Recent Tube

মাত্র দশ মাসে ধর্ষণের শিকার ১,২৫৩ নারী: এর দায় এড়াতে পারবে না ইকামতে দ্বীনের বিরোধী শক্তিঃ মোহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

  
      
       "সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নারী-শিশুর ওপর ধর্ষণের যৌন সহিংসতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ঘরে-বাইরে, রাস্তাঘাট, যানবাহন, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পত্রিকার হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ১০ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১,২৫৩ জন নারী। বাংলাদেশের প্রথম সারির ৯টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার পর্যালোচনা করে এ তথ্য বের করা হয়েছে।" (সমকাল, পৃঃ ২০; ২৬ নভেম্বর ২০১৯)
.
       প্রকৃতপক্ষে যত ধর্ষণ হয় তার শতকরা দশ ভাগও এসব প্রতিবেদনে উঠে আসে কি না আমার সন্দেহ হয়। কেননা, আত্মসম্মান বিনষ্ট হওয়ার ভয়ে ধর্ষিত হওয়ার পরে বিষয়টি তারা গোপন করে। ফলে তা পত্র পত্রিকায় উঠে আসে না। আর যিনা মাসে না বরং একদিনে যে কত হাজার হয়- তার কোন হিসাব নাই। এর প্রধান কারণ হলো কুরআন সুন্নাহর আইন রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত না থাকা। যিনা ও ধর্ষণ ঠেকাতে ইসলাম প্রধানত তিন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বিধান দিয়েছে।
.
১. পর্দার বিধান:
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصٰرِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذٰلِكَ أَزْكٰى لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌۢ بِمَا يَصْنَعُونَ.
"মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।" (সূরা নূরঃ২৪/৩০)
.
  আল্লাহ তা'আলা নারীদের বিষয়ে বলেন,
يٰٓأَيُّهَا النَّبِىُّ قُل لِّأَزْوٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلٰبِيبِهِنَّ ۚ ذٰلِكَ أَدْنٰىٓ أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا.
"হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের চাদর নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, এতে তাদেরকে চেনা হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" (সূরা আহযাবঃ৩৩/৫৯)
.
২. বিয়ের বিধান:
এ বিষয়ে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَأَنكِحُوا الْأَيٰمٰى مِنكُمْ وَالصّٰلِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَآئِكُمْ ۚ إِن يَكُونُوا فُقَرَآءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِۦ ۗ وَاللَّهُ وٰسِعٌ عَلِيمٌ.
"আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।" (সূরা নূরঃ২৪/৩২)
.
৩. শাস্তির বিধান:
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
الزَّانِيَةُ وَالزَّانِى فَاجْلِدُوا كُلَّ وٰحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ ۖ وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِى دِينِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْءَاخِرِ ۖ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَآئِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ.
"ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে একশ’টি করে বেত্রাঘাত কর। আর যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাক তবে আল্লাহর দ্বীন তথা বিধানের ব্যাপারে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে পেয়ে না বসে। আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।" (সূরা নূরঃ২৪/০২)
[বিঃদ্রঃ যে সকল ইকামতে দ্বীনের শত্রুরা বলে থাকে দ্বীন মানে তওহীদ, দ্বীন কায়েম মানে তওহীদ কায়েম, তওহীদের বাহিরে দ্বীন নেই, ইকামতে দ্বীনের সাথে রাষ্ট্রের কোন সম্পর্ক নেই; তাদের গোমড়াহী ও কুফুরীর প্রমাণ পেতে অত্র আয়াতটিই যথেষ্ট। কেননা, এখানে ফৌজদারী বিধানকে আল্লাহর দ্বীন বলা হয়েছে, যা রাষ্ট্র ছাড়া কার্যকর করা সম্ভব নয়।]
      একশ' বেত্ৰাঘাতের উল্লেখিত শাস্তি শুধু অবিবাহিত পুরুষ ও নারীর জন্য নির্দিষ্ট; বিবাহিতদের শাস্তি প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা। (সহীহ বুখারী হাঃ ৬৮২৯, সহীহ মুসলিম হাঃ ১৬৯১) ধর্ষকের জন্যেও একই বিধান।
.
     এদেশে যদি আল্লাহর দ্বীন তথা আল্লাহর বিধান রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকতো, তাহলে প্রতিদিন হাজার হাজার যিনা ব্যভিচার হতো না, প্রতিদিন ধর্ষণের খবর পাওয়া যেতো না। কিন্তু আহলে হাদীসের শায়খ নামে পরিচিত তাগুতপন্থী, দরবারী, সেকুলার আলেমগণ চায় মুসলিম সমাজে যিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণসহ সকল ধরণের অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক। তাই যারা আল্লাহর কায়েম করতে চায় তাদের বিরোধীতা করে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفٰحِشَةُ فِى الَّذِينَ ءَامَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِى الدُّنْيَا وَالْءَاخِرَةِ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ.
"যারা চায় যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।" (সূরা নূরঃ২৪/১৯)
.
    তাগুতপন্থী সেকুলার আলেমগণ চায় না মানুষ ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবনসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের শাসন মেনে চলুক। তাই তারা ইকামতে দ্বীনের বিরোধীতা করে দ্বীন ইসলামকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে বন্দি করে রাখতে চায়। তাগুতপন্থী দরবারী সেকুলার আলেমের ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ্ চাচ্ছি।
--------------------------------------------------------
লেখকঃঃ ইসলামি চিন্তাবিদ  গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা। 

Post a Comment

0 Comments