Recent Tube

সত্যের মাপকাঠির হাকীকত: মুহাম্মাদ তানজিল ইসলাম।

সত্যের মাপকাঠির হাকীকত: 
--------------------------------------------
      ব্রেহলবীরা রাসূলুল্লাহ (সা) কে হাজির নাজির, ইলমে গাইবের অধিকারী মনে রাসূলুল্লাহ (সা) কে আল্লাহর আসনে বসিয়ে দিয়েছন, আর তাদের এই শিরকি আকিদার বিরোধীতা করলে, প্রতিবাদ করলে নবীর দুশমন বলে ফতুয়া দেয়। ঠিক তেমনি দেওবন্দীরা সাহাবাগণ (রা) কে সত্যের মাপকাঠি মনে করে রিসালাতের আসনে বসিয়ে দিয়েছেন। তাদের এই ভ্রান্ত, কুফরী আকিদার বিরোধীতা করলে, তাদের এই ভ্রান্ত আকিদা খন্ডন করলে সাহাবী বিদ্বেষী বলে ফতুয়া দেয়।
.
     এর মূল হাকীকত হলোঃ দেওবন্দীরা শুধু মাত্র সাহাবাগণ (রা) কে সত্যের মাপকাঠি বলে তাঁদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা) এর রিসালাতের আসনে বসাইনি বরং তারা সাহাবাগণ (রা) এর পরবর্তী প্রজন্মকেও সত্যের মাপকাঠি বলে রিসালাতের আসনে বসিয়ে দিয়েছেন! 
.
     আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) এর সমালোচনা করতে গিয়ে দেওবন্দী আলেম ইউসুফ বিন্নোরী বলেনঃ
فاذا لم يكن اصحاب رسول الله (ص) معيار للحق و ميزانا لادين فمن الناس بعدهم .
"রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাহাবাগণ যদি দ্বীন ইসলামের মাপকাঠি ও সত্যের মানদন্ড না হন তাহলে তাদের পর আর কোন লোকগুলো দ্বীনের ও সত্যের মাপকাঠি হবে?"
(আল উস্তাজুল মাওদুদী, পৃঃ৪৫) 
.
      দেখুন, যাঁরা (সাহাবা) দ্বীন ইসলামের অনুসারী ছিলেন, তাঁদেরকে সত্যের মাপকাঠি বলেই শান্ত হননি বরং তাঁদের পরবর্তীদেরও সত্যের মাপকাঠি বলে রিসালাতের আসনে বসিয়ে দিয়েছেন! নাউযূবিল্লাহ!! 
.
      শুধু এতোটুকুই নয় বরং এই দেওবন্দীগণ নিজেদেরকেই সত্যের মাপকাঠি, তাদের ইত্তেবার উপরই সফলতা, তারাই মানদন্ড বলে দাবি করে থাবেন! দেওবন্দীদের গুরু রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী বলেন,
"মনযোগ দিয়ে শোন! সত্য তা-ই যা রশীদ আহমদের মুখ থেকে বের হয়। আমি শপথ করে বলছি, আমি কিছুই না, কিন্তু এ যুগের সৎপথ প্রাপ্তি এবং সফলতা নির্ভর করে আমার ইত্তিবার উপর।"
(তাযকিরাত আর-রশীদ, ২য় খন্ড, পৃঃ১৭; তাবলীগ জামাআত ও দেওবন্দীগণ, পৃঃ২২২) 
.
     নিজের ইত্তিবার উপরই সফলতা নির্ভর করে- এমন দাবি কি সাহাবাগণ (রা) করেছেন? কখনোই না। যে দাবি রাসূলুল্লাহ (সা) ছাড়া আর কেউ করেন নি, সে দাবি দেওবন্দীগণ করে কি তারা নিজেদের রিসালাতের আসনে বসিয়ে দিচ্ছেন না?
.
     রাসূলুল্লাহ (সা) ব্যতীত আর কোন ব্যক্তিই সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড নন। এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা'আত এর সহীহ ও নির্ভুল আকিদা। রাসূলুল্লাহ (সা) এর প্রতি ঈমান এনে তাঁর  আনুগত্য করার উপরেই হক-বাতিল, সফলতা-ব্যর্থতা, জান্নাত-জাহান্নাম নির্ভর করে। এ বিষয়ে শতাধিক দলিল কুরআন হাদীসে রয়েছে। 
.
‏ عن جابر رضي الله عنه قال‏:‏ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏ "‏مثلي ومثلكم كمثل رجل أوقد ناراً فجعل الجنادب والفراش يقعن فيها وهو يذبهن عنها وأنا آخذ بحجزكم عن النار، وأنتم تفلتون من يدي‏"‏ ‏(‏‏‏رواه مسلم‏‏‏)‏‏.‏ 
.
      জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার ও তোমাদের উদাহরণ ঐ ব্যক্তির মত যে আগুন প্রজ্জ্বলিত করল। অতঃপর তাতে উচ্চুঙ্গ ও পতঙ্গ পড়তে আরম্ভ করল, আর সে ব্যক্তি তা হতে তাদেরকে বাধা দিতে লাগল। আমিও তোমাদের কোমর ধরে তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাচ্ছি, আর তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে গিয়ে (জাহান্নামের আগুনে) পতিত হচ্ছ।’’

    সহীহ মুসলিম ২২৮৫, আহমাদ ১৪৪৭১, ১৪৭৯১।
.
এ হাদীস সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণ করে, রাসূলুল্লাহ (সা) ও সাহাবাগণ (রা) উভয় সমান নন, বরং রাসূলুল্লাহ (সা) হলেন সত্যের মাপকাঠি ও সাহাবাগণ (রা) হলেন সত্যপন্থী, তাঁর (সা) অনুসারী। যারা (সাহাবাগণ) রাসূলুল্লাহ (সা) এর প্রতি ঈমান এনে তাঁর আনুগত্যের উপরে অটল ছিলেন তারাই জান্নাতি। পক্ষান্তরে যারা (মুরতাদ) রাসূলুল্লাহ (সা) প্রতি ঈমানে পরবর্তীতে ঈমান ও আনুগত্যের গন্ডি থেকে বের হয়ে গিয়েছে, ছুটে গেছে কিংবা যারা (কাফের) রাসূলুল্লাহ (সা) আহবানে সাড়াই দেয়নি অথবা যারা (মুনাফিক) রাসূলুল্লাহ (সা) অনুসারী হওয়ার দাবি করে, যথাযথ আনুগত্য না করে, আনুগত্যের গন্ডি থেকে ছুটে গেছে তারা জাহান্নামি। অর্থাৎ হক #বাতিল নির্ভর করছে রাসূলুল্লাহ (সা) উপর কারণ তিনিই সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড।
.
    একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা)ই হলেন সত্যের মাপকাঠি। তিনিই মানুষের মাঝে সত্য মিথ্যার হক #বাতিল এর পার্থক্যকারী!
.
ُ ﻓَﻤَﻦْ ﺃَﻃَﺎﻉَ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻃَﺎﻉَ ﺍﻟﻠﻪَ
ﻭَﻣَﻦْ ﻋَﺼَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺪْ ﻋَﺼَﻰ ﺍﻟﻠﻪَ
ﻭَﻣُﺤَﻤَّﺪٌ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﺮْﻕٌ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ .
.
   যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করল, তারা আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবাধ্যতা করল, তারা আসলে আল্লাহরই অবাধ্যতা করল। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন মানুষের মাঝে (সত্য মিথ্যার) পার্থক্যের মাপকাঠি।
(সহীহ বুখারী হাঃ৭২৮১; আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৪)
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ  গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলান।    

Post a Comment

0 Comments