Recent Tube

মুসলিম বিশ্বে ইসলামী আন্দোলনের কর্মপন্থা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী রহঃ

 
                          মুসলিম বিশ্বে
             ইসলামী আন্দোলনের কর্মপন্থা 
            সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী রহঃ 
            অনুবাদঃ মাহবুবুর রহমান। 

        پشم الله الرحمن الرحيم  

     সৌভাগ্যক্রমে মুসলিম জাহানের এ কেন্দ্রস্থলের নিকট ও দূরদূরান্ত হতে পবিত্র হজ্জ উপলক্ষে সমাগত বিপুল সংখ্যক সত্যের উপাসকদের এ সম্মেলনে কিছু বলার অবকাশ লাভ করলাম। এ সুযােগে তাদেরকে বিশেষ করে তাদের মধ্যকার যুব সমাজকে মুসলিম জাহানের বর্তমান অবস্থা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের কর্তব্য কি, তা জানাবার সুযােগ লাভ করায় আমি কৃতজ্ঞ। আমি এ সুযােগের পুরােপুরি সদ্ব্যবহারের চেষ্টা করবাে বিশেষ করে আমার অন্তরে একথা জাগরুক রেখে যে, হয়ত এ জীবনে এমন সুযােগ ও অবকাশ আর না-ও পেতে পারি। তাই আমি আজ প্রাণ খুলে আপনাদের সামনে আমার বক্তব্য পেশ করার প্রয়াসী হবাে। এতদসঙ্গে মুসলিম জাহানের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে যাতে খুব ভালভাবে অবহিত হয়ে পূর্ণ জ্ঞান-বুদ্ধি ও হেকমতের সাথে এর প্রতিকারে তৎপর হতে পারেন তাও বিবৃত করবাে।আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, বর্তমান জগতে ইসলামী আন্দোলনের এটিই হবে সর্বোত্তম কর্মপন্থা।
          মুসলিম জাহানের দু' অংশ,

     আপনারা জানেন, বর্তমান যুগে মুসলিম জাহান দু'টো বিরাট অংশে বিভক্ত। প্রথমাংশে রয়েছে মুসলিম সংখ্যালঘুগণ, যারা অল্প সংখ্যক বলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব রয়েছে অমুসলিমদের হাতে। আর দ্বিতীয় অংশে রয়েছে মুসলিম সংখ্যাগুরু এবং তৎসঙ্গে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও কর্তত্বও রয়েছে তাদেরই হাতে। এ দুটোর মধ্যে দ্বিতীয় অংশটির গুরুত্বই হলাে সমধিক। মুসলিম মিল্লাতের তাকদীর অনেকখানি এ সকল আযাদ মুসলিম দেশের ওপরই নির্ভর করছে—যাদেরকে তারা বর্তমানে অনুসরণ করছে এবং ভবিষ্যতেও অনুসরণ করবে। অবশ্য প্রথমােক্ত অংশের গুরুত্বও কিছুমাত্র কম নয়। স্ব স্ব দিক থেকে এ অংশগুলােও যথেষ্ট গুরুত্ব রাখে। কারণ কোন এক বিশেষ জীবন পদ্ধতি ও আকীদা-বিশ্বাসের লােক দুনিয়ার এসব অংশে প্রথম থেকেই বর্তমান রয়েছে এবং তাও আবার সামান্য সংখ্যক নয় বরং লক্ষ কোটি সংখ্যকের পূর্ব হতেই অস্তিত্ব রয়েছে। যারা উক্ত একই আকীদা-বিশ্বাসের বাস্তবায়নের জন্যে সচেষ্ট। কিন্তু সে আকীদা-বিশ্বাস ও জীবন পদ্ধতি যদি নিজেদের ঘরেই নাজেহাল হয়
[ ১৩৮২ হিজরীর ১৬ই জিলহজ্জ তারিখে মক্কার দেহলভী মসজিদে মাওলানা মওদুদীর আরবী ভাষায় প্রদত্ত ভাষণ।]

      তাদের চিন্তা ও মানসপটে এ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেল যে, পশ্চিমের বিজয় পথে যা কিছুই আসবে তা সবই নির্ভুল ও অবিসংবাদিত সত্য। তাকে বরণ করে নেয়াতেই রয়েছে উন্নত মনের পরিচয়। আর তা উপেক্ষা করা অজ্ঞতা ও স্থবিরতার পরিচায়ক।
সাম্রাজ্যবাদীদের চিরন্তন নীতি এই ছিল যে, যিনি যতবেশী পরিমাণে তাদের রং-এ রঞ্জিত হতে পারবে, তাকে জীবন ধারণের সর্বক্ষেত্রে ততবেশী।

       সুযােগ-সুবিধা দান করা হবে। এ নীতির পরিণাম বরং এর অনিবার্য পরিণতিই এই ছিল যে, শাসন বিভাগের উচ্চ হতে উচ্চতর পদসমূহ ফিরিঙ্গি ধর্মীয়রাই লাভ করলাে, সামরিক ও বেসামরিক বিভাগের বড় বড় পদসমূহ এসব ময়ূরপুচ্ছধারী কাকগুলাে অলংকৃত করতে লাগলাে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ এরাই অধিকার করলাে, আন্দোলনসমূহের নেতৃত্বও ওদেরই হাতে চলে গেলাে। পার্লামেন্টে এরাই প্রতিনিধি নির্বাচিত হলাে এবং মুসলিম দেশসমূহের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এরাই প্রাধান্য লাভ করলাে।

      এমতাবস্থায়, যখন মুসলিম দেশসমূহে আযাদী আন্দোলন শুরু হলাে তখন স্বাভাবিকভাবে তাদের জন্যে এসব আন্দোলনের নেতৃত্ব দান অপরিহার্য ছিল।কারণ শাসকদের ভাষা এদেরই জানা ছিল, এরাই তাদের মেযাজ-মর্জী বুঝতে সক্ষম ছিল, এরাই তাদের নিকটতম ছিল। এভাবে যখন মুসলিম দেশসমূহ আযাদ হতে লাগল তখন স্বাভাবিকভাবেই এ সকল রাষ্ট্রের ক্ষমতা-ইখতিয়ারও এদেরই নিকট হস্তান্তরিত হলাে এবং সাম্রাজ্যবাদী সরকারের খেলাফতও এরা লাভ করলাে। কারণ তাদের অধীনে থেকে রাজনীতি ও শাসন শৃংখলা এরাই পরিচালনা করছিল এবং সামরিক ও বেসামরিক বিভাগের উচ্চ পদসমূহ এরাই অলঙ্কৃত করছিল।

কয়েকটি উজ্জ্বল দিক

     সাম্রাজ্যবাদের শুরু ও শেষ এবং আযাদীলাভের পয়লা পর্যায় পর্যন্ত কিছু সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ দিক এমন রয়েছে যার উল্লেখ এখানে বিশেষ প্রয়ােজন। কারণ এগুলােকে বাদ দিয়ে বর্তমানে পরিস্থিতির সঠিক রূপ নিরূপন সম্ভব হবে না।

    প্রথমত, সাম্রাজ্যবাদীগণ তাদের শাসনামলের দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কোথাও সাধারণ মুসলমানদেরকে ইসলাম হতে বিচ্যুত করতে সক্ষম হয়নি। মূর্খতা ও অজ্ঞতার বিস্তার এরা নিশ্চয়ই করেছে, সাধারণ লােকদের চরিত্র ও নৈতিকতাবােধ যথেষ্ট নষ্ট করেছে, ইসলামী আইনের স্থলে অনৈসলামী আইন জারী করে মুসলমানদেরকে অমুসলিমসুলভ জীবন যাপনের প্রশস্ত পথ তৈরী করে দিয়েছে সত্য, কিন্তু তবুও দুনিয়ার কোন মুসলিম জাতি তাদের অধিনে থেকেও—জাতিগতভাবে ইসলাম বিদ্বেষী হতে পারেনি। আজো দুনিয়ার সকল দেশেই সাধারণ মুসলমান ইসলামের ওপর পূর্বের ন্যায়ই বিশ্বাসী। হতে পারে যে, এরা ইসলামকে জানে না, কিন্তু তবুও মানে এবং এর সাথে অন্তরের গভীর সম্পর্ক রাখে, এমন কি ইসলাম ছাড়া অপর কিছুর ওপর এরা সন্তুষ্টও নয়। এদের চরিত্র ও স্বভাব হতে পারে দুঃখজনকভাবে অধপাতে চলে গেছে কিন্তু তথাপি এদের ধারণা পরিবর্তিত হয়নি এবং চিন্তার মান যেমনটি ছিল আজও তেমনি রয়েছে। এরা সুদ, যেনা ও শরাবে লিপ্ত হতে পারে কিন্তু মুষ্টিমেয় কতিপয় ফিরিঙ্গিধর্মী ছাড়া সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে হয়ত এমন একজনও পাওয়া যাবে না, যারা এসব কাজকে হারাম বলে মনে করে না। এরা নাচ-গান ও এবম্বিধ লােভনীয় অশ্লীল কাজে লিপ্ত হতে পারে কিন্তু পাশ্চাত্যের মুষ্টিমেয় দাস ছাড়া সাধারণ মুসলমান একথা মানতে কিছুতেই রাযী নয় যে, এই হচ্ছে প্রকৃত সভ্যতা ও সংস্কৃতি। এভাবে পাশ্চাত্যের আইনের বাহুপাশে আবদ্ধ থেকেও মুসলমানদের মন-মস্তিষ্কে একথা অদ্যাবধি স্থান লাভ করতে সক্ষম হয়নি যে, ইসলামী আইন-বিধান জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। পাশ্চাত্যপন্থী লঘিষ্ঠ দলটি পাশ্চাত্য বিধি-বিধানের ওপর যতই ঈমান রাখুক না কেন, সাধারণ মুসলমান আজও ইসলামের হুকুম-আহকামকেই অবিনশ্বর বলে বিশ্বাস
করে এবং এর বাস্তবায়নও চায়।

    দ্বিতীয়ত, ওলামায়ে দ্বীন সকল জায়গায়ই জনসাধারণের নিকটবর্তী ছিল। তারা সাধারণের জবানেই কথা বলতাে এবং তাদেরই নীতি ও বিশ্বাসের প্রতিনিধিত্ব করতাে। তারা শাসন কর্তৃত্ব হতে বঞ্চিত ছিল এবং এক দীর্ঘকাল পর্যন্ত দুনিয়ার কাজ-কর্ম হতে দূরে থাকার কারণে মুসলমানদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং কোন দেশে শাসন কর্তৃত্ব নিজেদের হাতে নিয়ে তা পরিচালনা করার মতাে যােগ্যতা আর তাদের মধ্যে অবশিষ্ট ছিল না। ফলে কোন মুসলিম দেশেই তারা আযাদী আন্দোলনের পুরােভাগে থেকে নেতৃত্ব দান করতে পারেননি এবং আযাদী হাসিলের পরও কোন দেশের শাসন কর্তৃত্বে শরীক হতে পারেননি। আমাদের সমাজ জীবনে দীর্ঘদীন পর্যন্ত তাদের কাজ ছিল মােটরের ব্রেকের মতাে। পশ্চাতপন্থী ড্রাইভার দ্বারা পরিচালিত এ গাড়ির গতিকে তারা কিছু কিছু প্রতিহত করেছে মাত্র। কোন কোন দেশে এ ব্রেকও ভেংগে গেছে ; ফলে গাড়ি অপ্রতিহত গতিতে অধােমুখে ছুটে চলেছে, যদিও ড্রাইভার মনে করেছে যে, সে তার উদ্দিষ্ট লক্ষ্যেই পৌছুচ্ছে।

     তৃতীয়ত, দুনিয়ার যে দেশে যখনই কোন আযাদী আন্দোলন শুরু হয়েছে—যদিও সে আন্দোলনসমূহের পুরােধাগণ পাশ্চাত্যপন্থীই ছিল, প্রত্যেক স্থানেই সাধারণ মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনার দোহাই না দিয়ে নিজেদের নেতৃত্বে তাদেরকে টানতে পারেনি এবং কোন ত্যাগ স্বীকারেও তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়নি। সাধারণভাবে প্রত্যেক জায়গায়ই এদেরকে ইসলামের নামে সংঘবদ্ধ হবার আহবান জানাতে হয়েছে। আল্লাহ, রাসূল এবং কুরআনের নাম এদেরকে সর্বত্রই ব্যবহার করতে হয়েছে। সর্বত্রই এদেরকে এসব আযাদী আন্দোলনকে ইসলাম ও কুফরের সংগ্রাম বলে বুঝাতে হয়েছে। এ ছাড়া অন্য কোন পন্থায়ই নিজ নিজ জাতির লােকদেরকে নিজেদের নেতৃত্বে সমবেত করার অবলম্বন এদের ছিল না। কিন্তু দুনিয়ার আযাদী আন্দোলনের ইতিহাসের বড় বড় বিশ্বাসঘাতকতাসমূহের মধ্যে এটিও এক বৃহত্তম বিশ্বাসঘাতকতা ছিল যে, এসব নেতৃবৃন্দ নির্বিশেষে সকল জায়গায়ই আযাদী হাসিলের পরপরই নিজেদের তামাম ওয়াদা জলাঞ্জলী দিয়ে বসলাে এবং যে ইসলামকে অবলম্বন করে এরা রাজনৈতিক বাজী জিতেছিল, পয়লা শিকার হিসেবে সে ইসলামকে খতম করতেই এরা উঠে পড়ে লেগে গেলাে।

     চতুর্থ ও সর্বশেষ কথা এই যে, এদের নেতৃত্বে মুসলিম দেশসমূহের যে আযাদী হাসিল হয়েছে তা নিতান্তই রাজনৈতিক। পূর্বেকার গােলামী এবং বর্তমান আযাদীর মধ্যে পার্থক্য শুধু এতটুকন যে, আগে শাসনক্ষমতা ও ইখতিয়ার ছিল বহিরাগতদের হাতে আর বর্তমানে তা রয়েছে দেশীয় লােকদের হাতে। কিন্তু পূর্বে যে ধরনের লােক, যে ধরনের দৃষ্টিভংগী ও নীতির ভিত্তিতে শাসন কার্য পরিচালনা করছিল, আজো সে একই মতাদর্শের লােক একই নীতির ভিত্তিতে দেশ শাসন করছে, এদিক থেকে এতে কোন পার্থক্য সূচিত হয়নি।

     সাম্রাজ্যবাদী সরকার যে শিক্ষাব্যবস্থা কায়েম করে গিয়েছিল তা আজও প্রচলিত রয়েছে। তাদেরই জারিকৃত আইন-কানুন আজও প্রতিষ্ঠিত আছে। উপরন্তু এগুলােরই ভিত্তিতে অধিকতর আইন রচিত হচ্ছে। এমন কি মুসলমানদের ব্যক্তি সংক্রান্ত আইনে (পার্সোনাল ল') যেসব রদবদলের হিম্মতও সাম্রাজ্যবাদী সরকার করেনি তা বর্তমানের আযাদ মুসলিম দেশসমূহে অনায়াসে সম্পাদিত হচ্ছে। সভ্যতা, সংস্কৃতি ও নৈতিক মূল্যমানের যে মাপকাঠি বহিরাগতরা রেখে গিয়েছিল, তার কিছুমাত্র কমবেশী করাতাে দূরের কথা বরং এসব নেতৃবৃন্দ প্রাক্তন প্রভুদের চেয়েও এক কদম অগ্রসর হয়ে নিজেদের জাতিকে সেই সংস্কৃতি ও ভ্রষ্ট নৈতিকতায় লিপ্ত হওয়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করছে। জাতীয়তার সংকীর্ণ পাশ্চাত্য দৃষ্টিভংগী ছাড়া বৃহত্তর সামাজিক জীবনের জন্যে অপর কোন পথ ও পন্থার কথা এরা কল্পনাও করতে পারে না। আর এ দৃষ্টিভংগী সহকারেই এরা মুসলিম দেশসমূহ শাসন করছে এবং ফলে একটি হতে অপরটিকে এরা বিচ্ছিন্ন রেখে দিয়েছে। নাস্তিক্যবাদ এদের মন-মগযে একেবারে বসে গেছে। ফলে যেখানেই এরা সুযােগ পাচ্ছে, সেখানেই মুসলিম সমাজের মধ্যে এ বিষ এমনভাবে সংক্রমিত করছে যে, ভবিষ্যতের এ নাগরিকগণ আল্লাহ, রাসূল ও আখেরাত সম্পর্কে পরস্পর উপহাস বিদ্রুপ করছে। এসব নেতৃবৃন্দ নিজেরা যেমন উচ্ছংখলতায় ডুবে আছে তেমনি এদের নেতৃত্বে মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে ফাসেকী ও বেহায়াপনা বিস্তার লাভ করেছে। পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদীরা এদেরকে যতই দুশমন ভাবুক না কেন, এরা ঐসব সাম্রাজ্যবাদীদেরকে অতীব প্রিয় জ্ঞান করে। তাদের প্রতিটি অংগ সঞ্চালন ও তাদের প্রতিটি কথাকে এরা সত্যাসত্যের মাপকাঠি মনে করে। তাদের এবং এদের মধ্যে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, সাম্রাজ্যবাদীরা হচ্ছে পূর্বসূরী আর এরা হচ্ছে তাদের অন্ধ অনুসারী। এসব মুকাল্লিদগণ তাদের প্রদর্শিত পথের বাইরে এক ইঞ্চি পরিমাণও নড়াচড়া করতে এবং কোন পথ প্রদর্শন করতে একেবারেই অক্ষম।

     উল্লেখিত যে চারটি বিষয় আমি আপনাদের নিকট পেশ করেছি তা সামনে রেখে যদি আপনারা দুনিয়ার আযাদ মুসলিম দেশসমূহের বর্তমান অবস্থা পর্যালােচনা করেন, তবে সেখানকার পূর্ণ চিত্র আপনাদের দৃষ্টি পথে পরিস্ফুট হয়ে উঠবে। দুনিয়ার সবগুলাে আযাদ মুসলিম দেশ বর্তমানে একেবারে নগ্ন হয়ে পড়েছে। কারণ প্রত্যেক দেশেই এরা নিজ নিজ জাতির সাথে সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছে। এদের জাতি ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে চায়, আর এরা জবরদস্তি জাতিকে পাশ্চাত্যের  দিকে টেনে নিয়ে চলছে। এর পরিণতি এই দাঁড়িয়েছে যে, কোথাও জাতির দিলের সাথে শাসক শ্রেণীর সংযােগ নেই। আর দেশ কেবল তখনই শক্তিশালী হতে পারে যখন শাসকদের হাত জাতির আশা- আকাংখার সাথে একত্রীভূত হয়ে সমাজ উন্নয়নে ব্রতী হয়। এ ছাড়া যেখানে দিলের সাথে হাতের সংযােগ থাকে না, বরং দ্বন্দ্ব-সংগ্রামই পরস্পরের মধ্যে বিরাজ করে সেখানকার সমগ্র শক্তি কেবল এ ঘরােয়া সংগ্রামেই নিঃশেষ হতে থাকে। এমতাবস্থায় জাতীয় উন্নতি ও গঠনমূলক পথে এক কদমও অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয় না।

   সরকার এবং জনগণের সংঘাতের পরিণতি

   এ অবস্থার অপর একটা স্বাভাবিক পরিণতি হলাে এই যে, ক্রমে ক্রমে মুসলিম দেশসমূহে একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। মুষ্টিমেয় পাশ্চাত্য পন্থী সংখ্যালঘু শ্ৰেণীটি, যারা সাম্রাজ্যবাদের খেলাফত লাভ করেছিল--তারা একথা খুব ভালভাবে বুঝে নিয়েছে যে, যদি শাসনকার্য পরিচালনা সাধারণ লােকদের ভােটের ওপর নির্ভর করে তবে নেতৃত্ব তাদের হাতে থাকবেই না। বরং দু'দিন আগে হােক কি পরে, জনগণের আশা-আকাংখা ও আকীদা-বিশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শাসনকার্য পরিচালনায় ক্ষমতাসম্পন্ন লােকদের হাতে তা চলে যাবে। এ জন্যে কোনখানেই এরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কার্যকরী হতে দেয়নি। কার্যত এরা একনায়কত্ব সূলভ আচরণই অবলম্বন করেছে যদিও ধোঁকা দেয়ারমতলবে এরই নাম দিয়েছে “গণতন্ত্র” ।

     প্রথম দিকে কিছুকাল পর্যন্ত শাসনতন্ত্র এ শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের হাতেই নিবদ্ধ ছিল এবং বেসামরিক লােকেরাই দেশও শাসন করছিল। কিন্তু ঐ অবস্থারই এক স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবে মুসলিম দেশসমূহের সেনাবাহিনীর মনে এক অনুভূতি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বিস্তার লাভ করলাে যে, একনায়কত্বের মূল বুনিয়াদী শক্তি তাদেরই হাতে নিবদ্ধ। আর তাতেই উদ্বুদ্ধ হয়ে সামরিক অফিসারগণ দ্রুতবেগে রাজনীতির ময়দানে অবতীর্ণ হতে লাগলাে। এরা গােপন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের প্রতিষ্ঠিত সরকারকে উৎখাত করে সেখানে নিজেদের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠায় মেতে উঠলাে। এখন মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের সেনাবাহিনী তাদের জন্যে এক মুসিবত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের কর্তব্য এখন শুধু বহিঃশত্রুর সাথে মুকাবিলা পর্যন্তই আর সীমাবদ্ধ থাকলাে না।বরং এ উদ্দেশ্যে জাতি এদের হাতে যে সমস্ত সমরাস্ত্র তুলে দিয়েছে তারই সাহায্যে নিজ দেশ জয় করে জাতিকে গােলাম বানিয়ে নেয়ার দায়িত্বও তাতে শামিল হয়ে গেলাে। এখন মুসলিম জাতির ভাগ্য গণভােটে কিংবা পরিষদে নয় বরং সেনানিবাসসমূহে নির্ধারিত হচ্ছে। আবার সেনাদলও নির্বিশেষে কোন একটি সামরিক সরকারের ওপর আস্থাবান নয়। বরং প্রতিটি সামরিক অফিসার এই সুযােগের অপেক্ষায় ওত পেতে রয়েছে যে, কখন কোন ষড়যন্ত্র করার সুযোগ সে পেয়ে যায় এবং আর একজনকে হত্যা করে সেখানে নিজের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কায়েম করতে সক্ষম হয়। এদের মধ্যে যারা জয়যুক্ত হয়ে ক্ষমতায় আসে তারা বিপ্লবী বীর ও জাতির ত্রাণকর্তা হয়ে বসে। পক্ষান্তরে যখন বহিষ্কৃত হয় তখন খেয়ানতকারী, বিশ্বাসঘাতক উপাধি নিয়ে বিদায় হয়। পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত অধিকাংশ মুসলিম দেশগুলাের বর্তমানে কেবল এ ধরনের তামাশাই হচ্ছে। নিজেদের দেশ পরিচালনার ব্যাপারে জনগণের কোন হাতই নেই। তাদের অজ্ঞাতে রাতের অন্ধকারে তাদেরই দেশে বিপ্লবের খিচুড়ি রান্না হয় আর একদিন সম্পূর্ণ আকস্মিকভাবে সেই খিচুড়ির হাঁড়ি তাদের মস্তকের ওপর উল্টে পড়ে। অবশ্য একটি ব্যাপার পারস্পরিক যুদ্ধরত এসব মহাবিপ্লবীরা সম্পূর্ণ একমত যে, এদের মধ্যে যে কেউ যখনই ক্ষমতায় পদার্পণ করে, তারা পূর্ববর্তীদের ন্যায় পাশ্চাত্যের মানসিক গােলামী, নাস্তিকতা ও ফাসেকীর নিশানবরদার হয়ে দাঁড়ায়।

আশার আলো

     এ অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থার মধ্যেও আমি আশার দু'টি আলােকবর্তিকা দেখতে পাচ্ছি, যাতে দু'টো সত্য নিহিত রয়েছে। প্রথম এই যে, আল্লাহ তায়ালা নাস্তিকতা ও ফাসেকীর ধ্বজাধারীদেরকে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংগ্রামে লিপ্ত রেখেছেন, যার ফলে এরা নিজেরাই নিজেদের গােড়া কাটছে। আল্লাহ না করুন, যদি এর ঐকবদ্ধ্য হতাে, তবে আরােগ্যাতীত মুসিবত হয়ে দাঁড়াতাে। কিন্তু এদের পথপ্রদর্শক হচ্ছে শয়তান। আর শয়তানের ‘চাল’ সবসময় দুর্বলই হয়ে থাকে। এতদসঙ্গে আমি দ্বিতীয় যে সত্যটুকু প্রতিভাত দেখছি তা এই যে, মুসলিম জাতির দিল সম্পূর্ণ সংরক্ষিত রয়েছে। এরা তথাকথিত বিপ্লবী নেতৃবৃন্দের প্রতি সন্তুষ্ট নয়। যদি কোন সৎলােকের জামায়াত বা দল চিন্তা-ধারার দিক দিয়ে মুসলিম এবং মানসিকতার দিক দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার যােগ্যতা সম্পন্ন হয়, তবে শেষ পর্যন্ত এরাই জয়যুক্ত হবে। মুসলিম জাতি এদের মাধ্যমেই এই আল্লাহ বিমুখ ফাসেকী শাসনের অক্টোপাশ মুক্ত হতে সক্ষম হবে।

কাজের প্রকৃত ক্ষেত্র ও কর্মপন্থা

বর্তমানে কাজ করার আসল সুযােগ তাদেরই রয়েছে যারা একদিকে পাশ্চাত্য ধরনের শিক্ষায় শিক্ষিত এবং এতদসঙ্গে যাদের অন্তর আল্লাহ, রাসূল, কুরআন ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে। পুরানাে পদ্ধতিতে ধর্মীয় শিক্ষাপ্রাপ্তগণ নৈতিক, আধ্যাত্মিক এবং দ্বীনি জ্ঞানের দিক দিয়ে তাদেরকে খুবই সাহায্য করতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দেশ শাসন ও পরিচালনার ব্যাপারে প্রয়ােজনীয় যােগ্যতার অভাব এদের রয়েছে। কেবল প্রথমােক্ত দলের মধ্যেই এ যােগ্যতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কাজেই এ দলটিকে এখন অগ্রবর্তী হয়ে কাজ করা দরকার। এদেরকে আমি নিম্নোক্ত কতিপয় পরামর্শ দিতে চাই

একঃ ইসলামের জ্ঞান অর্জন

     এদেরকে ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জন করা উচিত যাতে এদের অন্তর যেমন মুসলমান রয়েছে, সেরূপ এদের চিন্তাধারাও মুসলিম হতে পারে এবং বৃহত্তর সামাজিক ব্যাপারে এরা যাতে ইসলামের নীতি ও আদর্শ মুতাবিক পরিচালনা করতে সক্ষম হয়।

দুইঃ নিজেদের চারিত্রিক সংশােধন

      এদের চারিত্রিক সংশােধন দরকার যাতে এদের যিন্দেগী ইসলামের সেই ছাঁচে গড়ে উঠতে পারে যাকে এরা যুক্তিসংগতভাবে সত্য বলে বিশ্বাস করছে। স্মরণ রাখবেন যে, কথা ও কাজের অসামঞ্জস্যতা মানুষের অন্তরে অসততার সৃষ্টি করে এবং বহির্জগতে তারা বিশ্বাস হারায়। আপনাদের সাফল্যের সবটুকুই নির্ভর করে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার ওপর এবং কোন লােকই ততক্ষণ পর্যন্ত নিষ্ঠাবান প্রমাণিত হতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার কথা ও কাজ একই রকম না হয়। কারণ আপনাদের নিজেদের জীবনেই যদি কথা ও কাজের বৈপরীত্য বর্তমান থাকে, তবে অপর কেউই আপনাদের ওপর যেমন বিশ্বাসী হবে না তেমনি আপনাদের দিলও আপনাদের ওপর সন্তুষ্ট হতে পারে না। এ জন্যে ইসলামী আন্দোলনের সকল আহবায়কের প্রতি আমার এই আবেদন যে, ইসলাম যে যে কাজ সম্পর্কে হুকুম দিয়েছে তা জানার সাথে সাথে তাকে কার্যকরী করার এবং যে যে কাজ পরিহার করার তাকীদ করেছে তা জানার সঙ্গে সঙ্গে পরিত্যাগ করার জন্যে পূর্ণভাবে সচেষ্ট হােন।

তিনঃ পাশ্চাত্য সভ্যতা ও দর্শনের সমালােচনা,

     নিজেদের তামাম চিন্তাশক্তি, বক্তৃতা ও লেখনী শক্তি এ কাজে পূর্ণভাবে নিয়ােজিত করা উচিত। এগুলাের সাহায্যে একদিকে আমাদের সমাজ জীবন হতে পাশ্চাত্যের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও জীবন দর্শনের ভূত বিদূরীত করতে হবে, যা বর্তমান দুনিয়ায় সওয়ার হয়ে আছে এবং অপরদিকে ইসলামের আকীদা-বিশ্বাস, নীতি ও সংস্কৃতি এবং আইন-বিধানের ব্যাখ্যা ও প্রণয়ন এমন উপযুক্ততা ও যােগ্যতার সাথে করতে হবে যাতে বর্তমান যুব সমাজের মন-মস্তিষ্কে এর সুস্থ বিকাশ লাভ সম্ভব হয়। উপরন্তু ইসলামের এ শিক্ষা ও জ্ঞানের উপর নব্য সমাজ যাতে এতদূর নিশ্চয়তা লাভ করতে পারে যে, তার অনুসরণ করলে তারা শুধু উন্নতিই করতে পারবে না বরং দুনিয়ার সর্বক্ষেত্রে এরা অগ্রবর্তী ও সর্বোত্তম জাতিতে পরিগণিত হবে। আর এ কাজ যত বিস্তৃত ক্ষেত্রে যত অধিক পরিমাণে ছড়ানাে সম্ভব হবে ইসলামী দাওয়াতের জন্য ততাে অধিক সংখ্যক সৈনিক আপনারা লাভ করতে থাকবেন। সমাজের প্রতিটি স্তর হতে এসব সৈনিকরা বের হয়ে আসবে। এ পর্যায়ের কাজ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত জারী রাখতে হবে, যাতে একটি ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক লােক এ সময়ে ঐকবদ্ধ্য হতে পারে। আর এ কাজ যতদিন পর্যন্ত যথারীতি সম্পন্ন না হয় ততদিন পর্যন্ত ইসলামী বিপ্লবের সূচনার আশা আপনারা করবেন না। যদি কোন অস্বাভাবিক পন্থায় তার সূচনা করাও হয়
তবুও তা বেশীদিন টিকে থাকতে সক্ষম হবে না।

চারঃ সংগঠন

    ইসলামী দাওয়াতের প্রতি যারা সহযােগিতা ও সহানুভূতি রাখেন তাদেরকে ঐকবদ্ধ হতে হবে। তাদের সংগঠন ঢিলাঢালা ও নিস্তেজ হলে চলবে না। সংগঠন, শৃংখলা এবং আদেশ শ্রবণ ও পালন করা ছাড়া একই চিন্তাধারার বিপুল সংখ্যক লােকের ভিড় জমিয়ে দিলেও তাদ্বারা কার্যকরী কোন শক্তি সৃষ্টি হতে পারে না।

পাঁচঃ ব্যাপক দাওয়াত

     এ উদ্দেশ্যে কাজ করার জন্যে নিজেদের দাওয়াত সাধারণ্যে ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রসারের প্রয়ােজন, যাতে সাধারণ লােকদের অজ্ঞতা দূরীভূত হয়, ইসলাম সম্পর্কে তারা ভালভাবে অবহিত হয়, সর্বোপরি ইসলাম ও জাহেলী মতাদর্শের পার্থক্য বুঝতে তারা সক্ষম হয়। এতদসঙ্গে সাধারণ লােকদের নৈতিক সংশােধনের জন্যও তাদেরকে যত্নবান হতে হবে, ফাসেকীর প্লাবনকে রােধ করার জন্যে নিজেদের পূর্ণ শক্তি প্রয়ােগ করতে হবে—যা ফাসেক ও আল্লাহ বিমুখ শাসকদের প্রভাবে মুসলিম সমাজে দিন দিন ক্রমবর্ধিত হচ্ছে। আসল কথা এই যে, কোন একটি জাতি যখন ফাসেক হয়ে যায় তখন ইসলামী রাষ্ট্রের প্রজা হওয়ার যােগ্যতা তারা হারিয়ে ফেলে। সাধারণ লােকদের মধ্যে ফাসেকী যে পরিমাণে বাড়বে, তাদের মধ্যে ইসলামী শাসন শৃংখলা কায়েম করা ততই মুস্কিল হয়ে পড়বে। মিথ্যাবাদী, খেয়ানতকারী ও দুশ্চরিত্র লােক কুফরী শাসন পরিচালনার যতই যােগ্য হােক না কেন, ইসলামী শাসন পরিচালনায় তারা হচ্ছে একেবারেই অযােগ্য ও অপদার্থ। 

ছয়ঃ ধৈর্য ও হেকমত 

   অধৈর্য হয়ে কোন দুর্বল বুনিয়াদের ওপর ইসলামী বিপ্লব আনয়নের চেষ্টা করা উচিত নয়। যে উদ্দেশ্য আমাদের সামনে রয়েছে, সে জন্যে অতীব ধৈর্য স্থৈর্যের দরকার। হেকমতের সাথে হিসেব করে এক একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং প্রতিটি নতুন পদক্ষেপের পূর্বে খুব ভালােভাবে হিসেব করে দেখতে হবে যে, পূর্ববর্তী পদক্ষেপসমূহে যে ফল আপনি লাভ করেছেন তা স্থায়ী হয়েছে কি না। তাড়াহুড়াে করে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় তাতে লাভের তুলনায় লােকসানের আশংকা থাকে বেশী। উদাহরণত ফাসেক শাসকবর্গের সাথে হাত মিলিয়ে যদি কেউ এই ধারণা করে যে, এতে লক্ষ্যে পৌছার পথের দূরত্ব হ্রাস পাবে এবং উদ্দেশ্য হাসিলের পথ প্রশস্ত হবে, তবে নিতান্ত ভুল করা হবে। কারণ, এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতা
    জ্ঞান একথাই বলে যে, এ লােভের সাহায্যে সাফল্যজনক ফায়দা লাভ অসম্ভব। কারণ শাসন ক্ষমতা যে লােকদের হাতে নিবদ্ধ থাকে তাদের অসম্ভব। কারণ শাসন ক্ষমতা যে লােকদের হাতে নিবদ্ধ থাকে তাদের সাথে যারা হাত মিলায় তাদেরকে পদে পদে ক্ষমতাসীনদের সাথে আপােষ করে চলতে হয় এবং এভাবে শেষ পর্যন্ত এরা ক্ষমতাসীনদের তল্পীবাহকে পরিণত হয়।

সশন্ত্র ও গােপন আন্দোলন থেকে বিরত থাকা

     এ ব্যাপারে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রতি আমার সর্বশেষ উপদেশ এই যে, কোন গােপন আন্দোলন কিংবা কেবল সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে ইসলামী বিপ্লব সৃষ্টির চেষ্টা করা তাদের উচিত নয়। কারণ, এটিও অধৈর্য ও তাড়াহুড়ারই পরিচায়ক এবং পরিণতির দিক দিয়ে অন্যান্য ধরনের আন্দোলনের চেয়ে তুলনামূলকভাবে ক্ষতিকর। কোন সঠিক ও সুষ্ঠু বিপ্লব কেবল গণ-আন্দোলনের মাধ্যমেই সূচিত হতে পারে। প্রকাশ্যে সাধারণ লােকদের মধ্যে নিজেদের দাওয়াত প্রসারিত করুন, ব্যাপকভাবে চিন্তাধারার পরিশুদ্ধি অভিযান চালান, নৈতিক হাতিয়ারের সাহায্যে মানুষকে বিমােহিত করুন এবং এ প্রচেষ্টা ব্যাপদেশে যেসব বিপদ-মুসিবত ও প্রতিবন্ধকতা সামনে আসে পূর্ণ সাহসিকতার সাথে তার মুকাবিলা করুন। এমনিভাবে ধীরে ধীরে যে বিপ্লবের সূচনা হবে তার বুনিয়াদ এত মযবুত ও শক্তিশালী হবে যে, বিরােধী শক্তি এর মুকাবিলা করতে কখনাে সক্ষম হবে না। তাড়াহুড়া বা কৃত্রিম উপায়ে কোন বিপ্লব যদি সূচিত হয় তবে তা যে পথে আসবে আবার সে পথে তাকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়াও সহজ হবে।

      এটিই আমার হেদায়াত । ইসলামী আন্দোলনের জন্যে কাজ করতে ইচ্ছুক কীসের নিকট আমি এটি পেশ করলাম। আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রার্থনা এই যে, তিনি আমাদের সকলকে পথপ্রদর্শন করুন এবং তার দ্বীনে হককে সমুন্নত করার জন্যে অকৃত্রিম পন্থায় সংগ্রাম করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
------------------------------------------------  
প্রবন্ধ।  

Post a Comment

0 Comments