Recent Tube

হযরত আলী (রা) এর বিরুদ্ধে যে সকল সাহাবী যুদ্ধ করেছিলেন, তাদের সম্পর্কে আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) যা বলেছেন তার চেয়েও অনেক শক্ত কথা বলেছেন আহলে হাদীসের শায়খগণ: মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

হযরত আলী (রা) এর বিরুদ্ধে যে সকল সাহাবী যুদ্ধ করেছিলেন, তাদের সম্পর্কে আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) যা বলেছেন তার চেয়েও অনেক শক্ত কথা বলেছেন আহলে হাদীসের শায়খগণ:

     আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর 'খিলাফাত ও মুলুকিয়াত' কিতাবে খিলাফাত ও রাজতন্ত্রের পার্থক্য দেখাতে গিয়ে হযরত মুয়াবিয়া (রা) এর কিছুই ভুল-ত্রুটি রেফারেন্স সহ উল্লেখ করার অপরাধে(!) আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) কে আহলে হাদীসের কিছু ভাই শিয়া বলে ফতোয়া দিচ্ছেন। অথচ ঠিক একই রকম কথা বা তার চেয়েও আরো শক্ত কথা বহুত মুহাদ্দিস ও বড় বড় আলেমগণ তাঁদের হাদীস ও ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। আরো মজার বিষয় হলো আহলে হাদীসেরই বড় বড় শাখয়গণ তার চেয়েও ভয়ংকর কথা বলেছেন। দেখুনঃ

    আহলে হাদীসের মহাগুরু, প্রথম সারির শাখয় কাজী শাওকানী 'ওবালুল গামাম' নামে একটি কিতাব লিখেছেন। কিতাবটি তাহকীক করেছেন মুহাম্মাদ সাবহী হাসান হাল্লাক। এটি প্রকাশ করেছে মাকতাবাতুল ইলম, জিদ্দা ও মাকতাবায়ে ইবনে তাইমিয়া, কায়রো। প্রথম প্রকাশ ১৪১৬ হিঃ।
'ওবালুল গামাম' এর ২য় খন্ডে কাজী শাওকানী লিখেছেন, 
.
أما طلحة والزبير ومن معهم فلاةهم قد كانوا بايعوه فنكثوا بيعته بغيأ عليه وخرجوا في جيوش من المسلمين فوجب قتاله.
.
   "হযরত তালহা, যুবাইর (রা) ও তাদের সাথীরা যেহেতু হযরত আলী (রা) হাতে বাইআত গ্রহণ করেছিলেন, অতঃপর তার সাথে বিদ্রোহ করে তার বাইআত ভঙ্গ করেছেন এবং মুসলিমদের একটি সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করেছেন সুতরাং তাদের সাথে হযরত আলী (রা) এর যুদ্ধ করা ওয়াজিব হয়ে গেছে।"

 হযরত মুয়াবিয়া (রা) সম্পর্কে কাজী শাওকানী বলেন, 
.
وأما أهل صفين فبغيهم ظاهر ولو لم يكن في ذلك الا قوله (ص) لعمار: تقتلك الفءة الباغية، لكن ذلك مغيدا للمتلوب ثم ليس معاوية ممن يصلح لمعازضة علي، ولكنه أراد طلب الرياسة والدنيا بين فوم أغتام لايعرفون معروفا ولا ينكرون منكرا فخادعهم بأنه طالب بدم عثمان فنفق ذلك عليهم وبذالو بين يديه دماعهم وأموالهم ونصحوا له.
.
     "সিফফীনের যোদ্ধাদের রাষ্ট্রদ্রোহিতা সুস্পষ্ট। বাস্তবে তারা রাষ্ট্রদ্রোহী না হলেও হযরত আম্মার (রা) এর শানে বর্ণিত হাদীসটি তাদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহী প্রমাণে যথেষ্ট ছিল। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমাদের সাথে একটি বিদ্রোহী দল যুদ্ধ করবে। তাছাড়া হযরত মুয়াবিয়া (রা) হযরত আলী (রা) এর প্রতিদ্বন্দ্বিতা যোগ্যও ছিলেন না। বরং তিনি শামের মূর্খদের মাঝে নেতৃত্ব ও সম্পদের আকাঙ্ক্ষী ছিলেন। এ মূর্খরা (শামবাসী) সৎ কাজকে সৎ ও নিকৃষ্ট কাজকে নিন্দনীয় মনে করতো না। হযরত মুয়াবিয়া এই শামবাসীদের এই বলে ধোঁকা দিয়েছেন যে, তিনি হযরত ওসমান (রা) এর রক্তের বদলা নিতে চান। এভাবে তাদের সাথে তিনি মুনাফিকী করেছেন। ফলে শামের অধিবাসীরা তার সামনে তাদের রক্ত ও সম্পদ বিসর্জন দিয়েছে, তার কল্যাণ কামনা করেছে।"

          কাজী শাওকানী আরো বলেনঃ
"শামের সাধারণ মানুষের ব্যাপারে এতটা বিস্মিত হওয়ার কোন কারণ নেই, কিন্তু সেসব লোকদের ব্যাপারে বিস্মিত হই, যাদের দ্বীন সম্পর্কেজ্ঞান ছিল, যারা বিচক্ষণ ছিলেন। যেমন, মুয়াবিয়া (রা) এর পক্ষাবলম্বনকারী কিছু সাহাবী, বিশিষ্ট কিছু তাবেঈ। হায় আমি বুঝতে পারিনা, কি কারণে তারা এ জাতীয় সন্দেহের আবর্তে নিমিজ্জিত হলেন, এমন কি তারা বাতিলের সাহায্য করলেন এবং সত্যকে লাঞ্ছিত করলেন! অথচ তারা আল্লাহর এই বাণী শুনেছিলেন: 
وَإِن طَآئِفَتَانِ مِنَ ٱلْمُؤْمِنِينَ ٱقْتَتَلُوا۟ فَأَصْلِحُوا۟ بَيْنَهُمَاۖ فَإِنۢ بَغَتْ إِحْدَىٰهُمَا عَلَى ٱلْأُخْرَىٰ فَقَٰتِلُوا۟ ٱلَّتِى تَبْغِى حَتَّىٰ تَفِىٓءَ إِلَىٰٓ أَمْرِ ٱللَّهِۚ.
মু’মিনদের দু’দল লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর একটি দল অপরটির উপর বাড়াবাড়ি করলে যে দলটি বাড়াবাড়ি করে, তার বিরুদ্ধে তোমরা লড়াই কর যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। (সূরা হুজুরাতঃ০৯)
তারা হযরত আম্মার (রা) এর উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (সা) এর এ উক্তি  শুনেছিলেন: তোমার সাথে বিদ্রোহী একটি দল যুদ্ধ করবে। যদি সাহাবীদের উচ্চমর্যাদা ও শ্রেষ্ঠ তিন যুগের শ্রেষ্ঠ ফজিলত না থাকতো তাহলে আমি বলতাম: সম্পদ ও পদের লোভ এই উম্মতের পূর্ববর্তীদেরকে যেমন ফেতনায় ফেলেছে, তেমনি পরবর্তীদেরকেও।"
(কাজী শাওকানী, ওবালুল গামাম, ২য় খন্ড, পৃঃ৪১৪-৪১৫)

     কাজী শাওকানী 'আদ-দুরারুল বাহিয়্যা' নামে একটি কিতাব লেখেন। কাজী শাওকানীর ছাত্র আহলে হাদীসের বিশিষ্ট আলেম নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান কিতাবে একটি শরাহ (ব্যাখ্যা) লেখেন। সিদ্দিক হাসান খানের এই ব্যাখ্যার নাম হলো 'আর-রওজাতুন নাদিয়্যা'। এটি আহলে হাদীসের সিলেবাস ভুক্ত একটি কিতাব। আহলে হাদীসে শায়খ আলবানী দীর্ঘ দিন এই কিতাবের দারস দিয়েছেন। 

     'আর-রওজাতুন নাদিয়্যা'তে নওয়াব সিদ্দিক হাসান খানও কাজী শাওকানীর উক্ত বক্তব্য হুবাহু উল্লেখ করেছেন। মূল কিতাব 'আদ-দুরারুল বাহিয়্যা'তে এই বক্তব্যগুলো ছিল না। নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান তার ব্যাখ্যায় এ বক্তব্যগুলো কাজী শাওকানীর 'ওবালুল গামাম' থেকে উল্লেখ করেছেন। 
.
     শায়খ আলবানী নওয়াব সিদ্দিক হাসান খানের কিতাব 'আর-রওজাতুন নাদিয়্যা'র সংক্ষিপ্ত একটি শরাহ (ব্যাখ্যা) লিখে নাম দিয়েছেন 'আত-তালীকাতুর রাজিয়্যা। এ কিতােবর তাহকীক করেছেন তার বিশিষ্ট ছাত্র, আহলে হাদীসের শাখয় আলী আল-হালাবী। সুুতরাং বুঝতেই পারছেন এই কিতাব আহলে হাদীস ভাইদের নিকট কত প্রিয়! 

     আহলে হাদীসের অন্যতম আলেম হলেন ওহিদুজ্জামান হাইদ্রাবাদী। (ইন্ডিয়াতে) আহলে হাদীসের মাঝে তার অনুবাদকৃত সিহাহ সিত্তাহ ব্যাপক জনপ্রিয়। আহলে হাদীস আলেমদের জীবনীর উপর 'চল্লিশ  ওয়ামায়ে আহলে হাদীস' কিতাবে তার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। ওহিদুজ্জামান হাইদ্রাবাদী তার কিতাবে লেখেন, 
ويستحب الترضي للصحابه غير ابي سفيان ومعاويت وعمرو بن العاص ومغيرة بن شعبة و سمرة بن جندب.

  "সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে রাযিয়াল্লাহু আনহু বলা মুস্তাহাব। তবে আবূ সুফিয়ান, মুয়াবিয়া, আমর ইবনে আস, মুগীরা ইবনে শুবা, সামিরা ইবনে জুনদুব এর নামের শেষে রাযিয়াল্লাহু আনহু বলা মুস্তাহাব নয়।"
(কানযুল হাকায়েক মিন ফিকহি খাইরিল খালায়েক, পৃঃ ২৩৪)

      আহলে হাদীসের আলেম ওহিদুজ্জামান হাইদ্রাবাদী তার 'লুগাতুল হাদীস' নামক কিতাবে লিখেনঃ
"এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, হযরত মুয়াবিয়া ও আমর ইবনে আস বিদ্রোহী, অবাধ্য ও নিকৃষ্ট ছিল। তাদের জীবনী, মর্যাদা ও ফজিলত সংক্রান্ত আলোচনা কখনও শোভনীয় নয়। বরং সাহাবী হওয়ার দিকে দৃষ্টি রেখে তাদের গালাগালি থেকে মুক্ত রাখায় যথেষ্ট।"

 ৷ আহলে হাদীসের আলেম ওহিদুজ্জামান তার 'নুজুলুল আবরার' কিতাবে লিখেনঃ
"আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِن جَآءَكُمْ فَاسِقٌۢ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوٓا۟.
হে মু’মিনগণ! কোন ফাসিক ব্যক্তি যদি তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসে, তাহলে তার সত্যতা যাচাই করে নাও। (সূরা হুজুরাতঃ৬)
আয়াতটি ওলীদ ইবনে ওকরা সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় কিছু সাহাবী ফাসিক ছিলেন। যেমন, ওলীদ। এভাবে হযরত মুয়াবিয়া, আমর ইবনে আস, মুগিরা ইবনে শুবা, সামুরা ইবনে জুন্দুব ফাসিক ছিলেন।"
(নুজুলুল আবরার, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৯৪)

  আমরা একটু আহ! শব্দ করলেই
তা হয় বদনামের কারণ।
তারা হত্যা করলেও কোন সমালোচনা হয়না,
লোকে সেটাই করে গ্রহণ।
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।         

Post a Comment

0 Comments