নেওয়ার কথা যারাই দাবী অথবা প্রকাশ করেন, তাদের সকলের প্রতি আমাদের আহ্বান এই যে, আপনারা আপনাদের বাস্তব জীবন থেকে মুনাফিকী ও কর্ম-বৈষম্য দূর করুন এবং মুসলিম হওয়ার দাবী করলে খাঁটি মুসলিম হতে ও ইসলামের পূর্ণ আদর্শে আদর্শবান হতে প্রতুস্ত হন।
আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
أَلَمْ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ ءَامَنُوا بِمَآ أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوٓا إِلَى ٱلطَّٰغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوٓا أَن يَكْفُرُوا بِهِۧ وَيُرِيدُ ٱلشَّيْطَٰنُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلَٰلًۢا بَعِيدًا وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَىٰ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَإِلَى ٱلرَّسُولِ رَأَيْتَ ٱلْمُنَٰفِقِينَ يَصُدُّونَ عَنكَ صُدُودًا 
.
      তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা দাবী করে যে, নিশ্চয় তারা ঈমান এনেছে তার উপর, যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে তোমার পূর্বে। তারা তাগূতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে অস্বীকার করতে। আর শয়তান চায় তাদেরকে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত করতে। আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা আস যা আল্লাহ (বিধানসরূপ) নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে’, তখন মুনাফিকদেরকে দেখবে তোমার কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে ফিরে যাচ্ছে।
(সূরা নিসাঃ৪:৬১)
.

إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
.
      মুমিনদেরকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি এ মর্মে আহবান করা হয় যে, তিনি তাদের মধ্যে বিচার, হুকুম করবেন, তাদের কথা তো এই হয় যে, তখন তারা বলে: ‘আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম।’ আর তারাই সফলকাম।
(সূরা নূরঃ৫১)
.
(৩) মানব জীবনের যে ব্যবস্থা আজ বাতিলপন্থী ও ফাসিক কাফেরদের নেতৃত্বে এবং কর্তৃত্ব চলছে আর আল্লাহদ্রোহীদের হাতে বর্তমান পৃথিবীর যে নেতৃত্ব সন্নিহিত রয়েছে, আমাদের দাওয়াত এই যে, এই নেতৃত্বের আমুল পরিবর্তন করতে হবে এবং নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব আদর্শ ও বাস্তব উভয় ক্ষেত্রেই আল্লাহর নেক বান্দাদের হাতে সোপর্দ করতে হবে। যাতে করে তারা তাগুতী শাসন ব্যবস্থা অপসরণ করে পরিপূর্ণ ভাবে আল্লাহর আইন কার্যকর করতে পারে। তাই আল্লাহ তা'য়ালা সকল নবী রাসূলদের আল্লাহর বিধান অনুযায়ী নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাচন করেছেন। আল্লাহর ভাষায়- 
.
وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا.
.
      আর তাদেরকে আমি নেতা বানিয়েছিলাম, তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে সঠিক পথ দেখাত।
(সূরা আম্বিয়াঃ৭৩)
(আল্লামা মওদুদী, ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি, পৃঃ৫-৭ থেকে নিয়ে সম্পাদিত) 
.
        সুতরাং যারা মানুষের মাঝে সার্বিকভাবে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যায়সঙ্গত পন্থায় রাষ্ট্রীয় শক্তি অর্জন করতে চায় তারা প্রকৃত নবীদের ওয়ারিস। নবী রাসূলদের রেখে যাওয়া আন্দোলনেরই তারা নেতৃত্ব দেয়। যারা এ কাজের বিরোধীতা করে তারা নিঃসন্দেহে তাগুতপন্থী, নয় তো তাগুতের গোলাম।
-------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।           

Post a Comment

0 Comments