Recent Tube

ইকামতে দ্বীন বীদ্বেষি দরবারি আলেমঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

    

    ইকামতে দ্বীন বীদ্বেষি দরবারি আলেমঃ

    আল্লাহ তা'য়ালা নবী-রাসূলদের দ্বীন কায়েমের নির্দেশ দিয়েছেন (সূরা শুরাঃ ৪২/১৩)। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী তথা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কেও সকল বাতিল দ্বীন/বিধানের উপর দ্বীনে হক তথা আল্লাহর বিধানকে সমুন্নত ও বিজয়ী করার জন্য প্রেরণ করেছেন (সূরা তওবাঃ ৯/৩৩; ফাতাহঃ ৪৮/২৮; সফঃ ৬১/০৯)। সাহাবাগণ দ্বীন কায়েমের ফরজ দায়িত্ব পালন করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) সাহাবাগণ সম্পর্কে বলেন,
اخْتَارَهُمُ اللَّهُ لِصُحْبَةِ نَبِيِّهِ وَلِإِقَامَةِ دِينِهِ رَوَاهُ رزين.
"অাল্লাহ তা'য়ালা তাঁদের বাছাই করে নিয়েছেন তাঁর নবীর সাথী হওয়ার জন্য এবং তাঁর দ্বীনকে কায়েম করার জন্য।" (মিশকাত, হাদীস নং ১৯৩; হিলইয়াহ ১/৩০৫-৩০৬; ইবনে আব্দুল বার ২/৯৭)
.
     ইকামতে দ্বীন তথা দ্বীন কায়েমের অর্থ হল- মানবজাতির সামগ্রিক জীবনে অর্থাৎ ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে বৃহত্তর রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত জীবনের সকল দিক ও বিভাগে আল্লাহর বিধান ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নাহ পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা। সাহাবাগণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে থেকে এ ফরজ দায়িত্ব পালন করেছেন। মুসলিম হিসাবে আমাদেরও ফরজ দায়িত্ব সর্বক্ষেত্রে দ্বীন কায়েম করে দ্বীনের বিজয় ছিনিয়ে আনা। 
  কিন্তু ইকামতে দ্বীন বিরোধী, তাগুতপন্থী, দরবারী আলেমরা বলেন, 'নিজের জীবনের উপর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা ফরজ, অন্যের উপর দ্বীন প্রতিষ্ঠার ফরজ দায়িত্ব নয়। ব্যক্তিগত ভাবে সালাত, সাওম আদায় করলেই জান্নাত নিশ্চিত। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাতে প্রবেশ করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করে দ্বীনের বিজয় ছিনিয়ে আনা ও সমাজের মানুষকে অন্যায় কাজে বাঁধা দিয়ে নেকীর কাজ করতে বাধ্য করার কোনো প্রয়োজন নেই। মানুষ অাল্লাহর নাফরমানী করতেই পারে, এতে পেরেশান হওয়ারও কোনো কারণ নেই।' 
    এ জন্য দেখা যায়, রাষ্ট্রে ও সমাজে অহরহ আল্লাহর নাফরমানী, অন্যায় ও পাপের কাজ দেখার পরেও দরবারী আলেমরা তার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করা তো দূরের কথা, এতে তাদের চেহারার রং পরিবর্তনও হয় না। আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করার জন্য ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের কাজকে তারা ক্ষমতা দখল বলে তাচ্ছিল্য করে। এরা তাগুতের সহীহ এজেন্ট। তাই এদের বক্তব্য, বিবৃতি, লেকচার ও লেখনী তাগুতপন্থী স্বৈরাচার জালিম শাসকের কুফুরী শাসনের পক্ষে এবং ইকামতে দ্বীনের বিপক্ষে। এরাই আল্লাহর গযব প্রাপ্ত দরবারী আলেম।
.
    হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, 
 قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "أَوْحَى الله عَزَّ وَجَلَّ إِلَى جِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ أَنِ اقْلِبْ مَدِينَةَ كَذَا وَكَذَا بِأَهْلِهَا، قَالَ: فَقَالَ: يَا رَبِّ إِنَّ فِيهِمْ عَبْدَكَ فُلَانًا لَمْ يَعْصِكَ طَرْفَةَ عَيْنٍ، قَالَ: فَقَالَ: اقْلِبْهَا عَلَيْهِمْ، فَإِنَّ وَجْهَهُ لَمْ يَتَمَعَّرْ فِيَّ سَاعَةً قَطُّ"
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, "আল্লাহ তা'আলা জিবরীল (আ) এর ওহী প্রেরণ করলেন এই মর্মে যে, তুমি অমুক অমুক নগরীকে তার বাসিন্দাসহ উলট-পালট করে ধ্বংস করে দাও। জিবরীল (আ) বললেন, হে আল্লাহ! তাদের মধ্যে তোমার এমন একজন বান্দা রয়েছে, যিনি এক মুহূর্তের জন্যও তোমার নাফরমানী করেনি। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, আল্লাহ তা'আলা বললেন, তাকে সহ অন্যান্য অধিবাসী নিস্তনাবুদ করে দাও। কেননা আমার নাফরমানী হতে দেখে (তা প্রতিরোধ করা তো দূরের কথা) কখনও তার চেহারার রং পরিবর্তন হয়নি।" (বাইহাকী, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং ৭১৮৯)
.
    দরবারী এবং দুনিয়ালোভী আলেমদের ব্যাপারে অত্যন্ত কড়া কথা বলেছেন শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ)। তিনি বলেন-
"যদি কোন শাইখ কুরআন এবং সুন্নাহ হতে অর্জিত শিক্ষা অনুযায়ী আমল ত্যাগ করে এবং এমন শাসক/বিচারকের অনুসরণ করে যে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এর শিক্ষা অনুযায়ী বিচার করেনা, তখন সে একজন ধর্মত্যাগী এবং কাফের হিসেবে বিবেচিত হবে, যে দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত।"
(আল ফতোয়া, ইবন তাইমিয়া, খন্ড-৩৫, পৃষ্টা-৩৭৩)
-------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।         

Post a Comment

0 Comments