Recent Tube

যারা জুলুম ও অন্যায় কাজ করতেই থাকে, অবশেষে মৃত্যু এসে উপস্থিত হয় - এমন লোকের তওবা ও দুর্নাম করার বিধানঃ Tanzil Islam।

আল্লাহর দুনিয়ায় এমন কিছু লোক আছে, যারা শক্তি ও ক্ষমতার দাপটে মানুষের প্রতি জুলুম ও অন্যায় অত্যাচার করে এবং আল্লাহর নাফরমানী ও পাপের কাজ করতেই থাকে, এমন অবস্থায় তার মৃত্যু এসে যায়। মৃত্যুর পর অনেক মজলুম ও সাধারণ ব্যক্তি শোক প্রকাশ না করে আনন্দ চিত্তে "আলহামদুলিল্লাহ" বলে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। আবার অনেকেই বলেন, লোক যদিও আজীবন অন্যায় ও পাপের কাজ করেছে তবুও আমরা আশাবাদী আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন, তাকে ক্ষমা করে জান্নাতে পাঠাবেন। এ নিয়ে কিছু তর্কবিতর্কও হয় আমাদের মাঝে। এর সমাধান আমরা সরাসারি কুরআন থেকে নিতে পারি। 
.
মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
,وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا.
তাদের জন্য তাওবা নাই, যারা অন্যায় কাজ করতে থাকে, অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু এসে যায়, তখন বলে, আমি এখন তাওবা করলাম, আর তাওবা তাদের জন্যও নয়, যারা কাফির অবস্থায় মারা যায়;  আমি  এদের  জন্যই তৈরী করেছি যন্ত্রণাদায়ক আযাব। (সূরা নিসাঃ ৪/১৮)
.
এ আয়াত দ্বারা আমরা বুঝতে পারি, আল্লাহর জান্নাতে প্রবেশ করা এত সহজ ব্যাপার নয়। আপনি আজীবন আল্লাহর নাফরমানী করবেন, মানুষের প্রতি জুলুম করবেন আর মৃত্যুর সময় তওবা করে জান্নাতে যাবেন- এমন আশা করা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। এত সহজেই যদি সবাই জান্নাতে প্রবেশ করে, তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে কে? 
.
আবার অনেকেই বলেন, মৃত্যু ব্যক্তি যত বড়ই জালেম হোক, আল্লাহর নাফরমান হোক তার সমালোচনা বা দুর্নাম করা হারাম। দলিল হিসাবে তারা নিম্নে বর্ণিত হাদীসটি পেশ করেন। আয়িশাহ্ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, 
ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻻَ ﺗَﺴُﺒُّﻮﺍ ﺍﻷَﻣْﻮَﺍﺕَ ﻓَﺈِﻧَّﻬُﻢْ ﻗَﺪْ ﺃَﻓْﻀَﻮْﺍ ﺇِﻟَﻰ ﻣَﺎ ﻗَﺪَّﻣُﻮﺍ
নাবী (সঃ) তোমরা মৃতদের গালি দিও না। কারণ, তারা স্বীয় কর্মফল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। (সহীহ বুখারী হাঃ ৬৫১৬)
.
এর জবাবে আমরা বলব যে, শুধু মৃত্যু ব্যক্তি নয় বরং জীবিত লোকদেরও গালি দেওয়া, সমালোচনা করা, দুর্নাম করা হারাম। তবে এ নীতি সকলের জন্য সর্বদা প্রযোজ্য নয়। দলিল হিসাবে সূরা লাহাব বর্ণনা করা যেতে পারে। তবে আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর একটি সহীহ হাদীস পেশ করছি। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
 مَرُّوا بِجَنَازَةٍ، فَأَثْنَوْا عَلَيْهَا خَيْراً، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: « وَجَبَتْ » ثُمَّ مَرُّوا بِأُخْرَى، فَأثْنَوْا عَلَيْهَا شَرّاً، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: « وَجَبَتْ »، فَقَالَ عُمَرُ بنُ الخَطَّابِ رضي الله عنه: مَا وَجَبَت ؟ فَقَالَ: « هَذَا أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ خَيْراً، فَوَجَبتْ لَهُ الجَنَّةُ، وَهَذَا أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ شَرّاً، فَوَجَبَتْ لَهُ النَّارُ، أَنْتُمْ شُهَدَاءُ اللهِ فِي الأَرضِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
কিছু লোক একটা জানাযা নিয়ে পার হয়ে গেল। লোকেরা তার প্রশংসা করতে লাগল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘অবধারিত (ওয়াজিব) হয়ে গেল।’’ অতঃপর দ্বিতীয় আর একটি জানাযা নিয়ে পার হলে লোকেরা তার দুর্নাম করতে লাগল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘অবধারিত হয়ে গেল।’’ উমার ইবন খাত্ত্বাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘কী অবধারিত হয়ে গেল?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা যে এর প্রশংসা করলে তার জন্য জান্নাত, আর ওর দুর্নাম করলে তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গেল। তোমরা হলে পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী।’’ (সহীহ বুখারী হাঃ ১৩৬৭,২৬৪২, সহীহ মুসলিম হাঃ ৯৪৯, জামে তিরমিযী হাঃ ১০৫৮, সুনার নাসায়ী হাঃ ১৯৩২, সুনান ইবনু মাজাহ হাঃ ১৪৯১, মুসনাদে আহমাদ হাঃ ১২৪২৬, ১২৫২৬, ১২৬২৭, সহীহুত তারগীব হাঃ ৩৫১৩, সহীহুল জামে হাঃ ৫৯৫০, শারহুস্
সুন্নাহ হাঃ ১৫০৭)
.
এ হাদীসে দেখা যাচ্ছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সামনে সাহাবাগণ (রা) একটি মৃত্যু লোকের প্রশংসা করলেন এবং একটি লোকের দুর্নাম করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দুর্নামকারী সাহাবাদের বাধা দিলেন না। বরং তাঁদের সাক্ষ্য আল্লাহ তা'য়ালা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়ে দিলেন। সুতরাং এই ধরণের নাফরমান ও জালিম লোকের বিরুদ্ধে মজলুম ও সাধারণ লোক মন থেকে ঘৃণা করবে ও সমালোচনা করবে এটা স্বাভাবিক। আল্লাহ তা'য়ালা সাক্ষ্য দিচ্ছেন,
فَمَا بَكَتْ عَلَيْهِمُ السَّمَاءُ وَالْأَرْضُ وَمَا كَانُوا مُنْظَرِينَ.
অতঃপর আসমান ও যমীন তাদের জন্য কাঁদেনি এবং তারা অবকাশপ্রাপ্ত ছিল না। (সূরা দুখান ৪৪/২৯)
সুতরাং জালিমদের জন্য মায়া কান্না করে কোন লাভ নাই। আল্লাহ শ্রেষ্ঠ বিচারক তিনি সঠিক বিচারই করেন।

----------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ, গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা। 

Post a Comment

0 Comments