Recent Tube

মরুভূমীর হাতছানি - ২১ মুহিউল ইসলাম মাহিম চৌধুরী

                   মরুভূমীর হাতছানি 
                    পর্ব-২১.

 কা'বার পথে....
 
       মদীনা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে জুলহুলাইফা নামক জায়গা যার বর্তামান নাম বি'রে অালী বা অাবইয়ারে অালী । 
মদীনাবাসী তথা এদিক থেকে যারা অাসবে  তাদের মিকাত  এই বি'রে অালী । 
মিকাত হলো এহরাম বাঁধার স্থান । 
অার৷ যারা বাংলাদেশ থেকে প্লেনে অাসছেন এবং তাদের প্রথমা গন্তব্য যদি হয় মক্কা তাহলে তাঁরা ''ইয়ালালাম''পাহাড় অতিক্রম করার অাগেই এহরাম বাঁধবেন ।
মিকাতে পৌছার অাগে প্লেনে এহরাম বাঁধার ঘোষণা দেয়া হবে। 
    এখানে বলে রাখি  ইয়ালামলাম মক্বা অাল মুকাররামা থেকে থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এলাকাটি اসাদীয়া’ নামেও পরিচিত।ইয়ামেন,  বাংলাদেশ, ভারতবর্ষ, চীন, ইন্দোনেশিয়া,  মালয়েশিয়া, দক্ষিণ এশিয়াসহ পূর্বের দেশসমূহের লোকেরা এখান থেকে এহরামের নিয়ত করবেন ।

     আমরা বি'রে অালীতে পৌছার পর ওজু সারলাম । এখানে গোসল করারও জায়গা অাছে । 
      আমরা হোটেল থেকেই গোসল সেরে বেরিয়েছিলাম । এহরাম বাঁধার অাগে গোসল করা সুন্নত ।

      দুই রাকায়াত সুন্নাত নামাজ পড়ে উমরার জন্য এহরামের নিয়ত করলাম । অামরা যেহেতু হজ্জে তামাত্তু করবো সেহেতু হজ্জ ও উমরার নিয়ত একসাথে না করে অাপাততঃ ''অাল্লাহুম্মা লাব্বাইকা উমরাতান'' বলে উমরার নিয়ত করে ক্বিবলামুখী হয়ে সশব্দে তালবিয়া পাঠ করতে লাগলাম ''লাব্বাইকা অাল্লাহুম্মা লাব্বাইক । লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক।  ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি'মাতা লাকা ওয়াল মুলক লা শারীকা লাক । 
    মহান প্রভূর ডাকে দুই টুকরো সাদা কাপড়ে নিজেকে অাবৃত করে সাড়া দেওয়ার এমন অভূতপূর্ব অনুভূতি অামাকে যেন নশ্বর পৃথিবী থেকে অন্য কোন জগতে নিয়ে গেল । 
অাবার অামরা সবাই গাড়ীতে চেপে বসলাম।  সকল হজ্বযাত্রী স্বশব্দে তালবিয়া পাঠ করছেন । লাব্বায়িকা ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠলো পরিবেশ। 
      মদীনা অাল মুনাওয়ারা থেকে মক্কা অাল মুকাররামার দূরত্ব প্রায় সাড়ে চারশ কিলোমিটার । 
এ দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে গিয়ে চোখে পড়ছে অনেক অদেখা প্রান্তর  । মদীনা থেকে বের হয়ে প্রথমদিকে বেশকিছু খেজুরের বাগান চোখে পড়ে । শহর পেরিয়ে যতটা অগ্রসর হচ্ছি ততটাই যেন পরিবেশ পাল্টাচ্ছে৷ ।  যেদিকে চোখ যাচ্ছে সেদিকেই যেন বিরাণভূমি ।  কোথাও পাথুরে পাহাড় কোথাও মরুভূমি । ধূসর মরু প্রান্তরে পাহাড়ের সমন্বয় দুটিই মহান অাল্লাহর বিষ্ময়কর সৃষ্টি । 
দূরে বহুদূরে তাকালে দেখা যায় সামনে বুঝি পানি অাছে ।  অাসলে সূর্য রশ্মি বালুকার উপরে পড়ে একধরনের ঝলাকানির সৃষ্টি হয় অার তা দেখতে স্বচ্ছ জলাশয়ের মত লাগে । কোথাও বা মরুবালুকা দেখতে পরিচ্ছন্ন চালের গুড়ির মত মনে হয় । গাছগাছালিশূন্য প্রাণহীন মরিভূমির তুলনামূলক নিচুভূমিতে কেকটাস জাতীয় কাঁটাযুক্ত  হাল্কা ঘাস দেখা যায় । 
নেই তেমন কোন জীববৈচিত্র্য ।  কোথাও কোথাও বানর চোখে পড়ে । দেখা মেলে উঠের পাল । মরুভূমির মধ্যে উঠের চরে বেড়ানো দেখে একধরনের রোমাঞ্চকর অনুভূতির সৃষ্টি  হল । মরুভূমির জাহাজ বলে পরিচিত এই উঠের পাল দেখতে মরুভূমিতেই মানানসই । উট নামের এই মরুসন্তানেরা ইসলামের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ । ক্বাসওয়া নামক উটনীতে চড়ে হুজুর (স) মদীনায় হিজরত করেছিলেন । 
উটের পাল দেখে অামার মনে হল ওরা কী সেই উটনীর বংশধর যেই উটনী অামার প্রিয় নবীর বাহন ছিল? ।

   আসুন ফিরে যাই অাবারও মরুভূমির কাছে।  জানা যাক
কিভাবে সৃষ্টি হলো এই মরুভূমি?
ভূ-বিজ্ঞানীরা বলছেন-
পাহাড়, মালভূমি, বালি, অনুর্বর ভূমি প্রভৃতিই মরুভূমি গঠনের মূল উপাদান। কোনো নির্দিষ্ট জায়গার উপর দিয়ে যখন একনাগাড়ে শুধু একই দিকে বাতাস বয়ে যায়, তখন সেখানকার মাটিতে কোনোরূপ রস থাকে না।

    বাতাস সব শুষে নেয়। যা ক্রমে মরুভূমিতে পরিণত হয়।
বিষুবরেখার কাছাকাছি অঞ্চলে সাধারণত মরুভূমি বেশি দেখা যায়। এসব অঞ্চলে শীত-গরম সব মৌসুমেই সূর্যরশ্মি খাঁড়াভাবে পড়ে।

        মরুভূমিতে বছরে ২০ সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয় না। দিনে থাকে প্রচণ্ড গরম, আবার রাতে ঠান্ডা। মরুভূমিতে খেজুর, গম, বার্লি চাষ হয়। যাযাবররা পানির জন্য বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায় আর উট, ভেড়া, ছাগল প্রভৃতি পশু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে।
অবশ্য এখন অাধুনিক সৌদী অারবে সেরকম যায়াবরদের দেখা মেলেনা । 
যেখানেই মানুষ সেখানেই পানি এবং বিদ্যুতের লাইন সরবরাহ করেছেন সৌদী সরকার । 

     আকাশ ছোঁয়া পাহড়গুলোর দিকে তাকালাম। মনে হলো যেন জন্ম থেকে জ্বলছে ! কতকোটি বছর অাগে সৃষ্টি হয়েছে  পাহাড়গুলো কে জানে? তবে এই পৃথিবীর উৎপত্তি হয়েছিলো প্রচন্ড ঝাঁকুনি বা মহাবিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে ।  সাথে সাথে মহান অাল্লাহ পাহাড় সৃজন করে খুঁটি হিসেবে গেড়ে দিয়েছেন  যাতে পৃথিবী হেলাদোলা করতে না পারে! 
  
কোরঅান বলছে-আমি জমিনের ওপর সুদৃঢ় পর্বতমালা সৃষ্টি করেছি, যাতে তাদের নিয়ে পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে...।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩১)

   পাহাড় আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি। পাহাড়ের সৌন্দর্য মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করে। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে পাহাড়ের ওজন স্থাপন করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করেছেন। পাহাড় সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে পৃথিবী নড়াচড়া করতে না পারে। পৃথিবী নড়াচড়া করলে পৃথিবীর বুকে বসবাসকারীদের পৃথিবীতে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে যেত।মহান অাল্লাহ বলছেন-আমি কি জমিনকে করিনি বিছানাসদৃশ এবং পাহাড়গুলোকে পেরেকস্বরূপ?’ (সুরা : নাবা, আয়াত : ৬-৭)।
------------------------------------------------
লেখকঃ প্রবন্ধ লেখক কলামিস্ট।        


Post a Comment

0 Comments