Recent Tube

কুরবানির শিক্ষা: সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করাঃ মুহাম্মদ তানজিলইসলাম।


সালাত, সাওম, হজ্জ, যাকাতের ন্যায় মৌলিক ইবাদতের মত কুরবানিও ট্রেনিং কোর্স। সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করতে হবে- কুরবানি মূলত এই প্রশিক্ষণই প্রদান করে। তাই প্রকৃত মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করার স্বার্থে নিজের জীবনও কুরবান করে দেয়। তবে যারা প্রকৃত মুমিন মুত্তাকী নয় বরং মুনাফিক তারা আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের শিক্ষা পায় না। আসুন বিষয়টি সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করি।
.
মহান অাল্লাহ বলেন,
رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ. فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيمٍ. فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَىٰ فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرَىٰ ۚ قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ ۖ سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ. فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ. وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ. قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا ۚ إِنَّا كَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ. إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ الْبَلَاءُ الْمُبِينُ. وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ.
"(ইবরাহীম বলল,) হে আমার রব, আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন। অতঃপর তাকে আমি পরম ধৈর্যশীল একজন পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিলাম। অতঃপর যখন সে তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন সে (ইবরাহী) বলল, হে প্রিয় বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, অতএব দেখ তোমার কী অভিমত। সে (পুত্র) বলল, হে আমার পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন। আমাকে ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন। অতঃপর তারা উভয়ে যখন (আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের জন্য) আত্মসমর্পণ করল এবং সে (ইবরাহীম) তাকে কাত করে শুইয়ে দিল, তখন আমি তাকে আহবান করে বললাম, হে ইবরাহীম, তুমি তো স্বপ্নাদেশকে বাস্তবায়ন করেছ। নিশ্চয় আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আর আমি এক মহান যবেহের বিনিময়ে তাকে মুক্ত করলাম।" (সূরা সাফফাতঃ৩৭/১০০-১০৭)
.
এখানে লক্ষ্য করুন! আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য পিতা যখন পুত্রকে কাত করে শুইয়ে দিলেন তখনই আল্লাহ ইবরাহীম (আ) বললেন, তুমি স্বপ্নাদেশ বাস্তবায়ন করেছ। কারণ এখানে মূল কথা হলো মনের কুরবানি। ইবরাহীম (আ) ও ইসমাঈল (আ) মন থেকে আল্লাহর বিধান মেনে নিয়েছেন। তাই অাল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করার জন্য পিতা তাঁর মন থেকে ছেলের মায়া পরিপূর্ণ ভাবে কুরবানি দিয়ে আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। আর পুত্র তাঁর মন থেকে পিতামাতা ও দুনিয়ার সকল মায়া কুরবানি দিয়ে আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। অর্থাৎ জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করতে তাঁরা প্রস্তুত। এ জন্যই শায়িত করার সাথে সাথেই আল্লাহ জানিয়ে দিলেন যে, তাঁর কুরবানি কবুল হয়েছে। আর এর বিনিময়ে আল্লাহ জান্নাতি পশু দিয়ে কুরবানির ব্যবস্থা করলেন।
.
সুতরাং কুরবানির মূল বিষয় হলো আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে- উদ্দেশ্যের বিশুদ্ধতা। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَٰكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَىٰ مِنْكُمْ.
"এগুলোর- অর্থাৎ কুরবানিকৃত পশুর গোশত ও রক্ত আল্লাহর নিকট পৌঁছে না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।" (সূরা হাজ্জঃ২২/৩৭)
.
তাহলে মূল কথা হলো অন্তরের তাকওয়া, আল্লাহ ভীতি। আল্লাহর ভয়ে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করে অাল্লাহর নিকট সাওয়াব পাওয়ার আশা এবং পরিপূর্ণ ভাবে তাগুতী বিধান বর্জন করে আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও শাস্তি থেকে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণই  প্রদান করে কুরবানি। তবে সবাই যে এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের শিক্ষা নিবে তা নয়। যারা আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করার কাজকে ক্ষমতা দখলের অপবাদ দিয়ে তাগুতী শাসন স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে চলে, আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে তাগুতের নিকট বিচার প্রার্থনা করে কিংবা তাগুতী শাসনে সন্তুষ্ট থেকে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তারা সহীহ মুনাফিক, যদিও তারা ঈমানের দাবী করে।
.
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا. وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَىٰ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنْكَ صُدُودًا.
"তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা দাবী করে যে, নিশ্চয় তারা ঈমান এনেছে তার উপর, যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে তোমার পূর্বে। তারা তাগুতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে অস্বীকার করতে। আর শয়তান চায় তাদেরকে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত করতে। আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা (বিধানসরূপ) নাযিল করেছেন তোমরা তার আসো দিকে এবং রাসূলের দিকে, তখন মুনাফিকদেরকে দেখবে তোমার কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে ফিরে যাচ্ছে।" (সূরা নিসাঃ৪/৬০-৬১)
.
আর এ ধরনের মুনাফিকের কুরবানি সহ কোন ইবাদতই আল্লাহ তা'আলা কবুল করেন না। কেননা-
إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ.
'‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের থেকে গ্রহণ করেন।" (সূরা মায়িদাঃ৫/২৭)
.
অাল্লাহ তা'আলা আমাদের কুরবানির শিক্ষা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও তাগুতী বিধান অপসরণ করে সর্বক্ষেত্রে অাল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করার তওফিক দান করুন। (আমিন!)
--------------------------
লেখকঃইসলামি চিন্তাবিদ ও মাওলানা। 

Post a Comment

0 Comments