Recent Tube

কুরবানীর বিধানঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

কোরআন ও হাদীসের আলোকে  কুরবানীর বিধানঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম। 
---------------------------------------------
কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কুরবানী বিধেয় হওয়ার ব্যাপারে সকল মুসলিম একমত। এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। (মুগনী ১৩/৩৬০; ফাতহুল বারী ১০/৩)। তবে এর হুকুম কি? ওয়াজিব না সুন্নাত? এ বিষয়ে ইমাম ও ফকীহগণের দু'টি মত রয়েছে। 
.
ইমাম আযম আবূ হানিফা (রাহঃ), ইমাম আওযায়ী (রাহঃ), ইমাম লাইস (রাহঃ) সহ প্রমুখ ইমামদের মতে ওয়াজিব। ইমাম মালেক (রাহঃ) ও ইমাম আহমদ (রাহঃ) থেকে একটি মত বর্ণিত হয়েছে যে, তারাও ওয়াজিব বলেছেন।
আবার কিছু উলামা কুরবানী সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলেছেন। ইমাম মালেক (রাহঃ) ও শাফেয়ী (রাহঃ) প্রসিদ্ধ মত এটি। কিন্তু এ মতের প্রবক্তারা বলেছেন যে, যদি কোন জনপদের লোকেরা সামার্থ্য থাকা সত্বেও সম্মিলিত ভাবে কুরবানী ত্যাগ করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে। কেননা কুরবানী হলো ইসলামের একটি শিয়ার বা মহান নিদর্শন। 
(মুহাম্মাদ বিন উসাইমীন, আহকামুল উযহিয়্যাহ, পৃঃ২৬)
.
সারকথা হলো যারা কুরবানী কে ওয়াজিব বলেছেন তাদের মত অধিকতর শক্তিশালী। কেননা আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنْحَرْ 
.
অতএব তোমার রবের উদ্দেশ্যেই সালাত পড় এবং কুরবানী কর।
(সূরা কাউসারঃ২)
.
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ «مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ وَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا
.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদের মাঠের কাছেও না আসে।
[মুসনাদে আহমদ: ২/৩২১; ইবনে মাজাহ (ইফাবা) হাঃ৩১২৩; মুস্তাদরাকে হাকীম: ৪/২৫৮; সহীহুত তারগীব: ১/২৬৪। ইমাম হাকীম ও ইমাম যাহাবী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
.
রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ مِخْنَفِ بْنِ سُلَيْمٍ قَالَ كُنَّا وَقُوفًا عِنْدَ النَّبِيِّ ﷺ بِعَرَفَةَ فَقَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ «إِنَّ عَلَى كُلِّ أَهْلِ بَيْتٍ فِي كُلِّ عَامٍ أُضْحِيَّة.
.
মিখনাফ ইবনে সুলাইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আরাফাতের ময়দানে মহানবী ﷺ এর নিকট অবস্থানরত ছিলাম। তখন তিনি বলেনঃ হে জনগণ! প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকে দায়িত্ব হলো প্রতি বছর একটি কুরবানী দেওয়া।
[ইবনে মাজাহ, (ইফাবা) হাঃ৩১২৫; তিরমিযী ১৫১৮, নাসায়ী ৪২২৪, আবূ দাউদ ২৭৮৮, আহমাদ ১৭৪৩২। ইমাম তিরমিজী ও আলবানীর মতে হাদীসটি হাসান]
.
ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে কুরবানীদাতা কে আবার কুরবানী করার নির্দেশ:
عَنِ الْبَرَاءِ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ أَوَّلَ مَا نَبْدَأُ بِه„ فِي يَوْمِنَا هٰذَا أَنْ نُصَلِّيَ ثُمَّ نَرْجِعَ فَنَنْحَرَ مَنْ فَعَلَه“ فَقَدْ أَصَابَ سُنَّتَنَا وَمَنْ ذَبَحَ قَبْلُ فَإِنَّمَا هُوَ لَحْمٌ قَدَّمَه“ لأَ÷هْلِه„ لَيْسَ مِنَ النُّسُكِ فِي شَيْءٍ فَقَامَ أَبُو بُرْدَةَ بْنُ نِيَارٍ وَقَدْ ذَبَحَ فَقَالَ إِنَّ عِنْدِي جَذَعَةً فَقَالَ اذْبَحْهَا وَلَنْ تَجْزِيَ عَنْ أَحَدٍ بَعْدَكَ.
.

হযরত বারা’ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের এ দিনে আমরা সর্বাগ্রে যে কাজটি করব তা হল সালাত আদায় করব। এরপর ফিরে এসে আমরা কুরবানী করব। যে ব্যক্তি এভাবে তা আদায় করল সে আমাদের নীতি অনুসরণ করল। আর যে ব্যক্তি আগেই যবহ্ করল, তা এমন গোশ্তরূপে গণ্য যা সে তার পরিবারের জন্য আগাম ব্যবস্থা করল। এটা কিছুতেই কুরবানী বলে গণ্য নয়। তখন আবূ বুরদাহ ইবনু নিয়ার  দাঁড়ালেন, আর তিনি সালাতের আগেই যবহ্ করেছিলেন। তিনি বললেনঃ আমার নিকট একটি বক্রীর বাচ্চা আছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাই যবহ্ কর। তবে তোমার পরে আর কারো জন্য তা (বক্রীর বাচ্চা) যথেষ্ট হবে না।  
[সহীহ বুখারী হাঃ৫৫৪৫, (ইফাবা) হাঃ৫০৩৪  মুসলিম ৩৫/১, হাঃ ১৯৬১, আহমাদ ১৬৪৮৫]
.
আল্লামা আবদুর রহীম রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ وانحر 'কুরবানী কর' (সূরা কাউসারঃ২) আল্লাহর এই সুস্পষ্ট নির্দেশ হতে যে, কুরবানী ওয়াজিব প্রমাণিত হয় তাতে সন্দেহ নাই। এতদ্ব্যতীত স্বয়ং নবী কারীম (সা)ও অনুরূপ ভাবে এই নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন,
من كان ذبح قبل ان يصلي فليعد مكانها اخري. (مسند احمد، بيهقي)
যে লোক ঈদের নামাযের আগেই কুরবানী করে, সে যেন নামাযের পর তার স্থলে আর একটি কুরবানী করে।
এটি রাসূলুল্লাহ (সা) এর আদেশ এবং রাসূলুল্লাহ (সা) এর আদেশ হতে ওয়াজিব প্রমাণিত হয়। এটি সর্বসম্মত।
(মুহাম্মদ আবদুর রহীম, হাদীস শরীফ ২/৩৪৪)
.
সুতরাং 'কুরাআন হাদীস' আলোকে বলা যায় কুরবানী ওয়াজিব, এটাই নির্ভুল মত। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ নিজেও দলিলের আলোকে এ মত দিয়েছেন।
.
বিঃদ্রঃ 
স্বাভাবিক সাংসারিক প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ছাড়া কোন মুকীম ব্যক্তির ঈদুল আযহার দিনে নিসাব পরিমাণ (৫২.৫০ তোলা রূপা বা ৭.৫০ তোলা সোনা অথবা তার মূল্য) মাল থাকলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।
[ইসলামিয়াত, (ইফাবা) পৃঃ৩৪৫-৩৪৬]
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলান।         

Post a Comment

0 Comments