Recent Tube

কুরবানীর ইতিহাসঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

      -------------------------------------------
     মহান আল্লাহ তা'য়ালা মানবজাতি কে একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ 

وَمَا خَلَقْتُ ٱلْجِنَّ وَٱلْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ 
.
  আর জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদাত করবে।
(সূরা যারিয়াতঃ৫৬)
.
    ইবাদতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাতদ হলো কুরবানী। এই কুরবানীর সঠিক ইতিহাস অনেকেরই জানা নেই। তারা কুরবানীর ইতিহাস বলতে ইব্রাহীম (আ) এর কুরবানী বুঝেন। অর্থাৎ অনেকের ধারণা যে, ইব্রাহীম (আ) প্রথম কুরবানী দিয়েছিলেন। অথচ কুরবানীর ইতিহাস খুবই প্রচীন। সেই আদি পিতা আদম (আ) এর যুগ থেকেই কুরবানীর বিধান চলে আসছে। আদম (আ) এর দুই ছেলে হাবীল ও  কাবীলের কুরবানী পেশ করার কথা আমরা মহা-গ্রন্থ আল-কুরআন থেকে জানতে পারি। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
وَٱتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ٱبْنَىْ ءَادَمَ بِٱلْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ ٱلْءَاخَرِ قَالَ لَأَقْتُلَنَّكَۖ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ ٱللَّهُ مِنَ ٱلْمُتَّقِينَ 
.
   আর তুমি তাদের নিকট আদমের দুই পুত্রের সংবাদ যথাযথভাবে বর্ণনা কর, যখন তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করল। অতঃপর তাদের একজন থেকে গ্রহণ করা হল, আর অপরজন থেকে গ্রহণ করা হল না। সে বলল, ‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব’। অন্যজন বলল, ‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের থেকে গ্রহণ করেন’।
(সূরা মায়িদাঃ২৭)
.
    তাফসীরের আলোকে মূল ঘটনা:
যখন আদম ও হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং তাদের সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার আরম্ভ হয়, তখন হাওয়া (আ.) এর প্রতি গর্ভ থেকে জোড়া জোড়া (জময) অর্থাৎ এক সাথে একটি পুত্র ও একটি কন্যা এরূপ জময সন্তান জন্মগ্রহণ করত। কেবল শীস (আ.) ব্যতিরেকে। কারণ, তিনি একা ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। তখন ভাই-বোন ছাড়া আদম (আ.) এর আর কোন সন্তান ছিল না। অথচ ভাই-বোন পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা উপস্থিত প্রয়োজনের খাতিরে আদম (আ.) এর শরীয়তে বিশেষভাবে এ নির্দেশ জারি করেন যে, একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করবে, তারা পরস্পর সহোদর ভাই-বোন হিসেবে গণ্য হবে। তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্মগ্রহনকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারীনি কন্যা সহোদরা বোন হিসেবে গণ্য হবে না। তাদের মধ্যে পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ। সুতরাং সে সময় আদম (আ.) একটি জোড়ার মেয়ের সাথে অন্য জোড়ার ছেলের বিয়ে দিতেন। 
.
    ঘটনাক্রমে কাবীলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে ছিল পরমা সুন্দরী। তার নাম ছিল আকলিমা। কিন্তু হাবিলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে দেখতে অতটা সুন্দরী ছিল না। সে ছিল কুশ্রী ও কদাকার। তার নাম ছিল লিওযা। বিবাহের সময় হলে শরয়ী ‘নিয়মানুযায়ী হাবীলের সহোদরা কুশ্রী বোন কাবীলের ভাগে পড়ল। ফলে আদম (আ.) তৎকালীন শরীয়তের আইনের পরিপ্রেক্ষি তে কাবীলের আবদার প্রত্যাখ্যান করলেন এবং তাকে তার নির্দেশ মানতে বললেন। কিন্তু সে মানল না। এবার তিনি তাকে বকাঝকা করলেন। তবুও সে ঐ বকাঝকায় কান দিল না। অবশেষে আদম (আ.) তার এ দু‘সস্তান হাবীল ও কাবীলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী পেশ কর, যার কুরবানী গৃহীত হবে, তার সাথেই আকলিমার বিয়ে দেয়া হবে।’ সে সময় কুরবানী গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল যে, আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে সে কুরবানীকে ভষ্মীভূত করে ফেলত। আর যার কুরবানী কবূল হতো না তারটা পড়ে থকত। যাহোক, তাদের কুরবানীর পদ্ধতি সম্পর্কে যা জানা যায় তা হলো-
.
    কাবীল ছিল চাষী। তাই তিনি গমের শীষ থেকে ভাল ভাল মালগুলো বের করে নিয়ে বাজে মালগুলোর একটি আটি কুরবানীর জন্য পেশ করল। আর হাবীল ছিল পশুপালনকারী। তাই সে তার জন্তুর মধ্যে থেকে সবচেয়ে সেরা একটি দুম্বা কুরবানীর জন্য পেশ করল। এরপর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে অগ্নিশিখা এসে হাবীলের কুরবানীটি ভষ্মীভুত করে দিল। [ফতহুল ক্বাদীরের বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, হাবীলের পেশকৃত দুম্বাটি জান্নাতে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং তা জান্নাতে বিচরণ করতে থাকে। অবশেষে ইসমাঈল যাবিহুল্লাহ (আ.) কে ঐ দুম্বাটি পাঠিয়ে বাঁচিয়ে দেয়া হয়।] আর কাবীলের কুরবানী যথাস্থানেই পড়ে থাকল। অর্থাৎ হাবীলেরটি গৃহীত হলো আর কাবীলেরটি হলো না। কিন্তু কাবীল এ আসমানী সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারল না। এ অকৃতকার্যতায় কাবীলের দুঃখ ও ক্ষোভ আরো বেড়ে গেল। সে আত্মসংবরণ করতে পারল না এবং প্রকাশ্যে তার ভাইকে বলল, ‘আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। হাবিল তখন ক্রোধের জবাবে ক্রোধ প্রদর্শন না করে একটি মার্জিত ও নীতিগত বাক্য উচ্চারণ করল, এতে কাবীলের প্রতি তার সহানুভূতি ও শুভেচ্ছা ফুটে উঠেছিল। হাবীল বলেছিল, ‘তিনি মুত্তাক্বীর কর্মই গ্রহণ করেন। সুতরাং তুমি তাক্বওয়ার কর্মই গ্রহণ করো। তুমি তাক্বওয়া অবলম্বন করলে তোমার কুরবানীও গৃহীত হতো। তুমি তা করোনি, তাই তোমার কুরবানী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এতে আমার দোষ কোথায়?….. তবুও এক পর্যায়ে কাবীল হাবীল কে হত্যা করে ফেলল।
(তাফসীর ইবনু কাসীর, দুররে মনসূর, ফতহুল বায়ান, ৩/৪৫ ও ফতহুল ক্বাদীর, ২/২৮-২৯)
.
     কুরআনে বর্ণিত আদম (আ) এর দুই পুত্র কর্তৃক কুরবানীর এ ঘটনা থেকেই কুরবানীর ইতিহাসের গোড়াপত্তন হয়েছে। কুরবানীদাতা হাবীল মনের ঐকান্তিক আগ্রহসহকারে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের জন্য একটি সুন্দর দুম্বা কুরবানী হিসাবে পেশ করেন। ফলে তাঁর কুরবানী কবুল হয়। পক্ষান্তরে কাবীল অমনোযোগী অবস্থায় কিছু খাদ্যশস্য কুরবানী হিসাবে পেশ করে। ফলে তার কুরবানী কবুল হয়নি।
(বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ অত্র আয়াতের তাফসীর, তাফসীরে ইবনে কাসীর, দূররে মানসূর, ফাতহুল বায়ান, ফাতহুল ক্বাদীর) 
.
     হযরত আদম (আ) থেকে বিগত সকল উম্মতের উপরে কুরবানী জারি ছিল। এ বিষয়ে আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ 
.
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لِّيَذْكُرُوا۟ ٱسْمَ ٱللَّهِ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلْأَنْعَٰمِۗ فَإِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَٰحِدٌ فَلَهُۥٓ أَسْلِمُوا۟ۗ وَبَشِّرِ ٱلْمُخْبِتِينَ 
.
   প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কুরবানীর বিধান দিয়েছি; যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যে সমস্ত জন্তু তিনি রিয্ক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর। তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ; অতএব তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ কর; আর অনুগতদেরকে সুসংবাদ দাও,

(সূরা হজ্জঃ৩৪)
.
  এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা মওদুদী বলেনঃ
"কুরবানী ছিল আল্লাহ প্রদত্ত সমস্ত শরীয়তের ইবাতদ ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশবিষেশ।"
(তাফসীরে তাফহীমুল কুরাআন ৮/১৯৯)
আল্লামা নাসাফী ও যামাখশারী বলেন, হযরত আদম (আ) থেকে হযরত মুহাম্মাদ (সা) পর্যন্ত প্রত্যেক জাতিকে আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানীর বিধান দিয়েছেন। 
(তাফসীরে নাসাফী ৩/৭৯; তাফসীরে কাশশাফ ২/২৩)
.
   হযরত আমদ (আ) এর যুগে তাঁর দুই পুত্রের কুরবানীর পর থেকে হযরত ইব্রাহীম (আ) সহ প্রত্যেক নবীর শরীয়তে কুরবানীর বিধান জারি ছিল। প্রকৃতপক্ষে কুরবানীর ইতিহাস কতটা প্রচীন যতটা প্রচীন দ্বীন তথা মানবজাতির ইতিহাস।
.
    কুরবানীর বর্তমান ইতিহাসঃ 
বর্তমানে ঈদুল আযহার কুরবানী হযরত ইব্রাহীম (আ) এর ঐতিহাসিক কুরবানীর অনুসরণ। আজ থেকে প্রায় ৪ হাজার বৎসর পূর্বে ইরাকের 'ঊর' নামক স্থানে ইব্রাহীম (আ) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা, পরিবার, রাষ্ট্র ও সমাজের সকলের বিরোধীতা ও প্রতিরোধের মুখে তিনি তাওহীদের প্রচারে অনড় ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি ইরাক থেকে ফিলিস্তিনে হিজরত করেন। বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত তিনি নিঃসন্তান ছিলেন।
আল্লাহ বলেন:
.
ﺭَﺏِّ ﻫَﺐْ ﻟِﻰ ﻣِﻦَ ﭐﻟﺼَّٰﻠِﺤِﻴﻦَ ﻓَﺒَﺸَّﺮْﻧَٰﻪُ ﺑِﻐُﻠَٰﻢٍ ﺣَﻠِﻴﻢٍ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺑَﻠَﻎَ ﻣَﻌَﻪُ ﭐﻟﺴَّﻌْﻰَ ﻗَﺎﻝَ ﻳَٰﺒُﻨَﻰَّ ﺇِﻧِّﻰٓ ﺃَﺭَﻯٰ ﻓِﻰ ﭐﻟْﻤَﻨَﺎﻡِ ﺃَﻧِّﻰٓ ﺃَﺫْﺑَﺤُﻚَ ﻓَﭑﻧﻈُﺮْ ﻣَﺎﺫَﺍ ﺗَﺮَﻯٰۚ ﻗَﺎﻝَ ﻳَٰٓﺄَﺑَﺖِ ﭐﻓْﻌَﻞْ ﻣَﺎ ﺗُﺆْﻣَﺮُۖ ﺳَﺘَﺠِﺪُﻧِﻰٓ ﺇِﻥ ﺷَﺎٓﺀَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦَ ﭐﻟﺼَّٰﺒِﺮِﻳﻦَ ﻓَﻠَﻤَّﺎٓ ﺃَﺳْﻠَﻤَﺎ ﻭَﺗَﻠَّﻪُۥ ﻟِﻠْﺠَﺒِﻴﻦِ ﻭَﻧَٰﺪَﻳْﻨَٰﻪُ ﺃَﻥ ﻳَٰٓﺈِﺑْﺮَٰﻫِﻴﻢ ﻗَﺪْ ﺻَﺪَّﻗْﺖَ ﭐﻟﺮُّﺀْﻳَﺎٓۚ ﺇِﻧَّﺎ ﻛَﺬَٰﻟِﻚَ ﻧَﺠْﺰِﻯ ﭐﻟْﻤُﺤْﺴِﻨِﻴﻦَ إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ ٱلْبَلَٰٓؤُا۟ ٱلْمُبِينُ وَفَدَيْنَٰهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِى ٱلْءَاخِرِينَ سَلَٰمٌ عَلَىٰٓ إِبْرَٰهِيمَ 

.
"(ইবরাহীম বলল) হে আমার প্রতিপালক, আমাকে এক সৎকর্ম পরায়ণ সন্তান দান কর। অতঃপর আমি তাকে এক স্থির-বুদ্ধি পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। অতঃপর সে যখন তার পিতার সঙ্গে কাজ করবার মত বয়সে উপনীত হল তখন ইবরাহীম বলল, বৎস, আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে আমি যবাই (কুরবানী) করছি, এখন তোমার অভিমত কি বল? সে বলল, হে আমার পিতা, আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন। আল্লাহ ইচ্ছা করলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহীম তার পুত্রকে কাত করে শায়িত করল, তখন আমি তাকে আহবান করে বললাম, হে ইবরাহীম, তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করলে। এভাবেই আমি সৎকর্ম পরায়ণদিগকে পুরস্কৃত করে থাকি।
নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আর আমি এক মহান যবেহের (কুরবানীর) বিনিময়ে তাকে মুক্ত করলাম। আর তার জন্য আমি পরবর্তীদের মধ্যে সুখ্যাতি রেখে দিয়েছি। ইবরাহীমের প্রতি সালাম।"
(সূরা সাফফাতঃ১০০-১০৯)
.
     আর এ জন্যই রাসূলুল্লাহ (সা) ইব্রাহীম (আ) এর কুরবানী কে তাঁর উম্মতের জন্য আদর্শ বলে অবহিত করেছেন।
َ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ قَالَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ ﷺ يَا رَسُولَ اللهِ مَا هَذِهِ الْأَضَاحِيُّ قَالَ «سُنَّةُ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ .
.
   যায়েদ ইবনে আরকাম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই কোরবানী কী? তিনি বলেন, তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আ) এর (ঐতিহাসিক) সুন্নাত তথা আদর্শ। 

[মুসনাদে আহমাদ  হাঃ১৮৭৯৭; ইবনে মাজাহ (ইফাবা) হাঃ৩১২৭]
--------------------------------------------
    মহান আল্লাহ তা'য়ালা মানবজাতি কে একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ 

وَمَا خَلَقْتُ ٱلْجِنَّ وَٱلْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ 
.
আর জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদাত করবে।
(সূরা যারিয়াতঃ৫৬)
.
    ইবাদতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাতদ হলো কুরবানী। এই কুরবানীর সঠিক ইতিহাস অনেকেরই জানা নেই। তারা কুরবানীর ইতিহাস বলতে ইব্রাহীম (আ) এর কুরবানী বুঝেন। অর্থাৎ অনেকের ধারণা যে, ইব্রাহীম (আ) প্রথম কুরবানী দিয়েছিলেন। অথচ কুরবানীর ইতিহাস খুবই প্রচীন। সেই আদি পিতা আদম (আ) এর যুগ থেকেই কুরবানীর বিধান চলে আসছে। আদম (আ) এর দুই ছেলে হাবীল ও  কাবীলের কুরবানী পেশ করার কথা আমরা মহা-গ্রন্থ আল-কুরআন থেকে জানতে পারি। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
وَٱتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ٱبْنَىْ ءَادَمَ بِٱلْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ ٱلْءَاخَرِ قَالَ لَأَقْتُلَنَّكَۖ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ ٱللَّهُ مِنَ ٱلْمُتَّقِينَ 
.
   আর তুমি তাদের নিকট আদমের দুই পুত্রের সংবাদ যথাযথভাবে বর্ণনা কর, যখন তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করল। অতঃপর তাদের একজন থেকে গ্রহণ করা হল, আর অপরজন থেকে গ্রহণ করা হল না। সে বলল, ‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব’। অন্যজন বলল, ‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের থেকে গ্রহণ করেন’।
(সূরা মায়িদাঃ২৭)
.
   তাফসীরের আলোকে মূল ঘটনা:
যখন আদম ও হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং তাদের সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার আরম্ভ হয়, তখন হাওয়া (আ.) এর প্রতি গর্ভ থেকে জোড়া জোড়া (জময) অর্থাৎ এক সাথে একটি পুত্র ও একটি কন্যা এরূপ জময সন্তান জন্মগ্রহণ করত। কেবল শীস (আ.) ব্যতিরেকে। কারণ, তিনি একা ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। তখন ভাই-বোন ছাড়া আদম (আ.) এর আর কোন সন্তান ছিল না। অথচ ভাই-বোন পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা উপস্থিত প্রয়োজনের খাতিরে আদম (আ.) এর শরীয়তে বিশেষভাবে এ নির্দেশ জারি করেন যে, একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করবে, তারা পরস্পর সহোদর ভাই-বোন হিসেবে গণ্য হবে। তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্মগ্রহনকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারীনি কন্যা সহোদরা বোন হিসেবে গণ্য হবে না। তাদের মধ্যে পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ। সুতরাং সে সময় আদম (আ.) একটি জোড়ার মেয়ের সাথে অন্য জোড়ার ছেলের বিয়ে দিতেন। 
.
     ঘটনাক্রমে কাবীলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে ছিল পরমা সুন্দরী। তার নাম ছিল আকলিমা। কিন্তু হাবিলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে দেখতে অতটা সুন্দরী ছিল না। সে ছিল কুশ্রী ও কদাকার। তার নাম ছিল লিওযা। বিবাহের সময় হলে শরয়ী ‘নিয়মানুযায়ী হাবীলের সহোদরা কুশ্রী বোন কাবীলের ভাগে পড়ল। ফলে আদম (আ.) তৎকালীন শরীয়তের আইনের পরিপ্রেক্ষি তে কাবীলের আবদার প্রত্যাখ্যান করলেন এবং তাকে তার নির্দেশ মানতে বললেন। কিন্তু সে মানল না। এবার তিনি তাকে বকাঝকা করলেন। তবুও সে ঐ বকাঝকায় কান দিল না। অবশেষে আদম (আ.) তার এ দু‘সস্তান হাবীল ও কাবীলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী পেশ কর, যার কুরবানী গৃহীত হবে, তার সাথেই আকলিমার বিয়ে দেয়া হবে।’ সে সময় কুরবানী গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল যে, আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে সে কুরবানীকে ভষ্মীভূত করে ফেলত। আর যার কুরবানী কবূল হতো না তারটা পড়ে থকত। যাহোক, তাদের কুরবানীর পদ্ধতি সম্পর্কে যা জানা যায় তা হলো-
.
    কাবীল ছিল চাষী। তাই তিনি গমের শীষ থেকে ভাল ভাল মালগুলো বের করে নিয়ে বাজে মালগুলোর একটি আটি কুরবানীর জন্য পেশ করল। আর হাবীল ছিল পশুপালনকারী। তাই সে তার জন্তুর মধ্যে থেকে সবচেয়ে সেরা একটি দুম্বা কুরবানীর জন্য পেশ করল। এরপর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে অগ্নিশিখা এসে হাবীলের কুরবানীটি ভষ্মীভুত করে দিল। [ফতহুল ক্বাদীরের বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, হাবীলের পেশকৃত দুম্বাটি জান্নাতে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং তা জান্নাতে বিচরণ করতে থাকে। অবশেষে ইসমাঈল যাবিহুল্লাহ (আ.) কে ঐ দুম্বাটি পাঠিয়ে বাঁচিয়ে দেয়া হয়।] আর কাবীলের কুরবানী যথাস্থানেই পড়ে থাকল। অর্থাৎ হাবীলেরটি গৃহীত হলো আর কাবীলেরটি হলো না। কিন্তু কাবীল এ আসমানী সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারল না। এ অকৃতকার্যতায় কাবীলের দুঃখ ও ক্ষোভ আরো বেড়ে গেল। সে আত্মসংবরণ করতে পারল না এবং প্রকাশ্যে তার ভাইকে বলল, ‘আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। হাবিল তখন ক্রোধের জবাবে ক্রোধ প্রদর্শন না করে একটি মার্জিত ও নীতিগত বাক্য উচ্চারণ করল, এতে কাবীলের প্রতি তার সহানুভূতি ও শুভেচ্ছা ফুটে উঠেছিল। হাবীল বলেছিল, ‘তিনি মুত্তাক্বীর কর্মই গ্রহণ করেন। সুতরাং তুমি তাক্বওয়ার কর্মই গ্রহণ করো। তুমি তাক্বওয়া অবলম্বন করলে তোমার কুরবানীও গৃহীত হতো। তুমি তা করোনি, তাই তোমার কুরবানী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এতে আমার দোষ কোথায়?….. তবুও এক পর্যায়ে কাবীল হাবীল কে হত্যা করে ফেলল।
(তাফসীর ইবনু কাসীর, দুররে মনসূর, ফতহুল বায়ান, ৩/৪৫ ও ফতহুল ক্বাদীর, ২/২৮-২৯)
.
    কুরআনে বর্ণিত আদম (আ) এর দুই পুত্র কর্তৃক কুরবানীর এ ঘটনা থেকেই কুরবানীর ইতিহাসের গোড়াপত্তন হয়েছে। কুরবানীদাতা হাবীল মনের ঐকান্তিক আগ্রহসহকারে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের জন্য একটি সুন্দর দুম্বা কুরবানী হিসাবে পেশ করেন। ফলে তাঁর কুরবানী কবুল হয়। পক্ষান্তরে কাবীল অমনোযোগী অবস্থায় কিছু খাদ্যশস্য কুরবানী হিসাবে পেশ করে। ফলে তার কুরবানী কবুল হয়নি।
(বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ অত্র আয়াতের তাফসীর, তাফসীরে ইবনে কাসীর, দূররে মানসূর, ফাতহুল বায়ান, ফাতহুল ক্বাদীর) 
.
    হযরত আদম (আ) থেকে বিগত সকল উম্মতের উপরে কুরবানী জারি ছিল। এ বিষয়ে আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ 
.
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لِّيَذْكُرُوا۟ ٱسْمَ ٱللَّهِ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلْأَنْعَٰمِۗ فَإِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَٰحِدٌ فَلَهُۥٓ أَسْلِمُوا۟ۗ وَبَشِّرِ ٱلْمُخْبِتِينَ 
.
   প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কুরবানীর বিধান দিয়েছি; যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যে সমস্ত জন্তু তিনি রিয্ক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর। তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ; অতএব তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ কর; আর অনুগতদেরকে সুসংবাদ দাও,

(সূরা হজ্জঃ৩৪)
.
 এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা মওদুদী বলেনঃ
"কুরবানী ছিল আল্লাহ প্রদত্ত সমস্ত শরীয়তের ইবাতদ ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশবিষেশ।"
(তাফসীরে তাফহীমুল কুরাআন ৮/১৯৯)
আল্লামা নাসাফী ও যামাখশারী বলেন, হযরত আদম (আ) থেকে হযরত মুহাম্মাদ (সা) পর্যন্ত প্রত্যেক জাতিকে আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানীর বিধান দিয়েছেন। 
(তাফসীরে নাসাফী ৩/৭৯; তাফসীরে কাশশাফ ২/২৩)
.
   হযরত আমদ (আ) এর যুগে তাঁর দুই পুত্রের কুরবানীর পর থেকে হযরত ইব্রাহীম (আ) সহ প্রত্যেক নবীর শরীয়তে কুরবানীর বিধান জারি ছিল। প্রকৃতপক্ষে কুরবানীর ইতিহাস কতটা প্রচীন যতটা প্রচীন দ্বীন তথা মানবজাতির ইতিহাস।
.
  কুরবানীর বর্তমান ইতিহাসঃ 
বর্তমানে ঈদুল আযহার কুরবানী হযরত ইব্রাহীম (আ) এর ঐতিহাসিক কুরবানীর অনুসরণ। আজ থেকে প্রায় ৪ হাজার বৎসর পূর্বে ইরাকের 'ঊর' নামক স্থানে ইব্রাহীম (আ) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা, পরিবার, রাষ্ট্র ও সমাজের সকলের বিরোধীতা ও প্রতিরোধের মুখে তিনি তাওহীদের প্রচারে অনড় ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি ইরাক থেকে ফিলিস্তিনে হিজরত করেন। বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত তিনি নিঃসন্তান ছিলেন।
আল্লাহ বলেন:
.
ﺭَﺏِّ ﻫَﺐْ ﻟِﻰ ﻣِﻦَ ﭐﻟﺼَّٰﻠِﺤِﻴﻦَ ﻓَﺒَﺸَّﺮْﻧَٰﻪُ ﺑِﻐُﻠَٰﻢٍ ﺣَﻠِﻴﻢٍ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺑَﻠَﻎَ ﻣَﻌَﻪُ ﭐﻟﺴَّﻌْﻰَ ﻗَﺎﻝَ ﻳَٰﺒُﻨَﻰَّ ﺇِﻧِّﻰٓ ﺃَﺭَﻯٰ ﻓِﻰ ﭐﻟْﻤَﻨَﺎﻡِ ﺃَﻧِّﻰٓ ﺃَﺫْﺑَﺤُﻚَ ﻓَﭑﻧﻈُﺮْ ﻣَﺎﺫَﺍ ﺗَﺮَﻯٰۚ ﻗَﺎﻝَ ﻳَٰٓﺄَﺑَﺖِ ﭐﻓْﻌَﻞْ ﻣَﺎ ﺗُﺆْﻣَﺮُۖ ﺳَﺘَﺠِﺪُﻧِﻰٓ ﺇِﻥ ﺷَﺎٓﺀَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦَ ﭐﻟﺼَّٰﺒِﺮِﻳﻦَ ﻓَﻠَﻤَّﺎٓ ﺃَﺳْﻠَﻤَﺎ ﻭَﺗَﻠَّﻪُۥ ﻟِﻠْﺠَﺒِﻴﻦِ ﻭَﻧَٰﺪَﻳْﻨَٰﻪُ ﺃَﻥ ﻳَٰٓﺈِﺑْﺮَٰﻫِﻴﻢ ﻗَﺪْ ﺻَﺪَّﻗْﺖَ ﭐﻟﺮُّﺀْﻳَﺎٓۚ ﺇِﻧَّﺎ ﻛَﺬَٰﻟِﻚَ ﻧَﺠْﺰِﻯ ﭐﻟْﻤُﺤْﺴِﻨِﻴﻦَ إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ ٱلْبَلَٰٓؤُا۟ ٱلْمُبِينُ وَفَدَيْنَٰهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِى ٱلْءَاخِرِينَ سَلَٰمٌ عَلَىٰٓ إِبْرَٰهِيمَ 

.
"(ইবরাহীম বলল) হে আমার প্রতিপালক, আমাকে এক সৎকর্ম পরায়ণ সন্তান দান কর। অতঃপর আমি তাকে এক স্থির-বুদ্ধি পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। অতঃপর সে যখন তার পিতার সঙ্গে কাজ করবার মত বয়সে উপনীত হল তখন ইবরাহীম বলল, বৎস, আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে আমি যবাই (কুরবানী) করছি, এখন তোমার অভিমত কি বল? সে বলল, হে আমার পিতা, আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন। আল্লাহ ইচ্ছা করলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহীম তার পুত্রকে কাত করে শায়িত করল, তখন আমি তাকে আহবান করে বললাম, হে ইবরাহীম, তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করলে। এভাবেই আমি সৎকর্ম পরায়ণদিগকে পুরস্কৃত করে থাকি।
নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আর আমি এক মহান যবেহের (কুরবানীর) বিনিময়ে তাকে মুক্ত করলাম। আর তার জন্য আমি পরবর্তীদের মধ্যে সুখ্যাতি রেখে দিয়েছি। ইবরাহীমের প্রতি সালাম।"
(সূরা সাফফাতঃ১০০-১০৯)
.
  আর এ জন্যই রাসূলুল্লাহ (সা) ইব্রাহীম (আ) এর কুরবানী কে তাঁর উম্মতের জন্য আদর্শ বলে অবহিত করেছেন।
َ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ قَالَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ ﷺ يَا رَسُولَ اللهِ مَا هَذِهِ الْأَضَاحِيُّ قَالَ «سُنَّةُ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ .
.
যায়েদ ইবনে আরকাম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই কোরবানী কী? তিনি বলেন, তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আ) এর (ঐতিহাসিক) সুন্নাত তথা আদর্শ। 

[মুসনাদে আহমাদ  হাঃ১৮৭৯৭; ইবনে মাজাহ (ইফাবা) হাঃ৩১২৭]
------------------------------------------------
লেখকঃইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।         

Post a Comment

0 Comments