Recent Tube

বিতিকিচ্ছা-১০'' নুর মুহাম্মদ চৌধূরী।

এলডার পার্কঃ

                  এলডার পার্কঃ-
    এমন অনেক বৃক্ষ আছে- যার কোন শাখা প্রশাখা নাই। তার মধ্যে একটি হচ্ছে তালবৃক্ষ। একটি তালবৃক্ষ - বহু যুগের সাক্ষী। বার্ধক্যে উপনীত  হলেও তার কদর মোটেও কমে যায় না। আমাদের প্রয়োজনেই এই তালবৃক্ষের যথার্থ পরিচর্যা করে থাকি আমরা। "তালতলা"- যেন সবুজ ঘাসের পাতানো এক মনোরম বিছানা। সেথায় বিশ্রাম নিতে কার না মন ব্যাকুল থাকে। 
      সে এক অতি পরিচিত তালতলার কথা বলছি। আমার মনে হয় প্রতিটি তালতলাই এমন মধুময় জীবনের স্নিগ্ধ পরষ বুলানো, যার বন্ধনে মিশে থাকার মধ্যেই আছে জীবনের এক অনুপম তৃপ্তি। 
কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় হচ্ছে আমাদের আধূনিক সমাজে এই তাল বৃক্ষের যথেষ্ট কদর থাকলেও কদর নাই মানুষরূপী বয়োবৃদ্ধ তালবৃক্ষটির। যে তালবৃক্ষটি যৌবনে প্রচুর শাখা প্রশাখা বিস্তার লাভ করলো অতঃপর প্রৌঢ়ত্বে এসে একাকীত্ব আর অবহেলায় জর্জরিত হতেই থাকলো- হতেই থাকলো।
        প্রতিটি পরিবারেই একজন না একজন বয়োবৃদ্ধের বাস। আমাদের কর্মব্যস্ত কোলাহল মুখর জীবন যাত্রায় এমন অনেক ব্যাক্তির সময়-সুযোগ হচ্ছে না ঐ তালবৃক্ষের ছায়ায় বসে কিছুটা সময় ক্ষেপন করি। এই অবস্থা যখন প্রকট আকার ধারন করলো,-তখন পশ্চিমা দুনিয়া  আবিষ্কার করল "বৃদ্ধাশ্রম"। ইসলামে বৃদ্ধাশ্রমের স্থান নাই মোটেও। প্রতিটি পরিবারেই যথোপযুক্ত সম্মানে আদরে আহল্লাদে পরিচর্যা হওয়া উচিত প্রতিটি তালবৃক্ষের। তবে সামর্থ্য সবার আয়ত্বে সমানভাবে পুরোপুরি থাকে না। তাই কেউ হেফাজত কম পান আর কেউ পান একটু বেশী।
      কেউ কেউ পর্যাপ্ত আর্থিক  সামর্থ্য থাকার পরও জনবলের সীমাবদ্ধতায় সঠিক দায়ীত্বটুকু আজ্ঞাম দিতে হিমশিম খান। আবার অনেক তালবৃক্ষই আছে - যা দারুণ ভাবে অবহেলিত। সর্ব দৃষ্টে এ বিষয়ে শ্ংখ্যলা আনয়নে তথা মানবতার পরষ প্রদান কল্পে একটি করণীয় নির্ধারণে কতিপয় শুপারিশ পেশ করতেই আজকের এই প্রচেষ্টা।
       আমরা জানি সব তালবৃক্ষই অবহেলিত নন। আবার  কোন তালবৃক্ষই পুরোপুরিভাবে শতভাগ পরিচর্যা প্রাপ্তও হন না। একাধীক জনবলের উপস্তিতিতে ভুল বশতঃও পরিচর্যায় ঘাটতি হয়ে যায়।
         প্রবীণ হিতোষী সংঘ আছে, প্রবীণদের দ্বারা পরিচালিত এ সংঘ। যা বলা যায় প্রবীণদের একটি ক্লাব। অথচ এটা হওয়া উচিত ছিল প্রবীণদের জন্য যুবকদের দ্বারা পরিচালিত একটি মানবিক কর্মকাণ্ড। এখানে পরিকল্পনা হবে প্রবীনদের জন্য আর তার বাস্তবায়নে কাজ করবে তরুণ, যুবকরা। থাকবে জীবন গ্রহনের মুল কারণের উপর আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব। এক প্রকার স্কুল ব্যবস্থা, থাকবে বৈকালিক ভ্রমন-আড্ডা ব্যবস্থাপনা ( একটা এলডার পার্ক), চিকিৎসা সু-ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় এম্বুলেন্স সার্ভিস, ঔষধ সহ বড় মাপের একটি মেঘাশপ, একদল দক্ষ, প্রশিক্ষিত,স্বাস্থ্য কর্মী, পুরুষ ও মহিলা ফিজিওথেরাপিস্ট। যাদের দ্বারা ইনডোর ও আউটডোর সেবা প্রদানের মাধ্যমে হবে প্রবীণদের প্রয়োজনীয় সার্ভিস্। এখানে অবস্থানরত ও অবস্থানরত নয় এমন সব প্রবীন দের মধ্যে ভাব আদান প্রদান সুব্যবস্থা ইত্যাদি। এমন ব্যবস্থা যেন প্রবীণরা নীজ গৃহে থেকেই পারেন ভাব বিনিময় করতে সুহৃদদের সংঙ্গে, যারা সঙ্গত কারণেই গৃহ কোনে আবদ্ধ থাকতে বাধ্য। আবার নীজ গৃহে না থেকেও  পান আপন জনের ছোয়া, আর একাকীত্বের মধ্যে থেকেও পেতে পারেন বৈচিত্রের পরষ।
        আমরা কি একমাত্র মহান প্রভূর সন্তুষ্টির জন্য এরকম একটি হিত চিন্তার বাস্তবায়নে পরমত সংগ্রহ করতঃ সমাজের এই তালবৃক্ষদের জন্য কিছু একটা করতে পারি না। দরকার শুধু কিছু সংখ্যক সৎ ও কর্মট উদ্দ্যোক্তা আর কিছু  প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা। তবে একথা সর্বজনবিদীত সত্য যে, ইসলামে বৃদ্ধাশ্রমের কোন স্থান নেই। প্রতিটি সন্তানেরই উচিৎ স্বীয় পিতামাতার যথোপযুক্ত খেদমত আঞ্জাম দেয়ার মাধ্যমে আপন জান্নাতের ব্যাবস্থা করে নেয়া।
তোমার রব ফায়সালা করে দিয়েছেন ; (১) তোমরা কারো এবাদত করো না, একমাত্র তারই এবাদত করো। ( ২) পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো। যদি তোমাদের কাছে তাদের কোন একজন অথবা উভয় বৃদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাহলে তাদেরকে ''উহ্" পর্যন্তও বলো না। এবং তাদেরকে ধমকের সুরে জবাব দিয়ো না। বরং তাদের সাথে মর্যাদা সহকারে কথা বলো। আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাকো এই বলে, হে আমার প্রতিপালক, তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।
--------------------------------------------------
লেখকঃ প্রবন্ধ,কবিতা ও রম্য লেখক  । 

Post a Comment

0 Comments