Recent Tube

ইকামাতে দ্বীনের ব্যাখ্যায় মতিউর রহমান মাদানীর বিভ্রান্তির জবাবে শায়খ ড. মুফতি বি এম মফিজুর রহমান: মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

ইকামাতে দ্বীনের ব্যাখ্যায় মতিউর রহমান মাদানীর বিভ্রান্তির জবাবে শায়খ ড. মুফতি বি এম মফিজুর রহমান:
------------------------------------------------     

দ্বীন হচ্ছে শুধু তাওহীদ, নামায, রোজা, যাকাত ইত্যাদি। এর সাথে রাজনীত তথা রাষ্ট্রব্যবস্থার কোন সম্পর্ক নেই। তাই রাজনীতি বা রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে ইকামাতে দ্বীনের কোন সম্পর্ক নেই। যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা ইকামাতে দ্বীনের অর্থ বুঝেনি। তারা গোমরাহ। ইকামতে দ্বীন মানে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা নয়, রাষ্ট্রীয়ভাবে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করা নয়। কোন নবী রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলো না। এমনি মুসা (আ.)ও না। লোহিত সাগরে ফেরাউন সলীল সমাধিস্থ হওয়ার পর তার পরিত্যক্ত শূন্য সিংহাসনের মুসা একদিনের জন্যও বসেন নি। এই হচ্ছে ইকামাতে দ্বীনের ব্যাপারে মতিউর রহমান সাহেবের বক্তব্যের মূলকথা। 
.
কুরআন-হাদীস ও বাস্তবতার আলোকে তাঁর এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামের পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে যার নুন্যতম জ্ঞান আছে, এমন কোন ব্যক্তি এ রকম কথা বলতে পারে না। এট স্পষ্টত ধৃষ্টতা, বিভ্রান্তি ও কুফুরী ছাড়া কিছুই নয়। কারণ: তার এ বক্তব্য কুরআন-সুন্নাহ ও বাস্তবতা পরিপন্থী। যেমন: 
.
১. আল্লাহর বাণী:
 ﻟَﻘَﺪْ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﺭُﺳُﻠَﻨَﺎ ﺑِﺎﻟْﺒَﻴِّﻨَﺎﺕِ ﻭَﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎ ﻣَﻌَﻬُﻢُ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﻭَﺍﻟْﻤِﻴﺰَﺍﻥَ ﻟِﻴَﻘُﻮﻡَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺑِﺎﻟْﻘِﺴْﻂِ ۖ ﻭَﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺪَ ﻓِﻴﻪِ ﺑَﺄْﺱٌ ﺷَﺪِﻳﺪٌ ﻭَﻣَﻨَﺎﻓِﻊُ ﻟِﻠﻨَّﺎﺱِ .... ‏
“আমরা আমাদের রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি সুস্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সাথে নাযিল করেছি কিতাব ও মিযান (দাড়িপাল্লা), যাতে লোকেরা ন্যায় বিচার করতে পারে। আমি লৌহ নাযিল করেছি, যাতে রয়েছে প্রচন্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ” 
(সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ২৫)। 
এ আয়াতে দাড়িপাল্লার মাধ্যমে যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে, তা কি রাষ্ট্রব্যবস্থা ব্যতীত সম্ভব? এই প্রসঙ্গের সাথে লৌহের কি সম্পর্ক? তাও বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। এখানে লৌহ মানে রাষ্ট্রক্ষমতা/লৌহদন্ড। যার সাথে ন্যায়বিচারের সম্পর্ক রয়েছে। 
.
২. আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা‘আলা সূরা আল-মায়িদার ৪৪, ৪৫, ৪৭ নং আয়াতে, যারা তাঁর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে হুকুম/শাসন করে না, তাদেরকে কাফির, যালিম, ফাসিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। ( ﻭَﻣَﻦ ﻟَّﻢْ ﻳَﺤْﻜُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓَﺄُﻭﻟَٰﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮُﻭﻥَ ‏) ‏( ﻭَﻣَﻦ ﻟَّﻢْ ﻳَﺤْﻜُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓَﺄُﻭﻟَٰﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤُﻮﻥَ ‏) ‏( ﻭَﻣَﻦ ﻟَّﻢْ ﻳَﺤْﻜُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓَﺄُﻭﻟَٰﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻔَﺎﺳِﻘُﻮﻥَ ) 
.
৩. সূরা আল-মায়িদার ৪৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন: ﻓَﺎﺣْﻜُﻢ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ۖ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺘَّﺒِﻊْ ﺃَﻫْﻮَﺍﺀَﻫُﻢْ ﻋَﻤَّﺎ ﺟَﺎﺀَﻙَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺤَﻖِّ হে রাসূল, অাপনি আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তা দিয়ে বিচার-ফয়সালা/ শাসন করুন। আপনার কাছে যে সত্য এসেছে সে ব্যাপারে ওদের মনগড়া কথাবার্তার অনুসরণ করবেন না”। 
 
৪. সূরা আল-মায়িদার ৪৯ নাং আয়াতেও বলা হয়েছে: ﻭَﺃَﻥِ ﺍﺣْﻜُﻢ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺘَّﺒِﻊْ ﺃَﻫْﻮَﺍﺀَﻫُﻢْ ﻭَﺍﺣْﺬَﺭْﻫُﻢْ ﺃَﻥ ﻳَﻔْﺘِﻨُﻮﻙَ ﻋَﻦ ﺑَﻌْﺾِ ﻣَﺎ ﺃَﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ۖ“ “হে রাসূল, অাপনি আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তা দিয়ে বিচার-ফয়সালা/ শাসন করুন। আপনার কাছে যে সত্য এসেছে সে ব্যাপারে ওদের মনগড়া কথাবার্তার অনুসরণ করবেন না। আল্লাহ আপনার উপর নাযিল করেছেন, তার কোন বিষয়ে যেন তারা আপনাকে ফিতনায় ফেলতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন”। 
.
৫. সূরা আননিসার ১০৫ নং আয়াতে আল্লাহ তাঁর নবীকে লক্ষ্য করে বলেন: ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﻟِﺘَﺤْﻜُﻢَ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﺭَﺍﻙَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ۚ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻜُﻦ ﻟِّﻠْﺨَﺎﺋِﻨِﻴﻦَ ﺧَﺼِﻴﻤًﺎ ‏( 105 ) “নিশ্চয়ই আমি তোমার উপর সত্যতার সাথে কিতাব নাযিল করেছি। যাতে করে তুমি আল্লাহ দেখিয়ে দেয়া বিধান দিয়ে লোকদের মধ্যে বিচার ফয়সালা করতে পার। আর তুমি বিশ্বাস ঘাতকদের পক্ষে ওকালতি করবে না”। 
.
এসব আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়ে যে, শাসনব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা বা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করা আল্লাহর নির্দেশ, একটি ফরয ইবাদাত। দ্বীনের অলঙ্ঘনীয় শিক্ষা। অতএব, তা বাদ দিয়ে ইকামাতে দ্বীন পরিপূর্ণ হতে পারে না। উল্লেখ্য যে, রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করাই একমাত্র ইকামাতে দ্বীন, বিষয়টি এ রকম নয়। এ রকম কথা আমার জানা মতে, কেউ বলে নি। বরং এটা ইকামাতে দ্বীনের একটি অংশ তথা ইকামাতে দ্বীনের চূড়ান্ত রূপ ও পরিপূর্ণ বিকাশ। 
.
৬. আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তাঁর খলীফা হিসেবে। যেমন আল্লাহ বলছেন: ﺇِﻧِّﻲ ﺟَﺎﻋِﻞٌ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺧَﻠِﻴﻔَﺔً “নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে খলীফা সৃষ্টি করছি।” (আল-বাকারাহ:৩০)। ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺟَﻌَﻠَﻜُﻢْ ﺧَﻠَﺎﺋِﻒَ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ـ ﺍﻷﻧﻌﺎﻡ : 165 “তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে খলীফা বানিয়েছেন”। (অাল-আন‘আম: ১৬৫)। আর এই খিলাফাতের দাবী হলো, ধর্মভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এজন্যই আল্লাহ দাউদ (আ.) কে বলেছিলেন: ﻳَﺎ ﺩَﺍﻭُﻭﺩُ ﺇِﻧَّﺎ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎﻙَ ﺧَﻠِﻴﻔَﺔً ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻓَﺎﺣْﻜُﻢ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺘَّﺒِﻊِ ﺍﻟْﻬَﻮَﻯٰ “হে দাউদ, আমি তোমাকে পৃথিবীতে খলীফা বানিয়েছি। অতএব, তুমি মানুষের মধ্যে সত্যতার সাথে বিচার-ফয়সালা কর। প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না।" (সূরা সদ: ২৬)। 
(উল্লেখ্য যে, সৌদি রাজতন্ত্রের কিছু উচ্ছিষ্টভোগী খলীফার আবার অন্য অর্থ করে থাকে। তারা বলে, এর অর্থ: পরে আসা। একে অপরের খলীফা। প্রজন্ম পরম্পরা। সূরা সদ এর আয়াত দ্বারা তাদের এই অদ্ভুত কথা খন্ডিত হয়।) 
.
৭. নবীগণ (স.) দ্বীন ভিত্তিক সমাজ-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ইকামাতে দ্বীন করেছেন। দাউদ (আ.) কথাতো একটু আগেই দেখলাম। 
সহীহ বুখারী ও মুসলিমের সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
ﺃَﺑَﺎ ﺣَﺎﺯِﻡٍ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻋَﺪْﺕُ ﺃَﺑَﺎ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺧَﻤْﺲَ ﺳِﻨِﻴْﻦَ ﻓَﺴَﻤِﻌْﺘُﻪُ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﻋَﻦْ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺑَﻨُﻮْ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴْﻞَ ﺗَﺴُﻮْﺳُﻬُﻢْ ﺍﻷَﻧْﺒِﻴَﺎﺀُ ﻛُﻠَّﻤَﺎ ﻫَﻠَﻚَ ﻧَﺒِﻲٌّ ﺧَﻠَﻔَﻪُ ﻧَﺒِﻲٌّ ﻭَﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﻧَﺒِﻲَّ ﺑَﻌْﺪِﻱْ ﻭَﺳَﻴَﻜُﻮْﻥُ ﺧُﻠَﻔَﺎﺀُ .
আবূ হাযিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি পাঁচ বছর যাবৎ আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সাহচর্যে ছিলাম। তখন আমি তাঁকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বানী ইসরাঈলের নাবীগণ তাঁদের উম্মাতকে (আল্লাহ প্রদত্ত বিধান দ্বারা) শাসন করতেন। যখন কোন একজন নাবী মারা যেতেন, তখন অন্য একজন নাবী তাঁর স্থলাভিসিক্ত খলীফাহ হতেন। আর আমার পরে কোন নাবী নেই। তবে অনেক খলীফাহ্ হবে।
[সহীহ বুখারী, হাঃ৩৪৫৫ (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩১৯৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩২০৬) সহীহ মুসলিম হাঃ১৮৪২]
এই হাদীসে উল্লিখিত ﺗﺴﻮﺱ শব্দটি ﺳﻴﺎﺳﺔ সিয়াসাহ থেকে উদ্গত। যার অর্থই হলো, রাজনীতি। মুসা (আ.) এর ব্যাপারে মতিউর সাহেব বলছেন, তিনি মিশরে যান নি; মিশরের রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করেন নি। এ কথাটাও সর্বজন স্বীকৃত নয়। বরং কুরআনের একাধিক আয়াত থেকে বুঝা যায়, মুসা আ. তাঁর কওম বনী ইসরাইলকে নিয়ে মিশর গিয়েছিলেন এবং মিশরের শাসনক্ষমতা পরিচালনা করেছিলেন। যেমন: সূরা আশ-শু‘আরাতে (আয়াত: ৫৭-৫৯) 
.
আল্লাহ বলছেন: ﻓَﺄَﺧْﺮَﺟْﻨَﺎﻫُﻢ ﻣِّﻦ ﺟَﻨَّﺎﺕٍ ﻭَﻋُﻴُﻮﻥٍ ‏( 57 ‏) ﻭَﻛُﻨُﻮﺯٍ ﻭَﻣَﻘَﺎﻡٍ ﻛَﺮِﻳﻢٍ ‏( 58 ‏) ﻛَﺬَٰﻟِﻚَ ﻭَﺃَﻭْﺭَﺛْﻨَﺎﻫَﺎ ﺑَﻨِﻲ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴﻞَ “তাদেরকে (ফেরাউন ও তার গোষ্ঠীকে) আমি বহিষ্কার করে দিলাম উদ্যানরাজি এবং প্রস্রবণ থেকে। তাদের ধনভান্ডার ও সুরম্য সৌধমালা থেকে। এ রকমই হয়েছিলো এবং বনী ইসরাইলকে এগুলোর উত্তরসূরী/অধিকারী বানিয়েছিলাম”। সূরা আদ-দুখানে বলা হয়েছে (আয়াত: ২৫-২৮): ﻛَﻢْ ﺗَﺮَﻛُﻮﺍ ﻣِﻦ ﺟَﻨَّﺎﺕٍ ﻭَﻋُﻴُﻮﻥٍ ‏( 25 ‏) ﻭَﺯُﺭُﻭﻉٍ ﻭَﻣَﻘَﺎﻡٍ ﻛَﺮِﻳﻢٍ ‏( 26 ‏) ﻭَﻧَﻌْﻤَﺔٍ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻓَﺎﻛِﻬِﻴﻦَ ‏( 27 ‏) ﻛَﺬَٰﻟِﻚَ ۖ ﻭَﺃَﻭْﺭَﺛْﻨَﺎﻫَﺎ ﻗَﻮْﻣًﺎ ﺁﺧَﺮِﻳﻦَ “তারা তাদের পশ্চাতে রেখে গেল কত উদ্যান ও প্রস্রবন! কত শষ্য খেত ও সুরম্য প্রাসাদসমূহ। কত বিলাস উপকরণ যা তাদেরকে আনন্দিত করত। এ রকমই হয়েছিল এবং আমি অন্য একটি জাতিকে এগুলোর অধিকারী বানিয়ে দিলাম”। যেহেতু, কুরআন কুরআনের ব্যাখ্যা। তাই এখানে অন্য একটি জাতি বলতে বনী ইসরাইলকে যে বোঝানো হয়েছে, তা সূরা শুআরা থেকেই প্রমাণিত। এ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, বনী ইসরাইল মুসা (আ. ) এর নেতৃত্বে অবার মিশরে গিয়েছিল । এটিই প্রখ্যাত মুফাসসির হাসানের অভিমত। যদিও কাতাদাহর মত হচ্ছে, বনী ইসরাইল নয়। এটি অন্য একটি জাতি। তবে প্রথম মতটিই যে আয়াতগুলোর কাছাকাছি, তা সহজে বুঝা যায়। 
.
আল্লামা আলুসী (র.) তার তাফসীরে এদুটো মতের সাথে আরো একটি মত উল্লেখ করেছেন। তাহলো: “আল্লাহ তাদেরকে ওগুলোর ওয়ারিস/উত্তরাধিকারী/অধিকারী বানিয়েছেন, এর অর্থ হলো, তাদেরকে ওগুলোর উপর ক্ষমতা অর্পণ করেছিলেন। আর সে জন্য যে, তাদেরকে মিশরে যেতেই হবে এমন কোন কথা নেই। বরং মিশরকে তাদের ক্ষমতাধীন করে দিয়েছিলেন। ইমাম কুরতুবী (র.) এর অভিমতে: বনী ইসরাইলগণ মিশরে ফিরে গিয়েছিলেন এবং ফেরাউন ও তার লোকদের পরিত্যক্ত সমস্ত ধনসম্পদের মালিক হয়েছিলেন। (দেুখন, সুরা দুখান ও শুআরার ব্যাখ্যায় তাফসীর কুরতুবী এবং আলুসী)। 
.
প্রখ্যাত গবেষক ড. মুহাম্মাদ হিযাযী আসসাকা বলছেন: ফেরাউন সলীল সমাধিস্থ হওয়ার পর মুসা আবার মিশরে গিয়েছিলেন এবং ১৩ বছর শাসন করেছিলেন। একাধিক উপাস্যের ধারণা বিলুপ্ত করেছিলেন, মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। অতঃপর একজন গভর্ণর নিযুক্ত করে তিনি সিনাই মরুতে চলে যান। সেখান থেকে তাওরাত কিতাব লাভ করে এর একটি কপি ঐ গভর্ণরকে পাঠিয়ে দেন। তিনি সূরা ইউনুসের ৮৭ নং আয়াত দ্বারা এ মর্মে প্রমাণ পেশ করেন:
 ﻭَﺃَﻭْﺣَﻴْﻨَﺎ ﺇِﻟَﻰٰ ﻣُﻮﺳَﻰٰ ﻭَﺃَﺧِﻴﻪِ ﺃَﻥ ﺗَﺒَﻮَّﺁ ﻟِﻘَﻮْﻣِﻜُﻤَﺎ ﺑِﻤِﺼْﺮَ ﺑُﻴُﻮﺗًﺎ ﻭَﺍﺟْﻌَﻠُﻮﺍ ﺑُﻴُﻮﺗَﻜُﻢْ ﻗِﺒْﻠَﺔً ﻭَﺃَﻗِﻴﻤُﻮﺍ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ۗ ﻭَﺑَﺸِّﺮِ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ‏( 87 )
“আমি মুসা ও তার ভাইকে এই মর্মে নির্দেশ দিলাম যে, তোমরা তোমাদের কওমের জন্য মিশরে আবাসস্থান বহাল রাখো। তোমাদের ঘরগুলোকে কিবলাহ তথা নামাযের জায়গা বানাও। আর নামায কায়িম কর। এবং মুমিনেদেরকে সুসংবাদ দাও”। 
তাছাড়া, সূরা ‘আরাফের ১৩৭ নং আয়াত দিয়েও অনেকে প্রমাণ দিয়েছেন।
 ﻭَﺃَﻭْﺭَﺛْﻨَﺎ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳُﺴْﺘَﻀْﻌَﻔُﻮﻥَ ﻣَﺸَﺎﺭِﻕَ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻭَﻣَﻐَﺎﺭِﺑَﻬَﺎ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺑَﺎﺭَﻛْﻨَﺎ ﻓِﻴﻬَﺎ ۖ ﻭَﺗَﻤَّﺖْ ﻛَﻠِﻤَﺖُ ﺭَﺑِّﻚَ ﺍﻟْﺤُﺴْﻨَﻰٰ ﻋَﻠَﻰٰ ﺑَﻨِﻲ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴﻞَ ﺑِﻤَﺎ ﺻَﺒَﺮُﻭﺍ ۖ ﻭَﺩَﻣَّﺮْﻧَﺎ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺼْﻨَﻊُ ﻓِﺮْﻋَﻮْﻥُ ﻭَﻗَﻮْﻣُﻪُ ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻌْﺮِﺷُﻮﻥَ ‏( 137 )
 
“যে জাতিকে দুর্বল ও হীন ভাবা হত আমি তাদেরকে আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানাই, আর বনী ইসরাঈল জাতি সম্পর্কে তেমার রবের শুভ ও কল্যাণময় বাণী (প্রতিশ্রুতি) পূর্ণ হল যেহেতু তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল। আর ফেরাউনও তার সম্প্রদায়ের কীর্তিকলাপ ও উচ্চ প্রাসাদসমূহকে আমি ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছি”। 
অনেক তাফসীরকারক পূর্ব ও পশ্চিম বলতে, শাম, মিশর এসবকে বোঝানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ্য যে, উপরিউক্ত আয়াতগুলো থেকে এটাও বোঝা যায় যে, আল-আরদুল মুকাদ্দাসাহ অভিযান ও তৎপরবর্তী তীহের ঘটনাগুলো পরে ঘটেছিল। 
.
৮. ইমাম আহমাদ ও বাযযার কর্তৃক বর্নিত নিম্নোক্ত হাদীস থেকেও প্রমাণিত হয় যে, রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা ইকামাতে দ্বীনেরই অংশ।
 ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ : ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ـ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ـ ﻗﺎﻝ ﻟﻜﻌﺐ ﺑﻦ ﻋﺠﺰﺓ : " ﺃﻋﺎﺫﻙ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺇﻣﺎﺭﺓ ﺍﻟﺴﻔﻬﺎﺀ ﻳﺎ ﻛﻌﺐ . ﻗﺎﻝ : ﻭﻣﺎ ﺇﻣﺎﺭﺓ ﺍﻟﺴﻔﻬﺎﺀ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﻣﺮﺍﺀ ﻳﻜﻮﻧﻮﻥ ﺑﻌﺪﻱ ، ﻻ ﻳﻬﺪﻭﻥ ﺑﻬﺪﻳﻲ ، ﻭﻻ ﻳﺴﺘﻨﻮﻥ ﺑﺴﻨﺘﻲ ، ﻓﻤﻦ ﺻﺪﻗﻬﻢ ﺑﻜﺬﺑﻬﻢ ، ﻭﺃﻋﺎﻧﻬﻢ ﻋﻠﻰ ﻇﻠﻤﻬﻢ ، ﻓﺄﻭﻟﺌﻚ ﻟﻴﺴﻮﺍ ﻣﻨﻲ ، ﻭﻟﺴﺖ ﻣﻨﻬﻢ ، ﻭﻻ ﻳﺮﺩﻭﻥ ﻋﻠﻰ ﺣﻮﺿﻲ ، ﻭﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﺼﺪﻗﻬﻢ ﺑﻜﺬﺑﻬﻢ ، ﻭﻟﻢ ﻳﻌﻨﻬﻢ ﻋﻠﻰ ﻇﻠﻤﻬﻢ ، ﻓﺄﻭﻟﺌﻚ ﻣﻨﻲ ، ﻭﺃﻧﺎ ﻣﻨﻬﻢ ، ﻭﺳﻴﺮﺩﻭﻥ ﻋﻠﻰ ﺣﻮﺿﻲ ." ‏( ﺃﺣﻤﺪ ، ﺍﻟﺒﺰﺍﺭ ).

“হযরত যাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলে কারীম স. কা’ব বিন আজুযাহকে বললেন: হে কা’ব আল্লাহ তায়ালা তোমাকে নির্বোধ লোকদের শাসন থেকে হেফাজাত করুন। তিনি আরজ করলেন, নির্বোধদের শাসন কি? রাসূলে কারীম স. বললেন: আমার পরে এমন কিছু শাসক আসবে, যারা আমার পথনির্দেশনা বা হিদায়াতকে গ্রহণ করবে না। আমার সুন্নাতের অনুকরণ করবে না। অতএব, যারা তাদের মিথ্যাচারকে বিশ্বাস করবে, জুলুম-অত্যাচার চালাতে তাদেরকে সাহায্য করবে, তাদের সাথে আমার, আমার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। তারা আমার হাওজের কাছে আসতে পারবে না। আর যারা তাদের মিথ্যাচারকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তাদেরকে জুলুমের ব্যাপারে সাহায্য করবে না, তারা আমার, আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত। তারা পরকালে আমার হাওজের কাছে স্থান পাবে”- (আহমাদ, বাজ্জার)। 
.
৯. আল্লাহর বাণী: ﺃﻥ ﺃَﻗِﻴﻤُﻮﺍ ﺍﻟﺪِّﻳﻦَ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺘَﻔَﺮَّﻗُﻮﺍ ﻓِﻴﻪِ ۚ “তোমরা দ্বীন কায়িম কর। এ ব্যাপারে মতানৈক্য করো না”। (সূরা আশশুরা, আয়াত: ১৩)। 
এখানে দ্বীন বলতে শুধু নামায-রোযা কে বোঝানো হয়নি। পরিপূর্ণভাবে ইসলামকে বোঝানো হয়েছে। এ জন্যই এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম আসসাআদী বলছেন:
ﻗﺎﻝ : ﺃﻥ ﺃﻗﻴﻤﻮﺍ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺃﻱ : ﺃﻣﺮﻛﻢ ﺃﻥ ﺗﻘﻴﻤﻮﺍ ﺟﻤﻴﻊ ﺷﺮﺍﺋﻊ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺃﺻﻮﻟﻪ ﻭﻓﺮﻭﻋﻪ ، ﺗﻘﻴﻤﻮﻧﻪ ﺑﺄﻧﻔﺴﻜﻢ ، ﻭﺗﺠﺘﻬﺪﻭﻥ ﻓﻲ ﺇﻗﺎﻣﺘﻪ ﻋﻠﻰ ﻏﻴﺮﻛﻢ ، 
“অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করছেন তোমরা যেন দ্বীনের উছুল (মৌলিক শিক্ষাগুলো) ও ফুরু (শাখা-প্রশাখা) সবকিছুই প্রতিষ্ঠা কর। দ্বীনি কয়িম করবে নিজেদের জীবনে। সর্ব শক্তি দিয়ে চেষ্ট করবে অন্যদের জীবনে বাস্তবায়নে...।” 
এ কথা সত্যি যে, নবীদের আনীত শরীয়তসমূহের মধ্যে কিছুটা ব্যবধান ছিল। তবে মৌলিক আকীদাহ ও আখলাকসম্পর্কিত বিধানের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না। তাই এখানে ইকামাতে দ্বীন বলতে প্রত্যেক নবীকেকে প্রদত্ত জীবনব্যবস্থা বা শরীয়ত কায়েম করা বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ বলছেন:
 ﻟِﻜُﻞٍّ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﺷِﺮْﻋَﺔً ﻭَﻣِﻨْﻬَﺎﺟﺎً } ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : 48 }
(আমি প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা শরীয়ত ও জীবন ব্যবস্থা দিয়েছি”। (সূরা অাল-মায়ীদাহ: ৪৮)। 
.
যেহেতু, আমার মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহর (স.) উম্মত তাই অামাদের ক্ষেত্রে তাঁর শরীয়তই প্রযোজ্য। দ্বীনের ব্যাপকতা সম্পর্কে ড. আব্দুল কারীম যাইদান বলছেন: ইসলামের গোটা শিক্ষা তিনভাগে বিভক্ত: 
ক. আকীদাহ সংক্রান্ত বিধিবিধান। 
খ. আখলাক সংক্রান্ত বিধিবিধান। 
গ. ব্যবহারিক বিধান বলা হয়। 
এই তৃতীয় প্রকার আবার দুই ভাগে বিভক্ত: 
ক. ইবাদাত: যে সব বিধিবিধান স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যকার সম্পর্ক বিন্যাস করে। 
খ. মু‘আমালাহ: যে সকল বিধান সৃষ্টির /মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক বিন্যাস করে। এ গুলো আবার অনেক প্রকার: 
১. পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত বিধিবিধান। যেগুলোকে আধুনিক আইনের ভাষায় বলা হয়: পারসোনাল স্টেইটাস ল’/ফেমিলি ল’। 
২. অর্থনৈতিক লেনদেন সংক্রান্ত বিধিবিধান। যেগুলোকে বলা হয়: সিভিল ল’। 
৩. বিচার ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত বিধিবিধান। যেগুলোকে বলা হয়: ল’ অব প্রসিজিউর। 
৪. মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসরত অমুসলিমদের সাথে সম্পর্ক বিন্যাসকারী ল’। যাকে বলা হয় প্রাইভেট ইনটারন্যাশনাল ল’। 
৫. অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে ইসলামী রাষ্ট্রের সম্পর্ক বিষয়ক আইন। যাকে বলা হয়: পাবলিক ইনটারন্যাশনাল ল’। 
৬. রাষ্ট্র ব্যবস্থা, রাষ্ট্রের ধরন, মূলনীতি, নাগরিক অধিকার, রাষ্ট্র ও জনগণের পারস্পরিক অধিকার ও কর্তব্য সংক্রান্ত আইন। যাকে বলা হয়: কনস্টিটিউশনাল ল’। 
৭. অপরাধ ও দন্ডবিধি সংক্রান্ত আইন। যাকে বলা হয় পেনাল কোড/ফৌজদারী আইন। মোট কথা, জীবনের এমন কোন দিক নেই, যেখানে ইসলামের শাসন, অনুশাসন, বিধি-বিধান ও নির্দেশনা নেই। এই সব কিছু নিয়েই ইসলাম, দ্বীন। তাই ইসলাম মানে শুধু কালেমা, নামায , যাকাত। এর সাথে রাষ্ট্রের কোন সম্পর্ক নেই। এ কথা নাস্তিকদের মুখে শোভা পায়। 
৮. রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলামকে অস্বীকার করা শিরক পর্যায়ের অপরাধ। পবিত্র কুরআনে যখন বলা হলো:
 ﺍﺗَّﺨَﺬُﻭﺍ ﺃَﺣْﺒَﺎﺭَﻫُﻢْ ﻭَﺭُﻫْﺒَﺎﻧَﻬُﻢْ ﺃَﺭْﺑَﺎﺑًﺎ ﻣِّﻦ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠَّﻪِ 
“তারা (ইয়াহুদ ও খ্রীস্টানগণ) আল্লাহ কে বাদ দিয়ে তাদের ধর্মযাজক ও পুরোহিতদেরকে রব বানিয়েছে” (সূরা আততাওবাহ: ৩১)। 
তখন আদী বিন হাতিম রাসূলকে বলেছিলেন:
 ﺇﻧﻬﻢ ﻟﻢ ﻳﻌﺒﺪﻭﻫﻢ؟ ﻓﻘﺎﻝ : ﺑﻠﻰ ، ﺇﻧﻬﻢ ﺣﺮﻣﻮﺍ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺍﻟﺤﻼﻝ ، ﻭﺃﺣﻠﻮﺍ ﻟﻬﻢ ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ ، ﻓﺎﺗﺒﻌﻮﻫﻢ ، ﻓﺬﻟﻚ ﻋﺒﺎﺩﺗﻬﻢ ﺇﻳﺎﻫﻢ . ﺍﻟﺘﺰﻣﺬﻱ 3095
“তারা তো তাদের পুজা করে নি। রাসূল (স.) বললেন: হা। তবে তারা আল্লাহ যা হালাল করিছিলেন, তা হারাম বানিয়েছে। আর আল্লাহ যা হারাম বানিয়েছেন, সেগুলোকে তারা হালাল বানিয়েছে। আর সাধারণ জনগণ তা মেনে নিয়েছে। এটাই হচ্ছে ইয়াহুদ-খ্রীস্টান কর্তৃক পুরোহিত পুজা।”।(তিরমিযয়ী:৩০৯৫)। 
.
যারা আল্লাহর দ্বীন/শরীয়তের বিপরীত আইন করে এবং যারা তা মেনে নেয় তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলছেন:
 ﺃَﻡْ ﻟَﻬُﻢْ ﺷُﺮَﻛَﺎﺀُ ﺷَﺮَﻋُﻮﺍ ﻟَﻬُﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ ﻣَﺎ ﻟَﻢْ ﻳَﺄْﺫَﻥ ﺑِﻪِ ﺍﻟﻠَّﻪُ 
“তারা কি আল্লাহর সাথে এমন কিছু শরীক বানিয়ে নিয়েছে, যারা তাদের জন্য এমন দ্বীন প্রবর্তন করলো, যে ব্যাপারে আল্লাহর কোন অনুমদোন নেই। (সূরা শুরা, আয়াত: ২১)। 
অতএব,, মতিউর রহমানদের দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নিলে, যারা সুদ কে হালাল করেছে, যিনার অনুমিত /লাইসেন্স দিয়েছে, তাদেরকে মেনে নিতে হয়। যার পরিণাম হলো, শিরক।
.
৯. মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (স.) হচ্ছেন আমাদের আদর্শ। আমরা তার উম্মাত। তাঁর জীবনধারাই হলো বাস্তব ইসলাম। রাসূলের সুন্নাত তথা জীবনধারা অস্বীকারকারীদের দ্বারা ইকামাতে দ্বীনে হবে না। কারণ সেখানেতো দ্বীনই থাকবে না। আর এ কথা স্বতঃসিদ্ধ রাসূল (স. ) দশ বছর একটি রাষ্ট্রের রাষ্প্রপ্রধান ছিলেন। তিনি আল্লাহর কুরআন দিয়ে তা পরিচালনা করেছিলেন। তাহলে কি তিনি ইকামাতে দ্বীন করেন নি? 
.
১০. শরীয়তের নীতি হলো: ﻣﺎ ﻻ ﻳﺘﻢ ﺍﻟﻮﺍﺟﺐ ﺇﻻ ﺑﻪ ﻓﻬﻮ ﻭﺍﺟﺐ “ওয়াজিব পালন করতে যা অপরিহার্য, তাও ওয়াজিব। আর আমরা জানি, কুরআনের মধ্য এমন অনেক বিধান রয়েছে, যা একমাত্র রাষ্ট্রই বাস্তবায়ন করতে পারে। যেমন, হুদুদ, কিসাস, বেনামাযির শাস্তি, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা। তাছাড়া, যাকাত ব্যবস্থাপনাও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। ইসলামী আদর্শে অবিশ্বাসীরা অবশ্যেই ‍যিনার হদ্দ, কতলের কিসাস বাস্তবায়ন করবে না। 
.
১১. সিংহাসন, রাষ্ট্রক্ষমতা, মসনদ বসার জন্য নয়; বরং আল-কুরআনকে ক্ষমতায় বসানোর জন্যই ইকামাতে দ্বীন। এর অর্থ: শুধুমাত্র রাজনীতিই ইকামাতে দ্বীন, তা নয়। বরং ব্যক্তি পর্যায়, পারিবারিক পর্যায়, সমাজ পর্যায়, রাষ্ট্র পর্যায় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে ইকামাতে দ্বীন। এভাবেই ইসলামকে চূড়ান্ত বিজয়ী করাই হলো ইকামাতে দ্বীন। আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
 ﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺃَﺭْﺳَﻞَ ﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﺑِﺎﻟْﻬُﺪَﻯٰ ﻭَﺩِﻳﻦِ ﺍﻟْﺤَﻖِّ ﻟِﻴُﻈْﻬِﺮَﻩُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ ﻛُﻠِّﻪِ ﻭَﻟَﻮْ ﻛَﺮِﻩَ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛُﻮﻥَ 
“ তিনিই তাঁর রাসূল কে পাঠিয়েছেন হিদায়াত ও সত্যদ্বীন সহ, যাতে করে তিনি সমস্ত বাতিল দ্বীনের উপর ইসলামকে বিজয়ী করতে পারেন। যদিও তা মুশরিকদের পছন্দ নয়”।
(সূরা তাওবাহ:৩৩, সফঃ০৯)। 
.
পরিশেষে, আমরা শায়খ মতিউর রহমান ও অনুসারীদেরকে বলবো, আপনারা তাওবাহ করুন। সঠিক পথে ফিরে আসুন। যে ব্যাপারে আল্লাহ মতানৈক্য নিষেধ করেছেন, সে ব্যাপারে মতােনৈক্য বর্জন করুন। আল্লাহ মুসা ও হারুন (আ.) কে ফেরাউনের কাছে যেতে বলেছেন কেন? এতটুুকু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন যে রাষ্ট্রযন্ত্রের ইসলামায়ন ছাড়া কোন ইকামাতে দ্বীন পূর্ণাঙ্গ ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় না। আল্লাহ আমাদেরকে বোঝার তাওফীক দান করুন। আমীন।
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলান।         

Post a Comment

0 Comments