Recent Tube

আল্লাহ তা'য়ালার তত্ত্বাবধানে ইকামতে দীন : মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।


-
------------------------------------------------------------ 

    এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দীন কায়েমের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ 

أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ 
.
  তোমরা দীন কায়েম করবে এবং এতে বিচ্ছিন্ন হবে না।
(সূরা শুরাঃ১৩)
.
  আল্লাহ তা'য়ালা সকল বাতিল দীনের (বিধানের) উপর দীনুল হক্ব ইসলামকে বিজয়ী করার জন্যই রাসূলুল্লাহ (সা) কে প্রেরণ করেছেন। এরশাদ হচ্ছে 

هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ.
  .আহলে কিতাবদের ন্যায় আহলে হাদীসগণও মুতাশাবিহ্ আয়াতগুলোর পেছনে লেগে থাকে, যা ভ্রষ্টতা ছাড়া কিছুই নয়ঃ
  তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দীন সহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি একে সকল দীনের উপর বিজয়ী করেন।
(সূরা তওবাহঃ৩৩, সূরা ফাতাহাঃ২৮, সূরা সফঃ০৯) 
.
  রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর দীনকে কায়েম ও বিজয়ী করার সমস্ত কাজ সেই মালিকের সম্মুখে এবং তত্ত্বাবধানেই সম্পাদন করছিলেন, যিনি তাঁকে এ দায়িত্ব পালনের নির্দেশ প্রধান করেন। তিনি ছিলেন তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী। তিনি সবকিছু শুনছিলেন, দেখছিলেন, যা কিছু বিরোধিরা বলছিলো এবং করছিলো। যা কিছু তাঁর সঙ্গী-সাথীরা বলছিলো এবং করছিলো। আর যা কিছু স্বয়ং তিনি করছিলেন এবং বলছিলেন। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ 
وَٱصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ فَإِنَّكَ بِأَعْيُنِنَا
.
“তোমার রবের চূড়ান্ত ফায়সালা আসা পর্যন্ত তুমি সবর করো। তুমিতো আমারই দৃষ্টি পথে রয়েছো।”
(সূরা আত তূরঃ- ৪৮)।
.
لَا تَخَافَا ۖ إِنَّنِي مَعَكُمَا أَسْمَعُ وَأَرَىٰ

  তোমরা ভয় করো না। আমি তো তোমাদের সাথেই আছি। আমি সবকিছু শুনি ও দেখি
(সূরা তোয়াহাঃ- ৪৬)। 
.
وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنتُمْۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ 
.
“তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তিনি তোমাদের সাথে রয়েছেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ তা সব দেখেন ” 
(সূরা আল হাদীদঃ- ৪)।
.
وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ ٱلْوَرِيدِ 
.
“আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী (গলার শিরা) থেকেও অধিক নিকটবর্তী।”
(সূরা ক্বাফঃ১৬)
.
   আল্লাহর রাসূল কোন মানুষের সাহায্য সহযোগিতার মুখাপেক্ষী নন বরং আল্লাহর মুখাপেক্ষী। আল্লাহ প্রত্যক্ষভাবে গায়েব থেকে সাহায্য করতে সক্ষম। যেমন হিজরতের সময় করা হয়, যখন তার আপন গোত্র ও দেশবাসী তাকে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করে। সফরসঙ্গী হিসেবে একমাত্র সিদীকে আকবর রাদিয়াল্লাহু আনহু ছাড়া আর কেউ ছিলনা। পদব্রজী ও অশ্বারোহী শক্ররা সর্বত্র তার খোজ করে ফিরছে। অথচ আশ্রয়স্থল কোন মজবুত দুর্গ ছিল না। বরং তা এক গিরী গুহা, যার দ্বারপ্রান্তে পর্যন্ত পৌছেছিল তার শক্ররা। তখন গুহা সঙ্গী আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর চিন্তা নিজের জন্য ছিল না, বরং তিনি এই ভেবে সন্ত্রস্ত হয়েছিলেন যে, হয়তো শক্ররা তার বন্ধুর জীবন নাশ করে দেবে, কিন্তু সে সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন পাহাড়ের মত অনড়, অটল ও নিশ্চিত। শুধু যে নিজের তা নয়, বরং সফর সঙ্গীকেও অভয় দিয়ে বলছিলেন,
.
لَا تَحْزَنْ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَنَاۖ
.
ভীত হয়োনা, আল্লাহ আমাদের সাথে রয়েছেন।”
(সূরা তাওবাঃ ৪০)
.
مَا يَكُونُ مِنْ نَجْوَىٰ ثَلَاثَةٍ إِلَّا هُوَ رَابِعُهُمْ وَلَا خَمْسَةٍ إِلَّا هُوَ سَادِسُهُمْ وَلَا أَدْنَىٰ مِنْ ذَٰلِكَ وَلَا أَكْثَرَ إِلَّا هُوَ مَعَهُمْ أَيْنَ مَا كَانُوا.
.
   তিন জনের কোন গোপন পরামর্শ হয় না যাতে চতুর্থজন হিসেবে আল্লাহ থাকেন না, আর পাঁচ জনেরও হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি থাকেন না। এর চেয়ে কম হোক কিংবা বেশি হোক, তিনি তো তাদের সঙ্গেই আছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন।"
(সূরা মুজাদালাঃ- ৭)। 
.
     আলোচ্য আয়াতগুলো থেকে আমাদের সামনে যে অবস্থা প্রতিভাত হচ্ছে, তার দু’টি দিক রয়েছে। একদিকে রয়েছে সান্ত্বনা, প্রশান্তি, আস্থা, তাওয়াক্কুল, সাহস, নির্ভয়, যোশ-আবেগ এবং অন্যদিকে রয়েছে প্রতি মুহূর্তে নব উদ্দীপনা লাভের অসীম ভান্ডার। এর এক সোনালী উপমা হচ্ছে ‘সওর’ গুহার ঘটনা। বস্তুত নবীপাকের গোটা জিন্দেগীই এসব ঘটনায় ভরপুর। তেইশ বছরের নবুওয়াতী জিন্দেগীতে একটি মুহূর্ত এরূপ ছিলনা, যখন তাঁর মধ্যে মানসিক স্থবিরতা এসেছে। উম্মাত হিসাবে আমাদেরকেও ঈমান, আস্থা, তাওয়াক্কুল, অসীম সাহাস ও ধর্য্য নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা) ন্যায় দীন প্রতিষ্ঠা ও বিজয়ী করার জন্য প্রাণান্তকর ভাবে চেষ্টা করতে হবে।
আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا
.
    অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।
(সূরা আহযাবঃ২১)
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলান।         

Post a Comment

0 Comments