Recent Tube

করোনা কড়চা (২): মহামারী প্রতিরোধে কোয়ারান্টাইন ও সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং-জিয়াউল হক।

করোনা কড়চা (২): 
মহামারী প্রতিরোধে কোয়ারান্টাইন ও সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং-
     
 করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট চলমান মহামারী অপ্রতিরোধ্যভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাছে এ রোগের কোন চিকিৎসা নেই, প্রতিষেধকও নয়। বিশ্বজুড়ে জনস্বাাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে আপতিত এ মহামারী আধুনিক বিশ্বের অনেক অর্জনকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।

প্রশ্নের মুখে পড়েছে  মুসলিম সমাজও। যদিও তেমনটা হওয়া উচিৎ ছিল না, কারণ,  প্রিয় রাসুল সা: এমন পরিস্থিতিতে কি করণীয়, তা সুস্পষ্ট করে বলে গেছেন, দেখিয়েও গেছেন। তারপরেও আমরা এ নিয়ে বৃথা বিতর্ক ও বিভেদের সৃষ্টিই কেবল করছি না, বরং একইসাথে প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা. এর সুন্নতকে অবজ্ঞা করে হাজার হাজার মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছি। 

যে কোন মহামারী, তথা ছোঁয়াচে রোগ নিয়ন্ত্রণের বিজ্ঞানসম্মত  পদ্ধতি হলো; সেগরিগেশন-কোয়ারান্টাইন-আইসোলেশন এবং সোস্যাল ডিস্টান্সিং। আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণাসুত্রে এগুলো আমাদের সামনে আসার অনেক আগেই এর সবকটিই প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা. বাস্তবে প্রয়োগ করে দেখিয়েছেন। তাঁর হাতে প্রশিক্ষিত সাহাবি রা. গণও তা অনুসরণ করেছেন।

মহামারী রোগ মারাত্মক  সংক্রামক ও ছোঁয়াচে বলেই এ থেকে বেঁচে থাকার সুস্পষ্ট নির্দেশ ছিল আল্লাহর রাসূলের স. পক্ষ থেকে। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, যারা এসব রোগাক্রান্ত অঞ্চলে আছে তারা যেন  ওই স্থান ত্যাগ না করে। আবার, যারা ওই এলাকার বাইরে আছে তারা যেন ওই এলাকায় প্রবেশ না করে। একারণেই হযরত ওমর (রাঃ) সিরিয়ায় প্রবেশ না করে পথিমধ্য থেকে মদিনায় ফিরে গিয়েছিলেন।
 
প্রিয় রাসুল সা: এর আদেশ ও পরবর্তিতে তাঁর প্রিয় সাহাবি রা. গণের অনুসৃত এ কর্মপদ্ধতির উদ্দেশ্য ছিল খুবই সুস্পষ্ট। মহামারীর বিস্তার রোধ করার লক্ষ্যে আক্রান্ত ব্যক্তি বা আক্রান্ত হয়েছেন বা রোগের সম্ভাব্য বাহক হয়েছেন এমন ব্যক্তিদেরকে অপেক্ষাকৃত সুস্থ ব্যক্তি ও জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ দুরত্বে রাখা।

এই যে ‘নিরাপদ দুরত্ব’ বজায় রাখা, এটাই আজকের পরিভাষায় ‘সোস্যাল ডিসটাান্সিং’ (Social Distancing)। ছোঁয়াচে রোগ সংক্রমণ রোধে এটাই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। আজ সারা বিশ্ব, এমনকি, চিকিৎসাবিজ্ঞানীরাও সারাদিন এই স্যোস্যাল ডিস্টান্সিং পদ্ধতির প্রয়োগ ও তা রক্ষা করতে অনুরোধ করছেন। আর সরকার তো কোন কোন ক্ষেত্রে (যেমন বাংলাদশ, ভারত) তার নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে শক্তি প্রয়োাগ করে হলেও এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে উঠে পড়ে লেগেছে। 

হযরত আবু ওবায়দা বিন যাররা রা. আশারায়ে মুবাশশারা’র একজন সাহাবি, সিরিয়া অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। সিরিয়া বিজয়ের কিছুকাল পর সেখানে মহামারী আকারে দেখা দেওয়া প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে জাবিয়া এলাকায় ইন্তেকাল করেছিলেন। সাথে ছিলেন  প্রখ্যাত সাহাবি হযরত মুআজ বিন জাবাল রা.। সেই মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে অনেক ক'জন সাহাবি’সহ হাজার হাজার মুসলমান প্রাণ হারিয়েছিলেন। অথচ, তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন জিহাদে লিপ্ত, আল্লাহর পথে মুজাহিদ। 

প্রখ্যাত সাহাবি হযরত আমর ইবনুল আ’স রা: অত্যন্ত যোগ্যতা ও বিচক্ষণতার সাথে মহামারী নিয়ন্ত্রণে সোস্যাল ডিস্টান্সিং পদ্ধতিটির প্রয়োগ করেছিলেন। ফিলিস্তিনে আমাওয়াস অঞ্চলে মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তিনি সেখানকার গভর্নর, সেখানকার অধিবাসীদের ডেকে বলেন; হে লোকসকল, যখন এ ধরনের মহামারী দেখা দেয়, তখন তা আগুনের মতো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।’

এরপর তিনি সবাইকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে ভাগ করে নির্দেশ করেন, পরস্পরে বিচ্ছন্ন হয়ে পাহাড়ে চলে যাও (কোয়ারান্টাইন)। তিনি নিষেধাজ্ঞা জারি করেন যে, কেউ কারো সঙ্গে মিলিত হতে পারবে না (সোস্যাল ডিস্টান্সিং)। নির্দেশ মত মুসলমানরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে দীর্ঘদিন পাহাড়ে অবস্থান করেন। আক্রান্তদের অনেকেই শাহাদাত লাভ করেন। অবশেষে এক সময় আল্লাহ মহামারী তুলে নেন। আমর ইবনুল আস রা. বাকিদের নিয়ে সুস্থ শরীরে নগরীতে প্রত্যাবর্তন করেন।

মদিনায় হযরত ওমর রা. এর কাছে এ ঘটনার  বিবরণ পৌছালে তিনি বিষয়টি অপছন্দ করেননি। আমাদের স্মরণ রাখা দরকার যে, হজরত ওমর রা. ছিলেন সেই সাহাবি, যিনি ইসলামের পাবন্দী ও প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা. কে অনুসরণের ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র শৈথিল্য সহ্য করতেন না।

এ ঘটনা মুসলমান হিসেবে বর্তমানে চলমান করোনা ভাইরাসের সংক্রমণজনিত মহামারীকালীন সময়ে আমাদের কর্মপদ্ধতি কি হওয়া উচিৎ, সেটা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরে, তারপরেও অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করাটা দু:খজনক। 
( সংক্ষেপকৃত, চলবে)
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ও বিশ্লেষক।          

Post a Comment

0 Comments