Recent Tube

আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) এর বিরুদ্ধে ত্বকী উসমানীর অভিযোগ ও আমাদের জবাবঃ-৪, মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

----------------------------------------------
  রাসূলুল্লাহ (সা) সুস্পষ্ট ভাবে ঘোষণা দিয়েছেনঃ
"لاَ يَتَوَارَثُ أَهْلُ مِلَّتَيْنِ شَتَّى"‏ ‏

    দুটি  ভিন্ন  মিল্লাতের  (জাতির)  অনুসারীরা  একে  অপরের  ওয়ারিছ  হতে  পারে না।
[সুনানে আবূ দাউদ, কিতাবুল ফারায়িয, হাদীস নং ২৯০১, সনদ সহীহ]
.
لاَ يَرِثُ الْمُسْلِمُ الْكَافِرَ وَلاَ الْكَافِرُ الْمُسْلِمَ

   মুসলিম কাফেরের (ওয়ারিছ) উত্তরাধিকারী হয় না আর কাফিরও মুসলিমের (ওয়ারিছ) উত্তরাধিকারী হয় না। 
[সহীহ বুখারী, কিতাবুল ফারায়িয, হাঃ৬৭৬৪; আধুনিক প্রকাশনী, হাঃ৬২৯৬, ইফাবা, হাঃ৬৩০৮;  সহীহ মুসলিম, হাঃ১৬১৪, মুসনাদে আহমাদ, হাঃ২১৮০৬]
.
    রাসূলুল্লাহ (সা) এর এসব প্রকাশ্য ও সুস্পষ্ট হাদীসের মোকাবিলায় নিম্নক্ত হাদীস পেশ করে ত্বকী সাহেব কিয়াসের আশ্রয় নিয়েছেন:

"الاسلام يعلو ولا يعلي عليه."

"ইসলাম সর্বদা বিজয়ী থাকে, পরাজিত হয় না।" 
.
"‏ الإِسْلاَمُ يَزِيدُ وَلاَ يَنْقُصُ ‏"‏ ‏.‏‏
"ইসলাম বৃদ্ধি পায়, হ্রাস পায় না।"
.
    এই হাদীস দুটি সহীহ নয়। এ উভয় হাদীসের সনদে 'ইনকেতা' রয়েছে। তাই শায়খ আলবানী সহ একাধিক মুহাদ্দিস এই দুইটি হাদীসকে জঈফ বলেছেন।

    তাছাড়া এ হাদীস দুটির সাথে ওয়ারিছের কোন সম্পর্ক নাই। এর মোকাবিলায় বিশেষ করে ওয়ারিছী মাসয়ালায় কুরআন ও সুন্নাহরর দলিলই সুস্পষ্ট ও অকাট্য। সুতরাং কুরআন হাদীসের সুস্পষ্ট ও অকাট্য দলিলের মোকাবিলায় কোন কিয়াস করার অবকাশ আদৌ কারও নেই।  
.
     ত্বকী উসমানীর দলিল যেভাবে পূর্বেই খন্ডন করেছেন মুল্লা আলী ক্বরী (রাহঃ):
হযরত উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। 
أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ يَرِثُ الْمُسْلِمُ الْكَافِرَ وَلاَ الْكَافِرُ الْمُسْلِمَ
.
    নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিম কাফেরের (ওয়ারিছ) উত্তরাধিকারী হয় না আর কাফিরও মুসলিমের (ওয়ারিছ) উত্তরাধিকারী হয় না। 
[সহীহ বুখারী, কিতাবুল ফারায়িয, হাঃ৬৭৬৪; আধুনিক প্রকাশনী, হাঃ৬২৯৬, ইফাবা, হাঃ৬৩০৮;  সহীহ মুসলিম, হাঃ১৬১৪, মুসনাদে আহমাদ, হাঃ২১৮০৬]
.
    এই হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিখ্যাত মুহাদ্দিস মুল্লা আলী ক্বারী (রাহঃ) তাঁর লিখিত মিশকাতের শরাহ মিরকাতে মুয়াবিয়া (রা) এর পক্ষাবলম্বীদের লক্ষ্য করে বলেনঃ
যারা মুসলিমদের কাফিরের ওয়ারিছ নির্ধারিত করেন তারা রাসূলুল্লাহ (সা) এর হাদীস:
الاسلام يعلو ولا يعلي عليه. 
"ইসলাম সর্বদা বিজয়ী থাকে, পরাজিত হয় না।" 
এই হাদীসকে দলিল হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। 
.
    এ দলিল কে খন্ডন করতে গিয়ে মুল্লা আলী ক্বারী (রাহঃ) বলেনঃ
وحجة الجمهر هذا الحديت الصحيح والمراد من حديت الاسلام فضل الاسلام علي غيره ليس فيه تعرض للميراث فلايترك النص الصريح- 
.
    জমহুর উলামার দলিল হলো উসামা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীস। ( لاَ يَرِثُ الْمُسْلِمُ الْكَافِرَ وَلاَ الْكَافِرُ الْمُسْلِم মুসলিম কাফিরের ওয়ারিছ হয় না এবং কাফিরও মুসলিমদের ওয়ারিছ হয় না)
আর "ইসলাম সর্বদা বিজয়ী থাকে" এ হাদীসের অর্থ হলো অন্যান্য ধর্মের উপর ইসলামের মর্যাদা সর্বদা অনেক উচ্চে। ওয়ারিছের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং হাদীসের সুস্পষ্ট বিধানকে পরিত্যাগ করা যাবে না।
(মিরকাত শরহে মিশকাত, কিতাবুল ফারায়িয দ্রঃ) 
.
     আল্লামা ত্বকী উসমানী তার বইয়ে কথায় কথায় আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ এর সমালোচনা করে  বলেছেন, মাওলানা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ নাকি এবারত বা কোন কিছু উল্লেখ করার সময় ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছাটাই করে দেন। তিনি নাকি বিশ্বস্ততার পরিচয় দিতে পারেনি! ত্বকী সাহেব যে দোষে আল্লামা মওদুদীকে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছেন, সে দোষে ত্বকী সাহেব নিজেই দোষী। 
আব্দুল্লাহ বিন মাকালেরর একটি উক্তি ইবনে হাজার আস্কালানী বর্ণনা করেছেন। ত্বকী উসমানী সাহেব সেটি উল্লেখ করে এভাবে তরজমা করেছেন। 
"আর কোন সিদ্ধান্ত আমার কাছে মুয়াবিয়ার সিদ্ধান্ত থেকে উত্তম মনে হয় নি যে, আমরা আহলে কিতাবের উত্তরাধিকারী হবো, কিন্তু ওরা আমাদের উত্তরাধিকারী হতে পারবে না। যেমন, ওদের নারীদের আমরা বিবাহ করতে পারি অথচ ওরা তা পারে না।"
(ইতিহাসের কাঠঘরায় মুয়াবিয়া রাঃ, পৃ৩৫)
.
       আব্দুল্লাহ বিন মাকালের এই উক্তিটি ইবনে হাজার আস্কালানী কিছু দূর অগ্রসর হয়ে নিজেই তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু ত্বকী সাহেব প্রত্যাখ্যান করার বিষয়টি তার কিতাবে উল্লেখ না করে বরং ইচ্ছাকৃত ভাবে চেপে দিয়েছেন। ইবনে হাজার (রঃ) নিজেই আবার বলেন:

 ﻓﺎﻥ ﺍﻟﺪ ﻟﻴﻞ ﻳﻨﻘﻠﺐ ﻓﻴﻤﺎ ﻟﻮ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺬﻱ ﺍ ﺭ ﺙ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﻻﻧﻪ ﻳﺘﺰﻭﺝ ﺍﻟﻴﻨﺎ 

   “দলীলটি তো আমাদের বিপক্ষেও প্রযোজ্য হতে পারে। একজন জিম্মি তো একথা বলতে পারে যে, আমিও মুসলমানের ওয়ারিশ। কারণ মুসলমানগণ আমাদের নারীদের বিবাহ করতে পারে।”
[ফাতহুল বারী শরহে সহীহুল বুখারী, অধ্যায়: মুসলিম কাফির উত্তরাধিকার]
.
     ত্বকী উসমানীর (দলিল) কিয়াসের বিরুদ্ধে আল্লামা ইবনে হাজার আস্কালানী (রাহঃ) আরও বলেনঃ
وحجة الجمهور انه قياس في معارضة انص وهو صريح في المراد ولا قياس مع وجوده. اما اكديث فليس نص في المراد بل هو محعول انه يفضل غيره من الديان ولا تعلق له بالارث وقد عارضه قياس اخر وهو ان التوارث يتعلق بالولاية ولا ولاية بين المسلم والكافر لقوله تعالي: يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا لَا تَتَّخِذُوا ٱلْيَهُودَ وَٱلنَّصَٰرَىٰٓ أَوْلِيَآءَۘ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَآءُ بَعْضٍۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ‌و مِنْهُمْۗ.
.
     জমহুরের দলিল হলো- মুসলিমদের কাফিরের ওয়ারিছ বানানোর কিয়াসটা 'নস' তথা কুরআনের সুস্পষ্ট আয়াতের পরিপন্থী। কোন বিশেষ মাসয়ালা সম্পর্কে কুরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশসূচক দলিলের উপস্থিতিতে কিয়াসের কোনই কার্যকারিতা থাকে না। তবে ওয়ারিছের মাসয়ালার সাথে কিয়াসের সমর্থনে পেশকৃত হাদীসটির কোনই সম্পর্ক নেই। বরং এর তাৎপর্য এতোটুকু যে, ইসলাম অন্যান্য ধর্মের চেয়ে বেশি মর্যাদাবান। হাদীসটি ওয়ারিছী মাসয়ালার কোন দলিল নয়। অধিকন্তু এই কিয়াস অপর একটি কিয়াসের সাথেও সাংঘর্ষিক। যেমন, ওয়ারিছের প্রসঙ্গটি অভিভাবক ও বন্ধুত্বের সাথে সম্পৃক্ত। মুসলিম ও কাফিরের সাথে (اولياء) অভিভাবকত্বের সম্পর্ক থাকার প্রশ্নই উঠে না। কেননা আল্লাহ তা'য়ালার ঘোষণা হলোঃ 
হে মুমিনগণ! ইহুদী ও নাসারাকে তোমরা নিজেদের অভিভাবক বা বন্ধু বানিও না। তারা পরস্পর বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের অভিভাবক বা বন্ধু বানাবে, সে ওদেরই শামিল। (সূরা মায়িদাঃ৫১)
[ফাতহুল বারী শরহে সহীহুল বুখারী, অধ্যায়:মুসলিম কাফির উত্তরাধিকার]
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলান,         

Post a Comment

0 Comments