Recent Tube

তাগুত ‎ ﺍﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕَ ‏) এর পরিচয়ঃ ‎ ‎Tanzil ‎Islam ‎ইসলামি ‎চিন্তাবিদ ‎ও ‎লেখক।

সকল নবী-রাসূলের সংগ্রামী মিশনের অন্তর্ভুক্ত এটাও ছিল যে, 'তাগুতকে বর্জন কর'। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ 
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا ﺍﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕَ. 
''আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতিতে রাসূল প্রেরণ করেছি (যাঁদের মিশন ছিল এই) যে, তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর এবং তাগুতকে বর্জন কর।" (সূরা নাহলঃ ১৬/৩৬) 
এ আয়াত থেকে একটি সত্য স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, প্রত্যেক নবীর মিশনই ছিল 'তাগুত বিরোধী'। সবাই আল্লাহর দাসত্বের প্রতি আহবান জানিয়েছেন এবং তাগুত ও শিরক থেকে তাদের উম্মতদেরকে সাবধান করে গেছেন। এ ব্যাপারে প্রত্যেক নবীর মিশন ছিল এক। কোন হেরফের ছিল না। 
.
যেহেতু নবী-রাসূলগণ তাঁদের দাওয়াতী মিশনে তাগুত বিরোধীতা সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আলোকপাত করেছেন এবং কুরআনেও আল্লাহ তা'য়ালা একাধিক বার অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বর্ণনা করেছেন। এমন কি তাগুতকে অস্বীকার না করা পর্যন্ত কোন ব্যক্তির ঈমান আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انْفِصَامَ لَهَا ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ.
অতএব, যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারাঃ ২/২৫৬)
সুতরাং নবী-রাসূলদের মিশন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেতে এবং প্রকৃত ঈমানদার হতে হলে তাগুত সম্পর্কে ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করে বুঝে নেয়া আবশ্যক।
.
তাগুত ( ﺍﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕَ) শব্দটি আরবী ভাষায় সীমালংঘনকারী বা নির্ধারিত সীমা অতিক্রমকারী ব্যক্তিকে বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। (মুখতারুস সিহাহ, পৃঃ১৬৫) ইসলামী শরীআতের পরিভাষায় তাগুত বলা হয়ে থাকে এমন প্রত্যেক ইবাদাতকৃত বা অনুসৃত অথবা আনুগত্যকৃত কিংবা বিধানদাতা সত্তাকে, যার ব্যাপারে ইবাদতকারী বা অনুসরণকারী অথবা আনুগত্যকারী কিংবা বিধান পালনকারী তার বৈধ সীমা অতিক্রম করেছে আর ইবাদাতকৃত বা অনুসৃত অথবা আনুগত্যকৃত কিংবা বিধানদাতা সত্তা তা সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করে নিয়েছে বা সেদিকে আহবান করেছে। (ইলামুল মু'আক্কোয়ীন) 
.
সুতরাং আমরা বুঝতে পারছি যে, তাগুত এমন বান্দাকে বলা হয়, যে বন্দেগী ও দাসত্বের সীমা অতিক্রম করে নিজেই রব ও ইলাহ হবার দাবীদার সাজে এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজের বন্দেগী ও দাসত্বে নিযুক্ত করে। 
আল্লাহর মোকাবেলায় বান্দার প্রভূত্বের দাবীদার সাজার এবং বিদ্রোহ করার তিনটি পর্যায় রয়েছে। 
প্রথম পর্যায়ে বান্দা নীতিগতভাবে তার শাসন কর্তৃত্বকে সত্য বলে মেনে নেয়। কিন্তু কার্যত তার বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করে। একে বলা হয় ফাসেকী’। 
দ্বিতীয় পর্যায়ে এসে আল্লাহর শাসন-কর্তৃত্বকে নীতিগতভাবে মেনে না নিয়ে নিজের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয় অথবা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো বন্দেগী ও দাসত্ব করতে থাকে। একে বলা হয় কুফর ও শিরক। 
তৃতীয় পর্যায়ে সে মালিক ও প্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তার রাজ্যে এবং তার প্রজাদের মধ্যে নিজের বিধান চালাতে থাকে। এ শেষ পর্যায়ে যে বান্দা পৌছে যায়, তাকেই বলা হয় তাগুত। (তাফহীমুল কুরআন, সূরা বাকারাঃ২/২৫৭ তাফসীর)
.
আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ 
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا
"তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা দাবী করে যে, নিশ্চয় তারা ঈমান এনেছে তার উপর, যা (বিধানসরূপ) নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে তোমার পূর্বে। তারা তাগুতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে অস্বীকার করতে। আর শয়তান তাদেরকে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত করতে চায়।" (সূরা নিসাঃ৪/৬০)
.
এখানে তাগুত বলতে এমন শাসক বা বিচারক কে লক্ষ্য করা হয়েছে, যে আল্লাহর বিধানে বিচার ফয়সালা বা শাসন পরিচালনা না করে মানব রচিত বিধানে বিচার-ফয়সালা বা শাসন পরিচালনা করে।
আল্লামা ইবনে কাইয়্যুম বলেনঃ "তাগুত হচ্ছে ঐ সকল বাতিল ইলাহ, নেতা-নেত্রী, শাসক-বিচারক যাদের আনুগত্য করতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন করা হয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা) তথা কুরআন সুন্নাহ পরিত্যাগ করে যাদের কাছে বিচার ফায়সালা চাওয়া হয় অথবা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করা হয়; অথবা আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন দলিল প্রমাণ ছাড়াই যাদের বিধানের আনুগত্য করা হয়। অথবা অাল্লাহর আনুগত্য মনে করে যে সকল গাইরুল্লাহর ইবাদত করা হয়। এরাই হলো পৃথিবীর বড় বড় তাগুত। তুমি যদি এই তাগুতগুলো এবং মানুষের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য কর তবে অধিকাংশ মানুষকেই দেখতে পাবে যে, তারা আল্লাহর ইবাদতের পরিবর্তে তাগুতের ইবাদত করে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা) কাছে তথা কুরআন সুন্নাহর বিচার-ফায়সালা চাওয়ার পূর্বে তাগুতের কাছে বিচার-ফায়সালা নিয়ে যায়। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা) এর আনুগত্য করার পরিবর্তে তাগুতের আনুগত্য করে। আল্লাহর আইন অমান্য করে তাগুতের আইন মেনে চলে।" (ফাতহুল মাজীদ ১/২৬; আত-তাওহীদু আওলান ১/১৯)
.
সুতরাং নবীদের সংগ্রামী মিশন ছিল সকল প্রকার তাগুতী শাসনব্যবস্থা উৎখাত করা এবং ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম করে আল্লাহর আইন দ্বারা তাঁদের উম্মাতকে শাসন করা। আর এই মিশন বাস্তবায়ন করার জন্য তাঁরা এই বলে আহ্বান করেছেন যে, أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا ﺍﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕَ. তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর এবং তাগুতকে বর্জন কর। (সূরা নাহলঃ১৬/৩৬)
একই ভাবে কোন মু'মিন পারে না আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে তাগুতী বিধান মনে চলা। বরং মু'মিনদের আবশ্যিক ঈমানী দায়িত্ব হলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে আল্লাহর বিধান মেনে চলা। সুতরাং তাগুতী শাসন ও বিচারব্যবস্থা অপসরণ করে কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক শাসন ও বিচারব্যবস্থা কায়েম না করা পর্যন্ত পরিপূর্ণ ভাবে তওহীদ প্রতিষ্ঠা হতেই পারে না। অর্থাৎ তাগুতী বিধান অপসরণ করে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই আল্লাহর তওহীদ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আর আল্লাহ ও তাগুত উভয়ের সামনে একই সাথে মাথা নত করা হচ্ছে তওহীদ পরিপন্থী শিরক ও সুস্পষ্ট মুনাফিকী। যারা তাগুতী শাসন মানাকে ফরজ ইবাদত বলে তা মেনে চলে তারা সহীহ তাগুত পূঁজারী। 
.
শায়খ ইবনে উসাইমীন (রাহঃ) যথার্থই বলেছেনঃ 

"আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করা একদিক থেকে তা তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহর সাথে সম্পৃক্ত, অপরদিকে তা তাওহীদুল উলুহিয়্যাহর সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহকে একমাত্র আইনদাতা হিসাবে না মানলে তাওহীদুর রুবুবিয়্যাতে শিরক করা হয়। অপরদিকে আল্লাহ্‌র আইনকে না মেনে অন্য কারো আইনে বিচার-ফয়সালা করলে তাতে তাওহীদুল উলুহিয়াতে শিরক করা হয়। অনুরূপভাবে, আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য কোন আইনের বিচার-ফয়সালা মনে-প্রাণে মেনে নেয়াও তাওহীদুল উলুহিয়াতে শিরক করা হয়। সুতরাং এ থেকে একথা স্পষ্ট হয় যে, আইনদাতা হিসেবে আল্লাহকে মেনে নেয়া এবং আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করা তাওহীদের অংশ।" (মাজমু ফাতাওয়া ও রাসাইলে ইবন উসাইমীন ২/১৪০-১৪৪ ও ৬/১৫৮-১৬২)

Post a Comment

0 Comments